ব্লগ সংরক্ষাণাগার

শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত: ইসলামের সঠিক পথ ও মত

Post by the Admin

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ও নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম
আম্মা বা’আদ।

মহান আল্লাহতা’লা তাঁর পাক কালামে মুসলমানবৃন্দকে দুআ করতে আদেশ করেন এই মর্মে:

 ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ، صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ، غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِم وَلاَ ٱلضَّآلِّينَ

অর্থ: (হে প্রভু), আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করুন; তাঁদেরই পথে যাঁদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথে নয় যাদের প্রতি গযব/খোদায়ী শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছে; আর পথভ্রষ্টদের পথেও নয়। [সূরা ফাতিহাহ, ৫-৭ আয়াত; নূরুল এরফান]

এই হচ্ছে সোজা-সরল পথ ও মত - খোদাতা’লা হতে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র প্রাপ্ত ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’এর প্রচারিত ইসলাম ধর্মের মৌলিক আক্বীদা-বিশ্বাস।

আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এই প্রসঙ্গে এরশাদ ফরমান: "আমার উম্মত অনতিবিলম্বে ৭৩ দলবিভক্ত হবে; একটি দল ছাড়া বাকি সবাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন: “কোন্ দলটি নাজাতপ্রাপ্ত হবে, এয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)?” এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন: “আমি ও আমার সাহাবা যে পথ ও মত তথা আক্বীদা-বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তার অনুসারীরাই মুক্তি পাবে। [সুনানে তিরমিযী; হাদীস নং ২৬৪১ - আরবী এবারত: وتفترق امتي على ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار إلا ملة واحدة، قالوا: ومن هي يا رسول الله؟ قال: ما انا عليه واصحابي]

এই জ্যোতির্ময় আক্বীদা-বিশ্বাস, যার ধারক ও বাহক হলেন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর অনুগত সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম), তা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের সম্যক অবগত হওয়া জরুরি। কেননা ইসলামের ছদ্মবেশে এমন বাহাত্তরটি গোমরাহ-পথভ্রষ্ট দল আবির্ভূত হবে, যাদের মহাভ্রান্ত ধ্যানধারণা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’এর আক্বীদা-বিশ্বাসের একদম পরিপন্থী হবে বা তার সাথে সাংঘর্ষিক হবে।

ওপরে উক্ত হাদীসে বর্ণিত বাহাত্তরটি ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব হয়েছে। তারা তাদের ভ্রান্ত ধ্যানধারণা অপপ্রচার করছে। এই সঙ্কটকালে মুসলমান সমাজের সঠিক আক্বীদা-বিশ্বাস শিক্ষাগ্রহণের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করা একান্ত অপরিহার্য। ওই নাজাত লাভকারী আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরেকটি হাদীস শরীফে স্পষ্ট বলেন:

فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي

অর্থ: আমার সুন্নাত (সুন্নী আক্বীদাহ-বিশ্বাস/রীতিনীতি) তোমাদের প্রতি বিধেয় (তথা আজ্ঞা হিসেবে আরোপিত) হলো। [সুনানে ইবনে মাজাহ, বই নং ১, হাদীস নং ৪৪]

রাসূলে খোদা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরো এরশাদ করেন:

فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي

অর্থ: যে ব্যক্তি আমার সুন্নী আদর্শ/রীতিনীতি হতে ফিরে গেলো (তথা প্রত্যাখ্যান করলো), সে আমার (দলভুক্ত) নয়। [সুনানে নাসাঈ, বই নং ২৬, হাদীস নং ৩২১৭]

এটাই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র নাজাত লাভকারী আদর্শ বা আক্বীদা-বিশ্বাস, যেটা সম্পর্কে তিনি তিয়াত্তর দলের বর্ণনাসম্বলিত হাদীসে উল্লেখ করেছেন। এই আশীর্বাদময় সুন্নী আক্বীদা-বিশ্বাস ধারণ করেই মুসলমান সমাজ আখেরাতে মুক্তি অর্জন করবেন। পক্ষান্তরে, বাহাত্তরটি পথভ্রষ্ট দল সুন্নী আক্বীদা-বিশ্বাস বর্জন করার ফলশ্রুতিতে জাহান্নামে যাবে। তারা নিজেদেরকে ইসলামী দল হিসেবে প্রদর্শন করবে ঠিক, কিন্তু তারা সূরাতুল ফাতিহায় আল্লাহতা’লা কর্তৃক প্রতিশ্রুত রহমত-বরকত হতে বঞ্চিত হবে।

