ব্লগ সংরক্ষাণাগার

সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

হযরত উমর (রা.) কি হযরত ফাতিমা (রা:)’এর ঘর জ্বালিয়েছিলেন? শিয়া পণ্ডিতবর্গ এ কাহিনি অস্বীকার করেন




মূল: দি মিল্লি ক্রনিকাল (The Milli Chronicle) - অনলাইন
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

শিয়া মতবাদের অনুসারীবর্গ দাবি করেন যে, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর বেসালপ্রাপ্তির কয়েক দিন পরে হযরত উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) গিয়ে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’কে গর্ভবতী অবস্থায় মারধর করেন (এবং হাত ভেঙ্গে দেন), আর এর দরুন তাঁর গর্ভে থাকা পুত্র সন্তান মুহাসিন মারা যান। কিন্তু শিয়া মতাবলম্বীদের তৈরি এসব বানোয়াট কাহিনি জ্ঞানী ও নিরপেক্ষ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া দুষ্কর। এই কারণে কেবল আহলে সুন্নাতের আলেম-উলামাই এগুলোকে উদ্ভট ও বানোয়াট কাহিনি বলে ঘোষণা করেননি, বরঞ্চ এমন কী শিয়াদের কিছু সম্মানিত ও জ্ঞানী পণ্ডিত-ও একই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন।

গর্ভস্থ সন্তানের ধরে নেয়া মরণ কাহিনির পেছনে প্রকৃত ঘটনা

এ বিষয়টি কি অদ্ভুত ঠেকে না যে ভূমিষ্ঠ হবার আগেই কোনো পুত্র সন্তানের নাম দেয়া হয়ে যাবে এবং তিনি যে ছেলে সন্তান তাও তাঁর পিতা-মাতা আগেভাগে জেনে যাবেন? চলুন, আপনাদের আসল ঘটনা জানাই তিনি কোত্থেকে এবং কেনো ওই নাম পেয়েছিলেন। আর তা কি তাঁর জন্মের আগে না পরে, তাও জানতে চেষ্টা করি।

আমরা এই ‘মুহাসসান বিন আলী (রা:)’ সম্পর্কে জানতে পারি স্রেফ হানী বিন হানী (রহ:)’এর বর্ণনা থেকে, যিনি সরাসরি হযরত আলী বিন আবী তালিব (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) হতে সহীহ সনদে তা বর্ণনা করেন:

علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال : لمَّا ولد الحسن جـاء رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : أروني ابني ما سميتموه ؟ قلت : سمّيته حرباً ، قال : بل هـو حسن ، فلما ولد الحسين قال : أروني ابني ما سميتموه ؟ قلت سميته حرباً ، قال : بل هو حسين . فلما ولد الثالث جاء النبي صلى الله عليه وسلم فقال : أروني ابني ما سميتموه ؟ قلت حرباً ، قال : بل هو محسَّن ثم قال : إني سمّيتهم بأسماء ولد هارون شبّر وشُبَيْر ومشبّر .
অর্থ: হযরত আলী বিন আবী তালিব (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) বলেন, হাসান (রা:) যখন জন্মগ্রহণ করে তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন: “আমায় আমার পৌত্রকে দেখাও। তার নাম কী রেখেছো?” আমি বলি, তার নাম হরব। তিনি বলেন: “বরঞ্চ তার নাম হাসান।” অতঃপর যখন হুসাইন (রা:) জন্মগ্রহণ করে তখন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন: “আমায় আমার পৌত্রকে দেখাও। তার নাম কী রেখেছো?” আমি বলি, তার নাম হরব। তিনি বলেন: “বরঞ্চ তার নাম হুসাইন।” অতঃপর যখন তৃতীয় পুত্র জন্মগ্রহণ করে তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন: “আমায় আমার পৌত্রকে দেখাও। তার নাম কী রেখেছো?” আমি বলি, তার নাম হরব। তিনি বলেন: “বরঞ্চ তার নাম মুহাসসান।” এরপর তিনি বলেন: “আমি এদের নাম রেখেছি পয়গাম্বর হারূন (আলাইহিস্ সালাম)’এর পুত্রদের নাম অনুসারে - শিবর, শুবাইর ও মুশাব্বার।” [مسند أحمد (1/98) إسناده صحيح - মুসনাদ-এ-আহমদ, ১:৯৮; এসনাদ সহীহ]

অবশ্যই মুহাসসান বিন আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ছোট বাচ্চা থাকতে বেসালপ্রাপ্ত হন। [التبيين في أنساب القرشيين لابن قدامة المقدسي 133 - ইমাম ইবনে ক্বুদামাহ আল-মাক্বদিসী (রহ:) প্রণীত ‘আল-তাবেঈন ফী আনসাবিল ক্বুরাশীয়্যীন’, ১৩৩ পৃষ্ঠা]

