ব্লগ সংরক্ষাণাগার

সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮

বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত মান্ধাতা আমলের আইন ও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত

- কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

আমার গতানুগতিক লেখালেখি থেকে দূরে সরে আজ অামি একটি সমস্যার কথা সবার সামনে তুলে ধরবো; বিশেষ করে সরকারের দৃষ্টি এদিকে আকর্ষণ করবো। শিরোনাম দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি বাড়িভাড়াসম্পর্কিত আইন নিয়ে লেখা। হ্যাঁ, এতদসংক্রান্ত আইনটি বর্তমানকালে একদম অচল। দুষ্ট বাড়িওয়ালাদের দ্বারা দফায় দফায় ভাড়া বৃদ্ধি এবং বর্ধিত ভাড়া আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে তাদের ভাড়াটে খেদাও অভিযান ঠেকাতে ঔপনিবেশিক বৃটিশের তৈরি মান্ধাতা আমলের আইন প্রণীত হলেও দুষ্ট ভাড়াটেদের দমনে এ আইন একেবারেই অকার্যকর। বলা বাহুল্য, এ ধরনের মামলা রেন্ট কন্ট্রোল-বিষয়ক বিচারালয়ে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। এগুলো নিষ্পত্তি হতে যুগের পর যুগ অতিক্রান্ত হয়। কখনো কখনো রায়-ই পাওয়া যায় না।

বর্তমান যুগে বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন শহরে। এসব ভবনের ফ্ল্যাটগুলোতে ২০-৪০টি পরিবার বসবাস করে থাকেন। ফ্ল্যাট-মালিকবৃন্দ ভবনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্যে মালিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মালিক সমিতির ব্যবস্থাপনা তাঁদের ভবনের জন্যে অপরিহার্য একটি বিষয়। কেননা কারো পক্ষে এককভাবে এটি করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় সমিতি ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্যে একটি মৌলিক পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই সমিতির নিয়ম-কানুন ফ্ল্যাট-মালিক ও ভাড়াটেবৃন্দ মানতে বাধ্য থাকেন। আর এখানেই যতো বিপত্তি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে আমি প্রত্যক্ষ করেছি। কেননা উক্ত ফ্ল্যাট-মালিক সমিতির কোনো আইনি বৈধতা নেই। তাঁদের আরোপিত নিয়মের লঙ্ঘন হলেও তা বিচারালয়ে বিবেচিত হয় না।

আমি দেখেছি, ফ্ল্যাটে বসবাসকারী ভাড়াটে উচ্ছৃঙ্খল হওয়ার দরুন সমিতির নিয়ম লঙ্ঘন করে। রাত-বিরেতে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়াঝাটি করে প্রতিবেশিদের ঘুম হারাম করে দেয়। স্ত্রী প্রতি রাত ২-৩ টের সময় একাকী গাড়ি চালিয়ে এসে গ্যারাজে প্রতিবেশিদের গাড়ির পাশে পার্কিং করার সময় বাড়ি দিয়ে ডেন্ট ফেলে দেয় এবং নিজের দোষ অস্বীকার করে। অনেক সময় একটি গাড়ির গ্যারাজ বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও দুটি গাড়ি এনে ফেলে রাখে। এছাড়া, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে কাপড় এনে ফ্ল্যাটে মেলা বসায়, যেখানে অচেনা ও অসভ্য নারী-পুরুষের আনাগোনা চলে। ভবনের দারোয়ানদের ধমক দিয়ে এরা ভেতরে প্রবেশ করে থাকে। আবার ভাড়াটের স্ত্রীর প্ররোচনায় ভবনের ছাদে কুরুচিপূর্ণ জামাকাপড় পরিহিতা মডেল তরুণীদের ফটোশূট-ও চলে। ভবনের বাসিন্দাদের বাচ্চারা ছাদে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে না। এ ধরনের অসৎ ভাড়াটেদের কেউ কেউ আবার আশপাশের দোকানপাট ও বাজার হতে অর্থ পরিশোধ বাকি রেখে পণ্য কেনে। পরে পাওনাদারবর্গ পাওনা না পেয়ে ভবনের গেটের সামনে এসে চেঁচামেচি করে। ফলে বাড়ির পরিবেশ দূষিত হয়। এই পরিস্থিতিতে সমিতি কর্তৃক আইনের আশ্রয় নেয়ার কোনো সুযোগ-ও থাকে না।

মান্ধাতার আমলের আইনের কারণে ফ্ল্যাট-মালিকদের পক্ষেও ভাড়াটেদের এই দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অসম্ভব। রেন্ট-কন্ট্রোলে মামলা কবে শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই বিরোধ ভাড়া নিয়ে নয়; এটি একান্তই সমিতির নিয়ম মানার প্রশ্নে। অতএব, সরকারের এখন এ নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। কেননা এতে তৃতীয় একটি পক্ষের (মানে সমিতির) অধিকারের প্রশ্ন নিহিত। আমার মতে, রেন্ট কন্ট্রোল থেকে বাসাভাড়ার মামলাগেুলো সরানোর জন্যে মিউনিসিপাল কোর্ট স্থাপন করা উচিত, যেখানে সমিতির ও প্রতিবেশিদের সাক্ষ্য গৃহীত বা বিবেচনাযোগ্য হবে এবং পুলিশ-ও দ্রুতবিচারের এ রায়গুলো তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করতে সক্ষম হবে। এই ব্যবস্থা বর্তমান সময়েরই দাবি। আমরা আশা করবো, সদাশয় সরকার এ ব্যাপারে আশু ব্যবস্থা নেবেন।