যে পথ ও মতের ওপর আল্লাহতা’লার রহমত-বরকত বর্ষিত হচ্ছে, তা আমাদের প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র সুন্নী আক্বীদা-বিশ্বাস বা আদর্শ; এই পথ ও মত গ্রহণ করেছেন তাঁরই সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ও আউলিয়া কেরাম (রহমতুল্লাহে আলাইহিম)। আর যুগে যুগে এর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সুন্নী উলামায়ে হাক্কানী/রাব্বানী তথা বুযূর্গানে দ্বীন। বড়পীর গাউসুল আযম হযরত আবদুল ক্বাদের জিলানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাঁর প্রণীত ‘গুনিয়াতুত-তালেবীন’ পুস্তকে বেহেশ্ত লাভকারী এই দলটিকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’ বলে চিহ্নিত করেন। মুসলমানদের উচিৎ আউলিয়া-দরবেশবৃন্দের গৃহীত এই নেআমত-প্রাপ্ত দলটির অনুসরণ করা এবং এর বিরোধিতাকারী এবং এরই কুৎসা রটনাকারী বাহাত্তরটি দলকে বর্জন করা। ইসলামের স্বর্ণযুগে আউলিয়া কেরাম (রহমতুল্লাহে আলাইহিম)-ই ছিলেন ইসলামের পতাকাবাহী, উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।

আজকে অনেক ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব হয়েছে। ওহাবী, মওদূদী, সালাফী, তাবলীগী, শিয়া, কাদিয়ানী প্রভৃতি দল প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর আউলিয়াবৃন্দের সুন্নী মতাদর্শকে গালমন্দ করছে। তারা নিজেদের ভ্রান্ত মতবাদ পীস্ টিভি, এটিএন বাংলা ইত্যাদি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে এবং ইন্টারনেটে প্রচার করছে। এগুলোর সবই চলছে ‘তাফসীরুল ক্বুরআন’ ও ‘সীরাতুন্নবী (দ:)’ শিরোনামে। এছাড়া বইপত্র তো আছেই। তাই মুসলমানদেরকে এই সব গোমরাহ দল সম্পর্কে সচেতন ও সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

                                         *সমাপ্ত* 



শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯

ই'তিকাফ


 ইমরান বিন বদরী 

নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ

"ই'তিকাফ" শব্দটি আরবী, যার অর্থ অবস্থান করা। ইসলামী শরীয়তে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তা‘য়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দুনিয়াবী সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করাকে ই‘তিকাফ বলা হয়। ই’তিকাফ  মুমিনের জীবনে একটি শিক্ষামূলক নিবিড় আত্মিক প্রশিক্ষণ। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অনেক আগ্রহ সহকারে ই'তিকাফে থাকতেন এবং সাহাবীদেরকেও ই'তিকাফে থাকার জন্য বলতেন।

عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ
অর্থ: উম্মুল মুমেনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ ১০ দিন ই'তিকাফ করতেন। এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া পর্যন্ত ই'তিকাফ করেছেন। পরবর্তীতে উম্মুল মুমেনিনবৃন্দ ই'তিকাফ করেছেন।(মুত্তাফাকুন আলাইহ)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশদিন ই’তিকাফ করবে, সে যেন দু’টি হজ্ব এবং দু’টি উমরাহর সাওয়াব লাভ করবে। (বায়হাকী)

বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে ই’তিকাফের মর্যাদা এবং এর অধিক সওয়াবের কথা বর্ননা করা হয়েছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীবৃন্দও অধিক আগ্রহের সাথে ই'তিকাফ করতেন।
 ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য 

মহান আল্লাহ তা’লার একান্ত সান্নিধ্যে যাওয়া।আত্মশুদ্ধির জন্য মহান আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে,বিনয় নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমপর্ণ করা এবং বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করা।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ح قَالَ سُفْيَانُ وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ح قَالَ وَأَظُنُّ أَنَّ ابْنَ أَبِي لَبِيدٍ حَدَّثَنَا عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ اعْتَكَفْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْعَشْرَ الأَوْسَطَ فَلَمَّا كَانَ صَبِيحَةَ عِشْرِينَ نَقَلْنَا مَتَاعَنَا فَأَتَانَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ فَلْيَرْجِعْ إِلَى مُعْتَكَفِهِ فَإِنِّي رَأَيْتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ وَرَأَيْتُنِي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ فَلَمَّا رَجَعَ إِلَى مُعْتَكَفِهِ وَهَاجَتْ السَّمَاءُ فَمُطِرْنَا فَوَالَّذِي بَعَثَهُ بِالْحَقِّ لَقَدْ هَاجَتْ السَّمَاءُ مِنْ آخِرِ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَكَانَ الْمَسْجِدُ عَرِيشًا فَلَقَدْ رَأَيْتُ عَلَى أَنْفِهِ وَأَرْنَبَتِهِ أَثَرَ الْمَاءِ وَالطِّينِ
অর্থ: হজরত আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমরা রমযানের মধ্য দশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে ইতিকাফ করেছিলাম। বিশ তারিখের সকালে (ইতিকাফ শেষ করে চলে আসার উদ্দেশ্যে) আমরা আমাদের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বলেন: যে ব্যাক্তি ইতিকাফ করেছে, সে যেন তার ইতিকাফস্থলে ফিরে যায়। কারণ আমি এই রাতে (লাইলাতুল কদর) দেখতে পেয়েছি এবং আমি আরও দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। এরপর যখন তিনি তাঁর ইতিকাফের স্থানে ফিরে গেলেন এবং আকাশে মেঘ দেখা দিলো, তখন আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হলো। সেই সত্তার কসম! যিনি তাঁকে যথাযথ প্রেরণ করেছেন। ওই দিনের শেষভাগে আকাশে মেঘ দেখা দিল। মসজিদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনির। আমি তাঁর নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাদার চিহ্ন দেখেছিলাম। [ইমাম ইসমাইল বুখারী (রঃ) উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন, ই,ফা, বা, ১৯৯০ সংস্করণ]