মন্তব্য: হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর গর্ভনষ্টের কাহিনিটির কোনো ভিত্তিই একদম নেই, কেননা শিয়াদের ভাষ্যানুযায়ী ওই পুত্র তাঁর গর্ভে ইন্তেক্বাল করেছিলেন। অথচ ওই শিশু বাস্তবে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর যাহেরী/প্রকাশ্য হায়াতে জিন্দেগীতে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু তিনি অতি অল্প বয়সেই বেসালপ্রাপ্ত হন। আর তাঁর সেই অকাল মৃত্যুর (ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার) অবৈধ ফায়দা বা সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন শিয়া জালিয়াতচক্র এবং এ ঐতিহাসিক ঘটনাকে কারসাজি করে এমন চরম এক পৌরাণিক কাহিনি তাঁরা বানিয়েছিলেন, যার বিষয়বস্তু ছিলো হযরত উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর গর্ভের সন্তান হত্যা! কিন্তু হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক নিজ পুত্র সন্তান মুহাসসান (রা:)’কে গর্ভে ধারণ করা অবস্থায় হযরত উমর ফারূক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)‘এর দ্বারা তাঁর গায়ে দরজা ধাক্কা ও সেটা চেপে ধরার কল্পকাহিনিটির আসল চেহারা ওপরের এই সহীহ/বিশুদ্ধ বর্ণনাটি প্রকাশ করে দিয়েছে।

হযরত ফাতিমা (রা:)’এর গর্ভনষ্টের বানোয়াট কাহিনি সম্পর্কে শিয়াদের কতিপয় সম্মানিত বিদ্বানের দৃষ্টিভঙ্গি

১/ - শিয়া পণ্ডিত আয়াতুল্লাহ ফজলুল্লাহ বলেন: “আমার মনোযোগ এ ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়েছে যে, আমাদের (শিয়া) পণ্ডিতদের অনেকেই নিজেদের বইপত্রে লিখেছেন হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ও তাঁদের সন্তানবৃন্দ এবং কতিপয় সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’এর সাথে আপন ঘরে অবস্থানকালে নিষ্ঠুর হামলার শিকার হন। আমাদের বিদ্বানদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে একমত যে, ‘আক্রমণকারীর দল’ যারা ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’এর বাড়ি আক্রমণ করেছিলো, তারা বাস্তবিকই আক্রমণ করেছিলো, যেমনটি আমরা (উচ্ছৃঙ্খল) জনতার প্রতি দাবি (মানে আরোপ) করি; তবে সত্য হলো ‘ব্যক্তিটি’ (হযরত উমর রা.) শুধু হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’কে হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্যে ‘ব্যক্তিটি’ বলেছিলেন: ‘ওয়া ইন্ লাম ইয়াখরুজূ’, যা’তে আরবী ভাষায় ‘ওয়া ইন্’ শব্দগুলো আল-যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর ‘লজ্জা’ প্রতীয়মান করে; এমতাবস্থায় ‘ব্যক্তিটি’ যখন আল-যাহরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর প্রতি হায়াপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করেন, তখন তিনি কীভাবে তাঁর পাঁজর ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হলেন? আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ঘর আক্রমণ ও এর পাশাপাশি তাঁর পাঁজর ভেঙ্গে ফেলার কাহিনিগুলো প্রত্যাখ্যান করি; কেননা আমাদের শিয়া ইতিহাস সৈয়্যদা আয-যাহরা (রা.)’এর সাথে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটার সাক্ষ্য বহন করে না।” [সৈয়্যদ ফজলুল্লাহ: ১৯৯৯ সালের মা দিবসে প্রদত্ত ভাষণ, বৈরুত, লেবানন। এটা লিপিবদ্ধ আছে সায়্যেদ এয়াসীন আল-মূসাভী প্রণীত ‘আলমুলা’যাত’, যা ‘দার আল-সাদ্দাক্বা আল-কুবরা’, বৈরুত, লেবানন থেকে ২০০০ সালে প্রকাশিত]

২/ - শিয়া পণ্ডিত আয়াতুল্লাহ আল-সাইয়্যেদ আল-খোঈ:

এ ঘটনা সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়:

س 980: هل الروايات التي يذكرها خطباء المنبر، وبعض الكتاب عن كسر ((عمر)) لضلع السيدة فاطمة (عليها السلام) صحيحة برأيكم؟ الخوئي:ذلك مشهور معروف، والله العالم. صراط النجاة: ج 3/ ص 314

