ব্লগ সংরক্ষাণাগার

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

*রাফেযী-চক্রের ধোঁকা ভঞ্জন*


- এডমিন

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর আহলে বায়ত তথা পরিবারসদস্যবৃন্দ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) হলেন তাঁর জামাতা খলীফাতুল মুসলিমীন হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু), কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরতে ফাতিমাতুয্ যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) ও দুই দৌহিত্র সর্ব-ইমাম হাসান ও হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)। তাঁরা আমাদের মতো উম্মত সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার পাত্র ও শিরোমণি। কিন্তু তাঁদের দোহাই দিয়ে একটি মহাভ্রান্ত দুষ্টচক্র ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত। জি, এরা রাফেযী শিয়া গোষ্ঠী। আখড়া ইরানে হলেও বর্তমানে পেট্রো-ডলারের জোরে আমাদের দেশেও অনেক রাফেযী শিয়া তলপিবাহক পয়দা করা হয়েছে। সম্প্রতি পবিত্র মুহর্রম উপলক্ষে চামচারা বেশ কিছু অপযুক্তি দাঁড় করিয়েছে যেগুলো শরীয়তের দলিলভিত্তিক তো নয়ই, বরং ইসলাম-বিকৃতির পর্যায়ভুক্ত। কোনো ধর্মতত্ত্বীয় বিষয়কে সাবেত বা প্রমাণ করতে হলে অবশ্যঅবশ্য শরীয়তের দলিল প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। এটাকে ‘মোল্লা দৃষ্টিভঙ্গি’ বলে উপহাস করা ধর্ম নিয়ে তামাশা করারই সামিল।
অপযুক্তি:
আহলে বায়ত (রা:)’এর মর্যাদা এতো উচ্চে যে আম্বিয়া কেরাম (আলাইহিমিস্ সালাম)-ও তাঁদের সমকক্ষ নন! এ কথাই রাফেযী-চক্র ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চেষ্টা করে। অথচ আল্লাহ পাক তাঁর ঐশীগ্রন্থে ঘোষণা করেন:
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَـٰئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّينَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقاً.
অর্থ: এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূল (দ:)’এর হুকুম মানে, তবে সে তাঁদেরই সঙ্গ লাভ করবে যাঁদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন - অর্থাৎ পয়গাম্বরবৃন্দ, সিদ্দীক্ব (সত্যনিষ্ঠ)-মণ্ডলী, শহীদান ও সৎকর্মপরায়ণ (সালেহীন)-বৃন্দ [সূরা নিসা, ৬৯ আয়াত; নূরুল এরফান]।
আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম)’বৃন্দের সমমর্যাদা কোনো উম্মতেরই হবে না। দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছেন সিদ্দীক্বীন, যাঁদের প্রথম জন হলেন খলীফা হযরতে আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); দ্বিতীয় জন খলীফা হযরতে উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); তৃতীয় জন খলীফা হযরতে উসমান যিন্নূরাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); এবং চতুর্থ জন খলীফা হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)। বলা বাহুল্য যে, হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-ই আহলে বায়ত-প্রধান। অর্থাৎ, তাঁর মাধ্যমে নবী-বংশ জারি থেকেছে। তিনি কী বলছেন শুনুন:
خير هذه الأمة بعد نبيها أبو بكر ثم عمر ولو شئت سميت الثالث.
অর্থ: প্রিয়নবী (صلى الله عليه وسلم)’এর পরে এই উম্মতের মাঝে সেরা হলেন হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه); অতঃপর সেরা হলেন হযরত উমর (رضي الله عنه); আর আমি যদি চাইতাম, তবে তৃতীয় জনের (নাম) উল্লেখ করতাম। [বড়পীর সাহেব ক্বেবলা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)’এর শিষ্য ইমাম ইবনে ক্বুদামা মাক্বদিসী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) রচিত ‘লুম’আতুল ই’তিক্বা’দ’ পুস্তিকা; খলীফাবৃন্দের মাহাত্ম্য অধ্যায়]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন:
روى عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: كنا نقول والنبي صلى الله عليه وسلم حي: أفضل هذه الأمة بعد نبيها أبو بكر ثم عمر ثم عثمان ثم علي فيبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم فلا ينكره .
আমরা এ কথা প্রিয়নবী (صلى الله عليه وسلم)’এর (যাহেরী) হায়াতে জিন্দেগীতে বলতাম: “প্রিয়নবী (صلى الله عليه وسلم)’এর পরে এই উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন হয়রত আবূ বকর (رضي الله عنه); এরপর হয়রত উমর (رضي الله عنه); এরপর হযরত উসমান (رضي الله عنه); এরপর হযরত আলী (رضي الله عنه)।” রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) কখনোই এ কথাকে নিষেধ করেননি। [আল-বুখারী (رحمة الله عليه) কৃত ‘মানা’ক্বিব, ৩৪৬৮; সুনানে আবী দাউদ (رحمة الله عليه), কিতা’বুস্ সুন্নাহ, ৪৬২৭, ৪৬২৮, ৪৬২৯; ইবনে মাজাহ (عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي عضوا عليها بالنواجذ), ‘মোক্বাদ্দমা’, ১০৬; সুনানে তিরমিযী (رحمة الله عليه), ‘মানা’ক্বিব’, ৩৭০৭ এবং ইমাম আহমদ (رحمة الله عليه), ১:১১৪; ইমাম তিরমিযী (رحمة الله عليه) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন]
ওপরের দুটো রওয়ায়াত/বিবরণ থেকে উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের ক্রম সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট জানতে ও বুঝতে পারি। আর সবার বেহেশতে প্রবেশের প্রশ্নে আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি: মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে পবিত্র স্থানে শায়িত আছেন, তাকে কী বলা হয়? রিয়াজুল জান্নাহ নয় কি? মানে বোঝেন রাফিদাহ শিয়া গোষ্ঠী? এর অর্থ জান্নাতের বাগানের (অংশ)। সেখানে আর কে কে শায়িত আছেন জানেন কি? উত্তর - প্রথম দু জন খলীফা সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)! তাঁরা তো তাহলে ইতোমধ্যেই জান্নাতে অবস্থান করছেন! বস্তুতঃ ক্বুরআন মজীদে সকল আসহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন)’কে নাজাতপ্রাপ্ত বলা হয়েছে। আল্লাহতা’লাই এই সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তাঁরা শিয়াদের বানোয়াট জাল সার্টিফিকেটের মুখাপেক্ষী নন! তবে আমরা পরবর্তীকালের সাধারণ উম্মত আহলে বায়ত ও আসহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)-মণ্ডলীর শাফা’আতের প্রার্থী।
রাফেযী শিয়াচক্র সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীসে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। সেগুলো এখানে উদ্ধৃত হলো:
হযরত মাওলা আলী (কঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, আমার পর খুব শীঘ্রই এমন একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, লোকেরা যাকে “রাফেজী” বলে ডাকবে। তোমরা যদি তাদের সাক্ষাৎ পাও তবে তাদেরকে হত্যা করবে। কেননা তারা মুশরিক ও মুনাফিক হবে। হযরত মওলা আলী (কঃ) এদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, হে আলী! তারা অতিরঞ্জিত করে তোমার নামে এমন সব গুণের প্রচার করবে যা তোমার ভেতরে নেই। তারা পূর্ববর্তী বুজুূর্গদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে এবং তাঁদের সমালোচনা করবে।