(জরুরি নোট: আকাশে মেঘ নেই বৃষ্টির কোন সম্ভাবনাও নেই, কিন্তু মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- বৃষ্টি হবে; কাদা-পানিতে সিজদা করবো। তাই হলো)
ই‘তিকাফের জন্য শর্ত

(ক) মুসলমান হওয়া;
(খ) জ্ঞান থাকা;
(গ) বড় নাপাকী থেকে পবিত্র থাকা, গোসল ফরয হলে গোসল করে নেয়া;
(ঘ) মসজিদে ই‘তিকাফ করা।

কাজেই কাফির-মুশরিক, অবুঝ শিশু, পাগল ও অপবিত্র লোক এবং হায়েয-নিফাস অবস্থায় নারীদের ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না।

ই'তিকাফের হুকুম

ই'তিকাফে থাকা সুন্নাতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম। সমাজের কেউ যদি ই'তিকাফ না করে, তাইলে সমাজের সবাই গুনাহগার হবে। আর যদি একজনও করেন, তাইলে সবার পক্ষে আদায় হয়ে যাবে। যিনি ই’তিকাফ করেন, তাঁকে মু’তাকিফ বলা হয়।

ই'তিকাফে বর্জনীয়

মহান আল্লাহ পাক বলেন:-

وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
অর্থাৎ, ইতিকাফ অবস্থায় বিবিদের সাথে মিলিত হয়োনা। [সূরা আল বাকারা:১৮৭]

স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করা, মসজিদ থেকে বের হওয়া, বেচাকেনা, চাষাবাদ করা নিষেধ। অন্যান্য অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকাও। যেমন - অযথা গল্প-গুজব, কথাবার্তা না বলা।

উম্মুল মুমেনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا اعْتَكَفَ لاَ يَدْخُلُ الْبَيْتَ إِلاَّ لِحَاجَةِ الإِنْسَانَ
অর্থ: ‘হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একান্ত (পেশাব-পায়খানার) প্রয়োজন পূরণ ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ ছেড়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেন না।’ [মুসলিম ২৯৭]

ইমাম বায়হাকী (রহঃ ) উম্মুল মুমেনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণনা করেন, ইতিকাফ অবস্থায় কোনো রোগী দেখতে যাবেনা; মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও অবস্থান করবেনা; স্ত্রীর সাথে মিলবেনা; প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেনা। ইতিকাফকারীকে রোজাদার হতে হবে। যে মসজিদে জামাতের সাথে সালাত হয়, সে মসজিদে ইতিকাফ করতে হবে।

ইতিকাফ অবস্থায় অধিক পরিমাণে ইবাদত করা প্রয়োজন। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, নফল ইবাদতে সময় পার করা উত্তম। মসজিদে অহেতুক কথা না বলাই ইতিকাফ্ পালনকারীর জন্যে উত্তম।

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন যেনো আমাদেরকে সঠিকভাবে ই'তিকাফ পালন করার তাওফীক দান করেন, আমীন।

                                                                            *সমাপ্ত*

বুধবার, ১ মে, ২০১৯

জাগ্রত অবস্থায় প্রিয়নবী (দ:)’কে দেখা প্রসঙ্গে পুণ্যাত্মাবৃন্দের সাক্ষ্য

[Bengali translation of the online article "Seeing of Prophet (peace be upon him) while awake." Translator: Kazi Saifuddin Hossain]

মূল: www.ahlus-sunna.com
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

[অনুবাদকের আরয: ইদানীং মহানবী (দ:)’র ‘হাজির-নাজির’ হওয়ার আক্বীদা-বিশ্বাস নিয়ে জনৈক বাঙালি বংশোদ্ভূত মার্কিন আলেম সাহেব প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, গত শতাব্দীর সুন্নী আলেমে দ্বীন ইমাম আহমদ রেযা (রহ:) ছাড়া ইতিপূর্বে আর কেউই এই বিশ্বাস পোষণ করেন নি; এমন কী টার্মটি নাকি চালু-ও ছিলো না! বিতর্কে না যেয়ে আমরা প্রাথমিক তথা স্বর্ণযুগের পুণ্যবান আলেম-উলামাবৃন্দের এতদসংক্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস আমরা তুলে ধরার প্রয়াস পাবো। বলা বাহুল্য যে, তাঁরা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে প্রতিনিয়ত দেখার প্রত্যাশী ছিলেন, যা তাঁরই হাজির-নাজির হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে। আমরা সবার প্রতি তাঁদের এতদসংক্রান্ত সাক্ষ্যগুলোকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণের আহ্বান জানাই। আমাদের ধর্ম একগুঁয়েমিকে সমর্থন করে না।]  

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে জাগ্রত অবস্থায় দেখা এবং মা’রেফাতের জ্ঞানসমৃদ্ধ পুণ্যাত্মাদের এ ব্যাপারে অবহিত থাকার বাস্তবতা-সংক্রান্ত শরঈ ফতোয়া সম্পর্কে এই প্রবন্ধটিতে আলোকপাত করা হবে। কিন্তু তার আগে আমরা দৃষ্টি দেবো:

আল-ক্বুরআনের আলোকে

এরশাদ হয়েছে:

هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُواْ عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَابَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ

অর্থ: তিনি-ই (খোদা), যিনি উম্মী লোকদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেন যেনো তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব  ও হিকমতের জ্ঞান দান করেন, আর নিশ্চয় নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে ছিলো। [৬২:২; নূরুল এরফান]

পরবর্তী আয়াতে ঘোষিত হয়েছে:

وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُواْ بِهِمْ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ

অর্থ: এবং তাদের মধ্য থেকে অন্যান্যদের পবিত্র করেন এবং জ্ঞান দান করেন তাদেরকে, যারা ওই পূর্ববর্তীদের সাথে মিলিত হয়নি; আর তিনি-ই সম্মান ও প্রজ্ঞাময়। [৬২:৩; নূরুল এরফান]

ক্বুরআনের তাফসীরবিদবৃন্দের শিরোমণি ইমাম তাবারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এই আয়াতের ব্যাখ্যা্য় বলেন:

قال ابن زيد، في قول الله عزّ وجلّ: { وآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ } قال: هؤلاء كلّ من كان بعد النبيّ صلى الله عليه وسلم إلى يوم القيامة، كلّ من دخل في الإسلام من العرب والعجم

অর্থ: হযরত ইবনে যায়দ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) উক্ত আয়াত (যারা ওই পূর্ববর্তীদের সাথে মিলিত হয়নি) সম্পর্কে বলেন যে এটা ওই ‘সকল’ লোককেই উদ্দেশ্য করে, যাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’এর যাহেরী জিন্দেগীর পরে ক্বেয়ামত অবধি দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করতে থাকবেন; আর এঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আরব ও অনারব উভয় জাতিগোষ্ঠী-ই। [তাফসীরে তাবারী, ৭ম খণ্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর বৈরুত, লেবানন]

আল্লামা মাহমূদ আলূসী এই আয়াতে করীমার ব্যাখ্যায় বলেন:

طوائف الناس الذين يلحقون إلى يوم القيامة من العرب والروم والعجم وغيرهم؛ وبذلك فسره الضحاك وابن حيان ومجاهد في رواية، ويكون الحديث من باب الاقتصار والتمثيل

অর্থ: এতে অন্তর্ভুক্ত ক্বেয়ামত অবধি সমগ্র মানবজাতি: আরব, রোমান, আজমী/অনারব প্রমুখ...এ প্রসঙ্গে ইবনে হাইয়্যান ও মুজাহিদের (পারস্য-সংক্রান্ত) ক্বওল/বক্তব্য স্রেফ একটি উদাহরণকে ব্যাখ্যা করার খাতিরেই প্রদত্ত হয়েছে। [আল-আলূসী কৃত ‘রূহুল মা’আনী,’ ৮ম খণ্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা]

[বঙ্গানুবাদকের নোট: মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যেমন সাহাবা-এ-কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’কে পরিশুদ্ধ করেন ও হেকমত/আধ্যাত্মিক জ্ঞান-প্রজ্ঞা শিক্ষা দেন, ঠিক তেমনি পরবর্তী মুসলমান প্রজন্মগুলোর প্রতিও তিনি একই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন]

হাদীস শরীফের আলোকে

স্বপ্নে নবী পাক (দ:)’এর দর্শন লাভ

হাদীস # ১

হযরত আবূ হোরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র বাণী; যিনি বলেন:
حَدَّثَنَا أَبُو الرَّبِيعِ، سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ الْعَتَكِيُّ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، ـ يَعْنِي ابْنَ زَيْدٍ ـ حَدَّثَنَا
أَيُّوبُ، وَهِشَامٌ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
مَنْ رَآنِي فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَآنِي فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَتَمَثَّلُ بِي

অর্থ: যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখে, সে প্রকৃতপক্ষে আমাকেই দেখে; (কেননা) নিশ্চয় নিশ্চয় শয়তান আমার অনুরূপ সুরত ধারণ করতে পারে না। [মুসলিম শরীফ, বই নং ২৯, হাদীস নং ৫৬৩৫]

হাদীস # ২

وَحَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، وَحَرْمَلَةُ، قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ،
شِهَابٍ حَدَّثَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم يَقُولُ ‏مَنْ رَآنِي فِي الْمَنَامِ فَسَيَرَانِي فِي الْيَقَظَةِ أَوْ لَكَأَنَّمَا رَآنِي فِي الْيَقَظَةِ
لاَ يَتَمَثَّلُ الشَّيْطَانُ بِي ‏


অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন: আমি প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখে, সে সহসা আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখবে; কিংবা সে যেনো আমাকে জাগ্রত অবস্থাতেই দেখে। কেননা শয়তান আমার অনুরূপ সুরত ধারণ করতে পারে না। [মুসলিম শরীফ, বই নং ২৯, হাদীস নং ৫৬৩৬]

হাদীস # ৩

হযরত আবূ ক্বাতাদা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’এর বাণী, যিনি বলেন:

وَقَالَ فَقَالَ أَبُو سَلَمَةَ قَالَ أَبُو قَتَادَةَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏
مَنْ رَآنِي فَقَدْ رَأَى الْحَقَّ 

অর্খ: যে ব্যক্তি আমাকে (স্বপ্নে) দেখে, সে প্রকৃতপক্ষে হক্ক’কে প্রত্যক্ষ করে। [মুসলিম শরীফ, বই নং ২৯, হাদীস নং ৫৬৩৭]

হাদীস # ৪

হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত এক হাদীসে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এরশাদ ফরমান: 

حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُخْتَارٍ، حَدَّثَنَا ثَابِتٌ الْبُنَانِيُّ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ رَآنِي فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَآنِي، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَتَخَيَّلُ بِي، وَرُؤْيَا الْمُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ ‏"‏‏.‏
  
অর্থ: যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখে, সে নিঃসন্দেহে আমাকেই দেখে; কেননা শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না। [আল-বুখারী, বই নং ৯, হাদীস নং ১২৩]

প্রিয়নবী (দ:)’কে জাগ্রত অবস্থায় দেখা

‘প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে জাগ্রত অবস্থায় দেখার’ বিষয়টি আল-আলূসী প্রমাণ করেন:

وجوز أن يكون ذلك بالاجتماع معه عليه الصلاة والسلام روحانية، ولا بدع في ذلك فقد وقعت رؤيته صلى الله عليه وسلم بعد وفاته لغير واحد من الكاملين من هذه الأمة والأخذ منه يقظة، قال الشيخ سراج الدين بن الملقن في «طبقات الأولياء»: قال الشيخ عبد القادر الكيلاني قدس سره: رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم قبل الظهر فقال لي: يا بني لم لا تتكلم؟ قلت: يا أبتاه أنا رجل أعجم كيف أتكلم على فصحاء بغداد فقال: افتح فاك ففتحته فتفل فيه سبعاً وقال: تكلم على الناس وادع إلى سبيل ربك بالحكمة والموعظة الحسنة فصليت الظهر وجلست وحضرني خلق كثير فارتج عليَّ فرأيت علياً كرم الله تعالى وجهه قائماً بإزائي في المجلس فقال لي: يا بني لم لا تتكلم؟ قلت: يا أبتاه قد ارتج علي فقال: افتح فاك ففتحته فتفل فيه ستاً فقلت: لم لا تكملها سبعاً قال: أدباً مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم توارى عني فقلت: غواص الفكر يغوص في بحر القلب على درر المعارف فيستخرجها إلى ساحل الصدر فينادي عليها سمسار ترجمان اللسان فتشترى بنفائس أثمان حسن الطاعة في بيوت أذن الله أن ترفع.

وقال أيضاً في ترجمة الشيخ خليفة بن موسى النهر ملكي: كان كثير الرؤية لرسول الله عليه / الصلاة والسلام يقظة ومناماً فكان يقال: إن أكثر أفعاله يتلقاه منه صلى الله عليه وسلم يقظة ومناماً ورآه في ليلة واحدة سبع عشرة مرة قال له في إحداهن: يا خليفة لا تضجر مني فكثير من الأولياء مات بحسرة رؤيتي، وقال الشيخ تاج الدين بن عطاء الله في «لطائف المنن»: قال رجل للشيخ أبـي العباس المرسي يا سيدي صافحني بكفك هذه فإنك لقيت رجالاً وبلاداً فقال: والله ما صافحت بكفي هذه إلا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: وقال الشيخ لو حجب عني رسول الله صلى الله عليه وسلم طرفة عين ما عددت نفسي من المسلمين، ومثل هذه النقول كثير من كتب القوم جداً.  

অনুবাদ:

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র সাথে আধ্যাত্মিক হালত-অবস্থায় দেখা-সাক্ষাতের সাক্ষ্য-প্রমাণাদি বিদ্যমান; আর এটা কোনো নতুন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এই উম্মতের অনেক কামেল/পূর্ণতাপ্রাপ্ত বুযূর্গ তাঁকে ‘জাগ্রত’ অবস্থায় দেখেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান-প্রজ্ঞা লাভ করেছেন। শায়খ সিরাজউদ্দীন (রহমতুল্লাহে আলাইহে) নিজ ‘তাবাক্বাত আল-আউলিয়া’ পুস্তকে উদ্ধৃত করেন বড় পীর গাউসুল আযম শায়খ আবদুল ক্বাদের জিলানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে)’র কথা, যিনি বলেন: আমি যোহর ওয়াক্তের নামাযের আগে রাসূলুল্লাহ (দ:)’এর সাক্ষাৎ লাভ করি। প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন: ওহে পুত্র, তুমি কেন ভাষণ দাও না? আমি (উত্তরে) বলি: হে আমার পিতা (নোট: শায়খ জিলানী একজন সৈয়দ বংশীয়), আমি একজন আজমী/অনারব হয়ে বাগদাদের (অভিজাত) ব্যক্তিত্বদের সামনে কীভাবে তা করতে পারি? প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমার মুখ খোলো। আমি তা খুল্লে তিনি নিজের লালা মোবারক আমার ঠোঁটে সাতবার দেন এবং এরপর বলেন: এখন থেকে তোমার উচিৎ মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা এবং ওই (মহৎ) কাজে হেকমত/জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও সুন্দর সুন্দর কথা ব্যবহার করা।

অতঃপর আমি যোহরের নামায পড়ে (মসজিদে) উপবিষ্ট হলাম; সহসা বিপুল সংখ্যক মানুষ আমার চারপাশে জড়ো হন। আমি তাঁদের মাঝে হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’কে উপবিষ্ট দেখতে পেয়ে (ভয়ে) কম্পমান হই। তিনি আমায় বলেন: হে পুত্র, তুমি কেন তোমার ভাষণ আরম্ভ করছো না? আমি বলি: হে আমার পিতা, আমি এক্ষণে (ভয়ে) কম্পমান। তিনি আমাকে আমার মুখ খুলতে বলেন এবং (তা খুল্লে) তিনি আমার ঠোঁটে ছয়বার নিজের লালা মোবারক দেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কেন সাতবার তা করেননি? তিনি জবাবে বলেন: রাসূলুল্লাহ (দ:)’এর প্রতি আদবশীলতার কারণে। অতঃপর তিনি আমার দৃষ্টির অন্তরালে চলে যান। (ওই সময়) আমি নিজের মাঝে আধ্যাত্মিক জ্ঞান-প্রজ্ঞার প্রাচুর্য অনুভব করি, যা আমাকে বিভিন্ন (ঐশী) বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক অবহিত করতে থাকে....।

শায়খ ইবনে মূসা আল-নাহর মক্কী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) লেখেন যে, বড় পীর গাউসুল আযম শায়খ মহিউদ্দীন আবদুল ক্বাদের জিলানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ঘনঘন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে স্বপ্নে দেখতেন এবং জাগ্রত অবস্থায়ও দেখতে পেতেন। একবার কোনো এক রাতে তিনি তাঁকে সত্তরবার দেখেছিলেন। এ রকম কোনো রূহানী সাক্ষাতে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেন, ওহে আমার খলীফা/প্রতিনিধি, আমাকে দেখার জন্যে অতো আগ্রহী হয়ো না; কেননা অগণিত সংখ্যক আউলিয়া আমাকে (স্রেফ একবার) দেখার আশায় বেসালপ্রাপ্ত হয়েছেন।

শায়খ তাজউদ্দীন ইবনে আতাউল্লাহ (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ‘লাতায়েফ আল-মানান’ কিতাবে উল্লেখ করেন, একবার কোনো এক ব্যক্তি শায়খ আবূল আব্বাস আল-মুরসী (রহমতুল্লাহে আলাইহে)’কে জিজ্ঞেস করেন: এয়া সৈয়দী, অনুগ্রহ করে আপনার হাতে আমায় মোসাফাহ (করমর্দন) করতে দিন। তিনি জবাবে বলেন: আমি করমর্দন করি না, কেবল প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র সাথে ছাড়া। শায়খ মুরসী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) একবার বলেন: প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে যদি আমি চোখের পলক ফেলার মতো ক্ষণিকের তরেও না দেখতে পাই, তাহলে আমি নিজেকে ওই মুহূর্তের জন্যে মুসলমান হিসেবেও বিবেচনা করি না।

(আল্লামা আলূসী বলেন), এসব ঘটনা ইসলামী বইপত্রে বিস্তর পরিমাণে উল্লেখিত হয়েছে। [তাফসীরে রূহুল মা’আনী, ২২তম খণ্ড, ৫১-৫২ পৃষ্ঠা]

ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ূতী (রহমতুল্লাহে আলাইহে)

تنوير الحلك في إمكان رؤية النبي والملك
بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى. وبعد فقد كثر السؤال عن رؤية أرباب الأحوال للنبي صلى الله عليه وسلم في اليقظة وإن طائفة من أهل العصر ممن لا قدم لهم في العلم بالغوا في إنكار ذلك والتعجب منه وادعوا أنه مستحيل فألفت هذه الكراسة في ذلك وسميتها تنوير الحلك في إمكان رؤية النبي والملك ونبدأ بالحديث الصحيح الوارد في ذلك: أخرج البخاري ومسلم وأبو داود عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من رآني في المنام فسيراني في اليقظة ولا يتمثل الشيطان بي، وأخرج الطبراني مثله من حديث مالك بن عبد الله الخثعمي ومن حديث أبي بكرة، وأخرج الدارمي مثله من حديث أبي قتادة. قال العلماء اختلفوا في معنى قوله فسيراني في اليقظة فقيل معناه فسيراني في القيامة وتعقب بأنه بلا فائدة في هذا التخصيص لأن كل أمته يرونه يوم القيامة من رآه منهم ومن لم يره، وقيل المراد من آمن به في حياته ولم يره لكونه حينئذ غائبا عنه فيكون مبشرا له أنه لا بد أن يراه في اليقظة قبل موته، وقال قوم هو على ظاهره فمن رآه في النوم فلا بد أن يراه في اليقظة يعني بعيني رأسه وقيل بعين في قلبه حكاهما القاضي أبو بكر ابن العربي، وقال الإمام أبو محمد بن أبي جمرة في تعليقه على الأحاديث التي انتقاها من البخاري: هذا الحديث يدل على أنه من رآه صلى الله عليه وسلم في النوم فسيراه في اليقظة وهل هذا على عمومه في حياته وبعد مماته أو هذا كان في حياته وهل ذلك لكل من رآه مطلقا أو خاص بمن فيه الأهلية والاتباع لسنته عليه السلام اللفظ يعطى العموم ومن يدعي الخصوص فيه بغير مخصص منه صلى الله عليه وسلم فمتعسف قال وقد وقع من بعض الناس عدم التصديق بعمومه وقال على ما أعطاه عقله وكيف يكون من قد مات يراه الحي في عالم الشاهد قال وفي قول هذا القول من المحذور وجهان خطران أحدهما عدم التصديق لقول الصادق عليه السلام الذي لا ينطق عن الهوى والثاني الجهل بقدرة القادر وتعجيزه

ইমাম সৈয়ূতী (রহ:)’র ফতোয়া হতে গৃহীত বিস্তারিত বর্ণনা [আরবীর অনুবাদ]

পরম করুণাময় আল্লাহর নামে, যিনি অসীম দয়াময়।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতা’লারই (প্রাপ্য), আর তাঁর মনোনীত বান্দাবৃন্দের প্রতি সালাম জানাই।

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে আরবাব আল-আহওয়াল তথা আধ্যাত্মিক হাল-সম্পন্ন পুণ্যাত্মাদের দ্বারা জাগ্রত অবস্থায় দেখার প্রশ্নটি (আজকাল) ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আমাদের যুগে একটি গোষ্ঠী যাদের ধর্মীয় জ্ঞানে কোনো ভিত্তি-ই নেই, তারা এটাকে তীব্রভাবে অস্বীকার করছে এবং এর প্রতি বিস্ময়ও প্রকাশ করছে; আর তারা এও দাবি করছে যে এটা একটা অসম্ভব (মুসতাহিল) ব্যাপার। অতএব, আমি এ কয়েকটি পৃষ্ঠা লিখেছি এবং এর শিরোনাম দিয়েছি ‘তানউইর আল-হালাক ফী এমকানে রুয়্যাত আল-নাবীই্য ওয়াল-মালাক।’ আমরা আরম্ভ করছি এতদসংক্রান্ত সহীহ হাদীস দ্বারা: বুখারী, মুসলিম ও আবূ দাউদ (রহমতুল্লাহে আলাইহিম আজমাঈন) হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন যে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এরশাদ ফরমান: “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখেছে, সে আমাকে জাগ্রত অবস্থায়ও (এয়াক্বাযা) দেখতে পাবে; আর শয়তান আমার চেহারা (মোবারক) ধারণ করতে অক্ষম।” ইমাম তাবারানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) অনুরূপ একটি বর্ণনা মালেক ইবনে আবদিল্লাহ (রহমতুল্লাহে আলাইহে) হতে গ্রহণ করেছেন, যেটা আবূ বাকরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীস হতে এসেছে। হযরত আবূ ক্বাতাদাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীস হতে ইমাম দারিমী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) অনুরূপ আরেকটি বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। উলামাবৃন্দ বলেন: ‘সে আমাকে জাগ্রত অবস্থায়ও (এয়াক্বাযা) দেখতে পাবে’ - এই বাক্যটির অর্থের ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য (উলামাদের মধ্যে) নেই। কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন এর মানে ‘সে শেষ বিচার দিবসে আমাকে দেখতে পাবে।’ কিন্তু এই মতটিকে অসার বলে সমালোচনা করা হয়। কেননা এটা তাখসীস তথা খাস্ বা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখকৃত বিষয়। নতুবা সবাই তো তাঁকে শেষ বিচার দিবসে দেখতে পাবেন - যাঁরা ইতোমধ্যে তাঁকে দেখেছেন এবং যাঁরা দেখেননি উভয়েই। এর অর্থ এও বলা হয়েছে: ‘যাঁরা তাঁর যাহেরী জিন্দেগীর সময় তাঁকে বিশ্বাস করেছিলেন কিন্তু অনুপস্থিতির কারণে দেখতে পাননি, তাঁদের প্রতি সুসংবাদ এই যে তাঁরা বেসালপ্রাপ্ত হবার আগেই তাঁকে দেখতে পাবেন...।’

উলামাদের একটি দল বলেছেন, এর অর্থ আক্ষরিক এবং যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে আপন স্বপ্নে দেখবেন, তিনি নিশ্চিতভাবে তাঁকে জাগ্রত অবস্থায়ও দেখতে পাবেন। মানে নিজ চর্মচক্ষে তিনি হুযূর পাক (দ:)’কে দেখবেন; যদিও (উলামাদের) কেউ কেউ এর অর্থ করেন ‘অন্তঃচক্ষু দ্বারা’ দেখবেন। এই দুটো (মত)-ই শায়খ ক্বাজী আবূ বকর ইবনে আরবী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবূ মুহাম্মদ ইবনে আবী জামরা (রহমতুল্লাহে আলাইহে) আল-বুখারী হাদীসগ্রন্থের ওপর কৃত নিজ ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে লেখেন: “এই হাদীসটি প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি তাঁকে আপন স্বপ্নে দেখবেন, তিনি জাগ্রত অবস্থায়ও তাঁকে দেখতে পাবেন। (বিতর্ক শুধু এই নিয়ে যে) বাক্যটি কি প্রিয়নবী (দ:)’র যাহেরী জিন্দেগী ও বেসাল শরীফ উভয়ের বেলাতেই সার্বিকভাবে প্রয়োগকৃত হবে, নাকি স্রেফ তাঁর যাহেরী জিন্দেগীর সময়কালের মধ্যেই খাস/সুনির্দিষ্ট থাকবে; অধিকন্তু, তাঁকে যাঁরা দেখেছিলেন সামগ্রিকভাবে তাঁদের সবার বেলায় কি তা প্রযোজ্য হবে, নাকি তা স্রেফ আধ্যাত্মিক হালত-সম্পন্ন পুণ্যাত্মাবৃন্দ ও তাঁরই সুন্নাতের একনিষ্ঠ তাবেদার ব্যক্তিবৃন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। (হাদীসের) বাণীটি স্পষ্টতঃ আম/সার্বিক; আর তাই মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যেটাকে খাস/সুনির্দিষ্ট করেননি সেটাকে যে ব্যক্তি খাস্ বলে দাবি করবে, সে সীমা লঙ্ঘনকারী (মুতা’আসসাফ) হবে” [ইমাম জামরা]। ইমাম জামরা (রহমতুল্লাহে আলাইহে) আরো বলেন, “কিছু লোক এই আম/সার্বিক বিষয়টিতে অবিশ্বাস করে নিজেদের (গলদ) চিন্তাধারা যতোদূর যায়, সেই অনুসারে বলেছিলো: জীবিত মানুষ কীভাবে এই বাহ্যিক জগতে বেসালপ্রাপ্তদের দেখতে সক্ষম হবেন?” এর উত্তরে ইমাম সাহেব (রহ:) আরো বলেন: “এই আপত্তি দুটো বিপজ্জনক সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে: প্রথমতঃ চিরসত্যবাদী প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যিনি নিজের মনগড়া খেয়াল হতে কিছুই বলেননি, তাঁর সহীহ বাণী (হাদীস)’কে অবিশ্বাস করা; এবং দ্বিতীয়তঃ সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লার সর্বময় ক্ষমতার ব্যাপারে অজ্ঞ হয়ে পড়া।” [ইমাম সৈয়ূতী প্রণীত ‘আল-হাউয়ী লিল্ ফাতাউয়ী’, ২য় খণ্ড, ৪৩৭-৪৩৮ পৃষ্ঠা; মাকতাবা আল-আসরিয়্যাহ, বৈরুত, লেবানন কর্তৃক প্রকাশিত]

জাগ্রত অবস্থায় প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’কে দেখার বিষয়টি ‘প্রতিষ্ঠিত সত্য।’

*সমাপ্ত*