ব্লগ সংরক্ষাণাগার

মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ইমাম হুসাইন (রা:) ও আহলে বায়ত (রা:)-বিষয়ক গবেষণা

এডমিন

হিজরী বর্ষের ১০ই মুহর্রম - ’আশুরা’ হচ্ছে ইসলামী ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিবস। পূর্ববর্তী যুগে আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম)’মণ্ডলীর জন্যেও এটা বিশেষ দিন ছিলো (এতদসংক্রান্ত প্রবন্ধ নিচে মন্তব্য ফোরামে)। কিন্তু এ দিনটির গুরুত্ব চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করেছে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর নয়নমণি ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর শাহাদাৎ দ্বারা। এ এক দীর্ঘ ইতিহাস, যা এখানে আলোচনা করবো না। আমি আমাদের দেশে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও কারবালার ঘটনা এবং আহলে বায়ত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) সম্পর্কে গবেষণা নিয়ে আজকে আলোকপাত করবো।
অনেকে দাবি করেন যে এ রকম গবেষণা আমাদের সুন্নী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তেমন একটা হয়নি। পূর্ববর্তী যুগের আলেম-উলামার বইপত্রও খুব একটা অনূদিত হয়নি। শুধু ২-১টা বই অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে, তাও অতি সাম্প্রতিককালে। আসলে সত্য কথা হলো, এই বঙ্গদেশে প্রচুর সুন্নী হক্কানী/রব্বানী আলেম-উলামা আবির্ভূত হয়েছেন এবং তাঁরা গভীর গবেষণা করেছেন। কিন্তু তাঁরা ইসলামী পূর্ববর্তী যুগের ইমাম-আল্লামাবৃন্দের বইপত্র অনুবাদ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। কেননা আজ থেকে ৪০-৫০ বছর আগেও মুসলমান সর্বসাধারণ ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না, বরঞ্চ উপরোক্ত হক্কানী/রব্বানী আলেম-উলামা ও মাশায়েখবৃন্দের কাঁধে ধর্মীয় বিষয়াদির ফায়সালার দায়িত্ব অর্পণ করতেন এবং নিজেদের দুনিয়াদারির কাজে ব্যস্ত থাকতেন। সেটা ছিলো শান্তির সময়।
পরিতাপের বিষয় এই যে, আজকে ধর্মীয় শিক্ষাবিহীন লোকেরাও ধর্মক্ষেত্রে ‘গবেষণা’ আরম্ভ করেছে এবং বাতিল মতবাদে দীক্ষা নিয়ে অতি চালাকি করে এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে। পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে পেট্রো-ডলারসমৃদ্ধ সৌদি/নজদী ওহাবীপন্থী রাষ্ট্র ও রাফেযী শিয়াপন্থী ইরান রাষ্ট্রের আর্থিক মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায়। এই ১০ই মুহর্রম তারিখের হযরতে ইমামে হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর শাহাদাতে কারবালা নিয়েই উপরোক্ত দুটো ‘লবী’ কী রকম আক্বীদা-বিরোধী প্রচারণায় অপতৎপর তা আমাদের সামনে সুস্পষ্ট। এক দল হন্তা এয়াযীদকে ‘সত্যপন্থী’ দাবি করছে; আরেক দল তার দোষ দেখিয়ে তার বাবা সাহাবী হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’কে ‘ষড়যন্ত্রকারী ও মুনাফেক্ব’ দাবি করছে এবং আহলে বায়ত ও আসহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন)-বৃন্দের মাঝে কল্পিত দ্বন্দ্বের এক মিথ্যাচার দ্বারা সুন্নী মুসলমান সমাজকে বিভক্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। এসব-ই ফেইসবুকে পরিদৃষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সুন্নী আলেম-উলামাবৃন্দের কথার প্রতি কর্ণপাতও করা হচ্ছে না।
তবে সুখবর হলো, ইদানীং বেশ কিছু সুন্নী আলেম বিষয়টি নিয়ে বইপত্র লিখছেন এবং পূর্ববর্তী যুগের ইমাম/আল্লামা-মণ্ডলীর কিতাবসমূহের অনুবাদকর্মেও হাত দিয়েছেন। আমার সুপরিচিত ড: ইঊসুফ জিলানীভাই ও তরুণ গবেষক মওলানা শহীদুল্লাহ বাহাদুরভাইয়ের নাম এখানে প্রণিধানযোগ্য। আমি নিজেও ক্ষুদ্র জ্ঞান অনুযায়ী দুটো লেখা অনুবাদ করেছি, যা আমার সদ্য প্রকাশিত ‘ফাদাক বাগান’ শিরোনামের বইটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে (মন্তব্যে লিঙ্ক)। এভাবে সুন্নী দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির ফায়সালা দেয়া হলে এ দেশের মুসলমান সমাজে আর বিভ্রান্তি থাকবে না বলে আমি আশাবাদী, ইন-শা-আল্লাহ।
শেষ কথা হলো, ইতিপূর্বে গবেষণা হয়নি মর্মে দাবি করে আমাদের ঐতিহ্যবাহী সুন্নী বুযূর্গ-উলামা ও মাশায়েখ (রহমতুল্লাহে আলাইহিম)-মণ্ডলীর মহৎ কীর্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করা কোনো মুসলমানের পক্ষে শোভনীয় কাজ নয়। বরং এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাতিলপন্থীদের অসৎ ও দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা ছাড়া কিছু নয়।
*সমাপ্ত*

পুনশ্চ:

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর পবিত্র সোহবত/সান্নিধ্য দ্বারা হযরতে ইমামে আলী (ক.) এতোই আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ লাভ করেছিলেন যে গাছ-পাথর-পাহাড় প্রভৃতির সালাম-সম্ভাষণ তিনি বুঝতে সক্ষম ছিলেন। এই মক্বাম স্রেফ বংশীয় সূত্রে লাভ হয় না, বরঞ্চ সোহবত ও ক্বুরবাত/নৈকট্য দ্বারাই অর্জিত হয়। নতুবা আবূ লাহাব ও আবূ জেহেল বংশীয় সূত্রে উঁচু মক্বামে অধিষ্ঠিত হতো। কেননা তারা ছিলো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর চাচা! কিন্তু তাঁর সোহবত ও ক্বুরবাত গ্রহণ না করার দরুন তারা জাহান্নামী। অতএব, বাতিল রাফিযী শিয়াচক্রের এটা উপলব্ধি করা উচিত যে আহলে বাইত (রা.)-এর সদস্যবৃন্দ প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর সোহবত ও ক্বুরবাত লাভ করেই উঁচু মক্বামে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, স্রেফ বংশগত কারণে তা হননি। এ কারণেই বিভিন্ন তরীক্বতের মাশায়েখ আল-কিরাম (রহ.) সোহবতের ওপর জোর দিয়েছেন বেশি। এ থেকে বঞ্চিত অনেক ‘সৈয়দজাদা-কেও’ আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখেছি আমি। মুসলমান সাধারণ সাবধান!

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

*রাফেযী-চক্রের ধোঁকা ভঞ্জন*


- এডমিন

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর আহলে বায়ত তথা পরিবারসদস্যবৃন্দ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) হলেন তাঁর জামাতা খলীফাতুল মুসলিমীন হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু), কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরতে ফাতিমাতুয্ যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) ও দুই দৌহিত্র সর্ব-ইমাম হাসান ও হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)। তাঁরা আমাদের মতো উম্মত সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার পাত্র ও শিরোমণি। কিন্তু তাঁদের দোহাই দিয়ে একটি মহাভ্রান্ত দুষ্টচক্র ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত। জি, এরা রাফেযী শিয়া গোষ্ঠী। আখড়া ইরানে হলেও বর্তমানে পেট্রো-ডলারের জোরে আমাদের দেশেও অনেক রাফেযী শিয়া তলপিবাহক পয়দা করা হয়েছে। সম্প্রতি পবিত্র মুহর্রম উপলক্ষে চামচারা বেশ কিছু অপযুক্তি দাঁড় করিয়েছে যেগুলো শরীয়তের দলিলভিত্তিক তো নয়ই, বরং ইসলাম-বিকৃতির পর্যায়ভুক্ত। কোনো ধর্মতত্ত্বীয় বিষয়কে সাবেত বা প্রমাণ করতে হলে অবশ্যঅবশ্য শরীয়তের দলিল প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। এটাকে ‘মোল্লা দৃষ্টিভঙ্গি’ বলে উপহাস করা ধর্ম নিয়ে তামাশা করারই সামিল।
অপযুক্তি:
আহলে বায়ত (রা:)’এর মর্যাদা এতো উচ্চে যে আম্বিয়া কেরাম (আলাইহিমিস্ সালাম)-ও তাঁদের সমকক্ষ নন! এ কথাই রাফেযী-চক্র ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ পাক তাঁর ঐশীগ্রন্থে ঘোষণা করেন:
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَـٰئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّينَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقاً.
অর্থ: এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূল (দ:)’এর হুকুম মানে, তবে সে তাঁদেরই সঙ্গ লাভ করবে যাঁদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন - অর্থাৎ পয়গাম্বরবৃন্দ, সিদ্দীক্ব (সত্যনিষ্ঠ)-মণ্ডলী, শহীদান ও সৎকর্মপরায়ণ (সালেহীন)-বৃন্দ [সূরা নিসা, ৬৯ আয়াত; নূরুল এরফান]।
আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম)’বৃন্দের সমমর্যাদা কোনো উম্মতেরই হবে না। দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছেন সিদ্দীক্বীন, যাঁদের প্রথম জন হলেন খলীফা হযরতে আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); দ্বিতীয় জন খলীফা হযরতে উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); তৃতীয় জন খলীফা হযরতে উসমান যিন্নূরাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); এবং চতুর্থ জন খলীফা হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)। বলা বাহুল্য যে, হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-ই আহলে বায়ত-প্রধান। অর্থাৎ, তাঁর মাধ্যমে নবী-বংশ জারি থেকেছে। তিনি কী বলছেন শুনুন:
خير هذه الأمة بعد نبيها أبو بكر ثم عمر ولو شئت سميت الثالث.
অর্থ: প্রিয়নবী (صلى الله عليه وسلم)’এর পরে এই উম্মতের মাঝে সেরা হলেন হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه); অতঃপর সেরা হলেন হযরত উমর (رضي الله عنه); আর আমি যদি চাইতাম, তবে তৃতীয় জনের (নাম) উল্লেখ করতাম। [বড়পীর সাহেব ক্বেবলা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)’এর শিষ্য ইমাম ইবনে ক্বুদামা মাক্বদিসী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) রচিত ‘লুম’আতুল ই’তিক্বা’দ’ পুস্তিকা; খলীফাবৃন্দের মাহাত্ম্য অধ্যায়]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন:
روى عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: كنا نقول والنبي صلى الله عليه وسلم حي: أفضل هذه الأمة بعد نبيها أبو بكر ثم عمر ثم عثمان ثم علي فيبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم فلا ينكره .
আমরা এ কথা প্রিয়নবী (صلى الله عليه وسلم)’এর (যাহেরী) হায়াতে জিন্দেগীতে বলতাম: “প্রিয়নবী (صلى الله عليه وسلم)’এর পরে এই উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন হয়রত আবূ বকর (رضي الله عنه); এরপর হয়রত উমর (رضي الله عنه); এরপর হযরত উসমান (رضي الله عنه); এরপর হযরত আলী (رضي الله عنه)।” রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) কখনোই এ কথাকে নিষেধ করেননি। [আল-বুখারী (رحمة الله عليه) কৃত ‘মানা’ক্বিব, ৩৪৬৮; সুনানে আবী দাউদ (رحمة الله عليه), কিতা’বুস্ সুন্নাহ, ৪৬২৭, ৪৬২৮, ৪৬২৯; ইবনে মাজাহ (عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي عضوا عليها بالنواجذ), ‘মোক্বাদ্দমা’, ১০৬; সুনানে তিরমিযী (رحمة الله عليه), ‘মানা’ক্বিব’, ৩৭০৭ এবং ইমাম আহমদ (رحمة الله عليه), ১:১১৪; ইমাম তিরমিযী (رحمة الله عليه) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন]
ওপরের দুটো রওয়ায়াত/বিবরণ থেকে উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের ক্রম সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট জানতে ও বুঝতে পারি। আর সবার বেহেশতে প্রবেশের প্রশ্নে আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি: মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে পবিত্র স্থানে শায়িত আছেন, তাকে কী বলা হয়? রিয়াজুল জান্নাহ নয় কি? মানে বোঝেন রাফিদাহ শিয়া গোষ্ঠী? এর অর্থ জান্নাতের বাগানের (অংশ)। সেখানে আর কে কে শায়িত আছেন জানেন কি? উত্তর - প্রথম দু জন খলীফা সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)! তাঁরা তো তাহলে ইতোমধ্যেই জান্নাতে অবস্থান করছেন! বস্তুতঃ ক্বুরআন মজীদে সকল আসহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন)’কে নাজাতপ্রাপ্ত বলা হয়েছে। আল্লাহতা’লাই এই সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তাঁরা শিয়াদের বানোয়াট জাল সার্টিফিকেটের মুখাপেক্ষী নন! তবে আমরা পরবর্তীকালের সাধারণ উম্মত আহলে বায়ত ও আসহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)-মণ্ডলীর শাফা’আতের প্রার্থী।
রাফেযী শিয়াচক্র সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীসে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। সেগুলো এখানে উদ্ধৃত হলো:
হযরত মাওলা আলী (কঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, আমার পর খুব শীঘ্রই এমন একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, লোকেরা যাকে “রাফেজী” বলে ডাকবে। তোমরা যদি তাদের সাক্ষাৎ পাও তবে তাদেরকে হত্যা করবে। কেননা তারা মুশরিক ও মুনাফিক হবে। হযরত মওলা আলী (কঃ) এদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, হে আলী! তারা অতিরঞ্জিত করে তোমার নামে এমন সব গুণের প্রচার করবে যা তোমার ভেতরে নেই। তারা পূর্ববর্তী বুজুূর্গদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে এবং তাঁদের সমালোচনা করবে।
وَسَيَأْتِي قَوْمٌ لَهُمْ نَبْزٌ يُقَالُ لَهُمُ الرَّافِضَةُ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ؛ فَإِنَّهُمْ مُشْرِكُونَ.
অর্থ: অচিরেই চিহ্নধারী এমন এক দলের উদ্ভব ঘটবে যাদেরকে রাফিদ্বা (রাফেজী) বলা হবে। যখনই তাদের সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবে তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে, কেননা তারা নিশ্চিত মুশরিক। [(ক) আবু নুয়াইম ইস্পাহানি: হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৪/৩২৯। (খ) কাজী খাঁন: কানযুল উম্মাল, ১/২২৩। (গ) মোল্লা আলী কারী: শাম্মুল আওয়ারিদ্ব ফি যাম্মির রাওয়াফিদ্ব, ১/৬৯।]
হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন:
يَاعلِيُّ أَنْتَ وَأَصْحَابُكَ فِي الْجَنَّةِ، أَنْتَ وَشِيعَتُكَ فِي الْجَنَّةِ، إِلَّا أَنَّهُ مِمَّنْ يَزْعُمُ أَنَّهُ يُحِبُّكَ أَقْوَامٌ يُضْفَزُونَ الْإِسْلَامَ، ثُمَّ يَلْفِظُونَهُ، يَقْرَأُونَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، لَهُمْ نَبْزٌ يُقَالُ لَهُمُ الرَّافِضَةُ، فَإِنْ أَدْرَكْتَهُمْ فَجَاهِدْهُمْ، فَإِنَّهُمْ مُشْرِكُونَ» . فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا الْعَلَامَةُ فِيهِمْ؟ قَالَ: «لَا يَشْهَدُونَ جُمُعَةً وَلَا جَمَاعَةً، وَيَطْعَنُونَ عَلَى السَّلَفِ الْأَوَّل.
অর্থ: হে আলী! তুমি আর তোমার সহচরবৃন্দ জান্নাতি, তুমি আর তোমার দল জান্নাতি। কিন্তু তারা ব্যতিরেকে যারা তোমাকে ভালোবাসার দাবি করে, ইসলামে সংযুক্ত থাকে আর মুখে উচ্চারণ করে, তারা কুরআন তিলাওয়াত করে অথচ কণ্ঠনালিতে পৌঁছায় না। তাদের উপাধি রয়েছে, যাদেরকে রাফিদ্বা (রাফেজী) বলা হবে। তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। কেননা তারা নিশ্চিত মুশরিক। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাদের নিদর্শন কী? আল্লাহর রাসূল বললেন, তারা জুমআ ও জামাআত প্রত্যক্ষ করবে না। সালাফ তথা পূর্ববর্তীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করবে। [তাবারানী: আল-মু'জামুল আওসাত, ৬/৩৫৪, হাদীস নং: ৬৬০৫]
يَأْتِي قَوْمٌ بَعْدَنَا يَنْتَحِلُونَ شِيعَتَنَا وَلَيْسُوا بِشِيعَتِنَا، لَهُمْ نَبَزُوا آيَةً، ذَلِكَ أَنَّهُمْ يَشْتِمُونَ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ فَإِنَّهُمْ مُشْرِكُونَ.
অর্থ: আমাদের পরে এমন এক দলের উদ্ভব ঘটবে যারা আমাদের ছদ্মবেশধারী অথচ আমাদের দলভুক্ত নয়। তারা আয়াত পরিবর্তন করবে। এমন যে, তারা আবু বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)’কে গালমন্দ করবে। তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে, কেননা তারা মুশরিক। [আহমদ: ফাদ্বায়িলুস সাহাবা, ১/৪৪১, হাদীস নং ৪০৩]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন:
كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعِنْدَهُ عَلِيٌّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا عَلِيُّ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي قَوْمٌ يَنْتَحِلُونَ حُبَّنَا أَهْلَ الْبَيْتِ لَهُمْ نَبَزٌ يُسَمَّوْنَ الرَّافِضَةَ فَاقْتُلُوهُمْ، فَإِنَّهُمْ مُشْرِكُون
অর্থ: আমি নবী কারীম (দ.)’এর সান্নিধ্যে ছিলাম, তাঁর সান্নিধ্যে ছিলেন হযরত আলী (রা.)। হুযুর (দ.) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আলী! অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে আহলুল বায়তের (পরিবারসদস্যবৃন্দের) ভালোবাসায় অতিরঞ্জন করবে এমন একটি দলের উদ্ভব হবে। তাদের কিছু নিদর্শন থাকবে, যাদেরকে রাফিদ্বা (রাফেজী) বলা হবে। তোমরা তাদেরকে হত্যা কোরো, কেননা তারা মুশরিক। [তাবারানী : আল মু'জামুল কাবীর, ১২/২৪২, হাদীস নং ১২৯৯৮; আবু নুয়াইম : হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৪.৯৫]
আমরা এই চরম সতর্কবাণী সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করলাম। কিন্তু এই উম্মত (খাস করে আহলে বায়ত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) বনী ইসরাঈল বংশীয় নবী বা রাসূল (আলাইহিমুস্ সালাম)’বৃন্দের সমতুল্য মর্মে শিয়াদের দাবির পক্ষে প্রদর্শিত ’হাদীসটি’ সম্পর্কে ফায়সালা কী? এবারত নিম্নরূপ:
علماء أمتي كأنبياء بني إسرائيل.
অর্থ: “আমার উম্মতের উলামা (হাক্কানী/রব্বানী) বনী ইসরাঈল বংশীয় আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম)-মণ্ডলীর মতো।”
প্রথমতঃ এই রওয়ায়াত নিয়ে মতপার্থক্য বিদ্যমান। খারেজী ওহাবী/সালাফী মৌলভী গং নয়, বরং বড় বড় ইমাম (যথা - আল্ গাজ্জালী, ইবনে হাজর আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রমুখ) বিবরণটির আসল বা ভিত্তি নেই বলেছেন [দেখুন - https://alwafd.news/.../2972604-%D9%87%D9%84-%D8%B5%D8%AD... এবং বিশিষ্ট আহলে সেমা’/মরমি সঙ্গীত প্রবক্তা ও তরীক্বতপন্থী মিসরীয় ড: আলী জুমুআ’র ভিডিও - https://www.youtube.com/watch?v=p3qx62qcp34]
দ্বিতীয়তঃ এটাকে হাদীস হিসেবে স্বীকার করে নিলেও প্রশ্ন ওঠে যে, নুবূওয়্যতের সমস্ত গুণেই কি উলামা-এ-হাক্কানী/রাব্বানীমণ্ডলী আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম)’বৃন্দের মতো? নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক! এ তো ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক ও আক্বীদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী। বর্ণনাটিতে কোনো কিছু উহ্য আছে আর তা হলো এলম (ঐশী জ্ঞান); এটা ‘উলামা’ শব্দটির ঘোষণা দ্বারা সাবেত বা প্রমাণিত হয়। অতএব, সাযুজ্য কেবল ঐশী/আধ্যাত্মিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে বিরাজমান। এর দৃষ্টান্ত হলো পূর্ববর্তী পয়গাম্বর (আলাইহিমুস সালাম)’মণ্ডলীর মো’জেযার (অলৌকিক ক্রিয়ার) মতো উম্মতের আউলিয়া কেরাম (রহমতুল্লাহি আলাইহিম) বিশাল বিশাল কারামত প্রদর্শন করেছেন। আর ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) দুআ’ করেছিলেন যাতে তিনি উম্মতে মুহাম্মদীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। সেই দোয়া ক্ববূল হয়েছে এবং তিনি উম্মত হিসেবে আসমান থেকে দুনিয়ায় আবার নেমে আসবেন। উম্মত হিসেবে ইমাম মাহদী (আলাইহিস্ সালাম)’এর অধীনে খেদমত করলেও পয়গাম্বর হিসেবে তাঁর মর্যাদা অতি উচ্চেই থাকবে, যা পরিস্ফুট হয় এই বৃত্তান্তে যে তাঁর বেসালের পরে তাঁকে রওযায়ে আক্বদসে রাখা খালি জায়গায় সমাহিত করা হবে। অথচ সেখানে ইমাম মাহদী (আলাইহিস্ সালাম)’এর দাফন হবে না।
শেষ কথা: রাফেযী শিয়া গোষ্ঠী আমাদের দ্বীনের দলিলাদিকে বিকৃত করে এজেন্ডা বাস্তবায়নে অপতৎপর। অতএব, এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
*সমাপ্ত*

বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১

*হিজরী নববর্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন প্রসঙ্গে শরঈ দলিল*


এই বিষয়টি নিয়ে ২ দিন আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম, অথচ ফেইসবুকে কেউ কেউ আমাদেরকে এ মর্মে দলিল প্রদর্শন করতে বলছে যে, ইতিপূর্বে কোন্ কোন্ বযূর্গ আলেম এ রকম করেছেন। সত্যি আফসোস! এরা ইসলামী ফিক্বাহ তথা বিধিবিধান শাস্ত্রের উসূল বা মূলনীতি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। তাই নিচে এ নিয়ে আলোকপাত করলাম।

উসূল/মূলনীতিগত ক্বায়দা বা নিয়ম:

প্রথমেই জানা আবশ্যক যে, ইসলামী শরীয়তের বিধান মোতাবেক সকল বস্তু (বা বিষয়ের) আসল বা মূল মোবাহ, অর্থাৎ, বৈধ। যথা - কাজী খাঁন, দুর্রে মুখতার ইত্যাদি ফেক্বাহ’র গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে:

أن الأصل في الأشياء الإباحة.

অর্থ: সকল বস্তুর মূল বৈধ বা হালাল। আল্লাহর কিতাবে বা রাসূল (صلى الله عليه وسلم)’এর সুন্নাহতে নিষেধাজ্ঞা দ্বারাই কেবল এই বৈধতা রহিত হতে পারে। শায়খ ইঊসুফ ক্বারাদাউয়ী সাহেব এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে এর সপক্ষে শরঈ দলিল উপস্থাপন করেছেন তাঁর অনলাইন সাইটে [লিঙ্ক: https://www.al-qaradawi.net/node/2241 এবং http://www.usislam.org/pdf/Lawful&Prohibited.pdf]।

সার সংক্ষেপ হলো, ক্বুর’আন মজীদ, হাদীস শরীফ, ইজমায়ে উম্মত ও ক্বিয়াস দ্বারা যেসব বিষয় হারাম ঘোষিত হয়নি, সেগুলো বৈধ এবং উদ্দেশ্যভেদে সওয়াব ও পুণ্যের কাজ বলে বিবেচিত। সৎ উদ্দেশ্যে কৃত কর্মসমূহ সওয়াবের উৎস হবে এবং অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত কর্মসমূহ গুনাহের উৎস হবে। যথা - হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ (দ:) এরশাদ ফরমান - إنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ - নিশ্চয় কর্মসমূহ নিয়্যত তথা উদ্দেশ্য দ্বারা বিবেচিত। [ইমাম নববী কৃত হাদীসে আরবাঈন গ্রন্থ, ১ নং হাদীস]।

এমতাবস্থায় যাঁরা কোনো বিষয়কে জায়েয বলেন, তাঁদের শরীয়তের দলিল প্রদর্শন করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যাঁরা হারাম দাবি করেন, তাঁদেরই কেবল দলিল প্রদর্শন করা আবশ্যক হয়। [এ ব্যাপারে শায়খ তাহিরুল কাদেরী সাহেবের ‘মিলাদুণ্নবী (দ:)’ বইটির সাম্প্রতিক কয়েকটি পর্বে আলোচনা করা হয়েছে]

শরঈ দলিল:

আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান:

وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ ٱللَّهِ.

অর্থ: তাদেরকে (মানুষদেরকে) আল্লাহর দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিন। [সূরা ইবরাহীম, ৫ আয়াত]

এ আয়াতে করীমায় আল্লাহ্ তা’লা তাঁর নবী হযরত মূসা (আ:)-এর প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন যেনো তিনি তাঁর জাতিকে আল্লাহর দিনগুলো সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন। “আল্লাহর দিনগুলো” হলো সে সব দিন যা’তে বড় বড় ঘটনা ঘটেছিল বা এমন সব দিন যেগুলোতে আল্লাহ্ পাক তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি তাঁরই বড় নেয়ামত তথা আশীর্বাদ বর্ষণ করেছিলেন।

‘আল্লাহর দিনগুলোর’ উপরোক্ত ব্যাখ্যার পক্ষে কুরআন মজীদ সাক্ষ্য দেয়, যেখানে হযরত মূসা (আ:)-কে উদ্ধৃত করা হয়েছে:

وَإِذْ نَجَّيْنَٰكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوۤءَ ٱلْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَآءَكُمْ وَفِي ذَٰلِكُمْ بَلاۤءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ.

অর্খ: “আর যখন মূসা (আ:) আপন সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, স্মরণ করো তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহকে, যখন তিনি তোমাদেরকে ফিরআউনী সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিতো এবং তোমাদের পুত্রদের যবেহ্ করতো ও তোমাদের কন্যাদেরকে জীবিত রাখতো; এবং এতে তোমাদের প্রতিপালকের মহা অনুগ্রহ রয়েছে” (সুরা ইব্রাহীম, ৩ নং আয়াত)।

আল্লাহ্ তা’লার উপরোল্লিখিত আয়াতের সারমর্ম অনুযায়ী, হযরত মূসা (আ:)-এর জাতি যেদিন ফিরআউন হতে মুক্তি লাভ করেন সেদিনটি “আল্লাহর দিন” হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। অতএব, ‘আল্লাহর দিন‘গুলো স্মরণীয় করে রাখতে এবং সেগুলোকে সুশৃঙ্খল ও নিয়মবদ্ধভাবে পালন করতে এই উম্মতের সময়কালে যে হিজরী সাল চালু করা হয়েছে, যে সালের গণনা দ্বারা আমরা মীলাদুন্নবী (দ:) দিবস, রোযা, হজ্জ্ব, দুই ঈদ, শবে ক্বদর, শবে মে’রাজ, শবে বর’আত, আশুরা, আহলে বায়ত-আসহাব (রা:) ও আউলিয়া কেরাম (রহ:)’এর বেসাল বার্ষিকী/উরস ইত্যাদি ‘আল্লাহর প্রিয় দিবস’ পালন করে থাকি, সেই নে’আমতপূর্ণ সালের শুরুতে মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন অবশ্যই জায়েয ও সওয়াবদায়ক। বিশেষ করে মুসলমান তরুণ সমাজ নিজেদের এই ঐতিহ্যবাহী সাল গণনা য়েখানে ভুলতে বসেছেন, সেখানে এটাকে বেশি বেশি স্মরণ করিয়ে দেয়া আরো বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিশেষে বলবো, ফেইসবুকে কারো কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে আসুন আমরা সবাই হিজরী বর্ষকে তার যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করি এবং মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে স্মরণীয় ও বরণীয় করে তুলি। আল্লাহ তৌফীক্ব/সামর্থ্য দিন, আমীন।

*সমাপ্ত*

ফেইসবুকে অপপ্রচারকারীদের জবাবে -

পথভ্রষ্টদের চামচাগুলো একটাই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাচ্ছে যে, কোনো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দিনে কারো বাবা মারা গেলে সেদিনটির প্রতিটি বার্ষিকীতে কি কেউ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন? আরে বেয়াকুব, কোনো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দিন হলো আম তথা সাধারণ/সার্বিক। আর কারো আত্মীয় মারা যাওয়ার বিষয়টি হলো খাস তথা সুনির্দিষ্ট। কারো ’খাস’ কোনো কারণে ’আম’ বিষয় নাকচ হয়ে যায় না! যেমন (ঈদে) মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিবসে কারো বাবা মারা গেলে ওই দিনের উদযাপন নাকচ হয়ে যায় না। দ্বিতীয়তঃ ১লা মুহর্রম হিজরী বর্ষের আরম্ভ; আর ১০ই মুহর্রম আশুরা। আশুরার দিন কারবালার বিষাদময় ঘটনায় ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর শাহাদাত হয়েছিলো। কিন্তু সেটা তো ১০ দিন পরে! এর সাথে ১লা তারিখের সম্বন্ধ কোথায়? জালিয়াতিরও তো একটা সীমা থাকা উচিৎ! উপরন্তু, আমি ইতিপূর্বের পোস্টে বলেছি যে আমরা সুন্নী মুসলমান সমাজ হিজরী নববর্ষে উল্লাস করি না, বরং স্রেফ মুসলমানদের প্রতি শুভ কামনা ব্যক্ত করি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ও জোরজবরদস্তি এটাকে উল্লাস প্রকাশের দিন হিসেবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস একমাত্র এজেন্ডাধারী মোনাফেক্ব রাফেযীচক্রই পেতে পারে! অতএব, এদের প্রতারণার ফাঁদে কেউ পা দেবেন না।

সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

হযরত উমর (রা.) কি হযরত ফাতিমা (রা:)’এর ঘর জ্বালিয়েছিলেন? শিয়া পণ্ডিতবর্গ এ কাহিনি অস্বীকার করেন




মূল: দি মিল্লি ক্রনিকাল (The Milli Chronicle) - অনলাইন
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

শিয়া মতবাদের অনুসারীবর্গ দাবি করেন যে, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর বেসালপ্রাপ্তির কয়েক দিন পরে হযরত উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) গিয়ে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’কে গর্ভবতী অবস্থায় মারধর করেন (এবং হাত ভেঙ্গে দেন), আর এর দরুন তাঁর গর্ভে থাকা পুত্র সন্তান মুহাসিন মারা যান। কিন্তু শিয়া মতাবলম্বীদের তৈরি এসব বানোয়াট কাহিনি জ্ঞানী ও নিরপেক্ষ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া দুষ্কর। এই কারণে কেবল আহলে সুন্নাতের আলেম-উলামাই এগুলোকে উদ্ভট ও বানোয়াট কাহিনি বলে ঘোষণা করেননি, বরঞ্চ এমন কী শিয়াদের কিছু সম্মানিত ও জ্ঞানী পণ্ডিত-ও একই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন।

গর্ভস্থ সন্তানের ধরে নেয়া মরণ কাহিনির পেছনে প্রকৃত ঘটনা

এ বিষয়টি কি অদ্ভুত ঠেকে না যে ভূমিষ্ঠ হবার আগেই কোনো পুত্র সন্তানের নাম দেয়া হয়ে যাবে এবং তিনি যে ছেলে সন্তান তাও তাঁর পিতা-মাতা আগেভাগে জেনে যাবেন? চলুন, আপনাদের আসল ঘটনা জানাই তিনি কোত্থেকে এবং কেনো ওই নাম পেয়েছিলেন। আর তা কি তাঁর জন্মের আগে না পরে, তাও জানতে চেষ্টা করি।

আমরা এই ‘মুহাসসান বিন আলী (রা:)’ সম্পর্কে জানতে পারি স্রেফ হানী বিন হানী (রহ:)’এর বর্ণনা থেকে, যিনি সরাসরি হযরত আলী বিন আবী তালিব (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) হতে সহীহ সনদে তা বর্ণনা করেন:

علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال : لمَّا ولد الحسن جـاء رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : أروني ابني ما سميتموه ؟ قلت : سمّيته حرباً ، قال : بل هـو حسن ، فلما ولد الحسين قال : أروني ابني ما سميتموه ؟ قلت سميته حرباً ، قال : بل هو حسين . فلما ولد الثالث جاء النبي صلى الله عليه وسلم فقال : أروني ابني ما سميتموه ؟ قلت حرباً ، قال : بل هو محسَّن ثم قال : إني سمّيتهم بأسماء ولد هارون شبّر وشُبَيْر ومشبّر .
অর্থ: হযরত আলী বিন আবী তালিব (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) বলেন, হাসান (রা:) যখন জন্মগ্রহণ করে তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন: “আমায় আমার পৌত্রকে দেখাও। তার নাম কী রেখেছো?” আমি বলি, তার নাম হরব। তিনি বলেন: “বরঞ্চ তার নাম হাসান।” অতঃপর যখন হুসাইন (রা:) জন্মগ্রহণ করে তখন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন: “আমায় আমার পৌত্রকে দেখাও। তার নাম কী রেখেছো?” আমি বলি, তার নাম হরব। তিনি বলেন: “বরঞ্চ তার নাম হুসাইন।” অতঃপর যখন তৃতীয় পুত্র জন্মগ্রহণ করে তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন: “আমায় আমার পৌত্রকে দেখাও। তার নাম কী রেখেছো?” আমি বলি, তার নাম হরব। তিনি বলেন: “বরঞ্চ তার নাম মুহাসসান।” এরপর তিনি বলেন: “আমি এদের নাম রেখেছি পয়গাম্বর হারূন (আলাইহিস্ সালাম)’এর পুত্রদের নাম অনুসারে - শিবর, শুবাইর ও মুশাব্বার।” [مسند أحمد (1/98) إسناده صحيح - মুসনাদ-এ-আহমদ, ১:৯৮; এসনাদ সহীহ]

অবশ্যই মুহাসসান বিন আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ছোট বাচ্চা থাকতে বেসালপ্রাপ্ত হন। [التبيين في أنساب القرشيين لابن قدامة المقدسي 133 - ইমাম ইবনে ক্বুদামাহ আল-মাক্বদিসী (রহ:) প্রণীত ‘আল-তাবেঈন ফী আনসাবিল ক্বুরাশীয়্যীন’, ১৩৩ পৃষ্ঠা]

মন্তব্য: হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর গর্ভনষ্টের কাহিনিটির কোনো ভিত্তিই একদম নেই, কেননা শিয়াদের ভাষ্যানুযায়ী ওই পুত্র তাঁর গর্ভে ইন্তেক্বাল করেছিলেন। অথচ ওই শিশু বাস্তবে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর যাহেরী/প্রকাশ্য হায়াতে জিন্দেগীতে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু তিনি অতি অল্প বয়সেই বেসালপ্রাপ্ত হন। আর তাঁর সেই অকাল মৃত্যুর (ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার) অবৈধ ফায়দা বা সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন শিয়া জালিয়াতচক্র এবং এ ঐতিহাসিক ঘটনাকে কারসাজি করে এমন চরম এক পৌরাণিক কাহিনি তাঁরা বানিয়েছিলেন, যার বিষয়বস্তু ছিলো হযরত উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর গর্ভের সন্তান হত্যা! কিন্তু হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক নিজ পুত্র সন্তান মুহাসসান (রা:)’কে গর্ভে ধারণ করা অবস্থায় হযরত উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)‘এর দ্বারা তাঁর গায়ে দরজা ধাক্কা ও সেটা চেপে ধরার কল্পকাহিনিটির আসল চেহারা ওপরের এই সহীহ/বিশুদ্ধ বর্ণনাটি প্রকাশ করে দিয়েছে।

হযরত ফাতিমা (রা:)’এর গর্ভনষ্টের বানোয়াট কাহিনি সম্পর্কে শিয়াদের কতিপয় সম্মানিত বিদ্বানের দৃষ্টিভঙ্গি