وَسَيَأْتِي قَوْمٌ لَهُمْ نَبْزٌ يُقَالُ لَهُمُ الرَّافِضَةُ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ؛ فَإِنَّهُمْ مُشْرِكُونَ.
অর্থ: অচিরেই চিহ্নধারী এমন এক দলের উদ্ভব ঘটবে যাদেরকে রাফিদ্বা (রাফেজী) বলা হবে। যখনই তাদের সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবে তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে, কেননা তারা নিশ্চিত মুশরিক। [(ক) আবু নুয়াইম ইস্পাহানি: হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৪/৩২৯। (খ) কাজী খাঁন: কানযুল উম্মাল, ১/২২৩। (গ) মোল্লা আলী কারী: শাম্মুল আওয়ারিদ্ব ফি যাম্মির রাওয়াফিদ্ব, ১/৬৯।]
হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন:
يَاعلِيُّ أَنْتَ وَأَصْحَابُكَ فِي الْجَنَّةِ، أَنْتَ وَشِيعَتُكَ فِي الْجَنَّةِ، إِلَّا أَنَّهُ مِمَّنْ يَزْعُمُ أَنَّهُ يُحِبُّكَ أَقْوَامٌ يُضْفَزُونَ الْإِسْلَامَ، ثُمَّ يَلْفِظُونَهُ، يَقْرَأُونَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، لَهُمْ نَبْزٌ يُقَالُ لَهُمُ الرَّافِضَةُ، فَإِنْ أَدْرَكْتَهُمْ فَجَاهِدْهُمْ، فَإِنَّهُمْ مُشْرِكُونَ» . فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا الْعَلَامَةُ فِيهِمْ؟ قَالَ: «لَا يَشْهَدُونَ جُمُعَةً وَلَا جَمَاعَةً، وَيَطْعَنُونَ عَلَى السَّلَفِ الْأَوَّل.
অর্থ: হে আলী! তুমি আর তোমার সহচরবৃন্দ জান্নাতি, তুমি আর তোমার দল জান্নাতি। কিন্তু তারা ব্যতিরেকে যারা তোমাকে ভালোবাসার দাবি করে, ইসলামে সংযুক্ত থাকে আর মুখে উচ্চারণ করে, তারা কুরআন তিলাওয়াত করে অথচ কণ্ঠনালিতে পৌঁছায় না। তাদের উপাধি রয়েছে, যাদেরকে রাফিদ্বা (রাফেজী) বলা হবে। তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। কেননা তারা নিশ্চিত মুশরিক। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাদের নিদর্শন কী? আল্লাহর রাসূল বললেন, তারা জুমআ ও জামাআত প্রত্যক্ষ করবে না। সালাফ তথা পূর্ববর্তীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করবে। [তাবারানী: আল-মু'জামুল আওসাত, ৬/৩৫৪, হাদীস নং: ৬৬০৫]
يَأْتِي قَوْمٌ بَعْدَنَا يَنْتَحِلُونَ شِيعَتَنَا وَلَيْسُوا بِشِيعَتِنَا، لَهُمْ نَبَزُوا آيَةً، ذَلِكَ أَنَّهُمْ يَشْتِمُونَ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ فَإِنَّهُمْ مُشْرِكُونَ.
অর্থ: আমাদের পরে এমন এক দলের উদ্ভব ঘটবে যারা আমাদের ছদ্মবেশধারী অথচ আমাদের দলভুক্ত নয়। তারা আয়াত পরিবর্তন করবে। এমন যে, তারা আবু বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)’কে গালমন্দ করবে। তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে, কেননা তারা মুশরিক। [আহমদ: ফাদ্বায়িলুস সাহাবা, ১/৪৪১, হাদীস নং ৪০৩]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন:
كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعِنْدَهُ عَلِيٌّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا عَلِيُّ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي قَوْمٌ يَنْتَحِلُونَ حُبَّنَا أَهْلَ الْبَيْتِ لَهُمْ نَبَزٌ يُسَمَّوْنَ الرَّافِضَةَ فَاقْتُلُوهُمْ، فَإِنَّهُمْ مُشْرِكُون
অর্থ: আমি নবী কারীম (দ.)’এর সান্নিধ্যে ছিলাম, তাঁর সান্নিধ্যে ছিলেন হযরত আলী (রা.)। হুযুর (দ.) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আলী! অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে আহলুল বায়তের (পরিবারসদস্যবৃন্দের) ভালোবাসায় অতিরঞ্জন করবে এমন একটি দলের উদ্ভব হবে। তাদের কিছু নিদর্শন থাকবে, যাদেরকে রাফিদ্বা (রাফেজী) বলা হবে। তোমরা তাদেরকে হত্যা কোরো, কেননা তারা মুশরিক। [তাবারানী : আল মু'জামুল কাবীর, ১২/২৪২, হাদীস নং ১২৯৯৮; আবু নুয়াইম : হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৪.৯৫]
আমরা এই চরম সতর্কবাণী সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করলাম। কিন্তু এই উম্মত (খাস করে আহলে বায়ত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) বনী ইসরাঈল বংশীয় নবী বা রাসূল (আলাইহিমুস্ সালাম)’বৃন্দের সমতুল্য মর্মে শিয়াদের দাবির পক্ষে প্রদর্শিত ’হাদীসটি’ সম্পর্কে ফায়সালা কী? এবারত নিম্নরূপ:
علماء أمتي كأنبياء بني إسرائيل.
অর্থ: “আমার উম্মতের উলামা (হাক্কানী/রব্বানী) বনী ইসরাঈল বংশীয় আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম)-মণ্ডলীর মতো।”
প্রথমতঃ এই রওয়ায়াত নিয়ে মতপার্থক্য বিদ্যমান। খারেজী ওহাবী/সালাফী মৌলভী গং নয়, বরং বড় বড় ইমাম (যথা - আল্ গাজ্জালী, ইবনে হাজর আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রমুখ) বিবরণটির আসল বা ভিত্তি নেই বলেছেন [দেখুন - https://alwafd.news/.../2972604-%D9%87%D9%84-%D8%B5%D8%AD... এবং বিশিষ্ট আহলে সেমা’/মরমি সঙ্গীত প্রবক্তা ও তরীক্বতপন্থী মিসরীয় ড: আলী জুমুআ’র ভিডিও - https://www.youtube.com/watch?v=p3qx62qcp34]
দ্বিতীয়তঃ এটাকে হাদীস হিসেবে স্বীকার করে নিলেও প্রশ্ন ওঠে যে, নুবূওয়্যতের সমস্ত গুণেই কি উলামা-এ-হাক্কানী/রাব্বানীমণ্ডলী আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম)’বৃন্দের মতো? নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক! এ তো ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক ও আক্বীদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী। বর্ণনাটিতে কোনো কিছু উহ্য আছে আর তা হলো এলম (ঐশী জ্ঞান); এটা ‘উলামা’ শব্দটির ঘোষণা দ্বারা সাবেত বা প্রমাণিত হয়। অতএব, সাযুজ্য কেবল ঐশী/আধ্যাত্মিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে বিরাজমান। এর দৃষ্টান্ত হলো পূর্ববর্তী পয়গাম্বর (আলাইহিমুস সালাম)’মণ্ডলীর মো’জেযার (অলৌকিক ক্রিয়ার) মতো উম্মতের আউলিয়া কেরাম (রহমতুল্লাহি আলাইহিম) বিশাল বিশাল কারামত প্রদর্শন করেছেন। আর ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) দুআ’ করেছিলেন যাতে তিনি উম্মতে মুহাম্মদীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। সেই দোয়া ক্ববূল হয়েছে এবং তিনি উম্মত হিসেবে আসমান থেকে দুনিয়ায় আবার নেমে আসবেন। উম্মত হিসেবে ইমাম মাহদী (আলাইহিস্ সালাম)’এর অধীনে খেদমত করলেও পয়গাম্বর হিসেবে তাঁর মর্যাদা অতি উচ্চেই থাকবে, যা পরিস্ফুট হয় এই বৃত্তান্তে যে তাঁর বেসালের পরে তাঁকে রওযায়ে আক্বদসে রাখা খালি জায়গায় সমাহিত করা হবে। অথচ সেখানে ইমাম মাহদী (আলাইহিস্ সালাম)’এর দাফন হবে না।
শেষ কথা: রাফেযী শিয়া গোষ্ঠী আমাদের দ্বীনের দলিলাদিকে বিকৃত করে এজেন্ডা বাস্তবায়নে অপতৎপর। অতএব, এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
*সমাপ্ত*

বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১

*হিজরী নববর্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন প্রসঙ্গে শরঈ দলিল*


এই বিষয়টি নিয়ে ২ দিন আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম, অথচ ফেইসবুকে কেউ কেউ আমাদেরকে এ মর্মে দলিল প্রদর্শন করতে বলছে যে, ইতিপূর্বে কোন্ কোন্ বযূর্গ আলেম এ রকম করেছেন। সত্যি আফসোস! এরা ইসলামী ফিক্বাহ তথা বিধিবিধান শাস্ত্রের উসূল বা মূলনীতি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। তাই নিচে এ নিয়ে আলোকপাত করলাম।

উসূল/মূলনীতিগত ক্বায়দা বা নিয়ম:

প্রথমেই জানা আবশ্যক যে, ইসলামী শরীয়তের বিধান মোতাবেক সকল বস্তু (বা বিষয়ের) আসল বা মূল মোবাহ, অর্থাৎ, বৈধ। যথা - কাজী খাঁন, দুর্রে মুখতার ইত্যাদি ফেক্বাহ’র গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে:

أن الأصل في الأشياء الإباحة.

অর্থ: সকল বস্তুর মূল বৈধ বা হালাল। আল্লাহর কিতাবে বা রাসূল (صلى الله عليه وسلم)’এর সুন্নাহতে নিষেধাজ্ঞা দ্বারাই কেবল এই বৈধতা রহিত হতে পারে। শায়খ ইঊসুফ ক্বারাদাউয়ী সাহেব এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে এর সপক্ষে শরঈ দলিল উপস্থাপন করেছেন তাঁর অনলাইন সাইটে [লিঙ্ক: https://www.al-qaradawi.net/node/2241 এবং http://www.usislam.org/pdf/Lawful&Prohibited.pdf]।

সার সংক্ষেপ হলো, ক্বুর’আন মজীদ, হাদীস শরীফ, ইজমায়ে উম্মত ও ক্বিয়াস দ্বারা যেসব বিষয় হারাম ঘোষিত হয়নি, সেগুলো বৈধ এবং উদ্দেশ্যভেদে সওয়াব ও পুণ্যের কাজ বলে বিবেচিত। সৎ উদ্দেশ্যে কৃত কর্মসমূহ সওয়াবের উৎস হবে এবং অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত কর্মসমূহ গুনাহের উৎস হবে। যথা - হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ (দ:) এরশাদ ফরমান - إنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ - নিশ্চয় কর্মসমূহ নিয়্যত তথা উদ্দেশ্য দ্বারা বিবেচিত। [ইমাম নববী কৃত হাদীসে আরবাঈন গ্রন্থ, ১ নং হাদীস]।

এমতাবস্থায় যাঁরা কোনো বিষয়কে জায়েয বলেন, তাঁদের শরীয়তের দলিল প্রদর্শন করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যাঁরা হারাম দাবি করেন, তাঁদেরই কেবল দলিল প্রদর্শন করা আবশ্যক হয়। [এ ব্যাপারে শায়খ তাহিরুল কাদেরী সাহেবের ‘মিলাদুণ্নবী (দ:)’ বইটির সাম্প্রতিক কয়েকটি পর্বে আলোচনা করা হয়েছে]

শরঈ দলিল:

আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান:

وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ ٱللَّهِ.

অর্থ: তাদেরকে (মানুষদেরকে) আল্লাহর দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিন। [সূরা ইবরাহীম, ৫ আয়াত]

এ আয়াতে করীমায় আল্লাহ্ তা’লা তাঁর নবী হযরত মূসা (আ:)-এর প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন যেনো তিনি তাঁর জাতিকে আল্লাহর দিনগুলো সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন। “আল্লাহর দিনগুলো” হলো সে সব দিন যা’তে বড় বড় ঘটনা ঘটেছিল বা এমন সব দিন যেগুলোতে আল্লাহ্ পাক তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি তাঁরই বড় নেয়ামত তথা আশীর্বাদ বর্ষণ করেছিলেন।

‘আল্লাহর দিনগুলোর’ উপরোক্ত ব্যাখ্যার পক্ষে কুরআন মজীদ সাক্ষ্য দেয়, যেখানে হযরত মূসা (আ:)-কে উদ্ধৃত করা হয়েছে:

وَإِذْ نَجَّيْنَٰكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوۤءَ ٱلْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَآءَكُمْ وَفِي ذَٰلِكُمْ بَلاۤءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ.

অর্খ: “আর যখন মূসা (আ:) আপন সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, স্মরণ করো তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহকে, যখন তিনি তোমাদেরকে ফিরআউনী সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিতো এবং তোমাদের পুত্রদের যবেহ্ করতো ও তোমাদের কন্যাদেরকে জীবিত রাখতো; এবং এতে তোমাদের প্রতিপালকের মহা অনুগ্রহ রয়েছে” (সুরা ইব্রাহীম, ৩ নং আয়াত)।

আল্লাহ্ তা’লার উপরোল্লিখিত আয়াতের সারমর্ম অনুযায়ী, হযরত মূসা (আ:)-এর জাতি যেদিন ফিরআউন হতে মুক্তি লাভ করেন সেদিনটি “আল্লাহর দিন” হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। অতএব, ‘আল্লাহর দিন‘গুলো স্মরণীয় করে রাখতে এবং সেগুলোকে সুশৃঙ্খল ও নিয়মবদ্ধভাবে পালন করতে এই উম্মতের সময়কালে যে হিজরী সাল চালু করা হয়েছে, যে সালের গণনা দ্বারা আমরা মীলাদুন্নবী (দ:) দিবস, রোযা, হজ্জ্ব, দুই ঈদ, শবে ক্বদর, শবে মে’রাজ, শবে বর’আত, আশুরা, আহলে বায়ত-আসহাব (রা:) ও আউলিয়া কেরাম (রহ:)’এর বেসাল বার্ষিকী/উরস ইত্যাদি ‘আল্লাহর প্রিয় দিবস’ পালন করে থাকি, সেই নে’আমতপূর্ণ সালের শুরুতে মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন অবশ্যই জায়েয ও সওয়াবদায়ক। বিশেষ করে মুসলমান তরুণ সমাজ নিজেদের এই ঐতিহ্যবাহী সাল গণনা য়েখানে ভুলতে বসেছেন, সেখানে এটাকে বেশি বেশি স্মরণ করিয়ে দেয়া আরো বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিশেষে বলবো, ফেইসবুকে কারো কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে আসুন আমরা সবাই হিজরী বর্ষকে তার যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করি এবং মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে স্মরণীয় ও বরণীয় করে তুলি। আল্লাহ তৌফীক্ব/সামর্থ্য দিন, আমীন।

*সমাপ্ত*

ফেইসবুকে অপপ্রচারকারীদের জবাবে -

পথভ্রষ্টদের চামচাগুলো একটাই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাচ্ছে যে, কোনো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দিনে কারো বাবা মারা গেলে সেদিনটির প্রতিটি বার্ষিকীতে কি কেউ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন? আরে বেয়াকুব, কোনো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দিন হলো আম তথা সাধারণ/সার্বিক। আর কারো আত্মীয় মারা যাওয়ার বিষয়টি হলো খাস তথা সুনির্দিষ্ট। কারো ’খাস’ কোনো কারণে ’আম’ বিষয় নাকচ হয়ে যায় না! যেমন (ঈদে) মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিবসে কারো বাবা মারা গেলে ওই দিনের উদযাপন নাকচ হয়ে যায় না। দ্বিতীয়তঃ ১লা মুহর্রম হিজরী বর্ষের আরম্ভ; আর ১০ই মুহর্রম আশুরা। আশুরার দিন কারবালার বিষাদময় ঘটনায় ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর শাহাদাত হয়েছিলো। কিন্তু সেটা তো ১০ দিন পরে! এর সাথে ১লা তারিখের সম্বন্ধ কোথায়? জালিয়াতিরও তো একটা সীমা থাকা উচিৎ! উপরন্তু, আমি ইতিপূর্বের পোস্টে বলেছি যে আমরা সুন্নী মুসলমান সমাজ হিজরী নববর্ষে উল্লাস করি না, বরং স্রেফ মুসলমানদের প্রতি শুভ কামনা ব্যক্ত করি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ও জোরজবরদস্তি এটাকে উল্লাস প্রকাশের দিন হিসেবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস একমাত্র এজেন্ডাধারী মোনাফেক্ব রাফেযীচক্রই পেতে পারে! অতএব, এদের প্রতারণার ফাঁদে কেউ পা দেবেন না।