ব্লগ সংরক্ষাণাগার

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯

জনৈক সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্যের খণ্ডন



সম্প্রতি এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, বাবা-মায়ের চেয়ে বড় পীর-আউলিয়া নেই। তাঁর কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমার ভাবনা নিচে তুলে ধরছি।

পিতা ও মাতা জন্মদাতা। তাঁরা আমাদের শিশু বয়সে রক্ষণাবেক্ষণকারী; বেড়ে ওঠার সময়ে শিক্ষা-দীক্ষা দানকারীও। সে জন্যে পাক কালামে ঘোষিত হয়েছে: وَبِٱلْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً অর্থাৎ, তোমাদের পিতা-মাতার প্রতি অনুগ্রহ করো তথা তাঁদের হক্ব আদায় করো [১৭:২৩]। শরীয়ত তাঁদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এটা স্রেফ জাহেরী বা লৌকিক একটা বিষয়। এতে খোদাতা’লাকে অন্বেষণের পথ বর্ণিত হয়নি। তাঁর নৈকট্য লাভের পদ্ধতিও বলা হয়নি। বিশেষ করে তাঁকে জানার বা তাঁর ভেদের রহস্য জানার তরীক্বাও বাতলে দেয়া হয়নি। সেই পথটি দেখাতে পারেন একমাত্র আল্লাহর ওলী, সত্যপন্থী পীর ও মুর্শীদ। এরশাদ হয়েছে: يَا أَيُّهَا ٱلَّذِينَ آمَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱبْتَغُوۤاْ إِلَيهِ ٱلْوَسِيلَةَ অর্থাৎ, হে ঈমানদারবর্গ, আল্লাহর নৈকট্যের মাক্বাম লাভের উদ্দেশ্যে অসীলার তালাশ করো [সূরা মায়েদা, ৩৫]। হক্কানী/রব্বানী উলামাবৃন্দ এই আয়াতে উক্ত অসীলা শব্দটির তাফসীর করেছেন ওলী/মুর্শীদ [যেমন- ইমামে রব্বানী মোজাদ্দেদে আলফে সানী]। অতএব, চূড়ান্ত মিশন যেটা, সেটা ভুলে গেলে চলবে না। উল্লেখ্য যে, পিতা যদি হন কামেল ওয়াল মোকাম্মেল মুর্শীদ, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মা ও বাবা নিজেদের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে সন্তানকে দুনিয়ার জঞ্জালের দিকে টেনে নিয়ে যান; এমতাবস্থায় তরীক্বায় দীক্ষা লাভকারী সন্তান নিরবচ্ছিন্ন সাধনা করতে পারেন না। তাই এই দুটোর মধ্যে তালগোল পাকানো উচিৎ হবে না।

এই বিষয়ে যাঁরা আরো জানতে আগ্রহী, তাঁরা নিচের লিঙ্কে প্রদত্ত বইটি ডাউনলোড করে পড়তে পারেন। লিঙ্ক: https://www.mediafire.com/file/eveehda2tgqefg3/

[পুনশ্চ: মা-বাবার খেদমতগারী দ্বারা বেহেশত নিশ্চিত হতে পারে মো’মেন মুসলমানদের। দোযখের আগুন থেকে পরিত্রাণও পেতে পারেন তাঁরা। কিন্তু আউলিয়া-সূফী-দরবেশবৃন্দের অভীষ্ট লক্ষ্য তো বেহেশত নয়। তাঁরা চান বেহেশত-দোযখের মালিক স্বয়ং খোদাতা’লাকে; তাঁরই রেযামন্দিকে। এই লক্ষ্যের মধ্যে বেহেশত-দোযখের বিষয়টি একদম নেই। আপনাদের কি সূফী-দরবেশ হযরত রাবেয়া বসরী (রহমতুল্লাহে আলাইহা)’র ঘটনার কথা মনে নেই? তিনি এক হাতে পানির পাত্র এবং অপর হাতে আগুনের চেরাগ নিয়ে বলেন, আমি বেহেশতের আশায় এবাদত-বন্দেগীকে আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেবো; আর দোযখের আগুনের ভয়ে তা পালন করাকে পানি দ্বারা নিভিয়ে দেবো [মোটামুটি এই ছিলো তাঁর ভাষ্যের মর্মবাণী]। এমতাবস্থায় আমি তাসাউফ-তরীক্বতের দীক্ষাগ্রহণকারী হিসেবে এই অভীষ্ট লক্ষ্যের চেয়ে কম কোনো কিছুতে কোনোক্রমেই সন্তুষ্ট হতে পারি না।]