ব্লগ সংরক্ষাণাগার

মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ইমাম হুসাইন (রা:) ও আহলে বায়ত (রা:)-বিষয়ক গবেষণা

এডমিন

হিজরী বর্ষের ১০ই মুহর্রম - ’আশুরা’ হচ্ছে ইসলামী ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিবস। পূর্ববর্তী যুগে আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম)’মণ্ডলীর জন্যেও এটা বিশেষ দিন ছিলো (এতদসংক্রান্ত প্রবন্ধ নিচে মন্তব্য ফোরামে)। কিন্তু এ দিনটির গুরুত্ব চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করেছে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর নয়নমণি ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর শাহাদাৎ দ্বারা। এ এক দীর্ঘ ইতিহাস, যা এখানে আলোচনা করবো না। আমি আমাদের দেশে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ও কারবালার ঘটনা এবং আহলে বায়ত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) সম্পর্কে গবেষণা নিয়ে আজকে আলোকপাত করবো।
অনেকে দাবি করেন যে এ রকম গবেষণা আমাদের সুন্নী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তেমন একটা হয়নি। পূর্ববর্তী যুগের আলেম-উলামার বইপত্রও খুব একটা অনূদিত হয়নি। শুধু ২-১টা বই অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে, তাও অতি সাম্প্রতিককালে। আসলে সত্য কথা হলো, এই বঙ্গদেশে প্রচুর সুন্নী হক্কানী/রব্বানী আলেম-উলামা আবির্ভূত হয়েছেন এবং তাঁরা গভীর গবেষণা করেছেন। কিন্তু তাঁরা ইসলামী পূর্ববর্তী যুগের ইমাম-আল্লামাবৃন্দের বইপত্র অনুবাদ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। কেননা আজ থেকে ৪০-৫০ বছর আগেও মুসলমান সর্বসাধারণ ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না, বরঞ্চ উপরোক্ত হক্কানী/রব্বানী আলেম-উলামা ও মাশায়েখবৃন্দের কাঁধে ধর্মীয় বিষয়াদির ফায়সালার দায়িত্ব অর্পণ করতেন এবং নিজেদের দুনিয়াদারির কাজে ব্যস্ত থাকতেন। সেটা ছিলো শান্তির সময়।
পরিতাপের বিষয় এই যে, আজকে ধর্মীয় শিক্ষাবিহীন লোকেরাও ধর্মক্ষেত্রে ‘গবেষণা’ আরম্ভ করেছে এবং বাতিল মতবাদে দীক্ষা নিয়ে অতি চালাকি করে এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে। পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে পেট্রো-ডলারসমৃদ্ধ সৌদি/নজদী ওহাবীপন্থী রাষ্ট্র ও রাফেযী শিয়াপন্থী ইরান রাষ্ট্রের আর্থিক মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায়। এই ১০ই মুহর্রম তারিখের হযরতে ইমামে হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’এর শাহাদাতে কারবালা নিয়েই উপরোক্ত দুটো ‘লবী’ কী রকম আক্বীদা-বিরোধী প্রচারণায় অপতৎপর তা আমাদের সামনে সুস্পষ্ট। এক দল হন্তা এয়াযীদকে ‘সত্যপন্থী’ দাবি করছে; আরেক দল তার দোষ দেখিয়ে তার বাবা সাহাবী হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’কে ‘ষড়যন্ত্রকারী ও মুনাফেক্ব’ দাবি করছে এবং আহলে বায়ত ও আসহাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন)-বৃন্দের মাঝে কল্পিত দ্বন্দ্বের এক মিথ্যাচার দ্বারা সুন্নী মুসলমান সমাজকে বিভক্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। এসব-ই ফেইসবুকে পরিদৃষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সুন্নী আলেম-উলামাবৃন্দের কথার প্রতি কর্ণপাতও করা হচ্ছে না।
তবে সুখবর হলো, ইদানীং বেশ কিছু সুন্নী আলেম বিষয়টি নিয়ে বইপত্র লিখছেন এবং পূর্ববর্তী যুগের ইমাম/আল্লামা-মণ্ডলীর কিতাবসমূহের অনুবাদকর্মেও হাত দিয়েছেন। আমার সুপরিচিত ড: ইঊসুফ জিলানীভাই ও তরুণ গবেষক মওলানা শহীদুল্লাহ বাহাদুরভাইয়ের নাম এখানে প্রণিধানযোগ্য। আমি নিজেও ক্ষুদ্র জ্ঞান অনুযায়ী দুটো লেখা অনুবাদ করেছি, যা আমার সদ্য প্রকাশিত ‘ফাদাক বাগান’ শিরোনামের বইটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে (মন্তব্যে লিঙ্ক)। এভাবে সুন্নী দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির ফায়সালা দেয়া হলে এ দেশের মুসলমান সমাজে আর বিভ্রান্তি থাকবে না বলে আমি আশাবাদী, ইন-শা-আল্লাহ।
শেষ কথা হলো, ইতিপূর্বে গবেষণা হয়নি মর্মে দাবি করে আমাদের ঐতিহ্যবাহী সুন্নী বুযূর্গ-উলামা ও মাশায়েখ (রহমতুল্লাহে আলাইহিম)-মণ্ডলীর মহৎ কীর্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করা কোনো মুসলমানের পক্ষে শোভনীয় কাজ নয়। বরং এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাতিলপন্থীদের অসৎ ও দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা ছাড়া কিছু নয়।
*সমাপ্ত*

পুনশ্চ:

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর পবিত্র সোহবত/সান্নিধ্য দ্বারা হযরতে ইমামে আলী (ক.) এতোই আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ লাভ করেছিলেন যে গাছ-পাথর-পাহাড় প্রভৃতির সালাম-সম্ভাষণ তিনি বুঝতে সক্ষম ছিলেন। এই মক্বাম স্রেফ বংশীয় সূত্রে লাভ হয় না, বরঞ্চ সোহবত ও ক্বুরবাত/নৈকট্য দ্বারাই অর্জিত হয়। নতুবা আবূ লাহাব ও আবূ জেহেল বংশীয় সূত্রে উঁচু মক্বামে অধিষ্ঠিত হতো। কেননা তারা ছিলো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর চাচা! কিন্তু তাঁর সোহবত ও ক্বুরবাত গ্রহণ না করার দরুন তারা জাহান্নামী। অতএব, বাতিল রাফিযী শিয়াচক্রের এটা উপলব্ধি করা উচিত যে আহলে বাইত (রা.)-এর সদস্যবৃন্দ প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর সোহবত ও ক্বুরবাত লাভ করেই উঁচু মক্বামে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, স্রেফ বংশগত কারণে তা হননি। এ কারণেই বিভিন্ন তরীক্বতের মাশায়েখ আল-কিরাম (রহ.) সোহবতের ওপর জোর দিয়েছেন বেশি। এ থেকে বঞ্চিত অনেক ‘সৈয়দজাদা-কেও’ আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখেছি আমি। মুসলমান সাধারণ সাবধান!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন