ব্লগ সংরক্ষাণাগার

শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আমীরে মু’আবিয়া (রা:) প্রসঙ্গ ও ইমামে আলী (ক:)-এর প্রতি লা’নত প্রথা


['Muawiyah and Abusing Imam Ali' by Dr Haddad at sunnah.org]



মূল: ড: জি, এফ, হাদ্দাদ
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়েৎ বিন মূসা

[al-islam@swbell.net কর্তৃক ইমেইলে প্রেরিত আপত্তির জবাব]

আপত্তি: মুআবিয়া যে ইমামে আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, তা এক সর্বজনস্বীকৃত ঐতিহাসিক সত্য।

জবাব: এটাও এক সর্বজনস্বীকৃত ঐতিহাসিক সত্য যে হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আমীরে মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে শান্তি স্থাপন করেন এবং তাঁর প্রতি আনুগত্যের শপথ (বায়াত)-ও গ্রহণ করেন, যা আল-বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ সহীহগ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

সঠিক পথপ্রাপ্ত খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয বলেন, “আল্লাহতালা যাঁদের (পবিত্র) রক্ত দ্বারা আমাদের হাত রঞ্জিত হতে দেননি, আমরা তা আমাদের জিহ্বা দ্বারা ভূলুণ্ঠিত হতে দেবো না।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান:
لَا يُبَلِّغُنِي أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِي عَنْ أَحَدٍ شَيْئًا، فَإِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَخْرُجَ إِلَيْكُمْ وَأَنَا سَلِيمُ الصَّدْرِ.
-          আমার সাহাবাদের ব্যাপারে নেতিবাচক (মন্দ) কোনো কিছু নিয়ে আমার কাছে তোমাদের আসা উচিত নয়, কেননা আমি তোমাদের সামনে পরিষ্কার (মানে নির্ভার) অন্তর ছাড়া যেতে চাই না।[১]

এই হাদীস সর্ব-ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল-তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন। যেসব লোক এই ফিতনা নিয়ে মিন মিন করে, তারা যে হাদীসগুলো শুনতে অপছন্দ করে থাকে, এই হাদীসটি সেগুলোর একটি।

আমি (ড: হাদ্দাদ) আমার শায়খের মুখে শুনেছি এ কথা, “সিংহরা যখন লড়ে, রাস্তার কুকুরেরা তখন চুপ হয়ে যায়।

আপত্তি: সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত সাআদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মুআবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান তাঁকে (সাআদকে) নির্দেশ দেন এবং বলেন,

قَالَ: أَمَّرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا، فَقَالَ: مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا تُرَابٍ، قَالَ: أَمَّا مَاذَكَرْتَ ثَلاَثًا قَالَهُنَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَنْ أَسُبَّهُ.

-          আবূ তোরাব (হযরত আলীর ডাকনাম)-কে লানত/অভিসম্পাত দান হতে কী জিনিস তোমাকে বিরত রাখছে?” সাআদ উত্তর দেন, “আপনার কি স্মরণে নেই যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর তিনটি গুণের কথা উল্লেখ করেছিলেন? এমতাবস্থায় আমি কখনো হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুএর প্রতি অভিসম্পাত দেবো না! [২]

জবাব: আপনার পেশকৃত সুন্নী রেফারেন্সবা উদ্ধৃতিগুলো সবসময়-ই অর্ধ-সত্য, কেননা আপনি কখনো সেগুলো সম্পর্কে সুন্নী উলামাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা তাঁদের উপলব্ধিও উল্লেখ করেন না।
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:

قَالَ الْعُلَمَاءُ الْأَحَادِيثُ الْوَارِدَةُ الَّتِي فِي ظَاهِرِهَا دَخَلٌ عَلَى صَحَابِيٍّ يَجِبُ تَأْوِيلُهَا قَالُوا وَلَا يَقَعُ فِي رِوَايَاتِ الثِّقَاتِ إِلَّا مَا يُمْكِنُ تَأْوِيلُهُ فَقَوْلُ مُعَاوِيَةَ هَذَا لَيْسَ فِيهِ تَصْرِيحٌ بِأَنَّهُ أَمَرَ سَعْدًا بِسَبِّهِ وَإِنَّمَا سَأَلَهُ عَنِ السَّبَبِ الْمَانِعِ لَهُ مِنَ السَّبِّ كَأَنَّهُ يَقُولُ هَلِ امْتَنَعْتَ تَوَرُّعًا أَوْ خَوْفًا أَوْ غَيْرَ ذَلِكَ فَإِنْ كَانَ تَوَرُّعًا وَإِجْلَالًا لَهُ عَنِ السَّبِ فَأَنْتَ مُصِيبٌ مُحْسِنٌ وَإِنْ كَانَ غَيْرُ ذَلِكَ فَلَهُ جَوَابٌ آخَرُ ولَعَلَّ سَعْدًا قَدْ كَانَ فِي طَائِفَةٍ يَسُبُّونَ فَلَمْ يَسُبَّ مَعَهُمْ وَعَجَزَ عَنِ الْإِنْكَارِ وَأَنْكَرَ عَلَيْهِمْ فَسَأَلَهُ هَذَا السُّؤَالَ قَالُوا وَيَحْتَمِلُ تَأْوِيلًا آخَرَ أَنَّ مَعْنَاهُ.

-          উলামাবৃন্দের দৃষ্টিতে সাহাবা-মণ্ডলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মধ্যকার বিভেদ সম্পর্কে দৃশ্যতঃ যেসব রওয়ায়াত (বর্ণনা) উল্লেখ করেছে বলে মনে হয়, সেগুলোকে রূপক বা আলঙ্কারিক অর্থে ব্যাখ্যা করতে হবে। আলোচ্য রওয়ায়াতের কোথাও একথা উল্লেখিত হয়নি যে হযরত আমীরে মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রকৃতই হযরত সাআদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুএর প্রতি অভিসম্পাত দিতে আদেশ করেছিলেন। বরঞ্চ তিনি হযরত সাআদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে স্রেফ জিজ্ঞেস করেছিলেন কোন্ কারণটি তাঁকে ওই অভিসম্পাত দান হতে বিরত রেখেছিলো? তা কি খোদাভীরুতা? তা যদি হয়ে থাকে, তাহলে উত্তম! নাকি ভয় কাজ করছিলো? ইত্যাকার সব প্রশ্ন। এ-ও হতে পারে হযরত সাআদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে এমন কোনো দলের মাঝে দেখা গিয়েছিলো যারা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুকে লানত দিয়েছিলো, আর তিনি ওই দলটিকে তিরস্কার করতে না পারলেও নিজে তা থেকে বিরত ছিলেন। অতঃপর তাদেরকে তিরস্কার করা হলে পরে আমীরে মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত সাআদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে ওই প্রশ্নটি করেন। আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে এই: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুকে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও এজতেহাদে ভুল প্রমাণিত করার বেলায় এবং মানুষের সামনে আমাদের অবস্থান ও এজতেহাদের নির্ভুলতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে কী বিষয়টি তোমাকে বাধাগ্রস্ত করেছে?” [৩]

আপত্তি: ইমামে আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুকে লানত দেয়ার সুন্নাহ (রীতি/প্রথা) সম্পর্কে সহীহ মুসলিমের আরো উদ্ধৃতি নিচে দেয়া হলো, যাতে প্রমাণ করা যায় যে সর্বসমক্ষে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর প্রতি অভিসম্পাত প্রদানের জন্যে মানুষদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হতো। নতুবা তাদেরকে শাস্তির খেসারত পোহাতে হতো।আবূ হাযেম হতে বর্ণিত আছে যে,

عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: اسْتُعْمِلَ عَلَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ مِنْ آلِ مَرْوَانَ قَالَ: فَدَعَا سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ، فَأَمَرَهُ أَنْ يَشْتِمَ عَلِيًّا قَالَ: فَأَبَى سَهْلٌ فَقَالَ لَهُ: أَمَّا إِذْ أَبَيْتَ فَقُلْ: لَعَنَ اللهُ أَبَا التُّرَابِ فَقَالَ سَهْلٌ: مَا كَانَ لِعَلِيٍّ اسْمٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَبِي التُّرَابِ.
-          মদীনার প্রাদেশিক শাসনকর্তা যিনি মারওয়ানের আত্মীয়দের মধ্যে একজন ছিলেন, তিনি হযরত সাহল ইবনে সাআদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে ডেকে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর প্রতি লানত দিতে বলেন। কিন্তু সাহল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তা করতে অস্বীকার করেন। এমতাবস্থায় প্রাদেশিক শাসনকর্তা বলেন, “আপনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুকে (নাম ধরে) লানত দিতে না চাইলে শুধু বলুন - আল্লাহ আবূ তোরাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে লানত দিন।হযরত সাহল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উত্তরে বলেন, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু নিজের জন্যে আবূ তোরাব নামটির চেয়ে অন্য কোনো নাম বেশি পছন্দ করেননি। আর কেউ ওই নামে (আবূ তোরাব) ডাকলে তিনি খুব খুশি হয়ে যেতেন। [৪]

জবাব: এই আদেশ যে লোক দিয়েছিলো, সে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো সাহাবী ছিলো না, আর এটা আপনার কথিত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুকে লানত দেয়ার সুন্নাহ’-ও ছিলো না, বরং ওই লোক ছিলো ফিতনাবাজ এমন একটি দলের সদস্য, যাদের সম্পর্কে হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন,

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ تَكُونُ الثَّلَّةُ  مِنَ الْغَنَمِ أَحَبَّ إِلَى صَاحِبِهَا مِنْ دَارِ مَرْوَانَ.
-          আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, মানুষের সামনে এমন এক সময় শিগগির আসবে, যখন ভেড়ার পালের মালিকের কাছে তার ভেড়ার পাল মারওয়ানের জ্ঞাতিগোষ্ঠী হতে প্রিয় হবে। [৫]

এই রওয়ায়াত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজমুওয়াত্তাগ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবূ হুরায়রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে একই ধরনের আরো বেশ কিছু বক্তব্য আছে, যা আমি তাঁর সম্পর্কে আগামীতে আমার ধারাবাহিক লেখায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো, ইনশাআল্লাহ। 

-- জি, এফ, হাদ্দাদ ক্বাসিউন @cyberia.net.lb

তথ্যসূত্র :
 [১] আবু দাউদ : আস সুনান, ৪:২৬৫ হাদীস নং ৪৮৬০।
(ক) তিরমিযী : আস সুনান, ৬:১৯৩ হাদীস নং ৩৮৯৬।
(খ) আহমদ : আল মুসনাদ, ২:৬৮০ হাদীস নং ৩৮৯৬।
(গ) বায়হাকী : শু‘য়াবুল ঈমান, ৮:২৮৮ হাদীস নং ১৬৬৭৫।
(ঘ) বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, ১৩:১৪৮ হাদীস  নং ৩৫৭১।
(ঙ) বাযযার : আল মুসনাদ, ৫:৪০৬।
(চ) আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ৯:২৬৬ হাদীস নং ৫৩৮৮।
[২] মুসলিম : আস সহীহ, ৪:১৮৭৪ হাদীসনং ২৪০৯।
(ক) তিরমিযী : আস সুনান, ৬:৮৩ হাদীস নং ৩৭২৪।
[৩]  নবুবী : শরহু মুসলিম, বাবু মিন ফাদ্বায়িলি আলী ইবনে আবী তালিব, ১৫:১৭৫
[৪] মুসলিম : আস সহীহ, ৪:১৮৭৪ হাদীসনং ২৪০৯।
[৫] মালেক : মুয়াত্তা, বাবু মা জাআ ফিত ত্বআম ওয়াশ শিরাব ৫:১৩৬৬ হাদীস নং ৩৪৪৪
(ক) বুখারী : আদাবুল মুফরাদ, ১:১৩৩।

              *সমাপ্ত*

সাহাবী আমীরে মু’আবিয়া (রা:)

[Dr. G.F. Haddad's response to a question posed to him regarding 'Sahabi Mu'awiya' (Ra:) at www.eshaykh.com]

হযরতে আমীরে মু’আবিয়া (রা:) সম্পর্কে ড: জি, এফ, হাদ্দাদের ভাষ্য

প্রশ্ন: সালামুন আলাইকুম, হে শায়খ হাদ্দাদ! আল্লাহতা’লা আপনার মঙ্গল করুন। হযরতে আমীরে মু’আবিয়া (রা:)-এর নাম উল্লেখের পরে ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বলার যথার্থতা কতোটুকু, বিশেষ করে ’তারাদ্দি’র (ধর্মত্যাগের) বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে, যেহেতু তাঁর কিছু কাজের ব্যাপারে নারাজি আছে (যেমন - মিম্বরে ইমামে আলী কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহূ’র প্রতি লা’নত তথা অভিসম্পাত প্রথার প্রচলন), আবার যেহেতু এর পাশাপাশি কোনো সাহাবী (রা:)-কে অভিসম্পাত দেয়া ও হেয় করার বিরুদ্ধে উচ্চারিত সতর্কবাণীর বিষয়বস্তুতে পরিণত হওয়াকে এড়াতেও (আমরা) ইচ্ছুক? আরেক কথায়, তাঁকে ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বলে একটা মধ্যম রাস্তা ধরা কেমন হবে? এই আপত্তির প্রতি কীভাবে উত্তর দেয়া যায়, যা’তে বিবৃত হয়: “হ্যাঁ, কোনো সাহাবী (রা:)-কে অবজ্ঞা করা বা হেয় প্রতিপন্ন করা হারাম বটে, কিন্তু তাহলে আমীরে মু’আবিয়া (রা:) কেন হযরত আলী (ক:)-এর সাথে এরকম (আচরণ) করেছিলেন? নিম্নের বিষয়গুলো কি সত্য? ১/ আমীরে মু’আবিয়া (রা:) হযরত ইমাম হাসান (রা:)-এর জনৈকা স্ত্রীকে প্রণোদিত করেছিলেন ইমাম সাহেব (রা:)-কে বিষ প্রয়োগের জন্যে, কিংবা তাঁর বেসালপ্রাপ্তিতে তিনি খুশি হয়েছিলেন? ২/ তিনি রিবা (সুদ)-এর কারবার করতেন, যার কারণে কথিত আছে যে হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:)-এর মতো সাহাবাবৃন্দ (রা:) সিরিয়ায় বসবাস করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন? এবং ৩/ যেখানে কোনো সাহাবী (রা:)-কে অভিসম্পাত দেয়াই যানদাক্বা (ধর্মের প্রতি অন্তর্ঘাতমূলক শত্রুতা) সেখানে সাহাবাবৃন্দ (রা:)-এর কেউ কেউ কেন সার্বিকভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে ‘তালা’উন’ (অভিসম্পাত দান) পর্যন্ত চর্চা করেছিলেন? অধিকন্তু, কেউ যদি বলেন যে হযরত আলী (ক:) হযরত উসমান (রা:) হতেও আধ্যাত্মিকভাবে উচ্চপর্যায়ের (তবে সর্ব-হযরত আবূ বকর বা উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে নন), তাহলে তা কি সুন্নীয়তের গণ্ডিভুক্ত থাকবে, না গোমরাহী হবে? অথবা, যদি প্রশ্ন করা হয় হযরত উসমান (রা:) যে হযরত আলী (ক:)-এর চেয়ে আধ্যাত্মিকভাবে উচ্চ-মক্বামের, তার কী প্রমাণ বিদ্যমান? এমতাবস্থায় আশা করি এসব প্রশ্নের যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন। কতিপয় সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর কিছু কাজ সম্পর্কে (বইয়ে) পড়ে সত্যি বলতে কী, আমরা অশান্তি বোধ করছি। যেমন - পরস্পর পরস্পরকে লা’নত দান এবং যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। আল্লাহ তাঁদের সবার প্রতি রাজি হোন, আমীন। ওয়া সাল্লাল্লাহু ’আলা সাইয়্যেদিনা মুহাম্মদ ওয়া সাল্লাম।

উত্তর: আলাইকুম আস্ সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহ আপনারও মঙ্গল করুন। প্রথমতঃ আমরা আম্বিয়াবৃন্দ বা সাহাবা-মণ্ডলীর নাম উল্লেখ করার পর ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বলি না, বরং যথাক্রমে ‘সাল্লাল্লাহু’ বা ’রাদ্বিয়াল্লাহু’ বলে থাকি। এটা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে থাকলে তা তারই ক্ষতি। ক্ষীণস্বরে প্রশংসা এখানে ‘মধ্যম রাস্তা’ নয়, বরঞ্চ তা ছদ্মাবরণে অবজ্ঞা প্রদর্শন-ই, যা ধর্ম/ঈমানদারির ঘাটতি প্রকাশক। দ্বিতীয়তঃ কোনো সাহাবী (রা:)-এর ব্যাপারে ‘তাঁর কিছু কাজে নারাজি’ প্রকাশ করার কোনো অনুমতি-ই নেই। বরঞ্চ প্রত্যেকেরই নিজ নিজ কাজের ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া উচিত, যেটা কোনো সাহাবী (রা:)-এর জীবনের সামান্য একটি মুহূর্তের সমকক্ষ-ও নয়। তৃতীয়তঃ ‘কোনো সাহাবী (রা:)-কে অবজ্ঞা/হেয় প্রতিপন্ন করা হারাম হলে মু’আবিয়া (রা:) কেন হযরত আলী (ক:)-এর সাথে এরকম আচরণ করেছিলেন?’ - এই প্রশ্নের জবাবে আমরা আমাদের মুর্শীদ মওলানা শায়খ নাযিমউদ্দীন হাক্কানী (রহ:)-এর কথা উদ্ধৃত করবো, যেটা এক দশক আগেও আমরা উদ্ধৃত করেছিলাম; তিনি বলেন: “সিংহরা যখন পরস্পর লড়াই করে, তখন রাস্তার কুকুর চুপ থাকে।” উপরন্তু, ইমাম হাসান (রা:) তাঁর পিতার প্রতি আমীরে মু’আবিয়া (রা:)-এর অভিযোগ সম্পর্কে ওই ধরনের দশ লাখ আপত্তি উত্থাপনকারীর চেয়ে ঢের বেশি জানতেন, তবু তিনি তাঁর সাথে শান্তি স্থাপন করেন এবং তাঁর কাছে বায়া’ত/আনুগত্যের শপথ নেন, যা খোদ রাসূলুল্লাহ (দ:) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং প্রশংসাও করেছিলেন। যে ব্যক্তি এর প্রতি আপত্তি করে, সে শ্রদ্ধা (ও এশক্ব-মহব্বতে)’র ছদ্মাবরণে ফিতনাবাজিতে লিপ্ত। চতুর্থতঃ হযরতে আমীরে মু’আবিয়া (রা:)-এর প্রতি যতো সীমা লঙ্ঘনের দোষারোপই করা হোক না কেন, আল্লাহতা’লা তাঁর প্রতি রাজি; কেননা মহানবী (দ:) স্বয়ং ঘোষণা করেছেন যে বদর ও হুনায়নের জ্বেহাদে অংশগ্রহণকারী সাহাবাবৃন্দ (রা:) সবাই বেহেশতী, আর হযরতে আমীরে মু’আবিয়া (রা:) হুনায়নের যুদ্ধে মুজাহিদ ছিলেন। পঞ্চমতঃ সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর একে অপরের প্রতি প্রয়োগকৃত ভাষার ব্যাপারটিতে মানুষের পক্ষে ওর প্রসঙ্গ বা প্রেক্ষিত বোঝার কোনো উপায়-ই নেই; আর যদি তারা বুঝতেও পারে, তবুও তাঁদের সমকক্ষ পর্যায়ে নিজেদের ভাবার মতো যোগ্যতাও তাদের নেই। অতএব, সাহাবাবৃন্দ (রা:)-কে কেউ বিচার করার চেষ্টা করাটা নিজস্ব ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) ছাড়া কিছু নয়। সর্বোপরি, আল্লাহতা’লা তাঁর প্রিয়নবী (দ:)-এর জন্যে সাথী হিসেবে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-কে পছন্দ করেন। আর তাঁরা প্রত্যেকেই হলেন এই উম্মতের প্রথম আউলিয়াবৃন্দ। তাঁদের কারো সম্মানহানির অপচেষ্টা প্রকৃতপ্রস্তাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:)-এরই প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন বটে। এ কারণেই আহলে সুন্নাত তথা সুন্নী উলামায়ে কেরামের উপদেশ এক্ষেত্রে অমূল্য, আর তাঁরা সবাই বলেছেন: এই বিষয়টি হতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের ধর্মকে আপনারা হেফাযত করুন।

- আলহাজ্জ্ব জিবরীল হাদ্দাদ