প্রশ্ন ৯৮০: হযরত উমর (রা.) কর্তৃক হযরত ফাতিমা (রা.)’এর পাঁজর ভাঙ্গার যেসব বিবরণ মিম্বরে ওঠে বক্তাবর্গ উল্লেখ করেন এবং বইপত্রে লেখা হয়, সেগুলোর বিশ্বস্ততা বা নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

উত্তর: সেটা তো জনপ্রিয় ও সর্বসাধারণ্যে জ্ঞাত (বিষয়), আর আল্লাহ-ই সবচেয়ে ভালো জানেন। [সিরাতুন্ নাজাত, ৩:৩১৪]

জরুরি জ্ঞাতব্য: আয়াতুল্লাহ খোঈ’র এ উত্তর পরিস্ফুট করে যে শিয়া বইপত্রে উপস্থিত ওই সব বিবরণকে তিনি সহীহ বিবেচনা করেন না। তিনি সেগুলোকে জনপ্রিয় বলেছেন, কিন্তু (স্পষ্টভাবে) সহীহ ঘোষণা করেননি।

আয়াতুল্লাহ খোঈ’র এতদসংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি খোলাসা করতে চলুন তাঁর বইয়ে তিনি কী লিখেছেন তা দেখা যাক:

لا ينجبر ضعف السند بالشهرة.

অর্থ: সনদের দুর্বলতা জনসাধারণ্যে (হাদীসটির) প্রসিদ্ধি দ্বারা নির্ধারিত হয় না। [কিতাবুল খুমস্, ১:১৮]

আল-খোঈ অপর এক বর্ণনায় আরো বলেন:

وجه الاشكال هو أن المعروف والمشهور بين الأصحاب وإن كان ذلك إلا أنه لا دليل عليه.
অর্থ: এটার সমস্যা হলো, আমাদের সাথীদের (মানে শিয়াদের) মাঝে এটা জ্ঞাত ও জনপ্রিয় হলেও এর পক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ-ই নেই। [মাবানী তাকমিলাত আল-মিনহাজ, ২:৪৩৪]

জরুরি জ্ঞাতব্য: কাজেই, আমরা যেমনটি দেখতে পাচ্ছি, আল-খোঈ’র নিজস্ব মতানুসারেই কোনো রওয়ায়াতের (বিবরণের) জনপ্রিয়তা সেটাকে বিশুদ্ধ (সহীহ) প্রমাণিত করে না। আর আল-খোঈ কর্তৃক ওই কাহিনিকে সহীহ মর্মে সাবেত/প্রতিষ্ঠিত না করাটা আমাদের সামনে পরিস্ফুট করে যে, এমন কী শিয়া বইপত্রেও কাহিনিটির কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস বা সূত্র নেই।

আল-খোঈ হতে প্রাপ্ত ওপরের এই তথ্যটিও যদি আমাদের পাঠকদের কাছে স্পষ্ট বলে মনে না হয়, তাহলে সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) সম্পর্কে আল-খোঈ যা বলেছেন তা এখানে তুলে ধরবো; এতে বিষয়টি জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ইসলামের প্রথম দু জন খলীফা সম্পর্কে আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আল-খোঈ ‘ফিক্বহুশ্ শীআ’ পুস্তকের ৩য় খণ্ড, ১২৬ পৃষ্ঠায় এবং তক্বী ক্বুম্মী প্রণীত ‘মাবানী মিনহাজ আল-সালিহীন’ গ্রন্থের ২৫০ পৃষ্ঠায় মন্তব্য করতে যেয়ে বলেন:

ومن هنا يحكم باسلام الأولين الغاصبين لحق أمير المومنين عليه السلام إسلاما ظاهرياً لعدم نصبهم – ظاهراً – عداوة لأهل البيت وإنما نازعوهم في تحصيل المقام والرياسة العامة.

অর্থ: এ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, প্রথম দু জন খলীফা যাঁরা আমীরুল মো’মেনীন (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’এর খেলাফতের হক্ব/অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের ইসলাম (ধার্মিকতা) স্পষ্টতঃ দ্বীন-ইসলামই ছিলো; কেননা তাঁরা বাহ্যতঃ বা দৃশ্যতঃ নাসেবী তথা আহলে বায়ত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’বৃন্দের প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন ছিলেন না, বরঞ্চ তাঁরা (পদ) মর্যাদা ও সাধারণ নেতৃত্বের খাতিরে তাঁদের (আহলে বায়তের) সাথে বিরোধে জড়িয়েছিলেন।

জরুরি জ্ঞাতব্য: সর্ব-হযরত আবূ বকর ও উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) নাসেবী (তথা আহলে বায়তের শত্রু) ছিলেন না মর্মে আল-খোঈ’র সাক্ষ্য এ কথায় প্রতীয়মান হয়। তিনি যদি বিশ্বাস করতেন যে হযরত আবূ বকর (রা.) বা হযরত উমর (রা.) হযরত ফাতিমা (রা.)’কে আক্রমণ করেছিলেন অথবা তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা করেছিলেন, তাহলে তিনি কখনোই বলতেন না হযরত আবূ বকর (রা.) ও উমর (রা.) নাসেবী নন

চিন্তার খোরাক

১/ - আমরা আহলুস্ সুন্নাতের সহীহ তথা বিশুদ্ধ হাদীসসমূহে দেখতে পাই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’কে জানিয়েছিলেন যে আহলে বায়ত (রা:)-সদস্যদের মধ্যে তিনি-ই সর্বপ্রথম পরলোকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর সাথে মিলিত হবেন [রেফারেন্স: সহীহ বুখারী, ৫ম খণ্ড, বই নং ৫৭, হাদীস নং ৬২]। কিন্তু শিয়াদের বানোয়াট বিবরণ অনুযায়ী সর্বপ্রথমে ইন্তেক্বাল করেন তাঁর গর্ভস্থ সন্তান মুহাসসান। অতএব, কোনটি সঠিক? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর আহলে বায়ত (রা:)’এর মধ্যে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-ই কি সর্বপ্রথম প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’কে অনুসরণ করে পরলোক গমন করেন, যেমনটি সহীহ হাদীসগুলোতে বিবৃত হয়েছে? নাকি তাঁর গর্ভস্থ সন্তান মুহাসসান প্রথম পরলোক গমন করেন? এটা একটা জাজ্বল্যমান অসঙ্গতি, যা প্রমাণ করে যে শিয়াদের এ ভাষ্যটি বানোয়াট ও অনির্ভরযোগ্য।

২/ - প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর বেসালপ্রাপ্তির ৬ মাস পরে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-ও বেসালপ্রাপ্ত হন। শিয়াবর্গ দাবি করে থাকেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর বেসাল-পরবর্তী এই ৬ মাসের মধ্যে হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’এর কাছ থেকে খেলাফত চুরি করেন; হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর ঘরটি তাঁকে ভেতরে রেখেই পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, আর এমন কী তিনি তাঁর গর্ভের সন্তানকে হত্যাও করেছিলেন। এসব উল্লেখিত দাবি স্মরণে রেখে চলুন আমরা অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে ফিরে তাকাই।

এই ছয় মাসের পরে হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াহজহাহু) অন্যান্য নারীদের বিয়ে করেন। এটা সর্বজনজ্ঞাত ঘটনা যে, হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’এর অন্যান্য স্ত্রীদের ঘরে জন্মলাভকারী আবূ বকর, উমর ও উসমান নামে পুত্র সন্তানবৃন্দ ছিলেন। ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর সন্তানদের মধ্যে তিনি একজনের নাম রাখেন তালহা। ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর দু জন ছেলের নাম রাখেন আবূ বকর ও উসমান। তাহলে এসব ঐতিহাসিক তথ্যের সাথে সাহাবা কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন)’বৃন্দের বিরুদ্ধে উত্থাপিত শিয়াদের মিথ্যে অভিযোগগুলোকে সঙ্গতিপূর্ণ করা সম্ভব হতে পারে কীভাবে? কারো (খেলাফতের) অধিকার হরণ ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যা যে ব্যক্তি করেন, তাঁর নামে আপন সন্তানের নামকরণ কীভাবে চিন্তাও করতে পারেন কেউ?

ঐতিহাসিক তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবা (রা:)’মণ্ডলীর বিরুদ্ধে শিয়া অভিযোগের সংক্ষিপ্তসার

শিয়াবর্গ অভিযোগ করেন হযরত আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) খেলাফত চুরি করেছিলেন; হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) দরজা চাপা দিয়ে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তাঁর গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন; আর এই চুরির ঘটনা ও হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)’এর বেসালপ্রাপ্তির পরে হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) অন্যান্য নারীদের বিয়ে করেন এবং (তাঁদের কারো একজনের ঘরে জন্মগ্রহণকারী) নিজ ছেলের নাম রাখেন উমর (এটা একটা বাস্তব ঘটনা)। তাহলে শিয়াদের এ অভিযোগে কোন্ বিবেকবান ও বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করতে পারেন?

*সমাপ্ত*

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন