ব্লগ সংরক্ষাণাগার

মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০২২

খলীফা উসমান (রা.)’এর শাহাদাত ১৮ যিলহজ্জ, ১২ তারিখ নয়

 লেখক: দ্বীনীভাই ও ফেইসবুক বন্ধু মাহমূদ হাসান


ইসলামের তৃতীয় খলীফা হাযরাত উসমান (রা.)’এর শাহাদাত প্রসঙ্গে এই আলোচনার অবতারণা। রোজা অবস্থায় তিনি শহীদ হন, আর জান্নাতে রোজা ভাঙেন। ১২ই জিলহজ্জ নয়, ১৮ই জিলহজ্জে শহীদ হন। অতএব, হাযরাত উসমান (রা.)’এর শাহাদাত দিবসে রাফেযী শিয়াদের বড় ঈদ - 'ঈদে গাদীর' পালন করা থেকে মুসলমান সর্বসাধারণ সাবধান!

ইমাম নাফি’ (রহ.) বর্ণনা করেছেন: খলীফা উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখেছেন যে রাতে তিনি পরের দিন সকালে শহীদ হন। নবীজী ﷺ বললেন, হে উসমান, আজ রাতে আমাদের সাথে ইফতার কোরো। অতঃপর তিনি রোজা অবস্থায় শহীদ হন।


রেফারেন্স
দালায়িল আল্ নাবূয়্যাহ লিল বাইহাকি, ৭/৪৮।

হাদীসটির মান — সহীহ, ইবনু হাজর আল-আসকালানী (রহ.) এরুপ মত ব্যক্ত করেছেন।

আরবী পাঠ

 عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَنَامِهِ فِي اللَّيْلَةِ الَّتِي قُتِلَ فِي صَبِيحَتِهَا فَقَالَ يَا عُثْمَانُ أَفْطِرْ عِنْدَنَا اللَّيْلَةَ فَقُتِلَ وَهُوَ صَائِمٌ


7/48 دلائل النبوة للبيهقي

5/21 المحدث ابن حجر العسقلاني خلاصة حكم المحدث رجاله ثقات في المطالب العالية

অপর এক বর্ণনায় সর্ব-ইমাম ইবনে আদি (রহ.) ও ইবনে আসাকির (রহ.) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

يا عثمان ! إنك ستؤتى الخلافة من بعدي وسيريدك المنافقون على خلعها فلا تخلعها وصم في ذلك اليوم تفطر عندي…

মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘ওহে উসমান! আমার (বেসালের) পরে তোমার কাছে খেলাফতের ভার ন্যস্ত করা হবে, কিন্তু মোনাফেকরা চাইবে যেন তুমি তা ত্যাগ করো। তুমি ত্যাগ কোরো না, বরং রোযা রেখো যাতে তুমি আমার সাথে (ওই রোযা) ভাঙ্গতে পারো’।”

রেফারেন্স
১/ ইবনে আসাকির, ‘তারিখে দামেশক’ (৩৯:২৯০),
২/ ইবনে আদি তাঁর ‘আল-কামিল’ (৩:২৭);
৩/ আয্ যাহাবী, ’মিযান’ গ্রন্থে’ (২:৪২৪) যা’তে দুর্বল সনদ আবু আল-রাহহাল খালেদ ইবনে মোহাম্মদ আল-আনসারী, তিনি এর একমাত্র বর্ণনাকারীও।

নিচের আলোচনা পাঠককে খুব সহজে বুঝতে সাহায্য করবে যে হাযরাত উসমান (রা.)’এর শাহাদাত দিবস ১২ই জিলহজ্জ নয়। হাযরাত উসমান (রা.)-সহ সকল সাহাবায়ে কেরাম (রা.)’বৃন্দের ঘোর বিরোধী হচ্ছে রাফেযী শিয়া গোষ্ঠী। খলীফা হাযরাত উসমান (রা.)’এর শাহাদাত দিবসে শিয়াচক্র তাঁর শহীদ হওয়াকে কেন্দ্র করে ওই দিনটি ঈদে গাদীর নামে মহা ঈদের জাঁকজমক সহকারে পালন করে থাকে।


হাযরাত উসমান (রা.)’এর শাহাদাত ১২ই জিলহজ্জ না হওয়ার কারণ

ঈদুল আযহার পরের তিন দিন তথা জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে ‘আইয়ামে তাশরীক’ বলা হয়।
হাদীসে এ দিনগুলোকে ‘পানাহার ও আল্লাহর যিকির’-এর দিন বলা হয়েছে। এ তিন দিন ফরয বা নফল রোযা রাখা নিষেধ।

◾আম্মাজান হাযরাত ‘আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন,

«لَمْ يُرَخَّصْ فِي أَيَّامِ التَّشْرِيقِ أَنْ يُصَمْنَ، إِلَّا لِمَنْ لَمْ يَجِدِ الهَدْيَ» 

যে (হাজী)’র নিকট الهَدْيَ/ কুরবানীর পশু নেই তিনি ছাড়া অন্য কারো জন্য আইয়্যামে তাশরীকে সাওম/রোজা পালন করার অনুমতি দেওয়া হয় নি।”

রেফারেন্স
সহিহ বুখারী হা/১৯৯৭।

◾ নুবাইশা আল-হুযালী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أَيَّامُ التَّشْرِيقِ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ وَذِكْرٍ لِلَّهِ

“আইয়্যামে তাশরীক পানাহার ও আল্লাহর যিকিরের দিন”।
রেফারেন্স
সহীহুল জামে, হাদীস/২৬৮৯-নুবাইশা আল হুযালী (রা.) থেকে বণিত।

◾রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:

لا تَصُومُوا هَذِهِ الأَيَّامَ فَإِنَّهَا أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ

“তোমরা এই দিনগুলোতে রোযা রাখিও না। কেননা, এগুলো পানাহারের দিন।”
রেফারেন্স
সহীহল জামে, হাদীস/৭৩৫৫-হামযা বিন আমর আল আসলামীন (রহ.) থেকে বর্ণিত।

সুতরাং এ দিনগুলোতে কাযা, কাফফারা, মানত বা অন্য কোনো ধরনের নফল রোযা রাখা বৈধ নয়। (কেবল হাজীদের বিশেষ ক্ষেত্রে রোজা রাখার বিষয়টি ভিন্ন)

উল্লেখ্য যে, আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বীজ বলা হয়। প্রতি মাসে এই তিনটি রোজা রাখলে সারা মাস রোজা থাকার সওয়াব পাওয়া যায়।
কিন্তু জিলহজ মাসের ১৩ তারিখ যেহেতু আইয়ামে তাশরীক-এর অন্তর্ভুক্ত সেহেতু ওই দিন রোজা‌ রাখা জায়েজ নেই।

কাজেই প্রমাণিত হলো যে খলীফা হাযরাত উসমান (রা.) ১২ই জিলহজ্জে নয়, বরং ১৮ই জিলহজ্জে শাহাদাৎ লাভ করেন।


*সমাপ্ত*

বি.দ্র. লেখাটিতে সম্পাদনা করা হয়েছে - এডমিন।


এডমিনের লেখা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:


১/ - https://www.facebook.com/photo.php?fbid=5193304324101741&set=a.297713366994219&type=3&notif_id=1658072812600017&notif_t=feedback_reaction_generic&ref=notif


২/ - https://www.facebook.com/photo?fbid=5190029014429272&set=a.297713366994219


৩/ - https://www.facebook.com/photo?fbid=5174903772608463&set=a.297713366994219


৪/ - https://www.facebook.com/photo?fbid=5186588198106687&set=a.297713366994219


৫/ - https://www.facebook.com/photo?fbid=5183490185083155&set=a.297713366994219


৬/ - https://www.facebook.com/photo.php?fbid=5192044527561054&set=a.297713366994219&type=3&notif_id=1658035221757614&notif_t=feedback_reaction_generic&ref=notif 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন