ব্লগ সংরক্ষাণাগার

বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব - এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন

ভূমিকা

আমাদের এই সুজলা-সুফলা প্রাকৃতিক নিসর্গের বাংলাদেশে যে কয়জন ক্ষণজন্মা বিদ্বান-ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, তাঁদের মধ্যে এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন অন্যতম। বিশেষ করে দেশের আইন-জগতে তিনি ছিলেন কিংবদন্তি। দেশখ্যাত আইনবিদমণ্ডলী তাঁকে সম্মানের সাথে সম্বোধন করতেন আইনের encyclopedia (বিশ্বকোষ) হিসেবে। এই জ্ঞানের শাখার এমন কোনো দিক ছিল না যা তাঁর দৃষ্টির আড়ালে ছিল। আইনশাস্ত্রের ছাত্র হিসেবে তিনি আইনের প্রতিটি বিষয়কে এমনভাবে আত্মস্থ করেছিলেন যে, কোন্ আইনের প্রয়োগ কোথায়, কীভাবে হবে তা সঠিকভাবে নির্দেশনা দিতে পারতেন। আইনি বিষয়ে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এতোটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছিল, যা প্রকৃত আইনজীবীর প্রতিচ্ছবি। এ কারণে আইন-জগতের মানুষজন তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয়   

বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরবক্ষে দাঁড়িয়ে আছে সন্দ্বীপ। বৈশিষ্ট্যে অন্যান্য দ্বীপের মতো হলেও এই দ্বীপেই জন্মেছেন দেশের প্রথিতযশা আইনবিদ এ্যাডভোকেট জনাব মোজাম্মেল হোসেন এবং আরো অনেক সূর্য-সন্তানপ্রকৃতির কাছে অসহায় ঝড়-ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এ দ্বীপটির অন্তর্গত অনিন্দ্য সুন্দর একখানি গ্রাম, নাম সন্তোষপুর - যা আপন নামের প্রতি সুবিচারকারী এবং কোনোক্রমেই তার সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ নয়। এখানেই ১৯২০ সালের ১লা জানুয়ারী পিতা জনাব মনিরউদ্দীন মুনশী ও মাতা মোহতারামা জোবেদা খাতুনের ঘরকে আলোকিত করে জনাব মোজাম্মেল হোসেনের ধরণীতলে শুভাগমন। বস্তুতঃ সন্দ্বীপের যে কয়টি বিশিষ্ট পরিবার রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মুনশী পরিবারের সুনাম সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থিত। বংশীয় ঐতিহ্যগত মান-সম্মান, প্রতিপত্তি, সম্পত্তি ও ধনসম্পদের অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি জনাব মনিরউদ্দীন মুনশী ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতে বিচরণকারী এক মহান সিদ্ধপুরুষ ও পুণ্যাত্মা। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িস্থ মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের আউলিয়াকুল শিরোমণি শায়খ গোলামুর রাহমান আল-হাসানী (রহ:)-এর আধ্যাত্মিক ফয়েযপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি। মা মোহতারামা জোবেদা খাতুন-ও ছিলেন এই পথের পথিক। তাই বাবা ও মায়ের আদর্শে লালিত হয়ে জনাব এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন এই মহৎ নীতি-নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষকে নিজের জীবনের একমাত্র আরাধ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আর এর প্রভাব তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে পড়েছিল প্রকটভাবে।

শিক্ষা-দীক্ষা

জনাব মোজাম্মেল হোসেনের শিক্ষা জীবনের শুরু নিজ পরিবারেই। মা মোহতারামা জোবেদা খাতুন এবং বড় ভাই জনাব শামসউদ্দীন আহমদের (চেয়ারম্যান) কাছে তাঁর হাতে খড়ি হয়। এঁরা ছিলেন স্বশিক্ষিত। এঁদেরই জ্ঞানদীপ্ত দিকনির্দেশনায় তিনি ভবিষ্যত শিক্ষা জীবনের পাথেয় খুঁজে পান। বাংলা, ইংরেজি ও অন্যান্য বিদ্যা শেখার আগে তিনি মায়ের কাছ থেকে ইসলাম ধর্মের মৌলিক জ্ঞান আহরণ করেন। বলা বাহুল্য যে, ওই যুগে মক্তবভিত্তিক ইসলামী জ্ঞান এবং আরবী, ফার্সী ভাষা শিক্ষা করা মুসলমান সমাজে প্রচলিত রীতি ছিল, আর জনাব মুনশী মনিরউদ্দীন এসব ক্ষেত্রে ছিলেন বিশিষ্ট জ্ঞান বিশারদ। এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেবের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আরম্ভ হয় নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সন্তোষপুর প্রাইমারি স্কুলে ১৯২৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি সেখানেই পড়ালেখা করেন। এসময় তিনি বৃটিশ শিক্ষা পদ্ধতিতে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে জেলা বৃত্তি লাভ করেন। অতঃপর তিনি কাঠগড় হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি বিশেষ করে অঙ্কে ছিলেন তুখোড়। এছাড়াও অন্যান্য বিদ্যাশাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্ব শিক্ষকবৃন্দসহ সবার নজর কাড়ে। আপন বিদ্যা শিক্ষার পাশাপশি পরহিতৈষী এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব গরিব ছাত্রদেরও পাঠদান করতেন। মা ও বড় ভাইয়ের (পরবর্তীকালে সন্তোষপুর ইউনিয়নের আজীবন চেয়ারম্যান শামসউদ্দীন আহমদ সাহেবের) অনুমতি নিয়ে তিনি দরিদ্র ছাত্রদের বই-খাতা কিনে দিতেন। কাঠগড় হাইস্কুল থেকে তিনি স্বেচ্ছায় ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে কারগিল হাইস্কুলে এসে ভর্তি হন এবং এই বিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা (এনট্রান্স) পাশ করেন।

এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেবের কলেজ জীবন শুরু হয় ফেনী কলেজে। তাঁর বাবা বেসালপ্রাপ্ত (পরলোকে আল্লাহর সাথে মিলনপ্রাপ্ত) হওয়ায় বড় ভাই জনাব শামসউদ্দীন আহমদ চেয়ারম্যান সাহেব তাঁর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, আর তিনি এ ব্যাপারে সর্বাত্মক আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে মোটেও কুণ্ঠিত হননি। সত্যি, জনাব মোজাম্মেল হোসেন ও তাঁর দুই বড় ভাইকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা এঁদের পারস্পরিক টান ও মিলমিশ, সমঝোতা ও শ্রদ্ধাবোধ দেখে অভিভূত না হয়ে পারেননি। ফেনী কলেজে জনাব মোজাম্মেল হোসেনের মূল বিষয় ছিল অঙ্ক। তবে এখানে তাঁর ফুটবল খেলার প্রতি ঝোঁকও দেখা দেয়। শারীরিকভাবে পাতলা লিকলিকে গড়নের হলে কী হবে, তিনি ছিলেন শক্ত, সামর্থ্য ও দক্ষ ফুটবলার, যিনি নিজ জবানি মোতাবেক ৯০ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে পেছনে ফিরে আচমকা শটে গোল করতেন। সন্দ্বীপে ফুটবলের উন্নয়নে তিনি অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কলেজ জীবনেও তিনি গরিব ছাত্রদের বিনামূল্যে পাঠদান করতে থাকেন। আই,এ পাশের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্ক বিভাগে বি,এ-তে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর এম,এ-তে অঙ্ক নিয়ে ভর্তি হন, কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা আর দেয়া হয়নি। এর প্রায় দু বছর পর তিনি সুস্থ হয়ে কোলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ওই সময় বৃটিশ ভারতে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে হিন্দু ও মুসলমান জাতি আন্দোলন করছিলেন। এরই ফলশ্রুতিতে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়, যার পূর্ব অংশ ছিল আমাদের এই পূর্ব বাংলা। এদেশের অধিবাসী হওয়ায় জনাব মোজাম্মেল হোসেন পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাগরিক হন এবং তাঁকে আবারো চূড়ান্ত পরীক্ষা না দিয়ে ভারতের অন্তর্গত কোলকাতা হতে চলে আসতে হয়। দেশে ফিরে এসে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং মাত্র ২১ দিনের পরীক্ষা-প্রস্তুতি নিয়ে সবাইকে বিস্ময়াভিভূত করে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন!

কর্মজীবন 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব সবাইকে অবাক করে ঢাকায় কর্মজীবনের সূচনার পরিবর্তে চট্টগ্রামেই তা শুরু করেন। তিনি এর কারণ হিসেবে বলেন যে নিজ এলাকা তথা সন্দ্বীপ ও চট্টগ্রামের মানুষকে সেবা দেয়াই তাঁর ব্রত। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো বিখ্যাত রাষ্ট্রবিদ ও নেতৃবৃন্দ তাঁকে সরকারি চাকরি গ্রহণ করার পরামর্শ দিলেও তিনি স্বাধীন আইনপেশাকে বেছে নেন। ১৯৪৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম জজ আদালতে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নোয়াখালি জেলা বোর্ডের প্রবীণ রাজনীতিবিদকে হারিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এসময় তিনি আইনপেশা ছেড়ে পুরোপুরিভাবে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োজিত হন, যা আজকালের রাজনীতিবিদদের মধ্যে কদাচিৎ দেখা যায়। চট্টগ্রামে সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটি স্থাপন করে বহু গরিব মেধাবী ছাত্রকে তিনি বৃত্তি প্রদান করেন। এমপি থাকাকালে সন্দ্বীপ থানাকে নোয়াখালি জেলা থেকে আলাদা করে চট্টগ্রাম জেলাধীন থানায় অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু জেনারেল আইয়ূব খাঁনের ক্ষমতা দখল ও মার্শাল’ল জারির পর পার্লামেন্ট ভেঙ্গে গেলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেন এবং আবারো আইনপেশায় মনোনিবেশ করেন।

এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন অত্যন্ত সৎ। কর্মস্থলে তাঁর সততার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় একটি ঘটনায়, যা তাঁর ২৬ বছরের সহকর্মী ও জুনিয়র এ্যাডভোকেট কাজী গোলাম সরওয়ার সাহেবের রচিত ‘আমার শিক্ষককে যেমন দেখেছি’ শিরোনামের প্রবন্ধ হতে জানা যায়। ওই প্রবন্ধে তিনি লেখেন, “সাতকানিয়ার ছিদ্দীক আহমদ সওদাগর নামের এক ব্যক্তি চট্টগ্রাম শিপিং করপোরেশন থেকে ‘বাংলার দূত’ নামক জাহাজ কেনার উদ্দেশ্যে দরপত্র জমা দেয়ার পর তার দরপত্র সর্বনিম্ন হওয়ায় তিনি জাহাজের জন্যে টাকা জমা দেন। ইত্যবসরে অন্য এক ব্যক্তি উক্ত বিক্রির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে তদানীন্তন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি নূরুল ইসলাম সাহেব এ্যাডভোকেট জনাব মোজাম্মেল হোসেনকে শিপিং করপোরেশনের পক্ষে উক্ত মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। মামলায় জিতে ছিদ্দীক সওদাগর ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ও কচি ডাব উপঢৌকনস্বরূপ মোজাম্মেল হোসেন সাহেবের বাসায় নিয়ে যান। কচি ডাব বারান্দায় রেখে তিনি বাসায় প্রবেশ করে ৫০,০০০/- টাকা ভর্তি একখানি প্যাকেট এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেবের প্রতি বাড়িয়ে দেন এবং তাঁকে বলেন, ‘স্যার, এখানে ৫০,০০০/- টাকা আছে।’ তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘এটা কিসের টাকা?’ ছিদ্দীক সওদাগর উত্তর দেন, ‘আমি মামলায় জিতেছি। তাই টাকা দিচ্ছি।’ এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব বলেন, ‘আমি শিপিং করপোরেশনের উকিল। আপনার কাছ থেকে টাকা নেবো কেন? আপনি টাকা নিয়ে চলে যান।’ এমতাবস্থায় ছিদ্দীক সওদাগর আবারো অনুরোধ করলে তিনি বলেন, ‘টাকাগুলো নিয়ে এখান থেকে চলে যান। নতুবা আমি জোরপূর্বক বের করে দেবো।’ সওদাগর সাহেব হতভম্ব হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন, বারান্দায় রাখা কচি ডাবগুলো নিচে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

একই বর্ণনাকারী জনাব কাজী গোলাম সরওয়ার এ্যাডভোকেট এমন আরেকটি মামলার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে আইনবিদ্যার বিভিন্ন শাখায় এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেবের গভীর জ্ঞানের প্রমাণ মেলে। একবার জনৈক মোজাম্মেল হক সাহেবের এক নির্বাচনী আপীল ২য় অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন হয়, যার দায়িত্ব নেন এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব। ওই মামলায় আপীলকারী জনাব মোজাম্মেল হক জয়ী হলে মামলায় অপর পক্ষ ঢাকা হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ফলে এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব তাঁকে রাত সাড়ে দশটার ট্রেনে চড়ে মামলায় হাজির হওয়ার জন্যে ঢাকায় প্রেরণ করেন। পরদিন সকালে ঢাকায় নিযুক্ত আইনজীবীর চেম্বার থেকে তিনি চট্টগ্রামে মোজাম্মেল হোসেন সাহেবকে টেলিফোনে বলেন, ট্রেনে থাকাকালীন কে বা কারা তাঁর প্রতিপক্ষ নূরুল আমিন সাহেবকে কক্সবাজারে গুলি করে হত্যা করেছে। আর সেই হত্যা মামলায় মোজাম্মেল হক সাহেবকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। অতঃপর তিনি ঢাকা থেকে ফিরে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন। কিন্তু ‘বেইল কনফার্ম’ (জামিন নিশ্চিত) করতে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানির দিন ধার্য হলে মোজাম্মেল হক সাহেব সেখানে গিয়ে দেখেন, ফৌজদারি মামলা পরিচালনাকারী অনেক নামী-দামী আইনজীবীকে তাঁর প্রতিপক্ষ আগেভাগেই নিযুক্ত করেছেন। এমতাবস্থায় তিনি এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেবকে এমর্মে জিজ্ঞেস করেন যে কাকে মামলা পরিচালনার কাজে নিযুক্ত করবেন। এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব বলেন, ‘আমি দীর্ঘ চল্লিশ বছর ফৌজদারি মামলা প্র্যাকটিস (পরিচালনা) করিনি। তাই এ মামলায় যাবো না। আপনি বরঞ্চ মোজাফফর খাঁন সাহেবকে নিযুক্ত করুন।’ কিন্তু মামলার তারিখে মোজাম্মেল হক সাহেবের অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে তিনি দায়রা জজ আদালতে অনুষ্ঠিত ওই শুনানিতে উপস্থিত হন। ক্রিমিনাল প্র্যাকটিশনার উকিলবৃন্দ তাঁকে দেখে নানা টিপ্পনি কাটেন। প্রতিপক্ষের যুক্তি পেশ শেষ হলে পরে এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব বিনা প্রস্তুতিতে প্রতিপক্ষ উকিলদের যুক্তি থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে Natural Justice ও Fundamental Right-বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন আরম্ভ করলে আদালতে পিন-পতন নিস্তব্ধতা নেমে আসে। তাঁর অনবদ্য যুক্তিতর্ক পেশের ফলশ্রুতিতেই জামিন নিশ্চিত হয়ে যায়।

আইনশাস্ত্রে জনাব মোজাম্মেল হোসেন এ্যাডভোকেটের পাণ্ডিত্য প্রসঙ্গে এ্যাডভোকেট শামসুদ্দীন আহমদ মীর্জা সাহেব বলেন, মোজাম্মেল হোসেন সাহেব উকিল হিসেবে ড্রাফটিং (মামলা সাজিয়ে লেখা) ও এ্যাডভোকেসি (আদালতে যুক্তিতর্ক পেশ) উভয় ক্ষেত্রেই পারদর্শী ছিলেন। তাঁর হাতের লেখা ছিল অপরূপ। যখন লিখতেন, তখন আস্তে আস্তে লিখতেন। কিছু উকিল ড্রাফটিংয়ে দক্ষ, কিন্তু আদালতে যুক্তি পেশের ক্ষেত্রে অদক্ষ। আবার কিছু উকিল আদালতে যুক্তি পেশের বেলায় দক্ষ, কিন্তু মামলা সাজিয়ে লেখায় অদক্ষ। এই দুটো গুণ একই সঙ্গে খুব কম উকিলেরই থাকে। জনাব মোজাম্মেল হোসেনের মাঝে উভয় গুণের সমাহার ছিল। তিনি যেমন ড্রাফটিংয়ে পারদর্শী ছিলেন, আদালতে নিবেদনের বেলায়ও তেমনি ছিলেন সমান পারদর্শী। তাঁর যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) কখনোই একঘেঁয়ে বা শ্রুতিকটু মনে হতো না। কী বিজ্ঞ হাকিম, কী বিরোধী পক্ষীয় উকিল, কী মক্কেল, তাঁর যুক্তিতর্ক মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতেন। এটা ছিল তাঁর অনন্য বৈশিষ্ট্য। কিছু কিছু উকিল কিছু বিষয়ে পারদর্শী। কেউ ‘ল্যান্ড ম্যাটার’ বা জমিসংক্রান্ত মামলায়, কেউ নির্বাচনী মামলায়, কেউ বাণিজ্যিক মামলায়, কেউ ব্যাংকিং মামলায়, কেউ চাকরিসম্পর্কিত মামলায়, কেউ বা আবার শ্রমিক মামলায়। কিন্তু সবাই সব বিষয়ে দক্ষ নন। এক্ষেত্রে এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব ছিলেন ব্যতিক্রম। সব মামলাতেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টেও ওকালতি করেন। সেখানেও তিনি অল্প সময়ের মধ্যে আইনজীবী হিসেবে আপন প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।

চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ

১৯৮২ সালে জেনারেল হোসেন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, দেশের প্রতিটি বিভাগে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু সরকার তা চট্টগ্রামে না স্থাপন করে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠা করেন। একারণে চট্টগ্রামের আইনজীবীবৃন্দ ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হন। ওই সময় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আলহাজ্জ্ব আহমদ ছগির। জনাব মোজাম্মেল হোসেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিখুঁত যুক্তি দ্বারা চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হন। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে তিনি বহুবার আইনজ্ঞদের প্রতিনিধিদলসহ ঢাকায় আসেন এবং চট্টগ্রামবাসীর কল্যাণে এসব সফরে নিজ অর্থব্যয় করেন। অবশেষে এক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে তিনি চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। যদিও পরে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের এক রায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের লক্ষ্যে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীটি বাতিল করা হয়, তবুও এ ঘটনাটি যুগান্তকারী ছিল। কেননা, এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব পরে চট্টগ্রামভিত্তিক মাসিক আলোকধারা পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন যে আপীল বিভাগে তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের দুজন বিচারক হাইকোর্ট বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণকে সুপ্রীমকোর্টের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্নকারী মনে করে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও প্রকৃতপক্ষে উক্ত ৮ম সংশোধনীতে শুধু হাইকোর্ট বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কথা-ই বলা হয়েছিল, আপীল বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হয়নি। তিনি আরো মত প্রকাশ করেন যে এই বিকেন্দ্রীকরণ হলে দেশের সব অঞ্চলের নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো; বিচারব্যবস্থা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতো; পক্ষান্তরে, রাজধানীতে গিয়ে মামলার বিপুল ব্যয়ভার বহন করতে হতো না এবং এতদসংশ্লিষ্ট হয়রানির শিকার-ও আর হতে হতো না।

বিয়ে ও পরিবার

জনাব মোজাম্মেল হোসেনের ছাত্র জীবনেই তাঁর মা মোহতারামা জোবেদা খাতুন এক পাত্রী পছন্দ করে রাখলে তিনি বিয়ে করতে বাধ্য হন। তাঁর স্ত্রী রেজিয়া বেগম নোয়াখালির হাতিয়া থানাধীন জনাব লুৎফুল করীম ও জনাবা নূরুন নাহারের সম্ভ্রান্ত পরিবারে সবার বড় সন্তান। ১৯৪৬ সালে এই বিয়ে সুসম্পন্ন হয়। এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেবের সন্তান সাতজন; তাঁরা হলেন রোখসানা বেগম, বোরহানা কবীর, মুহাম্মদ আলী ফারূক, মুহাম্মদ আলী হাসীন, মুহাম্মদ আলী রাহীন, জোবেদা হাসনা ও মুনিরা হোসনা। এঁরা সবাই উচ্চশিক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। এঁদের সন্তানরাও সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং উচ্চশিক্ষিত।

আধ্যাত্মিক জীবন             

ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। এই আধ্যাত্ম্য-পিপাসা তাঁকে আপন পীর ও মোর্শেদ চট্টগ্রাম বোয়ালখালিস্থ আহলা দরবার শরীফের আউলিয়াকুল শিরোমণি হযরত মওলানা শাহ সূফী আবূল মোকারেম মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম আল-কাদেরী আল-চিশ্তী (রহ:)-এর সান্নিধ্যে টেনে নেয়। এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেবের সূফীবাদী ধর্মীয় আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন তাঁরই অনেক আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও পরিচিতজন। আজকে ধর্মীয় অঙ্গনে যে উগ্রবাদী প্রভাব বিদ্যমান, তাঁর শান্তিকামী ও কল্যাণকর সূফীবাদী দর্শন-ই তা থেকে একমাত্র পরিত্রাণের পথ।

বেসাল 

মওত বা মৃত্যু একটি সেতু, এক বন্ধুকে অপর বন্ধুর কাছে পৌঁছে (বেসাল) দেয় - পবিত্র হাদীসের এই বাণীতে বিশ্বাসী এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন সাহেব ২০০৩ সালের ২৭ শে জুলাই তারিখ রোববার সকাল সোয়া দশটায় দুনিয়ার সব বন্ধন ছিন্ন করে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে গমন করেন।  
 

  

       

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

জসনে জুলূছের দলীল


জশনে জুলূস বা শোভা যাত্রা ব়্যালী, মিছিল
বের করা সম্পূর্ণ হাদিস সম্মত 

====================

--আলহাজ্ব মুফতী এস এম সাকীউল কাউছার


মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ডের শেষে ' হাদিসুল হিজরত ' শিরোনাম অধ্যায়ে হযরত বরা (রা) হতে বর্ণিত আছে, হুজুর (সা:) যখন মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করলেন, তখন তাঁকে কী রকম স্বাগত জানানো হয়েছিল তা হাদিসের ভাষায় শুনুন:


فصعد الرجال والنساء فوق البيوت وتفرق الغلمان والخدم فى الطرق. ينادون يا محمد يا رسول الله يا محمد يا رسول الله.

অর্থাৎ: তখন মদীনার নারী-পুরুষ, ঘরের ছাদ সমূহের ওপর আরোহণ করেন ৷ ছোট ছেলে-মেয়ে ও ক্রীতদাসগণ মদিনার অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে পড়েন, সবাই ‘ইয়া মুহাম্মদ’, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’, ‘ইয়া মুহাম্মদ’, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’, ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলেন ৷

মুসলিম শরীফের এ হাদিসে ' নারায়ে রেসালত ' ধ্বনি তোলার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়৷ জানা গেল যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা:) 'নারায়ে রেসালত ' ধ্বনি তুলতেন ৷ এই হাদিসে হিজরতে এ কথাও আছে যে, সাহাবায়ে কেরাম 'জুলুস ' বা শোভাযাত্রা ব়্যালী বা মিছিলও বের করেছেন৷

হুজূর (সা:) যখনই কোনো সফর থেকে মদীনা শরীফে ফিরে আসতেন, তখন মদীনাবাসীগণ তাঁকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও সম্বর্ধনা জানাতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে জুলূস বের করতেন৷ [ বোখারী ও মেশকাত দ্রষ্টব্য ]

উল্লেখ্য যে, আরবী 'জলসা ' শব্দের অর্থ হলো বৈঠক বা উপবেশন করা৷ এ শব্দটির বহুবচন হচ্ছে 'জুলূস', যেমন ( جلده ) জলদাহ বহুবচন হচ্ছে (جلود ) জুলূদ, যার অর্থ হচ্ছে বেত্রাঘাত৷

নামাজ-ও আল্লাহর জিকিরের 'জলসা ', যা এক-ই জায়গায় বসে সম্পন্ন করা হয় ৷

আর হজ্ব হচ্ছে জিকিরের 'জুলূস', যা এক বৈঠকে সম্পন্ন করা যায় না, বরং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফিরে সম্পন্ন করতে হয়৷

কুরআন থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, 'তাবুতে ছকীনা ' ( বনী ঈসরাঈলের অতি বরকত-মণ্ডিত 'সমশাদ ' কাঠের নির্মীত একটি বাক্স, যেখানে মূসা (আ:) ও হারূন (আ:)-এর লাঠি, পাগড়ী, পাদুকা ও কাপড়-চোপড় রক্ষিত ছিল) ফিরিস্তগণ জুলূস সহকারে নিয়ে এসেছিলেন৷

হুজুর (সা:)-এর বেলাদত তথা ধরাধামে শুভাগমনের লগ্নে এবং মিরাজের রাতে ফিরিস্তাগণ তাঁর সম্মার্থে 'জুলূস ' বের করেছিলেন৷

সৎ ও পুতঃপবিত্র মাখলুকের (সৃষ্টিকুলের) অনুকরণ করাও পুণ্যের কাজ৷ সুতরাং বর্তমানে জুলূসের যে প্রচলন আছে, তা পূর্বসুরীদের অনুকরণ বিধায় এটি একটি সওয়াব তথা পুণ্যদায়ক কাজ৷

                                                       *সমাপ্ত* 

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬

Allaying of Doubt in Wahhabi Minds (Blog 3)


Some deviant Muslims are of the view that the Apostle of Allah has passed away (?) almost 14 hundred years ago; how can he be Haadir and Naazir (omnipresent) now? Our response would be that Allah has declared in His Koran, Surah al-Baqara, ayah 154: Wa laa taquuluu li maiyyuqtalu fii sabiilillaahi amwaat; bal ahyaa'uw-wa laakil-laa tash'uruun, meaning "And say not of those who sacrifice their lives in the Path of Allah: 'They are dead'. Nay, they are alive, but ye perceive (it) not." This ayah refers to the blessed souls of those Muslims who have sacrificed their lives for the propagation of Islam. Jihaad, that is, striving hard to propagate Allah's religion has two aspects: 1. Fighting the enemies in self-defense. This is referred to in the ayah - Waantasaruu mim-ba'adi maa zulimuu, meaning 'And they (i.e. the Companions) defend themselves only after they are unjustly attacked' (Surah Shu'araa, ayah 227); and 2. Battling with the Nafs i.e. degenerate self/ego. This is an inward struggle that a Believer has to undergo. Once our Prophet (peace be upon him), after coming back home from a battle, said, "We return from the small Jihaad (al-Jihaad al-Asghar) towards the great Jihaad (al-Jihaad al-Akbar)". This great Jihaad has been termed by the Sufi-dervishes as the struggle against the degenerate self or ego of every individual. The Awliyaa al-Kiraam (Sufi-dervishes) perform this Jihaad throughout their blessed lives and become the subjects of the Koranic verse quoted above. In a nutshell, the said ayah is undoubtedly revealed for those blessed souls. They are alive in their shrines, but we perceive it not. Allah forbids us from saying that they are dead (Laa taquuluu li maiyyuqtalu fii sabiilillaah) and this is a Divine prohibition with an imperative verb that resembles prohibitions on alcohol and pork, usury and bribe, homicide and genocide, so on and so forth. If the Awliyaa al-Kiraam are not dead but living as Allah is testifying, then how is it possible that the greatest and dearest friend of Allah, the most exalted Prophet (peace be upon him) of the Almighty is dead? Nay, he is alive in his blessed shrine, but we humans, especially the deviant ones among us cannot perceive this fact. Some of them say this Koranic verse is revealed metaphorically. Let us reiterate that there is nothing metaphorical in this ayah. When Allah says the pious ones are alive (in their shrines), He doesn't mean they are dead. He makes doubly sure by adding the Arabic words Bal (Nay, they are alive) and Laakin  (but ye perceive it not). He knew there would be some who might distort the meaning of this Koranic verse in order to suit their evil desire/intentions. Hence, He has clarified the matter beyond the shadow of any doubt.

Shafa'at (intercession) of the Awliya-i Kiraam is true, a fact that has been corroborated by Muhammad ibn Abd al-Wahhab on page 30 of his book in question. Yet we are producing some of the evidences here:

1. Allah declared in Surah Baqara, verse 255, "Who is there can intercede in His presence except as He permitteth?" (Yusuf Ali's translation)

2. In Suurah Maryam, verse 87, He declares, "None shall have the power of intercession, but such a one as has received permission (or promise) from Allah Most Gracious." (Yusuf Ali's translation)

3. Allah also says, Yawma'izin laa tanfa'ush-shafa'atu illaa man azinalahuur-Rahmaanu wa radiya lahu qawlaan meaning "On that day (of Resurrection) shall no intercession avail except for those for whom permission has been granted by (Allah) Most Gracious and whose word is acceptable to Him." (Surah Taha, verse 109; Yusuf Ali's translation)

It may be noted here that in the three verses quoted above, the Arabic word 'Man' meaning 'person' has been used; and the term 'Rasuul' i.e. Prophet (peace be upon him) hasn't been used. Hence, it is understood that the Awliyaa (Allah's friends meaning Sufi-dervishes) would be able to intercede as well. Our Prophet (peace be upon him) has made it clear in the following Hadith: "Three types of people would be able to intercede on the Day of Judgement: the Prophets; after them the Ulemaa or Learned Ones (in Spirituality and Islamic jurisprudence as well as in Koranic exegesis); after them the martyrs in holy wars (Ibn Maaja).

Islamic Evidence - 8

The so-called prayer claimed to be in accordance with the Sunnah by Ibn Abd al-Wahhab is in fact against the Islamic tradition, because none of the Sahaba (blessed companions of the Prophet) sought intercession in this manner. They used to ask from the Prophet (peace be upon him) directly. Allah says in Surah Kawsar, verse 1, "To thee have We granted the Fount (of Abundance)." Mufti Ahmad Yaar Khan Nayimiyy Ashrafiyy, while explaining the Ayah, says in his book 'Sultanat-i Mustafaa', "The word 'Kawthar' means many things - Hawd-i Kawthar or the fountain of Allah's Blessings, infinite bliss, innumerable Ummah i.e. followers, Maqaam-i Mahmood or praised station, Shafa'at-i Kubraa or highest station of intercession (with Allah), countless Mu'jiza or miracles (of Apostleship), worldly power, conquest of lands, highest station among creations (of Allah) and the whole of the Universe. In other words, everything besides Allah. Whatever the meaning here, Allah has granted him many blessings, and he has accepted those. The one who accepts becomes the owner. The verb 'granted' in this Ayah is past tense (Madhi). Anything that is established partially cannot be abrogated as a whole. Therefore, the statement made in the book 'Taqwiyatul Eimaan' that 'The person whose name is Muhammad or Ali has no ownership of anything' runs counter to Divine Revelations." [Translator: Late Hafez Mawlana Mu'inul Islam]

It is interesting to note that Allama Yusuf Ali, although he did not belong to the Sunni school of Islamic thought, has the same view as Mufti Ahmad Yaar Khan regarding the ayah quoted above. He says in his tafseer: "Kauthar - the Heavenly Fountain of unbounded grace and knowledge, mercy and goodness, truth and wisdom, spiritual power and insight, which was granted to the holy Prophet (peace be upon him), the Apostle of Allah......." [Glorious Quran]. 

Islamic Evidence - 9

Du'a or supplication is the essence of worship as told in a Hadith. But seeking help from the pious ones like the Prophet (peace be upon him) or the Sufi-dervishes is not Du'a. Allama Husayin Hilmi Isik of Turkey wrote in his book 'Reformers in Islam', pages 137-8, "Showing the Ayats, 'Besides Allah, do not pray to anyone, who is neither useful nor harmful to you!' and 'Do not pray to another person together with Allah!' and the Hadith 'Prayer is the essence of worship', they (Wahhabi people) said that he who asked for something from someone besides Him would become an unbeliever. Whereas, the prayer prohibited in the ayah means the 'prayer that is performed as worship' (i.e. ritual prayers) in the Islamic knowledge. This prayer can be performed only to Allah. And a person knowing that only Allah can be worshiped, that He alone can be prayed to, that no one besides Him is creative, that everything is made by Him, is permitted to put prophets and awliyaa as intermediaries and asks help from their souls by thinking that they are the beloved human creatures of Allah who has given their souls the power to help people. They are alive in their graves in a life which we do not know. Their souls have been given miracles and the power to do work. A person who believes so cannot be called a polytheist. However, Muslims ask the souls of the awliyaa to help them in purifying their hearts and to give them fayd and ma'rifa, knowledge which has flowed from Rasuulullah's (alaiyhis-salaam) blessed heart to their hearts." (Allama Husayn Hilmi: http://www.hakikatkitabevi.net/book.php?bookCode=023)

Therefore, it is now evident that Du'a (ritual prayers) and Istigatha (spiritual help) are not the same thing. There is no excuse for mixing the two up. Those who mix up are either ignoramuses or people with an ulterior motive.

Islamic Evidence - 10

Allah declares in Suurah Maa'idah, verses 55-6, "Your (meaning Muslims) wali i.e. friend/helpers are (no less than) Allah, His Apostle (peace be upon him), and the believers - those who establish regular prayers and regular charity, and they bow down humbly (in worship). As to those who turn (for friendship or help) to Allah, His Apostle, and the believers, - it is the Fellowship of Allah that must certainly triumph."(Yusuf Ali's translation)

In the above ayah, Allah tells all believing Muslims that He and His Prophet (peace be upon him) and the pious Awliyaa (Sufi-dervishes) are their Waliyy. The word Waliyy means friend, helper etc. It has been used in this sense here [Jordanian Feras Hamza's Online translation of the Tafseer-i Jalaalayn Shareef translates the word as 'Patron' - http://www.altafsir.com/Tafasir.asp?tMadhNo=1&tTafsirNo=74&tSoraNo=5&tAyahNo=55&tDisplay=yes&UserProfile=0&LanguageId=2]. Awliyaa meaning Sufi-dervishes are the helpers of all believing Muslims. Allah has acknowledged the patronage of His Prophet (peace be upon him) and also of His devout believers alongside His own Patronage. The Wahhabi heretics call this 'patronage' of the Awliyaa polytheism. Thus, according to their fatwa, even Allah Almighty is not exempted from committing polytheism! (Na'uzu billahi min zalik)

It is noteworthy here that this Divinely granted power of patronage, which Allah declares He has granted to His Awliyaa, is the authority they exercise in protecting common Muslims and in looking after their well-being. The latter part of the Koranic verse states that those believers who accept the Patronage of Allah, and also of His Prophet (peace be upon him) and the devout Muslim Sufi-dervishes are the Hizbullaah (Allah's band) and they shall triumph. On the contrary, those who belittle the Awliyaa and do not accept their patronage are not the fellows of Allah, rather they are the followers of Satan and they shall taste ignominious defeat in the end!

Allah, in the Koranic verse quoted above, has allusively commanded us to obey Sufi-dervishes by being in their company in order to become His fellows. One will suffer eternal perdition if one is left out of Allah's fellowship. Henceforth, we should seek the company of the Awliyaa for attaining eternal bliss in the hereafter. Certainly, Allah is All-powerful, Wise and the Most Knowledgeable.

Islamic Evidence - 11 

Al-Bukhariyy quotes a Hadith-i Qudsiyy wherein Allah declares, "Maa zaala 'abdiyy yataqarrabu ilaiyya bin-nawaafili hattaa ahbabtuhuu fakuntu sam'ahu allaziyy yasma'u bihiy wa basrahuu allaziyy yabsiru wa yadahu allaziyy yabtishu bihiyy wa rijlahuu allatiyy yamshiyy bihaa" - meaning "My pious servant comes close to me through supererogatory prayers so much so that I love him; I become his ears with which he hears, his eyes with which he sees, his hands with which he works and his legs with which he moves around." [Narrated by Hazrat Abu Huraiyra Radiya-Allah 'anhu]

Dear readers, the meaning of the term 'nawafil' or supererogatory prayer/deeds mentioned in the Hadith-i Qudsiyy is not restricted to such religious practices only. The term has a broader perspective. In fact it purports the austere ascetic/spiritual endeavor of the Sufi way (Tareeqat) as pointed out by Mawlana Thanaullaah Panipathi in his Persian booklet  "Irshad at-Talibeen." The pious ones of Allah draw near to Him through this spiritual enlightenment and excellence. In the Lord's presence, they see and hear with spiritual powers granted to them by Allah, and they protect and help people with those powers. During one Jihad when the Muslim army was staring at the face of certain defeat, the Prophet (peace be upon him) picked up some sand from the ground and threw it towards the advancing pagan army. The Meccan unbelievers lost their eyesight and as a result the Muslim army overcame defeat. Allah says, ".. And you threw not, [O Muhammad swallAllaahu alayhi wa sallam], when you threw, but it was Allah who threw" [Surah Anfal, 8:17]. Henceforth, we can infer that our Prophet (peace be upon him) knew about the Divine Will of Allah and his working this miracle (Mu'jizah) was in reality the Work of Allah (Tasarruf). Likewise, the Awliyaa or Sufi/dervishes who see, hear and work miracles by Allah's Will have Gnostic Knowledge of all things. However, some individuals among the Muslim community try to explain away the above Hadith-i Qusiyy by saying that the word 'nawafil' in question means 'supererogatory ritual prayers i.e. namaaz.' Our response would be that if it meant 'nafal namaaz' and reciting the 'tasbih' (with beads) only, then multitudes in the Muslim community would have attained such Stations that are bestowed by Allah. But, in reality, the case is not so. Whereas, when Gawthul A'zam Shaykh Ahmad-Ullaah al-Hasaaniyy (may Allah be pleased with him) was being belittled by a Wahhabi cleric, he pacified his disciples, saying, "Let him be a goner, he'll be devoured by ants!" ['Cchorr dow, usko tow chewti ne kha lega' in Urdu]. What a miracle! Ants from all sides came rushing in their millions and literally 'devoured' the impudent mullah. The tongue of the saint is the 'Qalam' i.e. pen for writing destiny of people by Allah. The account of bringing Queen Sheba's throne from Yemen to Damascus in a twinkling of an eye by Prophet Sulaiman (Solomon)'s vizier Asaf bin Barkhiya has been related in the Koran [Sura Naml, 38-40; http://www.altafsir.com/Tafasir.asp?tMadhNo=1&tTafsirNo=74&tSoraNo=27&tAyahNo=38&tDisplay=yes&UserProfile=0&LanguageId=2]. Indeed, Allah is the One who is Omnipresent! Contrary to what the antagonists think, Asaf bin Barkhiya being in Damascus saw the throne in Yemen and brought it over to Hadrat Sulaiman's court in Damascus with the help of Divine powers bestowed upon him [He is referred to in the Koran as the one who possessed 'knowledge of the revealed scriptures']. And that is 'Tasarruf' (working of miracles) by the Awliyaa (Sufi/dervishes)! [To know more kindly refer to my Online article “Seeking help from the pious ones of Allah" at http://kazisaifuddinhossain.weebly.com/seeking-help-from-the-pious-ones-of-allah]

The Wahhabi antagonists say that the saints are absolutely unable to work miracles following their wisaal (reuniting with Allah in the Hereafter). Ignoramuses! The above-quoted Hadith-i Qudsiyy clearly points out that the Sufi/dervishes see, hear and work miracles with Allah's permission. As these Divine Powers are infinite and perpetual, so is the 'Ta'thir' (influence) of the Awliyaa. This is why our Prophet (peace be upon him) declared in a Hadith: "Beware, the Awliyaa will not die." It may be noted here that he used 'mudare' (present and future tenses jointly) while referring to their state of not dying. Henceforth, the Hadith has deep inner meanings. That the Awliyaa (Sufi/dervishes) are spiritually immortal has been declared by our Prophet (peace be upon him) in yet another Hadith: "Idhaa tahayyartum fi'l umuuri faasta'inuu min ahlil Qubuur", meaning "When you are in trouble with your affairs (of the world), seek help from the Awliyaa in shrines!" [Shaykh Abdul Azeez Dehlawi: Fatawa-i Azeeziyya]. 

Islamic Evidence - 12

Imam Yusuuf Nabhani (May Allah be pleased with him) wrote in his book "Shawaahidul Haqq":  

"Some say that the one who regards Rasulullaah (peace be upon him) or another prophet or wali (saint) as an intermediary or visits his shrine and says, for example, 'O Rasuulullaah (alaiyhis-salaam)! I ask for your intercession,' becomes an unbeliever. By putting forth the ayahs such as, 'Do not pray to anyone besides Allah! Who else can ever be more heretical than the one who prays to somebody besides Allah?' and 'Those to whom you pray besides Allah can do nothing. If you ask anything from them they will not hear you. Even if they heard you, they would not answer you.On the Day of Resurrection they will deny your polytheism (shirk),' which descended for unbelievers, these people of bid'ah called the believers 'unbelievers'. Muhammad ibn 'Abd al-Wahhab said, 'These ayahs show that the one who addresses a (saint in) shrine and asks for intercession is a polytheist. Ancient idolaters, too, believed that their idols could make nothing, that Allah alone created everything, but they said that their idols would intercede with Allah for them, and, therefore, they became polytheist. Also, those who ask for shafa'a (intercession) at graves or shrines become polytheists.' These words are very wrong, for the believers neither worship prophets or the awliyaa nor attribute them as partners to Allah, but believe that they, too, are creatures, human beings, who are not worth worshiping and cannot do anything useful or cause any harm (on their own). Because they are His beloved, His select group of human beings and He pities His creations for their sake, the believers want to get benefit through them. Whereas, the polytheists, mentioned in the ayahs believed that the idols were worth worshiping, and they were polytheists because of this wrong belief. When they were told that the idols were neither useful nor harmful, they would say that they worshiped them so that they intercede with Allah for them. It is surprising, indeed, that the true believers are likened to idolatrous unbelievers. If it were polytheism for the believers to ask for intercession, Rasuulullaah (sall-Allaahu alayhi wa sallam), Sahaba-i-Kiraam or the Salaaf as-Saaliheen would have never asked for intercession. As a matter of fact, when praying, the Prophet (peace be upon him) said 'Allaahumma inniy as'aluka bi-haqqis-saa'ileena 'alayka' meaning 'O my Rabb (Lord)! Give me for the right (haqq) of those beloved ones whom Thou gave when they asked!' It is obvious that he asked intercession in these terms. He taught this prayer to his blessed companions and declared, 'Pray in this manner!' It is declared in a hadith quoted in the book 'al-Jami' al-Kabeer' by Imam Jalaaluddeen Suyutiyy and reported by Ibn Ma'aja, 'When leaving your house for the mosque, say this prayer!' Islamic scholars used to say this prayer every day. Imam Tabaraniyy, Imam Ibn Habban and Imam Hakim reported that when interring Fatima bint Asad (May Allah be pleased with her), Hazrat Ali's mother, our Prophet (Peace be upon him) said, 'O my Rabb! Forgive mother Fatima Bint Asad for the right of Thine Prophet and Thine other prophets who came before me!' Also, Ibn Abi Shayba and Ibn al-Birr reported this Hadith with more details as written in the book 'al-Jami' al-Kabeer' by Imam Suyutiyy. There is an evident tawassul in the prayer Rasuulullaah (alayhis-salaam) taught a blind sahabi. These people of Bid'ah, however, prohibit that prayer and say that he who says it becomes an unbeliever. It can never be right for them to say so, for the Sahaba al-Kiraam always said that prayer when Rasuulullaah (alaihis-salaam) was in his worldly lifetime.

"While visiting the Masjid an-Nawawi (blessed mosque in Medina), Ja'far Mansur, the second 'Abbasid caliph, asked Imam Malik (May Allah be pleased with him), 'Shall I turn my face to the Ka'ba or face Rasuulullaah's (alaihis-salaam) shrine when reciting prayers?' [N.B. One stands between the Ka'ba and the Prophet's blessed shrine when standing in the said mosque] Imam Malik (May Allah be pleased with him) said, 'How can you turn your face away from Rasuulullaah (alaihis-salaam)! He is the cause of you and your father Adam (alayhis-salaam)! Turn your face to him and pray through him!' Hazrat Ibn Hajar al-Makki (May Allah be pleased with him) wrote in his book 'Jawhar al-Munazzam' that this report was so authentic that it cannot be rejected. Those who say that Imam Malik said that it was makruh (not preferable) to pray while facing Rasuulullaah's (alayhis-salaam) shrine slander the exalted Imam by saying so.   
 
"It is not right that only prophets (alaihimus-salaam) can be put as intermediaries, for Hadrat 'Umar (radi-Allaahu 'anh), when praying to Allah so that it would rain, put Hadrat Abbas (radi-Allaahu 'anh) as an intermediary [Kindly refer to Dr G.F. Haddad's Online article "Tawassul of Umar through Abbas" at https://www.abc.se/~m9783/o/twua_e.html]. None of the Sahabat al-Kiraam who were present there said anything against him. Since Rasuulullaah (alaihis-salaam) had said, 'Allah has placed the truth into Umar's tongue,' Hadrat 'Umar's putting Hadrat Abbas (radi-Allaahu 'anhumaa) as an intermediary is an apparent evidence, a sound document and was intended to show everybody that it was permissible to put others besides Rasuulullaah (alaihis-salaam) as intermediaries, for everybody knew that it was permissible to put prophets as intermediaries, and there were those who hesitated if it was permissible to put others as intermediaries. Hadrat 'Umar (radi-Allaahu 'anh) taught that it was permissible. If he had prayed through Rasuulullaah (alaihis-salaam), it would have been understood that it was not permissible to pray through others for rain. However, this does not show that the ones who have attained wisaal (i.e. reunited with Allah in the Hereafter) cannot be put as intermediaries, for all as-Sahabat al-Kiraam (revered companions) prayed through Rasuulullaah (sallallaahu alayhi wa sallam) after his wisaal, some examples of which have already been given above.

"Some people, on the one hand, say, 'No one besides Allah can affect. He who says someone else also can affect becomes a disbeliever,' and on the other hand, claim, 'The ones who are alive can be put as intermediaries, but the ones who have attained wisaal cannot.' Their words disagree with each other. Believers deem both the ones who have attained wisaal and the ones who are alive as intermediaries or causes and believe that Allah alone creates and affects everything.

"When saying that it is polytheism to pray through someone, the heretics show examples from the words of ignorant people, who say, e.g., 'Do my such and such affair,' towards the shrine of a wali (saint) who has attained wisaal, or regard ordinary people as awliyaa and expect miracles from them. However, even such ignorant people who express such wrong words and thoughts believe also that no one besides Allah can create beneficial/useful things or the harmful ones. They know they have recourse to the Awliyaa in order to attain blessings from Allah. And the heretics say that they try to prevent their (ignorant people's) wrong, doubtful words. We remind the heretics none of those who express such words ever think that someone besides Allah can create useful or harmful things. They all have recourse to the Awliyaa in order to get a share from their blessings. When they say, 'Awliyaa did (such and such things),' they do not mean the Awliyaa affected. If the heretics want to prevent doubtful words, why do they call all believers 'polytheists'? They say he who has recourse to somebody (tawassul) for any reason becomes an unbeliever. If they are sincere in their word, they should prohibit only the words which they consider as doubtful and teach the manners of tawassul. Moreover, the words which they prohibit are metaphorical words with different meanings, for example, 'This food has satiated me,' and 'This medicine has cured me,' which are interpreted compatibly with reason and Islam by Ahl as-Sunnah scholars as, 'What satiates one is not the food, neither is the medicine that cures him/her, but Allah alone does everything. The food or the medicine is a means created by Allah. When a Muslim says that a thing can affect, the one who hears him/her should interpret it in this way. The fact that the speaker is a Muslim shows that he has expressed it in this meaning, as the scholars of 'Ma'ani' (semantics) have decided unanimously.

"Ibn Taymiyya and his disciples said that tawassul was haraam. The Wahhabis said that it was polytheism. Whereas, the Prophet (peace be upon him), his companions and all Muslims performed tawassul. It is not possible that the whole Ummah (Muslim community) have committed haraam or kufr. It is declared in a Hadeeth, 'My Ummah (Muslims) do not agree on deviation!' Ayah 110 of Suraa al-i Imraan declares, 'You have become the best of Ummahs!' Is it conceivable that all or the majority of such a community would agree on deviation or heresy?

"Ibn Humaam, a Hanafi scholar, said, 'It is better to turn towards the Prophet's (alayhis-salaam) shrine than towards the qiblaa (mosque in Mecca) when sending one's prayers.' To say that al-Imam al-A'zam (Abu Haneefa Rahmatullaahi alayh) said, 'It is better to turn towards the qiblaa' would be a big slander against the exalted Imam, for he wrote in his book 'Musnad' that 'Abdullah ibn 'Umar (Radi-Allaahu anh) said, 'It is Sunna to turn towards the Prophet's (alaihis-salaam) shrine, one's back being towards the qiblaa.' All the Hanafi scholars have reported that al-Imam al-A'zam (Rahmatullaahi alayh) said, 'It is mustahab (laudable) to turn towards the Blessed Shrine.' Rasuulullaah (sallallaahu alayhi wa sallam) is alive in his blessed shrine and recognizes those who visit him. Those who visited him when he was alive (in his worldly life) used to turn towards his blessed face, and the Ka'ba would be behind them. It is certainly the same while visiting the blessed shrine. If, in the Masjid-i Haraam, the mosque around the Ka'ba, a person approaches to tell something to his master or father who stands towards the Ka'ba, he certainly says it facing him, the Ka'ba being behind him. Turning one's face towards Rasuulullaah (alayhis-salaam) is certainly more necessary than turning towards one's father or master. The scholars of the four mazhabs unanimously said that it was necessary to turn towards the Prophet's (alayhis-salaam) blessed shrine when visiting. Imam as-Subki quotes their writings one by one in his book 'Shifa as-Siqam'. That al-Imam al-A'zam was against tawassul, as written in the tafseer of Alusiyy, is not true. No Hanafi scholar has agreed with this statement. All Hanafi scholars have reported that tawassul was mustahab. We should not believe Alusiyy's statement.

"Az-Zurkani Maliki (May Allah be pleased with him) wrote: 'When one says - O my Rabb (Lord)! I pray to Thee through Thine Prophet (peace be upon him). O the Prophet, who is [Allah's] Compassion for humankind! Intercede for me in the presence of Thine Rabb! - Allah accepts this prayer.' [Zurkani Maliki's annotation to 'al-Mawahib al-Ladunniyya in 8 volumes, Beirut, 1393 Hegira/1973 CE] 

"The above proofs eradicate the bid'ah that has come forth at the roots. As Imam al-Bukhari reports, a villager visited Rasuulullaah (alayhis-salaam) and begged him to pray so that it would rain and said, 'We have nobody besides you to trust ourselves to. The place where men will take refuge is their Prophet (peace be upon him) only.' Rasuulullaah (alayhis-salaam) did not say anything against him and, as Anas ibn Malik (Radi-Allahu anh) noted, Rasuulullaah (alayhis-salaam) immediately mounted the pulpit and prayed for rain. The prayer was not finished when it began to rain. It is written in the Saheeh of al-Bukhari that a villager complained about dearth to the Prophet (peace be upon him) and as soon as he began to pray, it began to rain, upon which he said, 'If Abu Talib was alive (today), he would be pleased a lot.'

"Great scholar Hadrat Ibn Hajar al-Makki (may Allah be pleased with him) wrote in his book 'Khairat al-Hisan', "Imam Muhammad ash-Shafi'i, on the days when he was in Baghdad, would visit Imam Abu Haneefa's shrine and greet him. He would pray through the Imam so that his wish would be accepted (by Allah).' And Imam Ahmad ibn Hanbal used to pray through Imam Shafi'i. In fact, when his son, Abdullah, was surprised at this, he said, 'O my son! Imam Shafi'i is like the sun among men! He is like good health for bodies!' In western countries, Imam Malik would be put as an intermediary when praying, and Imam Shafi'i heard this and did not oppose it. Imam Abul Hasan Shaziliyy said, 'The person who asks something from Allah should pray through Imam Ghazzaliyy.' It is written in the book 'Sawaaiq' by Imam Ibn Hajar al-Makki that Imam Shafi'i always prayed through Ahl al-Bayt an-Nabawi. 

"As Allah has made pious deeds and worship means to happiness and high status, so He has made His beloved, select men, Anbiyaa, Awliyaa, and Sulaha, whom He has commanded us to love, intermediaries for the admission of prayers. It is for this reason that the Sahabat al-Kiraam and all scholars have performed tawassul when praying. None of them has denied this. By giving wrong meanings to ayahs and hadeeths and denying many true reports, Ahl al-Bid'ah people have been defiling Muslims' Iman (faith). They have been striving to cause Ahl al-Qiblaa (Muslims) to dissent from the right path. Any person, upon whose lot Allah has endowed auspicion and happiness, will learn the above evidences, thus escape the disaster of being deceived by them." [Imam Yusuf Nabhaniyy's book 'Shawaahidul Haqq.' Translation in English by Allama Husayn Hilmi Isik in his book 'Reformers in Islam.' at http://www.hakikatkitabevi.net/book.php?bookCode=023http://www.hakikatkitabevi.net/book.php?bookCode=023

Islamic evidence - 13

Imam Nasaa'i and Imam Tirmidhiyy (May Allah be pleased with them) reported that a blind man came to the Prophet (peace be upon him) and asked him to pray for him so that he might see again. Rasuulullaah (alaihis-salaam) said to him, "I will pray if you wish, but you can be patient if you like. Patience will be better for you." When the man said, "I would like you to pray, since I have no one to lead me. I am in great difficulties," the Prophet (peace be upon him) said, "Perform ablution and then say (the following prayer), 'O my Rabb (Lord)! I ask from Thee and turn towards Thee through Thine Beloved Prophet (peace be upon him), whom Thou hast sent as a Blessing (upon people). O Muhammad (Sallallaahu alaiyhi wa sallam)! I turn towards my Rabb through thee. O my Allah! Make him (the Prophet) an intercessor for me!'" Also Imam Baihaki (May Allah be pleased with him) reported that the blind man stood up and, having regained his eyesight, walked away (on his own).

Imam Ibn Hajar al-Makki (May Allah be pleased with him), in his book 'Jawhar al-Munazzam', wrote: "Rasuulullaah (alaihis-salaam) himself did not pray but taught him the prayer. He wanted him to turn towards Allah, to entreat Him and put the Prophet (peace be upon him) as an intercessor and wished his prayer to be accepted in this way. He was and has been put as an intercessor both when he was in his worldly life and after his Wisaal (i.e. reunion with Allah in the Hereafter). The Salaaf as-Saaliheen (i.e. pious ones of earlier times), after his Wisaal, said this prayer very often and attained their purposes through it. As reported by al-Tabarani and al-Baihaki (May Allah be pleased with them), a man whose request was not accepted by the Caliph 'Uthmaan (Radi-Allaahu 'anh) went to Hadrat 'Uthmaan bin Hunayf, a sahabi (companion), and asked for his help. He taught him this prayer. When he once again approached the Caliph after saying the prayer, his request was accepted." [Also quoted in Imam Yusuuf Nabhani's book "Shawaahidul Haqq", page 137 (English translation by Allama Husayn Hilmi Isik in his Online book "Islam's Reformers", pages 131-2)]

Islamic Evidence - 14

Imam Ibn Hajar Makki (May Allah be pleased with him), in his book 'Jawhar al-Munazzam', also wrote: "According to an authentic narration, there was drought during the rule of Caliph Hadrat 'Umar (Radi-Allaahu 'anh) and a sahabi (companion) visited the shrine of the Prophet (peace be upon him) and said, 'O Prophet (peace be upon him)! Pray for your Ummah (Muslim community) so that it shall rain! Your Ummah is about to perish.' Rasuulullaah (Sallallaahu alayhi wa sallam) appeared to him in a dream and told him it would rain. And so it did! He also told him, 'Go to 'Umar! Convey my greetings to him! Give him the good news that it will rain. Advise him to act (i.e. rule) mildly.' Caliph 'Umar (Radi-Allaahu 'anh) was very strict in carrying out the commands of the religion. The sahabi told the Caliph about his dream. Caliph 'Umar (May Allah be pleased with him) listened and wept. According to some reports, this sahabi was Hadrat Bilaal ibn Haarith al-Muzaniyy (Radi-Allaahu 'anh). Here, the point is not the dream but the sahabi's praying through Rasuulullaah (alaihis-salaam). As it is seen, Rasuulullaah (alaihis-salaam) can be asked also after his Wisaal, as it was done in his worldly lifetime, so that one's prayer might be answered (by Allah)." [Also quoted in Imam Yusuf Nabhani's book "Shawaahidul Haqq" page 138 (English translation by Allama Husayn Hilmi Isik in his Online book "Islam's Reformers", page 133]   

Islamic Evidence - 15

Our Prophet (peace be upon him) declared in a Hadeeth: "Idhaa tahayyartum fi'l umuuri faasta'inuu min ahlil Qubuur", meaning "When you are in trouble with your affairs (of the world), seek help from the Grave-people (meaning Awliyaa in shrines)!" [Shaykh Abdul Azeez Dehlawi: Fatawa-i Azeeziyya; also Mawlana Hamd-Allah Dajwiyy quotes this Hadeeth in his book "Al-Basai'r li-Munkirit-Tawassuli bi-Ahlil Maqaabir"]. 

In this Hadeeth, the Prophet (peace be upon him) has commanded us to seek help from the 'Ahl al-Qubuur' or 'Grave-people.' The said term in the above Hadeeth is not used for ordinary Muslims, because they also will die and be buried in graves, and their 'a'mal' (meaning deeds) will cease following their death. Henceforth, they are not the subject of this Hadeeth. Rasuulullaah (alayhis-salaam) has elucidated in another Hadeeth who the said 'Grave-people' really are. He declared, "Beware, the Awliyaa will not die." This means their souls will not be dead. In other words, they will not be spiritually dead. They do possess spiritual powers granted to them by Allah Almighty. And these are the powers they exercise in order to help the people in dire need. This is why Imam Ghazzaliyy (May Allah be pleased with him) said, "Asking for spiritual help is valid (in Islam) from such a Wisaal-attaining person, from whom spiritual help was sought in his worldly lifetime." This is Imam Ghazzaliyy, the 'Hujjat al-Islam" i.e. Evidence of Islam, who is expressing his well-researched views on the matter! Thus, the views of Ibn Taymiyya, Ibn Abd al-Wahhab and the lot mean nothing as opposed to the views of this great Imam.

The great Aalim (Islamic savant) Ahmad Shams al-Deen ibn Kamaal Effendi (Rahmaatullaahi alayh), who was the ninth Shaykh al-Islam of the Ottoman Empire, explained in his book "Sharh-i Hadeeth al-Arba'in" the eighteenth Hadeeth,"Idhaa tahayyartum fi'l umuuri faasta'inuu min ahlil Qubuur" ["When you are in trouble with your affairs (of the world), seek help from the Grave-people (meaning Awliyaa in shrines")] as:

"Man's soul is in love with his body. This love does not fade away when he dies and the soul departs from the body. The soul's attraction to, and interest in, the body does not end after death. Therefore, it was prohibited in a Hadeeth Shareef to break the bones of the dead or to step on graves. When one visits a Waliyy i.e. Muslim saint's shrine, the souls of the two meet and much (spiritual) benefit accrues. It was for this benefit visiting of graves is permitted. It has, of course, some other secret advantages as well. The soul of the Muslim in the grave and that of the visitor are like mirrors, which reflect on each other. When the visitor looks at the grave and gives himself up to Allah's 'Qada' (Destiny/fate), his soul perceives this and his knowledge and moral qualities attain 'Fayd' (Divine blessings), which is then reflected to the heart of the 'Waliyy' in the shrine. And the knowledge and 'Fayd' that have come from Allah to the soul of that saint in shrine are reflected to the visitor's soul. The Shafi'i scholar 'Alaauddeen Aliyy ibn Isma'il (Rahimah Allaahu ta'ala), who passed away in 792 Hegira/1329 CE, wrote in his book 'Al-'Alam fiyy Hayaati'l-Anbiyaa 'Alayhimu's-Salaatu wa's-Salaam', 'Prophets' and all (pious) Muslims' souls come down to their shrines and to the places where their names are mentioned. Their souls have a relationship with their shrines. Therefore, grave-visiting is Mustahab (laudable). They hear and reply to those who greet them.' In his book 'Aqeeba', Haafiz (Hadeeth-scholar) 'Abd al-Haqq al-Ashbeeliyy al-Maalikiyy (Rahimah-Allaahu ta'alaa), who passed away in 582 Hegira/1187 CE, quotes the Hadeeth Shareef, 'If anyone visits the grave of a Muslim brother of his and greets him, the one in the grave recognizes him and replies to his greeting.' Shaykh Fakhr al-Deen Ghazanfar al-Tabrizi said, 'I had thought deeply about a matter, but could not understand it. So I sat by the tomb of my Shaykh, Taaj al-Deen Tabrizi (Rahimah-Allaahu ta'alaa), and thought over the matter. Then I solved it.' Some scholars said that 'the ones in graves' mentioned in the Hadeeth Shareef, 'Seek help from the Grave-people,' were the Awliyaa, who, obeying the command, 'Die before you die,' had advanced on the way of Tasawwuf (i.e. Sufi path)." [Quoted from Allama Husayn Hilmi's book "Advice for the Wahhabi", pages 80-1 http://www.hakikatkitabevi.net/book.php?bookCode=015  
         
                                                          (End of Blog 3)




  



     






 





























মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

চার মাযহাব অমান্যকারীদের খণ্ডন

الرد على من اتبع غير المذاهب الأربعة

মূল: ইমাম ইবনে রাজাব হাম্বলী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[Bengali translation of Ibn Rajab's booklet  "Refutation of those who do not follow the four schools" (English translation by Musa Furber, Abu Dhabi)]

উৎসর্গ: পীর ও মোর্শেদ হযরতুল আল্লামা শাহ সূফী সৈয়দ এ, জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ আল-কাদেরী আল-চিশ্তী (রহ:)-এর পুণ্যস্মৃতিতে - বঙ্গানুবাদক

সূচিপত্র

১/ অনুবাদক মূসা ফার্বারের মুখবন্ধ
২/ ইবনে রাজাবের খণ্ডন
৩/ সংক্ষিপ্ত জীবনী
৪/ অনুবাদক পরিচিতি

অনুবাদক মূসা ফার্বারের মুখবন্ধ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিগত ২০০১ হতে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমি বেশ কিছু ফলদায়ক অনুবাদকর্ম সম্পন্ন করেছিলাম। ওই সময় আমি অনুবাদ করি ইমাম নববী (রহ:)-এর রচিত আল-কুরআনের আদববিষয়ক গ্রন্থ, আবূ শুজা’র প্রণীত ’চূড়ান্ত সারসংক্ষেপ’ শিরোনামের পুস্তক, ইমাম জুওয়াইনী কৃত ‘আল-ওয়ারাকাত’ বইটি যার সাথে যুক্ত ছিল আল-মাহাল্লী’র ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ, আল-বুহূতী’র ’যাদ আল-মুস্তাক্কনী’ এবং অন্যান্য বইপত্র, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ছিল ইমাম ইবনে রাজাব হাম্বলীর রচিত ‘আল-রাদ্দ আ’লা মান ইত্তাবা’ গায়র আল-মাযাহিব আল-আরবা’আ’ (চার মযহাব অমান্যকারীদের খণ্ডন) শিরোনামের পুস্তিকা।


লেখক পরিচিতি

ইবনে রাজাবের মূল নাম আবূ আল-ফারাজ আবদ্ আর-রাহমান ইবনে আহমদ। তিনি হাম্বলী মযহাবের ফকীহ ও হাদীসশাস্ত্র বিশারদ। হিজরী ৭৩৬ মোতাবেক ১৩৩৫ খৃষ্টাব্দে বাগদাদ নগরীতে জন্মগ্রহণ করে পাঁচ বছর বয়সেই তিনি দামেশকে এবং তারপর জেরুসালেমে গমন করেন। তিনি সেখানে এবং মক্কা মোয়াযযমা ও মিসরে পড়ালেখা করেন। অবশেষে তিনি দামেশকে প্রত্যাবর্তন করেন, যেখানে তিনি তাঁর ছাত্রদের পাঠদান করতেন। তাঁর শায়েখদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আস্ সুবকী (রহ:), আল-ইরাকী ও ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা। হাদীসশাস্ত্রে অবদানের ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ, বিশেষ করে ইমাম নববী (রহ:)-এর ‘হাদীসে আরবাঈন’ গ্রন্থের শরাহ (ব্যাখ্যামূলক পুস্তক) লেখার জন্যে। ‘ফাতহুল বারী’ শিরোনামে সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ লেখা আরম্ভ করলেও তিনি তা শেষ করে যেতে পারেননি। ইবনে রাজাবের সম্মানে ইমাম ইবনে হাজর (রহ:) তাঁর নিজস্ব শরাহকে ওই শিরোনামে উৎসর্গ করেন। হাম্বলী মযহাব অনুযায়ী বের করা নিয়ম-কানুন হতে ফেকাহ-শাস্ত্রীয় বিদ্যায় তাঁর পাণ্ডিত্য দৃশ্যমান হয়।

ইবনে রাজাব হিজরী ৭৯৫ মোতাবেক ১৩৯৩ খৃষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি আপন করুণা বর্ষণ করুন।

পুস্তিকা পরিচিতি

ইবনে রাজাবের ‘চার মযহাব অমান্যকারীদের খণ্ডন’ পুস্তিকাটি ইসলামী উলামা-এ-কেরাম, বিশেষ করে মুজতাহিদ ইমামবৃন্দের অনুসরণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার প্রতি তাকিদ দেয়। এর প্রথমাংশ ইসলামী ইতিহাসে এজতেহাদের ক্রমবিবর্তন এবং মুসলমান সমাজ কীভাবে মুজতাহিদবৃন্দকে ইসলামী জ্ঞানের কর্তৃত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেন, সে বিষয় নিয়ে ব্যাপৃত। দ্বিতীয়াংশটিতে শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে হাম্বলী মযহাবের অনুসারী শিক্ষার্থীদের প্রতি ধর্মীয় জ্ঞান সম্পর্কে উপদেশ বিধৃত।

এই পুস্তিকার পাঠকবৃন্দ লক্ষ্য করবেন যে ইবনে রাজাব ওইসব লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছেন, যারা কোনো বিশেষ মযহাবের অনুসারী বলে দাবি করে, কিন্তু নিজেদেরকে পূর্ববর্তী উলামাদের প্রজন্মগুলোর সমকক্ষ বা তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ মনে করে, আর প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার অধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও পূর্ববর্তীদের সিদ্ধান্তগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে। যদিও এই পুস্তিকা ৭০০ বছর আগেকার, তবু এটা আজকের একবিংশ খৃষ্টাব্দের ধর্ম সংস্কারকদের কথা মাথায় রেখেই যেন রচিত হয়েছে।

এতে অনেক সাহাবী, তাঁদের উত্তরসূরী ও নেককার পূর্ববর্তী হক্কানী উলামার নাম উল্লেখিত হয়েছে (এঁদের সবার প্রতি আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক)। এঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও সংযোজনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই অনুবাদ অসংখ্যবার সংস্কৃত ও রূপান্তরিত হয়েছে। আমি যখন এটা অনুবাদ করি, তখন অনভিজ্ঞ ছিলাম, যা স্পষ্ট প্রতীয়মান। আমি আজকে যা করে থাকি, সে অনুযায়ী মূলের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি। একটি দিক ঘাটতি থেকে গিয়েছে, যেমন আল-কুরআনের তেলাওয়াত-সংক্রান্ত অক্ষর-পদ্ধতি ও পঠন-রীতি (যথাক্রমে হুরূফ কেরআত)। ইনশা’আল্লাহ এগুলো কুরআন মজীদ-বিষয়ক জ্ঞানের ওপর প্রকাশিতব্য একখানা গ্রন্থে আরো ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা হবে।

আল্লাহতা’লা ইবনে রাজাবকে পুরস্কৃত করুন। এই পুস্তিকার পাঠকদের প্রতিও তিনি তাঁর করুণা বর্ষণ করুন, আর এর থেকে ফায়দা লাভকারীদের মধ্যে আমাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করুন। আমি যেখানে সফল হয়েছি, তা একমাত্র আল্লাহ পাকের অনুগ্রহেই; আর যেখানে ব্যর্থ হয়েছি, তা আমার নিজস্ব ঘাটতির কারণেই।

মূসা ফার্বার
আবূধাবি
জুন ৩০, ২০১৫ খৃষ্টাব্দ।

ইমাম ইবনে রাজাব কর্তৃক চার মাযহাব অমান্যকারীদের খণ্ডন  

মহান আল্লাহ পাকের নামে আরম্ভ, যিনি করুণাশীল ও দয়াবান। তাঁর কাছেই আমরা সাহায্য চাই।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতা’লার প্রতি, যিনি বিশ্বজগতের মহাপ্রভু; এই সুপ্রশংসা বারংবার তাঁরই প্রতি পেশকৃত, আমাদের মহাপ্রভু যেমনটি পছন্দ করেন এবং যা’তে তিনি রাজি (সন্তুষ্ট) থাকেন। তিনি আশীর্বাদধন্য করুন তাঁর প্রিয় হাবীব ও পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে, যিনি উম্মী নবী, আম্বিয়া (আ:)-মণ্ডলীর সীলমোহার এবং খোদাভীরুদের ইমাম; যিনি সত্য, সঠিক ধর্ম ও চিরস্থায়ী, ঐশী সমর্থিত এবং সুরক্ষিত (হেফাযতপ্রাপ্ত) খোদায়ী বিধান প্রচারের সুমহান দায়িত্বপ্রাপ্ত। এটা এমনই এক ঐশী বিধি-বিধান যা মহানবী (দ:)-এর উম্মতের একটি অংশ বা দল এ সত্যের অনুসরণে সদাসর্বদা বিজয় লাভ করবেন; তাঁরা মহাপ্রলয় দিবস অবধি এ সত্যের প্রত্যাখ্যানকারীদের দ্বারা পরাভূত বা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। [হুযূর পূর নূর (দ:) ঘোষণা করেছেন - لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ - মুসলমানদের একটি দল সবসময়-ই সত্যের ওপর অটল, অবিচল থাকবেন। এ হাদীস অন্ততঃ ১৬ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন, যাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন সর্ব-হযরত মুগীরা, সওবান ও জাবের (আল্লাহ তাঁদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট হোন)। বর্ণনাকারীদের পূর্ণ তালিকার জন্যে দেখুন #১৪৫। নমুনা বর্ণনাগুলোর জন্যে দেখুন মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী কৃত ’সহীহ আল-বুখারী’, ’ফাতহুল বারী’ সংস্করণ #৭৩১১; মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ প্রণীত ’সহীহ মুসলিম’, ৫ম খণ্ড, দারুল ফিকর, কায়রো, মাতবা’আ ঈসা আল-বাবি আল-হালাবী কর্তৃক পুনর্মুদ্রিত ১৯৫৬ সংস্করণ, ১৯৮৩ সংস্করণ, #১৫৭, ১৯২০-২১, ২৩; আহমদ বিন হাম্বল রচিত ’আল-কিতাব আল-মুসনাদ’, ৫:২৭৮, ২৭৯; এবং অন্যান্য কেতাব। - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]

প্রারম্ভিক বক্তব্য:

কেউ একজনের তিরস্কার আমার কাছে পৌঁছেছে; বর্তমানকালের কিছু মানুষ যারা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) বা অন্য কোনো বিখ্যাত ইমামের মযহাবের অনুসারী হওয়ার দাবি করে কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মযহাবগুলো থেকে বিচ্যুত হয়, আমি যে তাদের সমালোচনা করে থাকি তারই প্রতি এই ভর্ৎসনা উদ্দিষ্ট হয়েছে। তিনি দাবি করেন, যে ব্যক্তি এরকম করে তার সমালোচনা করা যাবে না। কেননা, ওই ব্যক্তি হয়তো ’মুজতাহিদ’ [এজতেহাদ হচ্ছে ধর্মীয় জ্ঞানে যোগ্য ও কর্তৃত্বসম্পন্ন কোনো বিদ্বানের প্রয়োগকৃত গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত; মুজতাহিদ এরকম এজতেহাদ প্রয়োগে যোগ্য আলেম। এব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানার জন্যে ’মাতন আল-ওয়ারাকাত’ ও ‘শরহে মাতন আল-ওয়ারাকাত’ গ্রন্থগুলো দেখুন। - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট] হতে পারে, তার কাছে সত্য বলে প্রতীয়মান কোনো কিছুকে সে অনুসরণ করছিল; নতুবা অন্য আরেকজন মুজতাহিদকে সে অনুকরণ করছিল, যার দরুন তাকে এর জন্যে দায়ী করা যায় না।

এমতাবস্থায় আমি বলি, সাফল্য একমাত্র আল্লাহতা’লার কাছ থেকেই আগত; সাহায্য তাঁর কাছেই চাওয়া হয়, আর তাঁরই ওপর নির্ভর করা হয়, এবং তাঁর (প্রদত্ত) মাধ্যম ব্যতিরেকে কোনো শক্তি-ই নেই।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মহান আল্লাহতা’লা এই উম্মতের জন্যে তাঁদের ধর্মকে হেফাযত করেছেন, যে হেফাযত অন্য কোনো ধর্মকে তিনি মঞ্জুর করেননি। এই উম্মতের ধর্ম হতে যে সব রীতি অদৃশ্য হয়ে যাবে, তা নবায়নের জন্যে আর কোনো নবী/পয়গম্বর আসবেন না, যেমনটি এসেছিলেন আমাদের (মহানবীর) পূর্ববর্তী পয়গম্বর (আ:)-বৃন্দ তাঁদের ধর্ম নবায়নের বেলায়। ওই সময় যখন-ই কোনো পয়গম্বরের তিরোধান হতো, অমনি আরেকজন তাঁর পরে ধর্ম নবায়ন করতে আবির্ভূত হতেন। [সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন -  مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَـٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّينَ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيماً - মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন, বরঞ্চ তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সমস্ত পয়গম্বরের মধ্যে সর্বশেষ (আল-কুরআন, ৩৩:৪০)। মহানবী (দ:) এরশাদ করেন - لاَ نَبِيَّ بَعْدِي - নিশ্চয় আমার পরে আর কোনো নবী নেই (সহীহ আল-বুখারী, #৪৪১৬; সহীহ মুসলিম, ২৪০৪; আহমদ বিন হাম্বল কৃত আল-মুসনাদ, ১:১৮২, ১৮৩; ৩:৩৩৮; ৬:৩৬৯, ৪৩৮। - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট] 

আল্লাহতা’লা এই দ্বীনকে হেফাযতের নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং ওয়াদা করেছেন এ মর্মে যে এতে চরমপন্থী তথা সীমা লঙ্ঘনকারীদের পরিবেশিত দূষণীয় প্রথা, দ্বীন নির্মূলের অপচেষ্টাকারীদের কূট-কৌশল এবং গণ্ডমূর্খদের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পরিশুদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি যুগেই সংস্কার প্রবর্তিত হবে। [মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান, “সত্যপন্থী মুসলমান প্রজন্ম প্রত্যেক (পূর্ববর্তী) উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে এই জ্ঞান গ্রহণ করে তা বহন করবেন। তাঁরা সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিচ্যুতি, ধর্ম নির্মূলের অপচেষ্টাকারীদের কূট-কৌশল ও গণ্ডমূর্খদের অপব্যাখ্যা রহিত করবেন।” এই হাদীসটি বর্ণনা করেন সর্ব-হযরত আবূ হুরায়রা (রা:), আবূ মাসউদ (রা:), আলী (ক:), উসামা বিন যায়দ (রা:) এবং মু’আয বিন জাবাল (রা:)। - অনুবাদক মূসা ফার্বার]

সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা এরশাদ করেন:

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا ٱلذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

অর্থ: “নিশ্চয় আমি অবতীর্ণ করেছি এই কুরআন এবং নিশ্চয় আমি নিজেই সেটার সংরক্ষক” (আল-কুরআন, ১৫:৯)। এই আয়াতে তিনি তাঁর ঐশী কেতাব সংরক্ষণের অঙ্গীকার করেছেন। ফলে কেউই আজ পর্যন্ত এ কেতাব থেকে একটি বাক্যও সংযোজন বা বিয়োজন করতে সক্ষম হয়নি।

কুরআন মজীদের হেফাযত 

মহানবী (দ:)-এর (যাহেরী/প্রকাশ্য) জিন্দেগীতে তাঁর উম্মত যাতে সহজে আল-কুরআন শিখতে ও মুখস্থ করতে পারেন, সেজন্যে তিনি বিভিন্ন ‘হুরূফ’ তথা পঠন-রীতি বা পদ্ধতি ব্যবহার করে তা তেলাওয়াত করতেন। তাঁর উম্মতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বয়স্ক মানুষ, মহিলা, কম বয়সী ছেলে ও মেয়ে এবং সেসব পুরুষ যাঁরা (জীবনে) কখনোই কোনো বই পড়েননি। তাই তাঁদের খাতিরে তিনি কুরআন হেফয তথা মুখস্থ করার এমন এক সুবিধাজনক পদ্ধতি খুঁজে বের করেন যা দ্বারা সাতটি ‘হুরূফ’ তথা পঠন-রীতির সাহায্যে তিনি তাঁদের কাছে তেলাওয়াত করতেন। এটা হযরত উবাই বিন কায়স (রা:) ও অন্যান্যদের বর্ণিত হাদীসে বিবৃত হয়েছে। [সর্বজনবিদিত একটি মতানুযায়ী, এই সাতটি ’আহরূফ’ বা পঠন-পদ্ধতি কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় তথা বহুল প্রচলিত আরবী ভাষায় চালু হয়েছিল। এসব পদ্ধতির মধ্যকার কিছু পার্থক্য অর্থের দিক দিয়ে কোনো একটি শব্দের মূলগত বিভিন্নতা ব্যতিরেকে স্রেফ উচ্চারণেই বিভিন্নতা ছিল। তেলাওয়াতের এই সাতটি পদ্ধতি প্রসিদ্ধ কেরআত তথা পঠনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়, যদিও ‘আহরূফ’ ও আমাদের পরিদৃষ্ট বর্তমানকালের সংরক্ষিত প্রথাগত কেরআতের মধ্যে নিখুঁত কোনো মিল নেই। এতে এ কথা বোঝায় না যে আসহাব-এ-কেরাম (রা:) তাঁদের (নিজ নিজ) কথিত ভাষানুযায়ী যেমন খুশি তেমন কুরআন তেলাওয়াত করতেন। কেননা, আল-কুরআনের সারমর্ম ও পঠন উভয়ই এর অবতীর্ণ হওয়া অংশ বটে, আর দুটোই মহানবী (দ:) হতে (আমাদের কাছে) হস্তান্তরিত হয়েছে। অতএব, কোনো সাহাবী (রা:) যিনি মহানবী (দ:)-এর কাছ থেকে সরাসরি একখানা আয়াতের তেলাওয়াত শুনেছেন, তিনি অপর কোনো সাহাবী (রা:) কর্তৃক আরেকটি পঠন-রীতিতে ওই একই আয়াতের তেলাওয়াত শুনলে তাঁর পক্ষে শঙ্কিত হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। উদাহরণের জন্যে দেখুন সহীহ বুখারী #৪৯৯১; সহীহ মুসলিম #২৮১, ৮১৯;  আহমদ বিন হাম্বল কৃত আল-মুসনাদ, ১:২৬৪, ২৯৯, ৩১৩; ৫:১২৭, ১২৯ - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট] অতঃপর যখন ইসলামের বাণী পৃথিবীর বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলমান সম্প্রদায় দূরবর্তী দেশগুলোতে পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হন, তখন প্রতিটি দলই তাঁদের কাছে যে কুরআন তেলাওয়াতের পদ্ধতি পৌঁছেছিল সে অনুযায়ী তেলাওয়াত আরম্ভ করেন। তাঁরা কুরআন মজীদের পঠন-পদ্ধতির ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন এবং যখনই হজ্জ্ব ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে তাঁরা মিলিত হতেন, তৎক্ষণাৎ কুরআনে অবস্থিত কিছু শব্দের উচ্চারণ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য দেখা দিতো।

পূর্ববর্তী আম্বিয়া (আ:)-এর উম্মতদের মতো এই উম্মত-ও তাঁদের কেতাব নিয়ে মতপার্থক্যে জড়াতে পারেন, এই আশঙ্কা বোধ করে খলীফা হযরত উসমান (রা:)-এর শাসনামলে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) উম্মতদের দ্বারা কেবল একটিমাত্র পঠন-পদ্ধতিতে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন। তাঁরা উপলব্ধি করেন যে এটা জনস্বার্থে করা প্রয়োজন, আর তাই তাঁরা অন্য সব পঠন-রীতির ‘মাসাহিফ’ পুড়িয়ে ফেলেন [দেখুন সহীহ আল-বুখারী, ৪৯৮৭]। এটা আমীরুল মু’মেনীন হযরত উসমান বিন আফফান (রা:)-এর অন্যতম একটা গুণ, যার জন্যে সর্ব-হযরত আলী (ক:), হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা:) ও অন্যান্য গণ্যমান্য সাহাবী (রা:) খলীফার উচ্চসিত প্রশংসা করেন।

মহানবী (দ:)-এর জমানায় হযরত উমর ফারূক (রা:) একটি আয়াতের (তেলাওয়াত) বিষয়ে হিশাম বিন হাযেম ও জনৈক কাতেবের কড়া সমালোচনা করেন। ওই কাতেব রাসূলুল্লাহ (দ:) হতে প্রাপ্ত আয়াতগুলো লিপিবদ্ধ করতো; তার অন্তরের ঈমান সুদৃঢ় ছিল না এবং সে এ কারণে ধর্মত্যাগ করেছিল, আর ওই অবস্থাতেই মারা গিয়েছিল। [ইমাম ইবনে রাজাব হয়তো আবদুল্লাহ বিন সা’আদ বিন আবি সারব (রা:)-কে উদ্দেশ্য করে থাকতে পারেন। তিনি-ই রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর কাতেবদের মধ্যে প্রথম কুরাইশী লেখক। তিনি কিছুকাল পরে ধর্মত্যাগ করেন, কিন্তু মক্কা বিজয়ের দিনে ধর্মে ফিরে আসেন।- অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]    

মহানবী (দ:)-এর বেসালের পরে এই উম্মতের মধ্যে যদি আল-কুরআন পাঠের ক্ষেত্রেই উচ্চারণগত মতপার্থক্য বিরাজ করে, তাহলে উম্মত সম্পর্কে আমরা কী ধারণা পোষণ করবো? এ কারণেই উম্মতের জ্ঞান বিশারদবৃন্দ খলীফা উসমান (রা:) মুসলমানদেরকে যে পঠন-রীতির অধীনে সমবেত করেছিলেন, সেটা ছাড়া বাকি সব রীতি পরিত্যাগ করেন। তবে উলামাদের মধ্যে কেউ কেউ মুসলমানদের এ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন: সর্ব-ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও মালেক (আল্লাহ তাঁদের প্রতি করুণা বর্ষণ করুন) হতে এমনি একটি অভিমত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও মতপার্থক্য রয়েছে নামাযে কুরআন পাঠ, না অন্যত্র পাঠ, না শুধু নামাযেই কেরআত প্রশ্নে। [বর্ণিত আছে যে হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) এ রকম অব্যাহতি দিয়েছিলেন। দেখুন আবূ ঈসা আত্ তিরমিযী প্রণীত ‘সুনানে তিরমিযী’, ৫ম খণ্ড, দারুল এহএয়া আল-তুরাত আল-আরবী, বৈরুত; কায়রোতে পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ, ৩১০৩ - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]

প্রশ্ন যাই হোক না কেন, এই উম্মত এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে না যে কেউ যদি (হযরত ইবনে মাসউদের মতো) ধর্মীয় প্রথাসিদ্ধ পঠন-রীতি অনুযায়ী কুরআন এমনভাবে তেলাওয়াত করে, যেটা এই সর্বসম্মতভাবে গৃহীত ‘মুশাফ’-এর সাথে মতভেদ সৃষ্টি করে, এবং যদি সে দাবি করে যে তার পঠন-পদ্ধতিটি হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রা:)-এরই গৃহীত রীতি, যার ওপর খলীফা উসমান (রা:) মুসলমানদেরকে একতাবদ্ধ করেছিলেন, কিংবা যদি সে দাবি করে যে তা হযরত যায়দ (রা:)-এর পঠন-পদ্ধতির চেয়েও যোগ্যতর, তাহলে সে এক অন্যায্য দাবি উত্থাপনকারী, সীমা লঙ্ঘনকারী এবং শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি বলে সাব্যস্ত হবে। এ ব্যাপারে মুসলমান উলামাদের একে অপরের মধ্যে কোনো দ্বিমত-ই নেই।

বস্তুতঃ যে ক্ষেত্রে মতানৈক্য বিদ্যমান তা হলো, ওই লোক হযরত ইবনে মাসউদ (রা:)-এর মতো এমন কোনো অক্ষর পাঠ করে কি না - এ কথা স্বীকার করেই যে হযরত ইবনে মাসউদ (রা:)-এর পঠিত ওই অক্ষরটি-ই খলীফা উসমান (রা:)-এর ‘মুশাফ’-এর খেলাফ।

সুন্নাহ’র সংরক্ষণ 

রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সুন্নাহ এই উম্মতের মাঝে বিরাজমান এবং আল-কুরআনের মতোই তা তাঁদের অন্তরে হেফয করা (স্মৃতিপটে গেঁথে ফেলা) হয়েছে। কিছু উলামা ‘মুশাফ’ যেভাবে লিখেছেন, তেমনি এটাও লিপিবদ্ধ করেছেন। অপরদিকে, অন্যরা এটার লিপিবদ্ধ করাকে নিষেধ করেছেন। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মানুষের দ্বারা এর মুখস্থ করা এবং শুদ্ধতার ব্যাপারে বড় মতপার্থক্য বিদ্যমান।

সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর যুগের পরে বেদআতী ও গোমরাহ এক দল লোকের আবির্ভাব হয় যারা নতুন বিভিন্ন বিষয় ধর্মের মধ্যে পরিবেশন করে এবং মহানবী (দ:)-এর ব্যাপারে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সুন্নাহ’কে রক্ষার্থে আল্লাহ পাক-ও একদল আলেম সৃষ্টি করেন যাঁরা (সত্যের বিপরীতে) মিথ্যা, খামখেয়ালিপনা ও ভুল-ভ্রান্তির পার্থক্য বুঝতে সক্ষম হন। তাঁরা সুন্নাহ’কে সর্বোচ্চ মাত্রায় পরিশুদ্ধ করেন এবং তা নিখুঁতভাবে মুখস্থ করেন।

উলামাবৃন্দ এরপর সমস্ত সুন্নাহকে একত্রিত করে সংকলন করেন এবং হাদীসসমূহকেও সংকলন করেন, আর এভাবেই এসব জ্ঞানের শাখার প্রসার ঘটে। সহীহ তথা বিশুদ্ধ হাদীস সংগ্রহের কারণে দুজন ইমামের (সংকলিত) বইয়ের ওপর উলামাবৃন্দ নির্ভর করেন। এঁরা হলেন আবূ আবদিল্লাহ আল-বুখারী (রহ:) ও আবূল হুসাইন [মুসলিম] বিন আল-হাজ্জাজ আল-কুশাইরী (রহ:)। এঁদের পরে সুন্নাহ-সম্পর্কিত বাকি বইগুলো, বিশেষ করে আবূ দাউদের কৃত সুনান, আবূ ঈসা (তিরমিযী)-এর জামেউ’ (তিরমিযী), আন্ নাসাঈ এবং এরপর ইবনে মাজাহ শরীফের ওপর উলামাবৃন্দ নির্ভর করেন।

সহীহ হাদীসের অন্যান্য কেতাব দুজন শায়খের (সর্ব-ইমাম আল-বুখারী ও মুসলিম) হাদীসগ্রন্থগুলোর পরে সংকলন করা হয়, তবে সেগুলো দুজন শায়খের (শর্তের) মানদণ্ড পর্যন্ত পৌঁছেনি। এ কারণে (কতিপয়) মুহাদ্দীস উলামা (মুহাদ্দীস আল-হাকীমকে) তিরস্কার করেন, যিনি ওই দুটি হাদীসগ্রন্থের একখানি পরিপূরক বই লেখেন এবং সেটার নাম দেন আল-মুস্তাদরাক। জনৈক মুহাদ্দীস মাত্রা ছাড়িয়ে অভিযোগ করেন যে ওই বইয়ে তাঁদের, অর্থাৎ, মুহাদ্দেসীনবৃন্দের (দ্বারা হাদীস সহীহ বিবেচিত হওয়ার) শর্ত পূরণ করার মতো একটি হাদীস-ও নেই। অপর এক মুহাদ্দীস (হাদীসশাস্ত্র বিশারদ) তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন যে আল-মুসতাদরাক বইটিতে অনেক সহীহ হাদীস বেছে নেয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো, অনেক সহীহ হাদীস তাতে বেছে নেয়া হয়েছে ঠিকই, যা তাঁদের (অভিযোগকারী উলামাদের) শর্ত পূরণ করে না, কিন্তু আবূ ঈসা তিরমিযী ও তাঁর মতো মুহাদ্দেসীনের শর্ত পূরণ করে; কিন্তু ওইসব উলামার শর্তানুযায়ী এগুলো সহীহ হাদীস নয়।

আল-বুখারী (রহ:) ও মুসলিম (রহ:) উভয় মুহাদ্দেস কর্তৃক কোনো হাদীস পরিত্যাগ করার ঘটনা একেবারেই বিরল, যদি না তাতে কোনো গোপন ত্রুটি বিদ্যমান থাকতো। যেহেতু কোন্ হাদীস ত্রুটিপূর্ণ ও অনির্ভরযোগ্য তা বিচার করার জ্ঞানের ক্ষেত্রে ওই দুজন ইমামের মতো বিদ্বানের অভাব রয়েছে (অর্থাৎ, তাঁরা ক্ষণজন্মা), সেহেতু আমরা তাঁদের দুটো গ্রন্থের ওপর নির্ভর করি, আস্থা রাখি এবং শরণাপন্ন হই; অতঃপর ওপরোক্ত অন্যান্য বইয়ের শরণাপন্ন হই। তাঁদের পরে কোনো হাদীস নির্ভরযোগ্য না দুর্বল, তা শ্রেণিকরণে কারো কথা গৃহীত নয়; ব্যতিক্রম শুধু তাঁরাই, যাঁদের জ্ঞান, দক্ষতা ও হাদীসশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য সর্বজনবিদিত, তবে এঁরা বিরল। বাকি সবাই মূলতঃ ওপরোক্ত বইগুলোর ওপরই নির্ভরশীল এবং (হাদীসের) সূত্র সেগুলোতে খুঁজে পেতেই সন্তুষ্ট।

ফেকাহ-বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলোর সংরক্ষণ 

বৈধ ও অবৈধ বিষয়াদি সংক্রান্ত শরয়ী সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে বলতে হয়, সাহাবা-এ-কেরাম (রা:), তাঁদের উত্তরসূরীবৃন্দ ও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের উলামাবৃন্দের মধ্যে এসব বিষয়ে অনেক মতপার্থক্য ছিল। প্রাথমিক যুগে ইসলামী জ্ঞান ও ধর্মভিত্তিক ফিক্কহী সিদ্ধান্ত (ফতোওয়া) প্রদানে সর্বজন পরিচিত যে কোনো (মুজতাহিদ) আলেম ওইসব বিষয়ে তিনি যা সত্য বলে বিবেচনা করতেন, সে অনুযায়ী ফতোয়া জারি করতেন; আর ওই আলেমের দলের বাইরে (অনুরূপ এজতেহাদ প্রয়োগকারী) অন্য কেউই তাঁদের সমালোচনা করতে পারতেন না। এটা হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-কে যখন বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরই অনন্য সিদ্ধান্তের কারণে সমালোচনা করা হয়, ঠিক তারই অনুরূপ ঘটনা [এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মো’তা তথা ক্ষণস্থায়ী বিয়ে। দেখুন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল-যাহাবী কৃত ‘তাযকেরাতুল হুফফায’, ৪র্থ খণ্ড, ২ দারুল মা’রেফা, বৈরুত (তারিখবিহীন), ১:১৭০-৭১; আল-যাহাবী প্রণীত ‘মীযান আল-এ’তেদাল ফী নাক্কদ আল-রিজাল’, ৪র্থ খণ্ড, দারুল মা’রেফা, পুনর্মুদ্রিত, বৈরুত, ১৩৮২ হিজরী, ২:৬৫৯, ৬:৩৩১ - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]। তাঁকে যে ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তাঁর অনুসারীদেরকে তার চেয়েও বেশি সমালোচনা করা হয়। যেমন ইবনে জুরায়জ বসরায় এলে পরে মুসলমান সর্বসাধারণ তাঁকে সেখানকার প্রধান মসজিদে প্রবেশ করতে দেখে হাত তুলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন এবং হযরত ইবনে মাসউদ (রা:)-এর সাথীদের কাছ থেকে তাঁরই গৃহীত বিভিন্ন বিষয়ের অনিয়মের ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে মহাপ্রভুর দরবারে ফরিয়াদ/অভিযোগ করেন - যতোক্ষণ না তিনি তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার আগে এগুলোর মধ্য হতে অনেক সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন। এটা ছিল এমনই এক যুগ যখন অধিকাংশ মানুষ ধর্ম ও বিবেক দ্বারা পরিচালিত হতেন।

ওই সময় এই বৈশিষ্ট্য-ই সর্বসাধারণকে জ্ঞানের দাবিদার অথচ গণ্ডমূর্খ ও অযোগ্য লোকদের (ধোকাপূর্ণ) কথার খপ্পর হতে রক্ষা করেছিল। অতঃপর এক সময় ধর্ম-ধার্মিকতা ও বিবেক ম্লান হতে থাকে। জ্ঞান ও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ফতোওয়া জারি বা তার যোগ্যতা দাবি করাটা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। পূর্ববর্তী যুগের যে কেউ আপন বিবেচনায় সত্য জেনে ফতোওয়া জারি করার অবস্থাটা যদি পরবর্তী যুগেও বিদ্যমান থাকতো, তাহলে ধর্মের মধ্যে আর কোনো নিয়ম-নীতি অবশিষ্ট থাকতো না; আর এতে হালাল পরিণত হতো হারামে, হারাম পরিণত হতো হালালে [যেমনটি বর্তমানকালের লা-মযহাবী মৌ-লোভীদের মধ্যে দেখা যায় - বঙ্গানুবাদক]। প্রত্যেকেই যা চাইতো তা-ই ফতোওয়া দিতো এবং আমাদের ইসলাম ধর্ম আমাদেরই পূর্ববর্তী দুটি ঐশীগ্রন্থের অনুসারী (ইহুদী ও খৃষ্টান) লোকদের আকীদা-বিশ্বাসে পরিণত হতো।

এমতাবস্থায় আল্লাহতা’লার ঐশী হেকমত তথা জ্ঞান-প্রজ্ঞানুযায়ী তিনি ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং হেফাযত করেন, আর মানুষের জন্যে ইমামবৃন্দকেও নিয়োগ করেন। তাঁরা হলেন ফেকাহ-বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিদ্বান ও হাদীস বিশারদদের ইমামমণ্ডলী, যাঁদের জ্ঞান, উপলব্ধি এবং ফিক্কহী সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছুনোর যোগ্যতা সম্পর্কে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শরীয়তের আইনি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ তাঁদের ওপর আস্থা রেখেছেন এবং এতদসংক্রান্ত এলমী ফায়সালার জন্যে তাঁদেরই শরণাপন্ন হয়েছেন। আল্লাহ পাক এমন কয়েকজন পুণ্যাত্মা সৃষ্টি করেন যাঁরা ইমামবৃন্দের মযহাবগুলোকে পরিশুদ্ধ করেন এবং মযহাবের নীতিমালাও প্রণয়ন করেন, যার ফলে প্রত্যেক ইমাম আল-মযহাবের ফিক্কহী পদ্ধতি, মৌলিক নীতিমালা ও বিস্তারিত নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠিত হয় - যতোক্ষণ না হালাল ও হারাম বিষয়গুলোর মৌলিক নীতিমালার সাথে জারিকৃত ফতোওয়াগুলোর যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

আল্লাহতা’লার (প্রিয়) ঈমানদার বান্দাদের প্রতি তাঁর এ এক মহা অনুগ্রহ ও দয়া এবং তাঁরই রেওয়াজ-মাফিক নিয়মগুলোর একটি যে তিনি এই ধর্মকে হেফাযত করেছেন। যদি তা না হতো, তাহলে মানুষেরা সবচেয়ে আজব আজব জিনিস দেখতে পেতেন: প্রত্যেক নির্বোধ, মাথা গরম, বে-আদব ও ভণ্ড লোক, যে নিজের মতামত সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করে, সে নিজেকে সকল ইমামের সেরা এবং উম্মতের পথপ্রদর্শক দাবি করে বসতো; আর এ-ও দাবি করতো যে মানুষদেরকে তারই প্রতি শরণাপন্ন হতে হবে এবং অন্য কারো প্রতি তাঁরা আস্থাশীল হতে পারবেন না।

আল্লাহর প্রশংসা, তাঁরই করুণার বদৌলতে এই মহাবিপদের এবং ভারী বোঝার দ্বার হয়েছে রুদ্ধ। আর এই ব্যাপক বিচ্যুতি-ও হয়েছে রহিত। এটা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রতি তাঁরই মহা অনুগ্রহ, সুন্দর আচরণ ও করুণা।

এতদসত্ত্বেও কিছু লোকের আবির্ভাব হয় যারা নিজেদেরকে এজতেহাদের পর্যায়ে উন্নীত বলে দাবি করে, আর জ্ঞানের ব্যাপারে কিংবা ওই ইমামবৃন্দের কাউকে অনুসরণ সম্পর্কে লাগামহীন কথাবার্তা বলে। তাদের কারোর কারোর এ জাতীয় আচরণ সহ্য করা হয়, তাদেরই ওই দাবির আপাতঃ প্রতীয়মান সত্যতার কারণে। অন্যান্যদের বেলায় তাদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত হয় এবং তাদের দাবির ব্যাপারে তাদেরকে মিথ্যেবাদী সাব্যস্ত করা হয়। (এজতেহাদের) এই পর্যায়ে পৌঁছুতে অক্ষম অন্যান্যদের বেলায় ওই (চার) ইমামের যে কোনো একজনের তাকলীদ তথা অনুসরণ করা এবং উম্মতের বাকি সবার মতোই ধর্মের অনুশীলন করা একান্ত অপরিহার্য।

কোনো নির্বোধ বে-আদব লোক হয়তো বলতে পারে:

আপত্তি: নির্দিষ্ট (মুজতাহিদ) উলামাবৃন্দের মতামত অনুসরণে মানুষদেরকে কীভাবে আটকে রাখা যায়? আর তাঁদেরকে কীভাবেই বা এজতেহাদ প্রয়োগ, বা ধর্মের অন্যান্য মুজতাহিদবৃন্দের অনুকরণ হতে বিরত রাখা যায়?

জবাব: সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) যেভাবে সব অঞ্চলের মানুষদেরকে কুরআন তেলাওয়াতের একটি পঠন-রীতির ওপর ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং বাকি পদ্ধতিগুলোর ব্যবহার রহিত করেছিলেন এই বিবেচনায় যে এ ছাড়া সার্বিক স্বার্থ অপূর্ণ থেকে যাবে, আর বাকি পঠন-রীতিগুলো চালু থাকলে মানুষেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এজতেহাদের বিষয়টিও ঠিক সে রকম একটি ব্যাপার।

হালাল ও হারামসম্পর্কিত ফতোওয়া ও ফিক্বহী সিদ্ধান্ত-ও এই রকম বিষয়। যদি নির্বাচিত ইমামদের এজতেহাদের অধীনে সাধারণ মানুষকে না আনা হতো, তাহলে ধর্মের মধ্যে বিচ্যুতি (গোমরাহী) দেখা দিতো; ব্যক্তিগত নেতৃত্বের খায়েশ লালনকারী প্রত্যেক নির্বোধ গোস্তাখ লোকই নিজেকে মুজতাহিদবৃন্দের দলে অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করতো; সে কোনো নতুন ধারণার জন্ম দিয়ে তা প্রাথমিক যুগের পূর্বসূরীদের প্রতি আরোপ করতো; হয়তো তা হতে পারতো বাঁকা (পথ), যেমনটি যাহেরীয়্যা গোষ্ঠীর কারো কারো বেলায় ঘটেছিল অহরহ; অার এটা হতেও পারে (তাদের) পূর্বসূরীদের কারো ভুল, যার দরুন তাদের একটি দল (তা) পরিত্যাগের ব্যাপারে একমত হয়েছিল। 

আল্লাহতা’লা যা (অমোঘ) বিধান করেছেন এবং প্রসিদ্ধ ইমামবৃন্দের চার মযহাব অনুসরণে মানুষদেরকে যেভাবে পরিচালিত করেছেন, সার্বিক কল্যাণ তাতেই নিহিত রয়েছে।

আপত্তি: আল-কুরআনের সাতটি পঠন-রীতির একটির ওপর মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা আর তাঁদেরকে মযহাবগেুলোর চার ইমামের (আইম্মায়ে মযাহিববৃন্দের) মতামতের অধীনে আনার মধ্যকার পার্থক্য হলো, ওই সাতটি পঠন-রীতির অর্থসমূহ (প্রায়) অনুরূপ বা কাছাকাছি  কোনো বিষয় ছিল এবং এসব অর্থ এই (একটিমাত্র) অক্ষর হতেই গৃহীত হয়েছিল। পক্ষান্তরে, চার মযহাবের (চার) ইমামবৃন্দের মতামত কিন্তু একই বিষয় নয়, কেননা তাঁদের ঐকমত্য এমন ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব যা সত্য হতে বহু দূরে। 

জবাব: একদল উলামা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, এই উম্মত (মুসলিম সমাজ)-কে আল্লাহতা’লা কখনোই দালালাত তথা পথভ্রষ্টতার ওপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না। এর সপক্ষে অনেক হাদীস বিদ্যমান।

কিন্তু যদি ধরেও নেয়া হয় যে এরকম (বিভ্রান্তি) ঘটেছে, তথাপিও তা অত্যন্ত বিরল এক ঘটনা; আর তা একমাত্র এমন এক মুজতাহিদের চোখেই ধরা পড়তে পারে যিনি তাঁদের (আইম্মায়ে মযাহিবের) চেয়েও বেশি জানেন। এটা একেবারেই অনুপস্থিত বা বিরল। অধিকন্তু, ওই মুজতাহিদ যদি থেকেই থাকেন, তাহলে তাঁর দৃষ্টিতে যা সত্য বলে বিবেচিত, তা-ই তার অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয় হবে। কিন্তু বাকি সবার ক্ষেত্রে (চার মযহাবের চার ইমামের) তাকলীদ তথা অনুসরণ বাধ্যতামূলক; আর তা নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য-ও। তাঁদেরকে অনুসরণকারী মানুষেরা তাঁদের সবাইকে বা কয়েকজনকে অনুসরণ করলে পাপ হবে না।

আপত্তি: কিন্তু এতে তো ভুল কোনো কিছুর অনুসরণে কতিপয় ইমামকে অনুকরণের দ্বার উন্মুক্ত হবে।             

জবাব: একটা গোটা সমাজ (উম্মাহ) মিথ্যেবাদী হতে পারেন না, বরঞ্চ যারা মতভেদ করে তারাই নিশ্চয় তিরস্কারযোগ্য। উপরন্তু, কোনো ভুল এই উম্মতের ওপর অপ্রত্যাশিতভাবে এসে পড়তে পারে না। আর যদি তা এসেই পড়তো, তবে তা অধিকাংশ সময় একেবারেই বিরল বিষয়ের ক্ষেত্রে হতো। কিন্তু মুসলমানদের সর্বজনীন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এটা তাঁদের বিশ্বাস করার অনুমতি নেই যে চার মযহাবের ইমামবৃন্দ, যাঁদেরকে ইসলামের সুদীর্ঘ সময়কাল যাবত অনুসরণ করা হয়ে আসছে, তাঁরা কোনো গোমরাহী বা ভ্রান্তির ওপর ঐকমত্য পোষণ করেছেন। কেননা, এটা এই উম্মতের প্রতি জঘন্য অপবাদ, যা থেকে আল্লাহ পাক একে রক্ষা করেছেন।

আপত্তি: আমরা স্বীকার করি যে সাধারণ মানুষের দ্বারা এজতেহাদ প্রয়োগকে বাধা দিতে হবে। কেননা, এতে সবচেয়ে বড় ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। কিন্তু বিখ্যাত ওই চার ইমাম ছাড়াও অন্যান্য অনুকরণীয় মুজতাহিদ ইমামের অনুসরণকে বাধা দেয়ার বিষয়টি আমরা স্বীকার করি না।         

জবাব: এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়ার কারণগুলো আমরা ইতিপূর্বে ব্যাখ্যা করেছি। এটা এই কারণে যে অন্যান্য অখ্যাত মযহাবগুলোকে সংস্কার করা হয়নি; আর হয়তো তাদের প্রতি এমন কিছু আরোপ করা হয়েছে, যা তারা বলেনি, কিংবা (তাদের কথা থেকে) ধরে নেয়া হয়েছে যা তারা উদ্দেশ্য করেনি। তাদের মযহাবগুলোর পক্ষ সমর্থনের জন্যে কেউই অবশিষ্ট নেই, অথবা সেগুলোতে যেসব ভুল-ভ্রান্তি হয়েছিল, তা-ও চিহ্নিত করার কেউ নেই, যা প্রসিদ্ধ চার মযহাবের সাথে বৈপরীত্য রাখে।

আপত্তি: চার মযহাবের মতোই যদি অন্য কোনো ইমামের মযহাবকে সংরক্ষণ, সংস্কার ও স্মৃতিভুক্ত করা হয়, তাহলে সে সম্পর্কে আপনি কী বলবেন? 

জবাব: প্রথমতঃ এক্ষণে এরকম কোনো কিছুর অস্তিত্ব-ই খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা যদি ধরেও নেই যে এ ধরনের কিছু ঘটেছিল, আর সেটাকে অনুসরণ করার এবং সেটার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অনুমতিকে যদি স্বীকারও করে নেই, তথাপিও তা অনুমতিপ্রাপ্ত হবে না - যতোক্ষণ না কেউ (মানে মুজতাহিদ ইমাম) দৃশ্যতঃ সেটার সাথে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করে, আইন-কানুন মেনে ফতোওয়া জারি করে এবং সেটার পক্ষ সমর্থন করে।

প্রখ্যাত (চার ইমামের) কোনো একজন ইমামের প্রতি যদি কোনো ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে সংশ্লিষ্টতা (আনুগত্য) প্রদর্শন করে কিন্তু গোপনে অন্য কারো সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে এবং তারই মযহাব তথা পদ্ধতির প্রতি দৃঢ় আস্থা রাখে, তাহলে এর অনুমতি একেবারেই নেই। এটা এক ধরনের মোনাফেকী/কপটতা এবং অসত্য বিবরণ প্রদান-ও বটে। বিশেষ করে এমন ব্যক্তি যদি ওই বিখ্যাত মযহাবের অনুসারীদের জন্যেই নির্ধারিত দানের অর্থ গ্রহণ করে, কিংবা মানুষদেরকে ধোকা দেয় এ বিষয়ে বিশ্বাস করিয়ে যে সে গোপনে যে মযহাবের প্রতি অনুগত সেটার অনুসরণে জারিকৃত তার ফতোওয়াগুলো বুঝি (প্রকৃত-ই) প্রসিদ্ধ ওই ইমামের মযহাব অনুযায়ী দেয়া হয়েছে।

এটা নিশ্চিতভাবে অনুমতিপ্রাপ্ত নয়। বরঞ্চ এটা উম্মাহ’র সাথে ধোকাবাজি এবং উম্মতের উলামাবৃন্দের প্রতি মিথ্যেচার [দেখুন (মূল বইয়ের) পৃষ্ঠা ৫৪১ - অনুবাদক মূসা ফার্বার]। ইসলাম ধর্মের ইমামবৃন্দ যা বলেননি তা যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি আরোপ করে, কিংবা তাঁরা যা বলেছেন তার পরিপন্থী কোনো কিছু তাঁদের প্রতি আরোপ করে, তবে সে মিথ্যেবাদী সাব্যস্ত হবে এবং শাস্তিযোগ্যও হবে। একই অবস্থা বিরাজ করবে যদি সে কোনো নির্দিষ্ট মযহাবের অনুসরণে একখানি কেতাব লেখার সময় ওই মযহাবের প্রসিদ্ধ ইমামের কোনো কথাকে তারই গোপনে অনুসরণকৃত ইমামের বক্তব্য বলে চালিয়ে দেয়। আর এক্ষেত্রেও একই অবস্থা হবে যদি ওই বইটি কোনো নির্দিষ্ট মযহাবে সীমাবদ্ধ না হয় এবং লেখক বাহ্যতঃ কোনো ইমামের অনুসারী হয়ে গোপনে অপর কোনো ইমামের অনুসরণ করে; আর তার গোপনে অনুসরণকৃত ইমামের অভিমত ব্যক্ত করার সময় বাহ্যিকভাবে অনুসরণকৃত মযহাবের সাথে সেটার মতপার্থক্য খোলাসাভাবে ব্যাখ্যা না করে।

এগুলোর সবই অনুমতির অযোগ্য জালিয়াতি ও ধোকাবাজি, যা (মুজতাহিদ) উলামাবৃন্দের মযহাবগুলোর প্রতি কলঙ্ক লেপন করে এবং বিভ্রান্তি ছড়ায়।

অধিকন্তু, ওই ধরনের লোক যদি এজতেহাদ প্রয়োগের সামর্থ্য দাবি করে, তবে তা আরো কূটচালপূর্ণ ও তিক্ততর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ও একগুঁয়েমিপূর্ণ হবে। এটা (এজতেহাদের যোগ্যতার দাবি) একেবারেই অনুমতিপ্রাপ্ত নয়, ব্যতিক্রম কেবল সেই ব্যক্তি-ই যিনি এজতেহাদের সমস্ত গুণ ধারণ করেন: আল-কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীদের যাবতীয় শরয়ী সিদ্ধান্ত, তাঁদের এজমা’ (ঐকমত্য) ও মতপার্থক্য এবং এজতেহাদের বাকি সমস্ত সর্বজনবিদিত শর্ত সম্পর্কে যিনি জানেন। এর প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত হলো সুন্নাহ-সম্পর্কিত গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ, সুন্নাহ’র নির্ভরযোগ্য ও অনির্ভরযোগ্য দলিলগুলো জানা, সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীদের মযহাবগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়ে তাঁদের বর্ণনাগুলোও জানা।

এই কারণেই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) ফতোওয়া প্রদানের ব্যাপারে খুব কঠোর ছিলেন; তিনি এমন লোকদেরকে তা থেকে বাধা দিতেন যারা এক লাখ, বা দুই লাখ, বা ততোধিক হাদীস মুখস্থ করতো না [তুলনা করুন (মূল বইয়ের) ৫১৪ পৃষ্ঠার সাথে - মূসা ফার্বার]। তাঁর এ দাবির দালিলিক প্রমাণ হলো, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে তিনি ছিলেন স্বাধীন, ঠিক যেমনটি ছিলেন অপরাপর (তিন) ইমাম; তাঁর (ইমাম আহমদের) সিদ্ধান্তগুলো অন্য কারো কাছ থেকে নেয়া হয়নি (মানে ধার করা নয়)। কিন্তু যে ব্যক্তি স্রেফ অন্য কারো সিদ্ধান্তের (ফতোওয়া বা দলিলসমৃদ্ধ ফতোওয়ার) ওপর নির্ভর করে, তার ওই প্রচেষ্টার লক্ষ্য হবে সেটা (সিদ্ধান্ত) উপলব্ধি (মানে মূল্যায়ন) করা। হয়তো সে তা ভালোভাবে বুঝতে পারেনি, ফলশ্রুতিতে তা ত্রুটিপূর্ণ করেছে, কিংবা তাতে পরিবর্তন সাধন করেছে। এমতাবস্থায় তার এই সিদ্ধান্ত এজতেহাদ থেকে কতোই না দূরে অবস্থিত! এ যেন নিচের প্রবাদের মতোই -

فدع عنك الكتابة لست منها

ولو سودت وجهك بالمداد

লেখা বন্ধ করো, তা তোমার কাজ নয়
যদিও কালি দ্বারা তোমার মুখ ছাওয়া হয়। [ভাবানুবাদ] 

আপত্তি: তাহলে ইমাম আহমদ (রহ:) ও অপরাপর ইমামবৃন্দ (রহ:) যে অন্যান্য সবাইকে তাঁদের তাকলীদ মানতে (অনুসরণ/অনুকরণ করতে) এবং তাঁদেরই সিদ্ধান্তগুলো লিপিবদ্ধ করতে বারণ করেছিলেন, সে ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? অধিকন্তু, ইমাম আহমদ (রহ:)-এর ভাষ্য ছিল “আমার বাণী লিপিবদ্ধ করো না, অমুক এবং তমুকের বাণীও নয়; বরঞ্চ আমরা যেভাবে শিক্ষা করেছি, সেভাবেই শিক্ষা গ্রহণ করো।” এ কথা ঘনঘন-ই তাঁরা বলতেন। এই ব্যাপারটাকেই বা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন আপনি?

জবাব: এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) মুজতাহিদবৃন্দের সিদ্ধান্তগুলো যাচাই করা এবং সেগুলো মুখস্থ ও লিপিবদ্ধ করাকে নিষেধ করতেন। তিনি কুরআন ও সুন্নাহ নিয়ে ব্যাপৃত থাকার পক্ষেই নির্দেশ দিতেন: এ দুটো উৎসকে মুখস্থ, লিপিবদ্ধ ও অধ্যয়নের জন্যে বলতেন; সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীবৃন্দের বর্ণনাগুলো লিপিবদ্ধ করতে বলতেন, কিন্তু তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের বাণী সংরক্ষণ করতে মানা করতেন; আর আদেশ দিতেন সহীহ (বিশুদ্ধ) ও যয়ীফ (দুর্বল) রেওয়ায়াতগুলো এবং তাদের উৎসগুলো সম্পর্কে জানতে, আর এর পাশাপাশি অপ্রাসঙ্গিক ভাষ্য/বক্তব্যগুলো বাদও দিতে বলতেন। অতএব, এটা এমন এক বিষয় যার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে শিক্ষাগ্রহণে মনোনিবিষ্ট হওয়াটাই একান্ত প্রয়োজন।

যে কেউ এ বিষয়টি জানলে এবং (ইমাম আহমদের নির্দেশিত) সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছুলে তাঁর জ্ঞান ইমাম আহমদ (রহ:)-এর জ্ঞানের কাছাকাছি উপনীত হবে। তাঁর বেলায় এই নিষেধাজ্ঞা কাজ করবে না এবং এসব কথা তাঁকে উদ্দেশ্য করেও বলা হয়নি। বস্তুতঃ এসব কথা সে ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে, যে এই উচ্চস্তরে উঠতে পারেনি এবং (কাঙ্ক্ষিত) লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারেনি, বরং (এ জ্ঞানের) তাৎপর্যহীন একটি অংশ-ই কেবল উপলব্ধি করতে পেরেছে। যেমনটি হলো এই যুগের মানুষদের হালত তথা অবস্থা। এটা সত্য যে যুগ যুগ ধরে অধিকাংশ মানুষেরই এই অবস্থা বিরাজ করছে, যদিও তাদের মধ্যে অনেকে উচ্চস্তরে পৌঁছুনোর দাবি করেছেন এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেনও; অথচ যেখানে তাদের (সর্বসাধারণের) বেশির ভাগই প্রারম্ভিক পর্যায়ে থেকে গিয়েছেন।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর জ্ঞান      

এই বিষয়টি আপনি নিজেই যাচাই করার উদ্দেশ্যে কুরআন ও সুন্নাহ-সংক্রান্ত ইমাম আহমদ (রহ:)-এর এলম তথা জ্ঞানের দিকে লক্ষ্য করুন। কুরআন মজীদ-বিষয়ক জ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি এ ঐশীগ্রন্থের প্রতি মনোযোগী ছিলেন; এটার এবং এটার সাথে সংশ্লিষ্ট শাস্ত্রগুলো উপলব্ধিতেও তিনি ছিলেন মনোনিবিষ্ট। তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রতি অনুযোগের সুরে বলতেন, “(আফসোস) মানুষেরা আল-কুরআন উপলব্ধির (প্রচেষ্টা) পরিত্যাগ করেছে।”

হযরত ইমাম (রহ:) আল-কুরআনসম্পর্কিত অনেকগুলো গ্রন্থ সংকলন করেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘কিতাব আল-নাসেখ ওয়াল-মানসূখ’ (রহিতকারী ও রহিতকৃত আয়াতসমূহ), ‘আল-মুকাদ্দাম ওয়াল-মু’আখখার’ (বিন্যাসকৃত আয়াতসমূহ)। তিনি কুরআন মজীদের একটি বড় তাফসীর-ও সংকলন করেন যা’তে সন্নিবেশিত হয়েছে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। 

ইমাম সাহেব (রহ:)-এর তাফসীরের ধরন ছিল তাঁরই পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণে: যেমন তাঁর শায়খবৃন্দ সর্ব-ইমাম আবদুর রাযযাক (রহ:), ওয়াকী’ (রহ:), আদম বিন এয়াস (রহ:) ও অন্যান্যদের কৃত তাফসীর; এছাড়া তাঁরই সমসাময়িক ইমাম এসহাক্ক (রহ:) ও অন্যান্যদের কৃত তাফসীর; আর সবশেষে তাঁর পরবর্তীদের থেকে গৃহীত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, যাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন সর্ব-ইমাম নাসাঈ (রহ:), ইবনে মাজাহ (রহ:), ইবনে আবি হাতেম (রহ:) এবং অন্যান্য মুহাদ্দেসীনে কেরাম (হাদীসবেত্তা)। এঁদের সবাই কুরআনের তাফসীরগুলোতে নিজেদের মতামত যোগ না করেই পূর্বসূরীদের (সাহাবা-এ-কেরাম ও তাবেঈন/তাবে’তাবেঈন-মণ্ডলী) কাছ থেকে প্রাপ্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংকলন করেছিলেন।

সুন্নাহ-বিষয়ক জ্ঞানে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ:)-এর পাণ্ডিত্য ছিল সর্বজনবিদিত ও সর্বত্র প্রসার লাভকৃত। এব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সর্বসম্মতি-ও রয়েছে। এটা সত্য যে তিনি কুরআন ও সুন্নাহর নিশান-বরদার (ধ্বজাধারী) এবং মহানবী (দ:), তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীদের বাণীসম্পর্কিত জ্ঞানে তাঁরই যুগের অন্যতম সেরা বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন।

হযরত ইমাম (রহ:)-এর সমসাময়িকদের থেকে তাঁকে তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে আলাদা করা গিয়েছিল বিভিন্ন বিষয়ে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল তাঁর প্রখর স্মরণশক্তি। কথিত আছে যে তিনি তিন লাখ হাদীস মুখস্থ করেছিলেন।

সহীহ (নির্ভরযোগ্য) হাদীস হতে অনির্ভরযোগ্য হাদীস বা রেওয়ায়াত (বর্ণনা) পৃথক করার জ্ঞানও তাঁর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যেগুলোর একটি ছিল। এটা হচ্ছে কথনো কখনো অনির্ভরযোগ্য বর্ণনা হতে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকে আলাদাভাবে চিনতে পারার ক্ষমতা; আর এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন রাবী (বর্ণনাকারী)-দের অনুমোদন বা তাঁদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণের বিদ্যায় চূড়ান্ত কর্তৃত্ব (’জারহ ওয়া তা’দিল’)। আর কখনো কখনো এটা হাদীসের এসনাদ (পরম্পরা) ও সেগুলোর বিভিন্নতাবিষয়ক জ্ঞান দ্বারাও চেনা যায়, এবং হাদীসের গোপন ত্রুটি (’এলাল আল-হাদীস’) দ্বারাও চেনা যায়। তিনি এক্ষেত্রেও ছিলেন চূড়ান্ত কর্তৃত্ব। যদিও অনেক মুহাদ্দীস ইমাম মহানবী (দ:)-এর প্রতি আরোপিত কোনো ‘মারফু’ (উন্নীত) হাদীসের ত্রুটিবিষয়ক জ্ঞানে তাঁর সমকক্ষ ছিলেন, তবুও কোনো ’মাকতু’ তথা সাহাবীদের পরবর্তী প্রজন্মগুলোর বর্ণনাকৃত কর্তিত (বিচ্ছিন্ন) পরম্পরার রেওয়ায়াত যা মহানবী (দ:)-এর পরে কারো প্রতি আরোপিত ছিল, সেটার জ্ঞানের ব্যাপারে কেউই তাঁর সমকক্ষ ছিলেন না। এ বিষয়ে তাঁর বাণী সম্পর্কে যে কেউ গবেষণা করলে বিস্ময়কর জিনিস দেখতে পাবেন এবং এই বিদ্যায় তাঁর উপলব্ধির সমকক্ষ হওয়া কতো যে বিরল একটি ব্যাপার, তাতেও প্রত্যয় (নিশ্চিত বিশ্বাস) পোষণ করবেন।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-কে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছিল যে বিষয়টি, তার অংশ ছিল হাদীসের ফেক্বাহ-সম্পর্কিত জ্ঞান: আহাদীস উপলব্ধি বা বোঝা, জায়েয ও না-জায়েয বিষয়গুলো সম্পর্কে এর বিধি-বিধান, এবং (পাশাপাশি) এর অর্থ। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর সমসাময়িক ইমামদের মাঝে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন, যেমনটি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সর্ব-ইমাম এসহাক্ক (বিন রাহুইয়াহ), আবূ উবায়দ প্রমুখ।

ইমাম সাহেব (রহ:)-এর ফিক্বহী সিদ্ধান্ত ও তাঁর পদ্ধতি ও অন্তর্দৃষ্টি সম্পর্কে যে ব্যক্তি গবেষণা করবেন, তিনি তাঁর উপলব্ধি ও গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জানতে সক্ষম হবেন। তবে এক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্যের সূক্ষ্মতার কারণে তাঁরই মযহাবের অনেক ইমাম যারা বইপত্র লেখেন, তাঁদের পক্ষে তাঁকে বোঝাটা কষ্টসাধ্য হতে পারে; এর দরুন তাঁরা তাঁদের মযহাবের বাইরে অন্যান্য মানুষের গৃহীত অপরাপর দুর্বল পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকতে পারেন। ইমাম সাহেব (রহ:)-এর কথা বোঝার বেলায় বহু বিচ্যুতি এ কারণেই দেখা দেয় এবং ওইসব ফকীহ (ফতোওয়াবিদ) তাঁর কথা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। হযরত ইমাম (রহ:)-এর মযহাবের শিক্ষার্থীদের জন্যে তাঁর প্রভাষণের সযত্ন বিশ্লেষণ ও উপলব্ধি ভিন্ন অন্য কোনো কিছু করারই প্রয়োজন নেই।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর উপলব্ধি ও জ্ঞান হতে এমন অনেক বিষয় দেখা গিয়েছে যা সত্যি বিস্ময়কর। তা হবেই বা না কেন যখন সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীবৃন্দ (রহ:) যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে যতো কথা বলেছিলেন, তার সবই তিনি জানতে ও বুঝতে পেরেছিলেন এবং তিনি সেসব বিষয়ের মূল চিনতে পেরে উপলব্ধিও করেছিলেন? একইভাবে বুঝেছিলেন সর্ব-ইমাম মালেক (রহ:), আল-আওযাঈ (রহ:), আস্ সাওরী (রহ:) প্রমুখের মতো  সকল অঞ্চল ও রাজ্যের ফক্বীহ ও ইমামবৃন্দের বাণীও। এঁদের সবার (ইসলামী) জ্ঞানপ্রসূত ফতোওয়াসমূহ তাঁর সামনে পড়ে শোনানো হয়েছিল। তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত (সে মোতাবেক) প্রদান করেন, কখনো ঐকমত্য পোষণ করে, কখনো বা দ্বিমত পোষণ করে। বস্তুতঃ ইমাম মুহান্না বিন ইয়াহইয়া বিন মনসূর (রহ:) তাঁর সামনে ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহ:)-এর সমস্ত ফিক্বহী বিষয় তথা ফতোওয়া পড়ে শোনান, আর তিনি এব্যাপারে তাঁর ফিক্বহী সিদ্ধান্ত দেন। (ফকীহদের) একটি দল তাঁর সামনে ইমাম মালেক (রহ:)-এর ‘মুওয়াত্তা’ ও অন্যান্য গ্রন্থ হতে বিভিন্ন বিষয় ও তাঁরই শরয়ী ফায়সালা (ফতোওয়া) পড়ে শোনান, আর ইমাম আহমদ (রহ:) তাঁর নিজস্ব রায় দেন [এটা ইমাম হাম্বল (রহ:) ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেন - অনুবাদক মূসা ফার্বার]। ইমাম সাওরী (রহ:)-এর সমস্ত বিষয় হযরত এসহাক্ক বিন মনসূর তাঁর সামনে পড়ে শোনান, আর তিনি সেগুলোর ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) ইমাম আবূ হানিফা (রহ:)-এর শিষ্যদের বইপত্র পাঠ করে সেগুলো অনুধাবন করেন, ফেকাহ-বিষয়ে সেগুলোর পদ্ধতি ও অন্তর্নিহিত জ্ঞান-ও অনুধাবন করেন। তিনি ইমাম শাফেঈ (রহ:)-এর সাথে বিতর্ক-ও করেন এবং বেশ কিছু সময় তাঁর সাথে বসে তাঁরই কাছ থেকে পাঠগ্রহণ করেন।

ইমাম শাফেঈ (রহ:)  সেসময় ফেকাহ ও ইসলামী জ্ঞানে ওইসব বড় বড় বিষয় প্রত্যক্ষ করেছিলেন; পক্ষান্তরে, ইমাম আহমদ (রহ:) ছিলেন স্রেফ এক যুবক যিনি তখনো জীবনের তুঙ্গে ওঠেননি।

এটা একটা জ্ঞাত ব্যাপার, যে ব্যক্তি এসব বিদ্যা শিক্ষা করেছেন এবং তাতে পাণ্ডিত্য-ও অর্জন করেছেন, তিনি নিখুঁতভাবে শেখা এসব মৌলনীতি ও ভালোভাবে জানা পদ্ধতিগুলোর ভিত্তিতে নতুন বিষয়গুলো সম্পর্কেও জানবেন এবং সেগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত-ও দিতে পারবেন। এ কারণে ইমাম আবূ সাওর (রহ:) বলেন, “ইমাম আহমদ (রহ:)-কে যখন-ই কোনো বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হতো, তখন (মনে হতো) যেন দুনিয়ার সমস্ত জ্ঞান তাঁরই দুচোখের সামনে কোনো তক্তার ওপর (লেখা) হয়েছে” (কিংবা যেভাবেই এ কথা বলা হয়েছিল)। [আমি ইমাম আবূ সাওর হতে এ উদ্ধৃতি বা অনুরূপ কিছু কোথাও খুঁজে পাইনি, এমন কি তাতেও নেই যেখানে লেখক ইমাম ইবনে রাজাব “শরহে ‘এলাল” গ্রন্থে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেছেন। ইমাম ইবনে রাজাব স্বয়ং যোগ করেন “কিংবা যেভাবেই এ কথা বলা হয়েছিল”, যার দরুন তিনি বুঝিয়েছেন যে এই ভাষণের শব্দচয়নের ব্যাপারে তাঁর প্রশ্ন ছিল, কিন্তু স্বয়ং বক্তব্যটির সত্যতার ব্যাপারে নয়। ইমাম আবূ সাওর (রহ:) ইমাম আহমদ (রহ:)-কে “আমাদের ইমাম” বলে সম্বোধন করেছিলেন। - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]

মহানবী (দ:)-এর এমন কোনো নির্ভরযোগ্য সুন্নাহ’র কথা আমরা জানি না যেটা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর জ্ঞানের পরিধির বাইরে ছিল। সহীহ বা বিশুদ্ধ হলে এবং এর পরিপন্থী শক্তিশালী কোনো দলিল না থাকলে তিনি সেই সুন্নাহ পালনে ছিলেন বদ্ধপরিকর। বস্তুতঃ তিনি তখন-ই কোনো রেওয়ায়াত পরিহার করতেন, যখন তা নির্ভরযোগ্য হতো না, কিংবা যখন তার বিপক্ষে শক্তিশালী দলিল থাকতো।

পূর্বসূরীদের সময়কাল নবুওয়্যতের কাছাকাছি জমানায় হওয়ার কারণে এবং তাঁদের দ্বারা সাহাবা-এ-কেরাম (রা:), তাঁদের উত্তরসূরী ও উত্তরসূরীদের পরবর্তী প্রজন্মের বাণী অন্বেষণের ফলে তাঁরা অনুশীলিত নয় এমন অপছন্দনীয় হাদীসগুলোর বিষয়ে সম্যক অবহিত ছিলেন। তাঁরা তাই সেগুলো এড়িয়ে তাঁদের পূর্ববর্তী (মানে সাহাবা, তাবেঈন, তাবে’ তাবেঈনবৃন্দ)-দের চর্চা জারি রাখতেই রাজি ছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁরা (সরাসরি অভিজ্ঞতার আলোকে) সুন্নাহ-ভিত্তিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছিলেন, যা তাঁদের পরে আগত প্রজন্মগুলো উৎস হতে সময়ের দূরত্বের কারণে হাদীসের বইপত্র পড়েই কেবল পরোক্ষভাবে জানতে পেরেছেন।

শিক্ষার্থীদের প্রতি উপদেশ

ওহে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর মযহাবের শিক্ষার্থী সকল! তোমরা ওপরে উপস্থাপিত ভাষ্য একবার বুঝতে ও আত্মস্থ করতে পারলে তোমাদের জন্যে নিম্নের এই উপদেশ বিহিত। আমি তোমাদেরকে এ খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছি একমাত্র আল্লাহতা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের খাতিরেই। কেননা, (হাদীসে বর্ণিত হয়েছে),

لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ

অর্থ: “তোমাদের মধ্যে কেউই ঈমানদার হতে পারবে না, যতোক্ষণ না সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে তার (দ্বীনী) ভাইয়ের জন্যেও তা-ই পছন্দ করে।” [দেখুন সহীহ বুখারী, # ১২; সহীহ মুসলিম, # ৪৫; ইমাম আহমদ বিন হাম্বল কৃত ‘আল-মুসনাদ’, ৩:১৭৬, ২০৬, ২০১, ২৭২, ২৭৮, ২৮৯ - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]  
          
এক মুহূর্তের তরেও এ কথা বিশ্বাস করো না যে তোমরা এমন বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছো যা এই মহান ইমাম সাহেব (রহ:) জানতেন না বা বুঝতেন না; (কেননা) তিনি এমনই একজন (বিদ্বান) যাঁকে তাঁর পরবর্তীকালে আগত সবচেয়ে জ্ঞানী-গুণীজনদেরও শীর্ষে তুলে ধরা হয়েছে। অতএব, জ্ঞানের সকল বিষয়ে তাঁর ভাষ্য উপলব্ধি করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, (স্রেফ) ইসলাম ধর্মের বিষয়গুলো (হালাল ও হারাম) নিয়ে ব্যাপৃত থাকবে না।

আকায়েদ তথা আকীদা-বিশ্বাসসস্পর্কিত বিদ্যাটিকে (যথা - আল্লাহতে বিশ্বাস, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলী, আসমানী কেতাবসমূহ, পয়গম্বরবৃন্দ এবং শেষ বিচার দিবস ইত্যাদিতে বিশ্বাস) অনেক আলেম-উলামার অনুসৃত নামকরণপদ্ধতি অনুযায়ী বলা হয় “সুন্নাহ-বিষয়ক জ্ঞান।” বস্তুতঃ ইমাম সাহেব (রহ:) ছিলেন ওই বিদ্যার সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত। তাঁর এসব বিষয়ে জ্ঞানের কারণে তাঁকে নির্যাতনের শিকারে পরিণত করা হয়, আর ওই নিপীড়নের সময় তিনি আল্লাহরই খাতিরে ধৈর্য ধারণ করেন। তিনি যে অবস্থান গ্রহণ করেন তাতে সকল মুসলমান-ই রাজি ছিলেন। তাঁরা সাক্ষ্য দেন যে তিনি সুন্নাহেরই ইমাম, আর তিনি না (আবির্ভূত) হলে মানুষেরা অবিশ্বাসী হয়ে যেতো। সুন্নাহের জ্ঞানে যিনি এরকম উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তাঁর কাছ থেকে গ্রহণের পরিবর্তে অন্য কোনো আলেমের কাছ থেকে তা গ্রহণের চেষ্টা কতোটুকু প্রয়োজনীয় হতে পারে, বিশেষ করে তাঁরই মযহাবের অনুসারীদের পক্ষে?

অতএব, এই বিষয়াধীন সব কিছুতেই হযরত ইমাম (রহ:)-এর বাণীকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো! আর অনর্থক নতুন বিষয়গুলো হতে মুখ ফিরিয়ে নাও! মুসলমানদের এসব বিষয়ে কাজ নেই। বস্তুতঃ এটা উপকারী জ্ঞান থেকে ফিরিয়ে রাখে, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের জন্ম দেয়, আর এ পার্থিব জীবনে বিস্তর তর্ক-বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়, যা ইমাম সাহেব (রহ:) ও পূর্বসূরী অন্যান্য ইমামের (রা:) মতানুযায়ী নিষিদ্ধ।

অনুরূপভাবে, এহসান-শাস্ত্র যেটা (আল্লাহর সামনে অন্তরে) সদা হাযের/উপস্থিত ও বিনয়সংক্রান্ত বিদ্যা, তাতেও হযরত ইমাম (রহ:) ছিলেন সর্বোচ্চ শিখরে - ঠিক যেমনটি তিনি ছিলেন ইসলাম ঈমানের ক্ষেত্রে এক খোদায়ী আয়াত (নিদর্শন)। তবে এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন কাজে বিশ্বাসী, রূহানী হাল তথা আধ্যাত্মিক অবস্থাগুলো সম্পর্কে প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা দেয়ার কেউ ছিলেন না তিনি। এরই দরুন তিনি পূর্বসূরীদের (সালাফ আস্ সালেহীনের) প্রতি যা আরোপিত হয়েছিল, কেবল তা-ই আওড়েছিলেন; খালাফ তথা উত্তরসূরীবৃন্দ যা প্রবর্তন করেন, তা বলেননি। তাঁর চর্চিত সকল বিদ্যার শাখায়, বিশেষ করে ঈমানএহসান-শাস্ত্রে, তিনি সুন্নাহ দ্বারা তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করেন, আর পূর্বসূরীবৃন্দ যে অভিমত ব্যক্ত করেননি, তা উচ্চারণ করাকেও পছন্দ করেননি।

ইসলাম ধর্মসম্পর্কিত জ্ঞানে ইতিপূর্বে আলোচিত হয়নি অথচ জরুরি বিভিন্ন নতুন বিষয়ের জবাব ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) দিয়েছেন, যদিও তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে দলিল না থাকলে কোনো বিষয়ে কথা বলতে বারণ করেছিলেন। সাধারণতঃ তিনি এমন সব বিষয়ে জবাব দিতেন যেগুলো ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছিল; যেগুলো ছিল প্রয়োজনীয়, (প্রকৃতপ্রস্তাবেই) যেগুলোর সংঘটিত হওয়ার নজির ছিল এবং যেগুলোর কোনো জ্ঞাত সিদ্ধান্ত (রায়) বিদ্যমান ছিল। অার যেসব বিষয় ফেক্বাহবিদমণ্ডলী প্রবর্তন করেছিলেন কিন্তু কদাচিৎ ঘটেছিল, যদি আদৌ কখনো ঘটে থাকে, সেগুলোর প্রতি জবাব দেয়ার ব্যাপারে হযরত ইমাম (রহ:) ঘনঘন বারণ করেছিলেন; কেননা এগুলো সামান্য-ই উপকারী ছিল এবং যা যা জানা অবশ্যকর্তব্য  ও জরুরি, তা থেকে এগুলো মানুষকে অন্যমনস্ক করেছিল।

ইমাম সাহেব (রহ:) অতিমাত্রায় তর্ক-বিতর্ককে পছন্দ করেননি; যে কারো দ্বারা জ্ঞান, উপলব্ধি ও হাল তথা অবস্থার ব্যাপারে কোনো কথা বলার ক্ষেত্রে তা পুনরাবৃত্তির সুযোগ তিনি দেননি। বস্তুতঃ তিনি সুন্নাহ ও সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর বর্ণনার প্রতি রাজি ছিলেন, আর দীর্ঘ বাক্যব্যয় ব্যতিরেকে সেগুলোর অর্থ উপলব্ধির প্রতি তাকিদ দিয়েছিলেন। তিনি কথা বলা থেকে বিরত ছিলেন অক্ষমতা বা অজ্ঞতার কারণে নয়, বরঞ্চ বিবেক, প্রখর ধীশক্তি ও সুন্নাহের প্রতি রাজি থাকার কারণেই। বাস্তবিক-ই সুন্নাহ ও পুণ্যবান পূর্বসূরী হযরতে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) এবং তাঁদের উত্তরসূরীদেরকে অনুসরণ করাটা একটা সম্পূর্ণতা বটে; আর হেদায়াত তথা সঠিক পথপ্রাপ্তি তো তাঁদেরকে অনুসরণ করেই অর্জিত হয়।

(ওহে শিক্ষার্থীবর্গ), তোমরা যদি এই উপদেশ গ্রহণ করো এবং সঠিক রাস্তা অনুসরণ করো, তবে আল-কুরআন ও সুন্নাহ (আহাদীস) হেফয তথা মুখস্থের মাধ্যমে তোমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করো; অতঃপর (পুণ্যবান) পূর্বসূরীবৃন্দ ও এই উম্মাহ’র ইমামমণ্ডলীর প্রদত্ত ভাষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এতদসংক্রান্ত অর্থগুলোর সাথে পরিচিত হও। এরপর সাহাবায়ে কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীদের (রহ:) শরয়ী সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন অঞ্চলের ইমামবৃন্দের ফতোওয়াগুলো মুখস্থ করে নাও; আর ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ:)-এর বাণী হুবহু মুখস্থের মাধ্যমে তাঁরই ব্যাখ্যাকৃত অর্থসহ জেনে, তাঁরই জ্ঞান ও উপলব্ধির অনুসরণে নিষ্পত্তিকারক যুক্তির অবতারণা করো। [এই প্যারাগ্রাফের আগের প্যারাগ্রাফটি ছিল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর সময়কালকে ঘিরে। কিন্তু এটা ইমাম ইবনে রাজাবের সময়কাল সংক্রান্ত। এই দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফটি ভিন্নতর, কেননা এটা পরবর্তী যুগগুলোতে ইমাম আহমদ (রহ:)-এর পদ্ধতির সম্প্রসারণকে নির্দেশ করেছে। আল্লাহতা’লাই সবচেয়ে ভালো জানেন। - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]

 এসব বিষয়ে তোমরা যদি উচ্চ শিখরে আরোহণ করো, তাহলে মনে করো না যে তোমরা সবকিছুর শেষপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছো; বাস্তবে তোমরা হলে অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে একজনের মতোই; আর যদি তোমরা ইমাম আহমদ (রহ:)-এর যুগে আবির্ভূত হতে, তাহলে তোমাদেরকে শিক্ষার্থীদের ভিড়ে গণনা-ই করা হতো না। এরপরও তোমরা নিজেরা যদি নিশ্চিত হও যে তোমাদের (শিক্ষাগ্রহণ) সমাপ্ত হয়েছে, কিংবা পূর্বসূরীবৃন্দ যেখানে পৌঁছেছিলেন সেখানে তোমরা পৌঁছে গিয়েছো, তাহলে তোমরা সত্যি মহাভ্রান্তিতে পতিত হয়েছো।

ওপরে উল্লেখিত বিভিন্ন বিদ্যাশাস্ত্র হেফয তথা মুখস্থকরণ এবং শাস্ত্রলিপি ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাগুলো নিখুঁতভাবে রপ্ত করার ক্ষেত্রে অবহেলা করো না; আর অধিক তর্ক-বিতর্কে বিক্ষিপ্তচিত্ত হয়ো না, যে কারো কথা পুনরাবৃত্তি-ও করো না; তোমাদের মস্তিষ্কের মর্জি-মাফিক কিছু ভাষ্যকে অন্যগুলোর ওপর প্রাধান্য দিও না, যদিও বাস্তবতা হলো তোমরা জানো না কারা ওই উক্তিগুলো করেছে এবং তারা কি মূল্যবান বাণীর ধারক ও বাহক (পুণ্যবান) পূর্বসূরীবৃন্দের মধ্য হতে আবির্ভূত হয়েছে, না-কি গোমরাহ-পথভ্রষ্টদের মধ্য হতে।

আল্লাহর কেতাব (আল-কুরআন) কিংবা রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর কোনো হাদীস সম্পর্কে (পুণ্যবান) পূর্বসূরীবৃন্দ যা বলেছেন, তার অন্যথা কোনো কথা বলার দুঃসাহস দেখিও না, ঠিক তোমাদেরই ইমাম সাহেব (রহ:) যেমনটি নির্দেশ দিয়েছেন; নচেৎ উপকারী জ্ঞান তোমাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারে এবং তোমাদের দিনগুলো-ও বরবাদ হতে পারে। বস্তুত উপকারী জ্ঞান হচ্ছে অন্তরের গভীরে স্থাপিত এবং তা মহানবী (দ:) ও পুণ্যবান পূর্বসূরীবৃন্দ হতে প্রাপ্ত; ওই উপকারী জ্ঞান “তোমার মতামত কী?” কিংবা “এই হলো আমার মতামত” এসব কথার ওপর নির্ভরশীল নয়। হযরতে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের উত্তরসূরীমণ্ডলী যাঁদেরকে অনুসরণ করা হলে হেদায়াত পাওয়া যায়, তাঁরা এটা (এ ধরনের মতামত গ্রহণ) নিষেধ করেছিলেন। কোনো (মুজতাহিদ) ইমামের আনুগত্য করার পক্ষে তোমাদের দাবি কীভাবে নির্ভরযোগ্য হতে পারে, যখন তোমরা তাঁর সাথে নিরন্তর দ্বিমত পোষণ করে চলেছো, আর তাঁরই বিদ্যা, আমল (কর্ম) ও মযহাব হতে পালিয়ে বেড়াচ্ছো?

জেনে রাখো (আল্লাহ তোমাদের হেদায়াত দিন), যখন তোমরা এ পথের ওপর পরিচালিত হবে, যা আল্লাহর কাছে পৌঁছুনোর সঠিক মাধ্যম, আর যখন তোমরা তাক্বওয়া (খোদাভীরুতা) অনুশীলন করবে এবং পূর্ববর্তী ইমামবৃন্দের আহওয়াল তথা আধ্যাত্মিক অবস্থাগুলোর দিকে উত্তম ফলাফল লাভের প্রত্যাশায় প্রতিনিয়ত লক্ষ্য রাখবে, এমতাবস্থায় আল্লাহতা’লা ও তাঁর ঐশী বিধানসম্পর্কিত তোমাদের জ্ঞান-প্রজ্ঞা (আধ্যাত্মিক দর্শনক্ষমতা) বৃদ্ধি পাবে। তোমাদের নফস (একগুঁয়ে সত্তা)-কে খাটো এবং দমন করার সামর্থ্য-ও বৃদ্ধি পাবে। উপরন্তু, তোমাদের আপন সত্তার কাছ থেকেও এমন জিনিস পাবে যা তোমাদেরকে মুসলমানদের সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়ানো হতে বিরত রাখার ক্ষেত্রে ব্যস্ত রাখবে।

সকল কিসিমের ঈমানদারকে তোমরা এমনভাবে বিচার করবে না যেন তোমাদেরকে যে জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে তা তাঁদেরকে দেয়া হয়নি, অথবা তোমরা যে হালত তথা (আধ্যাত্মিক) অবস্থায় উন্নীত হয়েছো, তাতে তাঁরা উন্নীত হননি। আল্লাহতা’লা সে ব্যক্তির প্রতি করুণা বর্ষণ করেন যিনি নিজের জ্ঞান, আমল ও হাল-অবস্থাকে নিম্ন পর্যায়ের ভাবেন এবং পূর্বসূরীবৃন্দকে সেরা জ্ঞান করেন; যিনি জানেন ঘাটতি তাঁরই এবং পূর্ণতা পূর্বসূরীদেরই; যিনি (চার মযহাবের) ইমামমণ্ডলীকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন না, বিশেষ করে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ:)-এর অনুসারী হওয়ার দাবি করে তাঁকেই আক্রমণ করেন না।

(ওহে শিক্ষার্থীবর্গ), তোমরা এই বিশ্বস্ত উপদেশ প্রত্যাখ্যান করলে এবং বিতর্ক ও বিরোধের পথ গ্রহণ করলে, আর অন্যদের প্রতি ‘তাশাদ্দুক্ব’ তথা মানহানিকর কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে এবং ‘তাফায়হুক্ব’ তথা উদ্ধত ও দাম্ভিক আচরণ করলে, আর মুখে ‘শিক্বশিক্বাত আল-কালাম’ তথা হেয় প্রতিপন্নকারী বাক্য [এটা ‘সুনানে তিরমিযী’ গ্রন্থের ২০১৮ নং হাসান পর্যায়ের হাদীসে বর্ণিত। - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট] উচ্চারণ করলে - যে পর্যন্ত মুসলমান সমাজের ইমামমণ্ডলীর খণ্ডন এবং তাঁদের দোষচর্চা তোমাদের আসল কাজে পরিণত না হয় - এমতাবস্থায় তোমাদের আত্মাগুলো অতিমাত্রায় আত্মগর্ব দ্বারা ফুলে ওঠবে এবং দুনিয়ার বুকে অত্যাচার-নিপীড়নের প্রতি তোমাদের মায়া-ও বৃদ্ধি পাবে, আর সত্য থেকে তা তোমাদেরকে আরো দূরে সরিয়ে মিথ্যার কাছাকাছি নিয়ে যাবে। এমতাবস্থায় তোমরা জিজ্ঞেস করবে, “আমি যা ব্যক্ত করছি তা কেন বলতে পারবো না, যেখানে আমি-ই কথা বলার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় অন্য যে কারো চেয়ে বেশি যোগ্য? আমার চেয়ে আর কে বেশি জ্ঞানী (’আফক্বাহ’) আছে?” ঠিক যেমনটি হাদীস শরীফে উল্লেখিত হয়েছে। এই উম্মাহ’র মধ্যে জাহান্নামের ইন্ধন যে ব্যক্তি, কেবল সে-ই এ ধরনের কথা বলতে পারে!

আল্লাহ পাক তাঁর করুণা ও দয়া দ্বারা আমাদেরকে এই উপদেশ গ্রহণ করে তাঁরই প্রদত্ত বে-ইজ্জতী হতে রক্ষা করুন এবং আমাদেরকে সাফল্য-ও দান করুন (আমীন)।

কিন্তু যদি তোমরা এই ধারণার বশবর্তী হয়ে একগুঁয়ে মনোভাব গ্রহণ করো যে, জ্ঞান ও সমঝদারি (’আল-তাফাক্ক্বুহ’) হচ্ছে বিভিন্ন মতের উদ্ধৃতি দেয়া, চুল টেনে ছেঁড়া এবং তর্কাতর্কি করা, আর এই ধারণাও পোষণ করা যে এটা যে ব্যক্তি করতে পারে এবং (মযহাবের) ইমামমণ্ডলীর দোষত্রুটি খুঁজে বের করতে পারে, সে ওই ব্যক্তির চেয়ে সেরা যে তা পারে না, অথবা যে ব্যক্তির এব্যাপারে কোনো ভাষ্য নেই সে কিছুই জানে না, তাহলে আমরা তোমাদের বলবো:

এই আকীদা-বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই পথভ্রষ্ট কিছু দল মনে করেছিল যে খালাফ তথা পরবর্তী প্রজন্মের উলামাবৃন্দ সালাফ তথা পূর্ববর্তী প্রজন্মের উলামাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী, কেননা যে যা ব্যক্ত করেছিলেন তা অবিরত লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে খালাফ-বৃন্দ (পূর্ববর্তী সালাফদের সাথে) ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। আমরা আল্লাহরই ওয়াস্তে এধরনের (ভ্রান্ত) বক্তব্য হতে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছি। যদি বাস্তবে তা-ই হতো, তবে মু’তাযেলা ও রাফেযী (শিয়া) গোষ্ঠীর ধর্মগুরুদের জ্ঞান এই উম্মতের সালাফবৃন্দ ও ইমামমণ্ডলীর চেয়েও বেশি হতো!

মু’তাযিলা গোষ্ঠীর আবদুল জাব্বার বিন আহমদ হামদানী ও অন্যান্য শায়খদের কথা চিন্তা করো, তাদের গভীর অনুসন্ধান, তর্ক-বিতর্ক এবং অসংখ্য মতের ছড়াছড়ি সম্পর্কেও চিন্তা করো; উপরন্তু অন্যান্য দলের কালাম-শাস্ত্রবিদদের যে কারো কথাও চিন্তা করো। ধর্মীয় ও ফেকাহর বিভিন্ন মযহাবের লেখকদের অবস্থাও তাই; তারা প্রতিটি বিষয়েই মাত্রাতিরিক্ত বাগাড়ম্বরপূর্ণ ছিল। অথচ তাদের নিজেদের ইমামবৃন্দ-ই এসব বিষয়ে কথা বলেননি কিংবা এমন বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি এবং বাগাড়ম্বরপূর্ণ আচরণ-ও করেননি। এমতাবস্থায় এ কথা বিশ্বাস করার কি কোনো অনুমতি আছে যে সর্ব-ইমাম সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব (রা:), আল-হাসান (রা:), ’আতা’ (রা:), আল-নাখাঈ’ (রহ:), আস্ সাওরী (রহ:), আল-লায়েস্ (রহ:), আল-আওযাঈ (রহ:), মালেক (রহ:), আশ্ শাফেঈ (রহ:), আহমদ বিন হাম্বল (রহ:), এসহাক্ক (রহ:), আবূ উবায়েদ (রহ:)-এর মতো ইসলামের ইমামবৃন্দের চেয়ে তারা শ্রেষ্ঠ ছিল? বরঞ্চ সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর চেয়ে তাঁদের উত্তরসূরীবৃন্দ নিজেদের ব্যাখ্যামূলক বক্তব্যে মোটামুটি এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাতে কি কোনো মুসলসান এমনটি বিশ্বাস করবেন যে বিদ্বান সাহাবা (রা:)-দের চেয়ে তাঁদের উত্তরসূরীবৃন্দ বেশি জ্ঞানী হয়ে গিয়েছিলেন?

ভেবে দেখো মহানবী (দ:)-এর সে হাদীসটি সম্পর্কে, যেখানে তিনি এরশাদ ফরমান:

الإِيمَانُ يَمَانٍ وَالْفِقْهُ يَمَانٍ وَالْحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ

অর্থ: “ঈমান ইয়েমেন হতে, উপলব্ধি-ও ইয়েমেন হতে, আর জ্ঞান-প্রজ্ঞাও ইয়েমেন হতে” [দেখুন আল-বুখারী, # ৪৩৮৮-৯০; সহীহ মুসলিম, # ৫২; আহমদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ, ২:২৩৫, ২৫২, ২৫৬, ২৭০, ২৭৭, ২৭৮, ৩৭২, ৩৮০, ৪০৭, ৪২৬, ৪৫৭, ৪৭৪, ৪৮০, ৪৮৪, ৫৪৬ - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]। তিনি ইয়েমেনীদের ও তাঁদের গুণের প্রশংসায় এ কথা বলেছিলেন। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে তাঁরা ঈমানদারী ও উপলব্ধির অধিকারী। তাঁরা ফেক্বাহ (উপলব্ধি), ঈমান (বিশ্বাস) ও হেকমত (জ্ঞান-প্রজ্ঞা) বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার কারণেই তিনি তাঁদের প্রতি এটা আরোপ করেছিলেন।

ইয়েমেনীদের চেয়ে স্বল্প-ভাষী ও স্বল্প-যুক্তিতর্ককারী আর কোনো মুসলিম পণ্ডিত-দলের কথা আমরা জানি না, হোন তাঁরা  সালাফ (পূর্বসূরী প্রজন্ম) কিংবা খালাফ (উত্তরসূরী প্রজন্ম)-এর মধ্য হতে। এটা ইঙ্গিত করে যে ঐশী বিধানদাতার ভাষায় প্রশংসিত জ্ঞান ও উপলব্ধি হচ্ছে আল্লাহতা’লারই জ্ঞান যা তাঁকে ভালোবাসতে, প্রশংসা করতে এবং সম্মান করতে পরিচালিত করে; এগুলো মৌলিক/অাবশ্যিক জ্ঞান, আল্লাহ পাকের আদেশ ও নিষেধের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ঠিক যেমনটি ছিলেন নিম্নে উল্লেখিত অতীতকালের ইয়েমেনী বিদ্বানবৃন্দ: সর্ব-হযরত আবূ মূসা আশআরী (রা:), আবূ মুসলিম আল-খাওলানী (রা:), উয়াইস্ আল-করণী (রা:) প্রমুখ। তেমনটি তাঁরা ছিলেন না অন্যরা যা যুক্ত করেছিল, যথা - ইমামবৃন্দের কথা তালগোল পাকিয়ে এবং একত্রিত করে ঘনঘন তাঁদের গোপন দোষত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টারত থাকা।

এটা সত্য যে অধিকাংশ ইমাম-ই ছোট-খাটো বিষয়ে (এজতেহাদী) ভুল করেছিলেন, যা তাঁদের মকাম (উচ্চমর্যাদা) ও জ্ঞানকে ম্লান করে না। এতে কী-ই বা এসে যায়? তাঁদের সততা, ত্রুটিহীনতার প্রাচুর্য, উদ্দেশ্যের মাহাত্ম্য ও দ্বীনকে সহায়তার সৎ গুণ দ্বারা ওই ভুল ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।  

(মযহাবের) ইমামবৃন্দের ভুলত্রুটির স্বনিয়োজিত তদন্তকর্তা সেজে বসাটা প্রশংসনীয় কোনো কাজ নয়, আবার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য-ও নয়; এটা বিশেষ করে প্রযোজ্য অসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে, যেখানে ভুল-ভ্রান্তি কোনো ক্ষতিসাধন-ই করে না, আর তাই তাঁদের ভুলত্রুটি খুঁজে বের করার মধ্যে কোনো ফায়দা বা উপকার-ই নিহিত নেই। এর অনুরূপ অবস্থা বিদ্যমান অধিক খোঁজাখুঁজির সেসব বাহুল্য বিদ্যায়, যেগুলো ধর্মীয় দিক থেকে উপকারী নয় এবং আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তাঁরই যিকির (তথা স্মরণ) হতে অন্তরকে (পাথরের মতো) কঠিন করে দেয়, আর মানুষের ওপর মর্যাদা ও নেতৃত্ব লাভের মায়া জাগিয়ে তোলে। এগুলোর কোনোটাই প্রশংসাযোগ্য নয়। রাসূলুল্লাহ (দ:) সবসময় ফায়দাহীন জ্ঞান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন:

اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ

[দেখুন সহীহ মুসলিম, # ২৭২২; আহমদ ইবনে হাম্বল কৃত আল-মুসনাদ, ২:১৬৭, ৪৫১, ৩:১৯২, ৪:৩৭১ - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]। তিনি এরশাদ ফরমান, “উপকারী জ্ঞানের জন্যে (আল্লাহর দরবারে) প্রার্থনা করবে, আর উপকারী নয় এমন জ্ঞানের ক্ষেত্রে (তাঁর কাছে) আশ্রয় চাইবে” [দেখুন মুহাম্মদ ইবনে মাজাহ প্রণীত সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খণ্ড, দারুল ফিকর, বৈরুত, তারিখবিহীন, #৩৮৪৩ - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]।    

মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান,

سَلُوا اللهَّ عِلْمًا نَافِعًا، وَتَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ

অর্থ: “নিশ্চয় এক ধরনের জ্ঞান আছে যা (স্রেফ) অজ্ঞতা” [দেখুন আবূ দাউদ সাজেস্তানী লিখিত সুনানে আবি দাউদ, ২য় খণ্ড, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯০ খৃষ্টাব্দ, #৫০১২; আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজর আসকালানী কৃত ফাতহুল বারী শরহে সহীহ আল-বুখারী, ১৩তম খণ্ড, দারুল মা’রেফাত লিল তিবা’আহ, বৈরুত, ২য় সংস্করণ, ৯:২০৩; এবং মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজর আসকালানী প্রণীত ফাতহুল বারী বি-শরহে সহীহ আল-বুখারী, ১৪তম খণ্ড, মাকতাবাত আল-সালাফিয়্যা, কায়রো, ১৯৭০ খৃষ্টাব্দ, ৯:২০৩ - অনুবাদক মূসা ফার্বারের নোট]। তিনি ঘনঘন ও দীর্ঘ বাক্যব্যয় পছন্দ করতেন না, বরং সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা পছন্দ করতেন। এ বিষয়ে অনেক হাদীস আছে (যেমন - وَإِنَّ مِنَ الْعِلْمِ جَهْلًا - নিশ্চয় এক ধরনের জ্ঞান আছে যা স্রেফ অজ্ঞতা - আবূ দাউদ, আস্ সুনান, ৪:৩০৩, হাদীস নং ৫০১২)। এখানে সেগুলো উল্লেখ করলে (পুস্তিকার) কলেবর বৃদ্ধি পাবে।

একই অবস্থা বিরাজমান হবে যদি কেউ বেদআতীদের কথাকে খণ্ডন করতে একই ধরনের কথা বলে, অথবা সাদৃশ্যপূর্ণ যুক্তি-প্রমাণের অবতারণা করে। ইমাম আহমদ (রহ:) ও মুহাদ্দেসীন-এ-কেরাম (যেমন সর্ব-ইমাম ইয়াহইয়া আল-কাত্তান, ইবনে মাহদী প্রমুখ) এটা অপছন্দ করতেন। তাঁরা শুধু আল-কুরআন ও সুন্নাহ এবং লভ্য হলে পূর্ববর্তী ইমামবৃন্দের বাণী দ্বারাই বেদআতীদের খণ্ডনকে বিবেচনায় নিতেন। নতুবা নিশ্চুপ থাকাই তাঁদের বিচারে অধিকতর নিরাপদ ছিল।

হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে মুবারক (রহ:) ও অন্যান্য ইমামমণ্ডলী বলতেন, “আমাদের দৃষ্টিতে আহলুস্ সুন্নাহ সেসব লোক নয়, যারা খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণকারীদের রদ করে থাকে, বরঞ্চ সেসব মানুষ-ই যাঁরা ওদের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকেন।” হযরত ইবনে মুবারক (রহ:) তীব্র না-রাজি হতেই এ কথাটি বলেছিলেন, যখন খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণকারী লোকেরা মহানবী (দ:)-এর নিয়ে আসা জ্ঞান এবং এরই ফলশ্রুতিতে অর্জিত ধর্মীয় অনুশীলন হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বস্তুতঃ এটাই যথেষ্ট। আর কারো ক্ষেত্রে এটা যদি পর্যাপ্ত না হয়, তাহলে আল্লাহতা’লা তাকে কখনোই পর্যাপ্ত না দিন!

আমি এ পুস্তিকায় যা যা উল্লেখ করলাম, জানি তর্ক-বিতর্ককারী লোকেরা তার কঠোর সমালোচনা ও প্রতিবাদ করবে। কিন্তু সত্যের যখন উদয় হয়, তখন তাকে অনুসরণ করা আবশ্যক হয় এবং তার সাথে বিভেদ সৃষ্টিকারী, বিতর্ককারী ও উস্কানিদাতাদের পরিত্যাগ করাও জরুরি হয়ে পড়ে।

এ থেকে জানা যায় যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) ও তাঁর মযহাবের অনুসারী ইমামবৃন্দের জ্ঞান এই উম্মতের মাঝে সেরা বিদ্যাচর্চা, আর আল্লাহতা’লা যাঁকে সত্য পথের দিকে হেদায়াত দেন তাঁর জন্যে এতে নিহিত রয়েছে এক পূর্ণতা।

مَن لَّمْ يَجْعَلِ ٱللَّهُ لَهُ نُوراً فَمَا لَهُ مِن نُورٍ

অর্থ: “এবং আল্লাহ যাকে নূর (আলো) দান করেন না, তার জন্যে কোথাও আলো নেই।” [আল-কুরআন, ২৪:৪০, মুফতী আহমদ এয়ার খান সাহেব কৃত নূরুল এরফান বাংলা সংস্করণ]

                                         *সমাপ্ত*
  

অনুবাদক পরিচিতি   

জনাব মূসা ফার্বার ফতোওয়া প্রদানের যোগ্যতাপ্রাপ্ত। তিনি এই সনদ লাভ করেন মিসরের দারুল ইফতা মিসরিয়্যা প্রতিষ্ঠানের শায়খবৃন্দের কাছে, যাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত মিসরীয় গ্র্যান্ড মুফতী (আলী জুমুআহ)। তিনি ১৫ বছরেরও অধিক সময় যাবৎ দামেশক, কায়রো ও অন্যান্য এলাকার অসংখ্য আলেমের অধীনে সুন্নী ইসলামী বিদ্যাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভারসিটি হতে ফলিত ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে বি,এ, ডিগ্রী এবং দুবাই স্কুল অফ গভর্মেন্ট হতে এম,পি,এ, সনদ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি সংযুক্ত আরব আমীরাতের আবূধাবীতে বসবাস করছেন।