১/ - শিয়া পণ্ডিত আয়াতুল্লাহ ফজলুল্লাহ বলেন: “আমার মনোযোগ এ ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়েছে যে, আমাদের (শিয়া) পণ্ডিতদের অনেকেই নিজেদের বইপত্রে লিখেছেন হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ও তাঁদের সন্তানবৃন্দ এবং কতিপয় সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’এর সাথে আপন ঘরে অবস্থানকালে নিষ্ঠুর হামলার শিকার হন। আমাদের বিদ্বানদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে একমত যে, ‘আক্রমণকারীর দল’ যারা ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’এর বাড়ি আক্রমণ করেছিলো, তারা বাস্তবিকই আক্রমণ করেছিলো, যেমনটি আমরা (উচ্ছৃঙ্খল) জনতার প্রতি দাবি (মানে আরোপ) করি; তবে সত্য হলো ‘ব্যক্তিটি’ (হযরত উমর রা.) শুধু হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’কে হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্যে ‘ব্যক্তিটি’ বলেছিলেন: ‘ওয়া ইন্ লাম ইয়াখরুজূ’, যা’তে আরবী ভাষায় ‘ওয়া ইন্’ শব্দগুলো আল-যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর ‘লজ্জা’ প্রতীয়মান করে; এমতাবস্থায় ‘ব্যক্তিটি’ যখন আল-যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর প্রতি হায়াপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করেন, তখন তিনি কীভাবে তাঁর পাঁজর ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হলেন? আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ঘর আক্রমণ ও এর পাশাপাশি তাঁর পাঁজর ভেঙ্গে ফেলার কাহিনিগুলো প্রত্যাখ্যান করি; কেননা আমাদের শিয়া ইতিহাস সৈয়্যদা আয-যাহরা (রা.)’এর সাথে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটার সাক্ষ্য বহন করে না।” [সৈয়্যদ ফজলুল্লাহ: ১৯৯৯ সালের মা দিবসে প্রদত্ত ভাষণ, বৈরুত, লেবানন। এটা লিপিবদ্ধ আছে সায়্যেদ এয়াসীন আল-মূসাভী প্রণীত ‘আলমুলা’যাত’, যা ‘দার আল-সাদ্দাক্বা আল-কুবরা’, বৈরুত, লেবানন থেকে ২০০০ সালে প্রকাশিত]

২/ - শিয়া পণ্ডিত আয়াতুল্লাহ আল-সাইয়্যেদ আল-খোঈ:

এ ঘটনা সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়:

س 980: هل الروايات التي يذكرها خطباء المنبر، وبعض الكتاب عن كسر ((عمر)) لضلع السيدة فاطمة (عليها السلام) صحيحة برأيكم؟ الخوئي:ذلك مشهور معروف، والله العالم. صراط النجاة: ج 3/ ص 314

প্রশ্ন ৯৮০: হযরত উমর (রা.) কর্তৃক হযরত ফাতিমা (রা.)’এর পাঁজর ভাঙ্গার যেসব বিবরণ মিম্বরে ওঠে বক্তাবর্গ উল্লেখ করেন এবং বইপত্রে লেখা হয়, সেগুলোর বিশ্বস্ততা বা নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

উত্তর: সেটা তো জনপ্রিয় ও সর্বসাধারণ্যে জ্ঞাত (বিষয়), আর আল্লাহ-ই সবচেয়ে ভালো জানেন। [সিরাতুন্ নাজাত, ৩:৩১৪]

জরুরি জ্ঞাতব্য: আয়াতুল্লাহ খোঈ’র এ উত্তর পরিস্ফুট করে যে শিয়া বইপত্রে উপস্থিত ওই সব বিবরণকে তিনি সহীহ বিবেচনা করেন না। তিনি সেগুলোকে জনপ্রিয় বলেছেন, কিন্তু (স্পষ্টভাবে) সহীহ ঘোষণা করেননি।

আয়াতুল্লাহ খোঈ’র এতদসংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি খোলাসা করতে চলুন তাঁর বইয়ে তিনি কী লিখেছেন তা দেখা যাক:

لا ينجبر ضعف السند بالشهرة.

অর্থ: সনদের দুর্বলতা জনসাধারণ্যে (হাদীসটির) প্রসিদ্ধি দ্বারা নির্ধারিত হয় না। [কিতাবুল খুমস্, ১:১৮]

আল-খোঈ অপর এক বর্ণনায় আরো বলেন:

وجه الاشكال هو أن المعروف والمشهور بين الأصحاب وإن كان ذلك إلا أنه لا دليل عليه.
অর্থ: এটার সমস্যা হলো, আমাদের সাথীদের (মানে শিয়াদের) মাঝে এটা জ্ঞাত ও জনপ্রিয় হলেও এর পক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ-ই নেই। [মাবানী তাকমিলাত আল-মিনহাজ, ২:৪৩৪]

জরুরি জ্ঞাতব্য: কাজেই, আমরা যেমনটি দেখতে পাচ্ছি, আল-খোঈ’র নিজস্ব মতানুসারেই কোনো রওয়ায়াতের (বিবরণের) জনপ্রিয়তা সেটাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) প্রমাণিত করে না। আর আল-খোঈ কর্তৃক ওই কাহিনিকে সহীহ মর্মে সাবেত/প্রতিষ্ঠিত না করাটা আমাদের সামনে পরিস্ফুট করে যে, এমন কী শিয়া বইপত্রেও কাহিনিটির কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস বা সূত্র নেই।

আল-খোঈ হতে প্রাপ্ত ওপরের এই তথ্যটিও যদি আমাদের পাঠকদের কাছে স্পষ্ট বলে মনে না হয়, তাহলে সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) সম্পর্কে আল-খোঈ যা বলেছেন তা এখানে তুলে ধরবো; এতে বিষয়টি জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ইসলামের প্রথম দু জন খলীফা সম্পর্কে আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আল-খোঈ ‘ফিক্বহুশ্ শীআ’ পুস্তকের ৩য় খণ্ড, ১২৬ পৃষ্ঠায় এবং তক্বী ক্বুম্মী প্রণীত ‘মাবানী মিনহাজ আল-সালিহীন’ গ্রন্থের ২৫০ পৃষ্ঠায় মন্তব্য করতে যেয়ে বলেন:

ومن هنا يحكم باسلام الأولين الغاصبين لحق أمير المومنين عليه السلام إسلاما ظاهرياً لعدم نصبهم – ظاهراً – عداوة لأهل البيت وإنما نازعوهم في تحصيل المقام والرياسة العامة.

অর্থ: এ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, প্রথম দু জন খলীফা যাঁরা আমীরুল মো’মেনীন (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’এর খেলাফতের হক্ব/অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের ইসলাম (ধার্মিকতা) স্পষ্টতঃ দ্বীন-ইসলামই ছিলো; কেননা তাঁরা বাহ্যতঃ বা দৃশ্যতঃ নাসেবী তথা আহলে বায়ত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’বৃন্দের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন ছিলেন না, বরঞ্চ তাঁরা (পদ) মর্যাদা ও সাধারণ নেতৃত্বের খাতিরে তাঁদের (আহলে বায়তের) সাথে বিরোধে জড়িয়েছিলেন।

জরুরি জ্ঞাতব্য: সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) নাসেবী (তথা আহলে বায়তের শত্রু) ছিলেন না মর্মে আল-খোঈ’র সাক্ষ্য এ কথায় প্রতীয়মান হয়। তিনি যদি বিশ্বাস করতেন যে হযরত আবূ বকর (রা.) বা হযরত উমর (রা.) হযরত ফাতিমা (রা.)’কে আক্রমণ করেছিলেন অথবা তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা করেছিলেন, তাহলে তিনি কখনোই বলতেন না হযরত আবূ বকর (রা.) ও উমর (রা.) নাসেবী নন

চিন্তার খোরাক

১/ - আমরা আহলুস্ সুন্নাতের সহীহ তথা বিশুদ্ধ হাদীসসমূহে দেখতে পাই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’কে জানিয়েছিলেন যে আহলে বায়ত (রা:)-সদস্যদের মধ্যে তিনি-ই সর্বপ্রথম পরলোকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর সাথে মিলিত হবেন [রেফারেন্স: সহীহ বুখারী, ৫ম খণ্ড, বই নং ৫৭, হাদীস নং ৬২]। কিন্তু শিয়াদের বানোয়াট বিবরণ অনুযায়ী সর্বপ্রথমে ইন্তেক্বাল করেন তাঁর গর্ভস্থ সন্তান মুহাসসান। অতএব, কোনটি সঠিক? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর আহলে বায়ত (রা:)’এর মধ্যে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-ই কি সর্বপ্রথম প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’কে অনুসরণ করে পরলোক গমন করেন, যেমনটি সহীহ হাদীসগুলোতে বিবৃত হয়েছে? নাকি তাঁর গর্ভস্থ সন্তান মুহাসসান প্রথম পরলোক গমন করেন? এটা একটা জাজ্বল্যমান অসঙ্গতি, যা প্রমাণ করে যে শিয়াদের এ ভাষ্যটি বানোয়াট ও অনির্ভরযোগ্য।

২/ - প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর বেসালপ্রাপ্তির ৬ মাস পরে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-ও বেসালপ্রাপ্ত হন। শিয়াবর্গ দাবি করে থাকেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর বেসাল-পরবর্তী এই ৬ মাসের মধ্যে হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’এর কাছ থেকে খেলাফত চুরি করেন; হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর ঘরটি তাঁকে ভেতরে রেখেই পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, আর এমন কী তিনি তাঁর গর্ভের সন্তানকে হত্যাও করেছিলেন। এসব উল্লেখিত দাবি স্মরণে রেখে চলুন আমরা অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে ফিরে তাকাই।

এই ছয় মাসের পরে হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াহজহাহু) অন্যান্য নারীদের বিয়ে করেন। এটা সর্বজনজ্ঞাত ঘটনা যে, হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’এর অন্যান্য স্ত্রীদের ঘরে জন্মলাভকারী আবূ বকর, উমর ও উসমান নামে পুত্র সন্তানবৃন্দ ছিলেন। ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর সন্তানদের মধ্যে তিনি একজনের নাম রাখেন তালহা। ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর দু জন ছেলের নাম রাখেন আবূ বকর ও উসমান। তাহলে এসব ঐতিহাসিক তথ্যের সাথে সাহাবা কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন)’বৃন্দের বিরুদ্ধে উত্থাপিত শিয়াদের মিথ্যে অভিযোগগুলোকে সঙ্গতিপূর্ণ করা সম্ভব হতে পারে কীভাবে? কারো (খেলাফতের) অধিকার হরণ ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যা যে ব্যক্তি করেন, তাঁর নামে আপন সন্তানের নামকরণ কীভাবে চিন্তাও করতে পারেন কেউ?

ঐতিহাসিক তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবা (রা:)’মণ্ডলীর বিরুদ্ধে শিয়া অভিযোগের সংক্ষিপ্তসার

শিয়াবর্গ অভিযোগ করেন হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) খেলাফত চুরি করেছিলেন; হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) দরজা চাপা দিয়ে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তাঁর গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন; আর এই চুরির ঘটনা ও হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর বেসালপ্রাপ্তির পরে হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) অন্যান্য নারীদের বিয়ে করেন এবং (তাঁদের কারো একজনের ঘরে জন্মগ্রহণকারী) নিজ ছেলের নাম রাখেন উমর (এটা একটা বাস্তব ঘটনা)। তাহলে শিয়াদের এ অভিযোগে কোন্ বিবেকবান ও বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করতে পারেন?

*সমাপ্ত*

মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১

’নবী পাক (দ:)’ সম্বোধন নিয়ে আপত্তি ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

- এডমিন 

সম্প্রতি প্রিয়নবী (দ:)’কে ‘নবী পাক’ ডাকা নিয়ে কতিপয় গণ্ডমূর্খ মৌ-লোভী অনলাইনে আপত্তি উত্থাপন করেছেন। এরই সূত্র ধরে সালাফী-ওহাবীদের একটি মাহফিলে জনৈক না’ত-গায়ককে ‘নবী পাক (দ:)’এর প্রশংসাসূচক না’ত পরিবেশন করা হতে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ভাইরাল ভিডিও নিয়ে সচেতন সুন্নী মুসলমান সমাজে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে। ইত্যবসরে জনৈক ‘আজহারী’ আলেম প্রিয়নবী (দ:)’কে ‘পুতঃপবিত্র’ প্রমাণের পক্ষে ক্বুরআন-হাদীসভিত্তিক দলিল দেয়ার সময় হযরতে আহলে বায়ত (রা:)’বৃন্দেরও পুতঃপবিত্রতার পক্ষে দলিল দিয়েছেন। সেটা তাত্ত্বিক আলোচনা, যা আমার এই পোষ্টের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নয়। কেননা, আহলে বায়ত (রা:) ও আসহাব (রা:)’বৃন্দের আপন আপন শান-মান তথা মর্যাদা নিয়ে আমাদের সুন্নীদের মনে কোনো ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বই নেই। এখানে গণ্ডগোল বেধেছে ‘আজহারী’ সাহেবের আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যীয় রাজনীতিবিষয়ক বক্তব্যটি নিয়ে। তিনি বলেছেন, সৌদি নজদী সরকার ‘এজিদের খেলাফত সঠিক’ প্রমাণার্থে আহলে বায়ত (রা:)’এর মান-মর্যাদাকে যে কোনোভাবে খাটো করতে অপতৎপর। ইরান যেহেতু আহলে বায়ত (রা:)’কে বড় করে দেখায়, সেহেতু সৌদি ওহাবীরা ইরানী শিয়াদেরকে কোনো সুযোগ দিতে রাজি নয়। এই হলো তাঁর কথার সারসংক্ষেপ।
আমরা জানি, উক্ত দুটো দেশ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে এবং দুনিয়ার তাবৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। আমার মতে দুই বলদ শিং উঁচিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে আর নেকড়েরূপী শত্রুরা অপেক্ষা করছে কখন ঘাড় মটকানো যায়! আমাদের দেশের মৌ-লোভীবর্গ ও বিভিন্ন দরবার-খানেকাহ’র অনেক কর্তা ব্যক্তি দেশ দুটোর আর্থিক আনুকূল্যে (তথা পেট্রো-ডলারের মদদে) তাদের সিপাহিতে (foot soldier) হয়েছেন পরিণত। শিয়াপন্থী ইরানীদের পেট্রো-ডলার (মানে পারসিক উটের দুধ ও দুম্বার গোস্ত) যে অনেকেই ভোগ করছেন, তা আর আমাদের অজানা বিষয় নয়। সৌদি নজদী/ওহাবীদের ছিটানো দুম্বার গোস্তের চালান তো বহু আগেই আসা আরম্ভ করেছিলো (১৯৭০/৮০-এর দশকে)। আর এখন আসছে পারসিক উটের দুধ, দুম্বার গোস্ত ও মরিয়ম খেজুরের চালান! তবে আশ্চর্যের বিষয়, ‘আজহারী’ মৌলভীর মতো আলেমবর্গ পারসিক শিয়াদের ব্যাপারে একদম নীরব। শিয়াদের বলয় সৃষ্টির হুমকির ব্যাপারে যে সব সুন্নী লেবাস-পরিহিত মৌ-লোভী নীরব থাকবেন, তাঁদের সম্পর্কে সুন্নী মুসলমানদের সতর্ক হওয়া অতীব প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমার উদাত্ত আহ্বান, আপনারা সত্যিকার সুন্নী হলে পারসিক উটের দুধ ও দুম্বার গোস্ত সরবরাহকারী ও তাদের মদদপুষ্ট সিপাহিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন (সৎসাহস থাকলে অবশ্য)। কয়েক বছর আগে আমি আমার একটি লেখায় দলিল প্রদর্শন করে দেখিয়েছিলাম যে, হযরত আলী (ক:)’এর বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে মুসলমানদের মধ্যে দুটো দল ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এক দল করবে তাঁর সাথে শত্রুতা, আরেক দল অতি ভক্তি দেখিয়ে অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (দ:) ইমামে আলী (ক:)’এর এই ব্যাপারটিকে পয়গাম্বর ঈসা (আ:)’এর সাথে তুলনা করেছেন। ইহুদীরা তাঁকে (পয়গাম্বরকে) ঘৃণা করে পথভ্রষ্ট হয়েছেন, অপর দিকে ঈসায়ীবর্গ তাঁর প্রতি ভক্তিস্বরূপ তাঁকে ‘খোদা’ বানিয়ে বিচ্যুত হয়েছেন। আগ্রহী পাঠকদের জন্যে আমার ওই লেখাটির লিঙ্ক এখানে দেয়া হলো: https://kazisaifuddinhossain.blogspot.com/.../blog-post.html; আমরা উক্ত রওয়ায়াত/বিবরণের আলোকে দেখতে পাচ্ছি যে, খারেজী গোমরাহর দল ও তাদের উত্তরসূরী নজদী-ওহাবীচক্র হযরতে ইমামে আলী (ক:) ও তাঁর পরিবার-সদস্যদের (আহলে বায়ত-রা:) হেয় করতে অপতৎপর; অপর দিকে, শিয়াপন্থী পারস্যদেশীয় পথভ্রষ্ট গোষ্ঠী তাঁর প্রতি অতি ভক্তি প্রদর্শনের অপচেষ্টারত।
শেষ কথা
আমি তাত্ত্বিক আলোচনা করবো না বল্লেও প্রাসঙ্গিক একটি কথা বলে এই পোষ্টের ইতি টানবো। নজদী ওহাবী/মওদূদী/সালাফীচক্র বা পারসিক শিয়াপন্থী গোষ্ঠী যে মানদণ্ড দ্বারাই বিচার-বিবেচনা করুক না কেন, আল্লাহতা’লা কিন্তু তাঁর নিজস্ব মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন পাক কালামে। সুবিবেচনাশীল সুন্নী মুসলমান সমাজকে আমি এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান জানাই। আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান:
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَـٰئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّينَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقاً
অর্থ: এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূল (দ:)’এর হুকুম মানে, তবে সে তাঁদেরই সঙ্গ লাভ করবে যাঁদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন - অর্থাৎ পয়গাম্বরবৃন্দ, সিদ্দীক্ব (সত্যনিষ্ঠ)-মণ্ডলী, শহীদান ও সৎকর্মপরায়ণ (সালেহীন)-বৃন্দ [সূরা নিসা, ৬৯ আয়াত; নূরুল এরফান]। আম্বিয়া (আ:)’বৃন্দের সম-মর্যাদা কোনো উম্মতেরই হবে না। দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছেন সিদ্দীক্বীন, যাঁদের প্রথম জন হলেন খলীফা হযরতে আবূ বকর (রা:); দ্বিতীয় জন খলীফা হযরতে উমর ফারূক্ব (রা:); তৃতীয় জন খলীফা হযরতে উসমান যিন্নূরাইন (রা:); এবং চতুর্থ জন খলীফা হযরতে ইমামে আলী (ক:)। খলীফা বলতে গোমরাহ’দের ওই দুটো দল মনে করে তাঁরা বুঝি কেবলই রাজ্যের শাসক। তবে তাসাউফপন্থী সুন্নী মুসলমান সম্প্রদায়ের আক্বীদা-বিশ্বাস হলো, তাঁরা তিনটি দায়িত্ব পালন করেছিলেন: ১/ শরীয়তের যাহেরী (ফিক্বহ’র) জ্ঞান বিতরণ/বণ্টন (মুফতীর কাজ); ২/ মা’রেফতের গূঢ় রহস্যপূর্ণ জ্ঞান বিতরণ (পীরের কাজ); এবং ৩/ রাজ্য শাসন [শাহ ওলীউল্লাহ দেহেলভী কৃত ‘ইযালাতুল খাফা’]। অতএব, সঠিক পথপ্রাপ্ত চার জন খলীফার মাক্বাম/স্তর এক্ষণে গবেষণার দাবি রাখে। আজকের দিনের বিক্রি হয়ে যাওয়া মৌ-লোভীদের চামচামির মুখাপেক্ষী এ বিষয়টি মোটেও নয়! [বি:দ্র: মন্তব্য ফোরামে ভদ্রতা কাম্য। ধন্যবাদ]
*সমাপ্ত*

’নবী পাক (দ:)’ সম্বোধন নিয়ে আপত্তি ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা: ফলো-আপ*
দ্বীনী ভাই ও বোনেরা, ওপরের শিরোনামে আমার ২ দিন আগের পোষ্টের কথা আপনাদের নিশ্চয় স্মরণে অছে। এবার ফলো-আপের পালা। কেননা, ওই পোষ্টে বিষয়টির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথা তুলে ধরা হয়নি। আজ তা আলোচনা করবো। আমি শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহেলভী সাহেবের ‘ইযালাতুল খাফা’ বইটির বরাত দিয়েছিলাম, যেখানে তিনি বলেছেন: “খুলাফায়ে রাশেদীন তিনটি দায়িত্ব পালন করেছিলেন: ১/ শরীয়তের যাহেরী (ফিক্বহ’র) জ্ঞান বিতরণ/বণ্টন (মুফতীর কাজ); ২/ মা’রেফতের গূঢ় রহস্যপূর্ণ জ্ঞান বিতরণ (পীরের কাজ); এবং ৩/ রাজ্য শাসন।” আমাদের ফোকাস তথা মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলো দ্বিতীয় পয়েন্টটি।
তাসাউফ-তরীক্বত ও মা’রেফতের জ্ঞান যাঁদের যাঁদের পছন্দ তাঁদের ক্বলব তথা অন্তরে (সীনায়) বিতরণের দায়িত্ব চারজন সঠিক পথপ্রাপ্ত খলীফা বহন করেছিলেন। অর্থাৎ, তাঁরা রূহানী এলম শিক্ষাদাতা মাশায়েখ-এ-কেরাম (রা:)। প্রথম খলীফা হযরতে আবূ বকর (রা:) যখন খলীফা তথা রাসূলুল্লাহ (দ:)’এর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন সকল সাহাবী (রা:)-ই তাঁর কাছে বাইয়া’ত হন। এই আনুগত্য স্বীকার স্রেফ রাজ্য শাসনের বেলায় নয়, বরং তাঁর বেলায়াতের (ওলীত্বের) রূহানী ফয়েয বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান গ্রহণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য; ঠিক যেমনটি কোনো কামেল-মোকাম্মেল পীরের কাছে বাইয়া’ত গ্রহণ করে আধ্যাত্মিকতার রাস্তায় তালিম নেয়া হয়ে থাকে।
সুন্নীয়তভিত্তিক সূফী দর্শনের এই সূক্ষ্ম দিকটি আমাদের সুন্নী আলেম-উলামা খুব একটা আলোকপাত করেন না। অথচ নজদী-ওহাবী ও পারসিক শিয়া গোষ্ঠী দুটো হরদম মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সত্য ও সঠিক তথ্য জানানো অবশ্য কর্তব্য। সেই লক্ষ্যেই আমি খুলাফায়ে রাশেদীনের এ বিষয়টির প্রতি অলোকপাত করলাম। বস্তুতঃ সূফী-দরবেশবৃন্দের রীতিনীতি ওই খেলাফতেরই ধারাবাহিকতায় এসেছে। ব্যতিক্রম শুধু এই যে, তরীক্বতের মাশায়েখবৃন্দ রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত না হয়ে আধ্যাত্মিকতার তালিম দানে নিজেদের প্রবৃত্ত করেছেন। এটা বিশেষায়িত জ্ঞানের শাখা।
*সমাপ্ত*