ব্লগ সংরক্ষাণাগার

রবিবার, ২০ মে, ২০১৮

প্রিয়নবী (দ:)-এর সতর্কবাণী ও ঐতিহাসিক তথ্য


ওহাবী/সালাফী বাতেলপন্থীরা দাবি করে থাকে যে তারা বুখারী শরীফের সহীহ হাদীস মানে। তাদের জন্যে ‘সহীহ’ তথ্য এখানে পরিবেশন করা হলো। ওই হাদীসগ্রন্থের ‘মহানবী (দ:) ও তাঁর সাহাবাবৃন্দের (রা:) মাহাত্ম্য ও গুণাবলী’ শীর্ষক অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ মা হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ (রা:)-এর ভাষ্যানুযায়ী জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (দ:) তাঁর পবিত্র চেহারায় শঙ্কার ভাবসহ তাঁর কাছে এসে বলেন: “আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বূদ/উপাস্য নেই। দুঃখ আরবদের জন্যে, আসন্ন মন্দ (খারাবী) হতে। আজ এয়া’জূজ ও মা’জূজের দেয়ালে এতো বড় একখানা ছিদ্র সংঘটিত হয়েছে।” এই সময় তিনি দুটি আঙ্গুল দ্বারা গোলাকৃতি করে তা দেখাচ্ছিলেন। মা হযরত যাইনাব (রা:) বলেন, “এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমাদের (আরবদের) কি বিনাশ হবে, যদিও আমাদের মাঝে বিরাজ করেন পুণ্যাত্মাবৃন্দ?” তিনি উত্তর দেন, “হ্যাঁ, যখন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে খাবাস্ তথা মন্দ লোক” (আহলে খবীস!)। এ হাদীসে পরিস্ফুট হয়, আরব জাতির মাঝে মন্দ লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খোদায়ী গযব/আযাব তাদের ওপর নেমে আসবে। আমরা ইতিহাস থেকে জানি, ইসলামের শত্রুরা আরব রাজ্যের ওপর ১৭০০ খৃষ্টাব্দের আগে তাদের থাবা ব্যাপকভাবে বিস্তার করতে পারেনি। মধ্যযুগে তাদের পরিচালিত সব আক্রমণই যোগ্য মুসলমান শাসকবৃন্দ প্রতিহত করেছিলেন। কিন্তু ১৭৫০ সালে মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল ওয়াহহাব তার বাতেল ওহাবী মতবাদ বৃটিশ গুপ্তচর হামফেরের উস্কানিতে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে। অতঃপর ১৭৫৭ সালে পলাশীতে উপমহাদেশের স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাহ’র পতন ঘটে। টিপু সুলতানও ১৭০০ খৃষ্টাব্দের শেষে অস্তমিত হন। উসমানীয় তুর্কী শাসনও পতনশীল হয়। এই ১৭০০ খৃষ্টাব্দের আগে মোঙ্গল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণ হয়েছিলো ঠিক, কিন্তু মুসলমান শাসকবৃন্দ তাদেরকে রুখে দিয়েছিলেন। সালাফী-ওহাবীরা যাঁদেরকে ‘শেরেকী/বেদআতী দল’ বলে অপপ্রচার চালায়, সেই হক্বপন্থী সুন্নী বীর সুশাসকদের আমলে হাদীসে উক্ত ওই মন্দ ব্যাপকভাবে চেপে বসতে পারেনি। আজকে যখন ওহাবী/সালাফীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে, মূল আরব ও মুসলমান দেশগুলোতে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাসগত উল্টাপাল্টা ফতোয়াবাজি চলছে, আর মন্দ (আহলে খবীস) লোকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন সারা মুসলিম জাতির ওপর কলঙ্কের বোঝা এসে চেপেছে। মহানবী (দ:) হাদীসটিতে ‘আরবদের’ কথা বল্লেও অনারব মুসলমানদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন হবে। কেননা ধর্মমতে আমরা রাসূল (দ:) ও সাহাবাবৃন্দের (রা:) অনুসারী। আমরা অনারব মুসলমান সাধারণ তাঁদের থেকে (ধর্মমতে) কোনোক্রমেই আলাদা নই। অতএব, আরবদের ওপর যে বালা-মসীবত এসে পড়বে, তা আমাদেরও ছুঁয়ে যাবে! নিচে হাদীসের মূল লিপি দেয়া হলো -

 حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ حَدَّثَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ زَيْنَبَ ابْنَةَ أَبِي سَلَمَةَ، حَدَّثَتْهُ أَنَّ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ حَدَّثَتْهَا عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعًا يَقُولُ ‏"‏ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ، فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذَا ‏"‏‏.‏ وَحَلَّقَ بِإِصْبَعِهِ وَبِالَّتِي تَلِيهَا، فَقَالَتْ زَيْنَبُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ قَالَ ‏"‏ نَعَمْ، إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ ‏"‏‏.‏
(كتاب المناقب)

রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮

মাইকে আযান দেয়া কি বেদআত?

[Bengali translation of online Islam Question and Answer's fatwa: "Is using loudspeakers for the Adhaan an innovation?"]

মূল: ইসলামী প্রশ্ন ও উত্তর
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

প্রশ্ন: আযা’নে লাউড-স্পীকার বা মাইক ব্যবহার করা কি বেদআত (ধর্মে নতুন প্রচলন)? (কেননা) বেদআত সংজ্ঞাটি সম্পর্কে আমার উপলব্ধি হলো সেগুলো ধর্মে নতুন প্রচলিত প্রথা। এমতাবস্থায় আযা’ন দেয়ার জন্যে ব্যবহৃত লাউড-স্পীকার বা মাইককে আপনি কোন্ শ্রেণিভুক্ত করবেন?

উত্তর: আল্লাহরই প্রতি সমস্ত প্রশংসা। বেদআত সম্পর্কে জানতে আমাদের ৭২৭৭ ও ১০৮৪৩ নং ফতোয়াগুলো দেখুন। 

লাউড-স্পীকারে আযা’ন দেয়া প্রসঙ্গে বলতে হয়, এতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা আযা’নকে শ্রোতাদের কাছে প্রচারের ক্ষেত্রে এটা একটা মাধ্যম, আর মাধ্যম তার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যেরই অনুরূপ শরঈ ফায়সালার অধীন। মুয়াযযিনের জন্যে আপন কণ্ঠস্বরকে উঁচু করাটা শর্ত, যাতে মানুষ তাঁর আযা’ন শুনতে পান। তাই এ লক্ষ্যের জন্যে যা কিছু মাধ্যম হয়, সবই প্রয়োজনীয় বলে সাব্যস্ত। 

শায়খ ইবনে সা’দী বলেন, “আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার ও তার রক্ষণাবেক্ষণ নিচের আয়াতটিতে ব্যক্ত হয়েছে:

 وَأَعِدُّواْ لَهُمْ مَّا ٱسْتَطَعْتُمْ مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ

অর্থ: আর তাদের (মোকাবেলার) জন্যে প্রস্তুত রাখো যে শক্তি তোমাদের সাধ্যে রয়েছে। [সূরা আনফাল, ৮:৬০; তাফসীরে নূরুল এরফান বাংলা সংস্করণ]

অধিকন্তু, মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার মাধ্যম ব্যবহার করতে বলা হয়েছে নিচের আয়াতে করীমায়:
  

 

يَٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءامَنُواْ خُذُواْ حِذْرَكُمْ فَٱنفِرُواْ ثُبَاتٍ أَوِ ٱنْفِرُواْ جَمِيعاً


অর্থ: (শত্রুর বিরুদ্ধে) সতর্কতা অবলম্বন করো। [সূরা নিসা, ৪:৭১]

উপরন্তু, সমুদ্র ও আকাশে ভ্রমণ করার সামর্থ্য বা সক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে নিচের আয়াতে:

 فِيهِ ءَايَٰتٌ بَيِّنَـٰتٌ مَّقَامُ إِبْرَٰهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِناً وَللَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلْبَيْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيل

অর্থ: এবং আল্লাহর জন্যে মানবকুলের ওপর ওই ঘরের হজ্জ্ব করা (ফরয), যে সেটা পর্যন্ত যেতে পারে। [সূরা আলে ইমরান, ৩:৯৭]

এগুলোর সব এবং অন্যান্য বিষয় শক্তি প্রয়োগ ও জ্বেহাদের সর্বপ্রকার মাধ্যম ব্যবহারের প্রতি খোদায়ী/ঐশী আজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

অনুরূপভাবে, কণ্ঠস্বর ও উপকারী মতামত/পরামর্শ টেলিগ্রাফ, টেলিফোন (মোবাইল) ইত্যাদির মাধ্যমে দূরদূরান্তে পৌঁছে দেয়াও মানবজাতির কাছে সত্য প্রকাশের জন্যে আল্লাহতা’লা ও তাঁর রাসূল (দ:)-এর আদেশেরই আওতাভুক্ত। বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম দ্বারা সত্য ও উপকারী বাণী প্রচারের সক্ষমতা আল্লাহতা’লারই একটি রহমত/আশীর্বাদ; আর ধর্মীয় ও পার্থিব ‍উভয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে এমন মাধ্যম উদ্ভাবন ও তার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন আল্লাহরই খাতিরে এক ধরনের জ্বেহাদ বটে।” [মসজিদে মাইক স্থাপনের পরে কিছু লোক এর সমালোচনা করার পর শায়খ ইবনে সা’দীর প্রদত্ত খুতবা: মজমূ’আহ মু’আল্লাফাত ইবনে সা’দী; ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫১ পৃষ্ঠা]

অনুরূপভাবে, উপকারী জ্ঞানের প্রচার ও মানুষকে ইসলামের প্রতি আহ্বানের জন্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার হলো শরীয়তের মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের উপকারী মাধ্যমগুলোর অন্যতম। 

আমরা আল্লাহকে মান্য করার ক্ষেত্রে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি। তিনি মহানবী (দ:)-এর প্রতি আপন আশীর্বাদ বর্ষণ করুন, আমীন।  

                                  *সমাপ্ত*