ভূমিকা
এই নিবন্ধটিকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করা হয়েছে, যাতে করে সহজে উপলুব্ধ ও বোধগম্য হয়।
(মে’রাজ রাতে) প্রিয় নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহকে দেখেছেন, এ বিষয়টিকে যারা অস্বীকার করে, তাদের ভ্রান্তি অপনোদনে আল-কুরআন, সহীহ হাদীস ও প্রাথমিক যুগের বোযর্গ উলেমাদের যথাযথ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের আলোকে প্রামাণ্য দলিলাদি এতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বি:দ্র: আমরা এই নিবন্ধ লেখা আরম্ভ করার আগে এ কথা স্পষ্ট করা জরুরি যে আমাদের ওয়েবসাইটের মূল সূচিপত্রে লেখাটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেননা বিষয়টি তাওহিদের (মানে ঈমান-আকীদার) সাথে সম্পৃক্ত। বিষয়টি (মুসলিম) মিল্লাত তথা সম্প্রদায়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত; কারণ কুরআন মজীদের সুরা আন্ নজমে অবিশ্বাসীদের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে। অতঃপর (ওই সূরার) ১৮ নং আয়াতের পরপরই আল্লাহ পাক মক্কার মুশরিকদের পরম শ্রদ্ধেয় ও সেরা উপাস্য মূর্তি আল-লাত, আল-উযযা ও মানা’আত সম্পর্কে উল্লেখ করেন।
অতএব, আমাদের রহমতের নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) কর্তৃক আল্লাহকে দেখাটা মুশরিকদের সামনে তাওহিদেরই সাক্ষ্য প্রদান ছাড়া আর কিছু নয়।
এই বিষয়টি সেসব বিষয়ের অন্যতম, যেগুলোর ব্যাপারে এমন কি সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-ও নিজেদের মধ্যে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাই আমরা জানি যে কিছু মূর্খ লোক (মুসলমান ও অ-মুসলমান উভয়)-ও এই বিষয়ে দ্বিমত করে বলবে, সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-ও কি ঈমান-আকীদার বিষয়গুলোতে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন? ওই সব লোকের প্রতি জবাব হলো, এমন কিছু আকীদা-বিশ্বাসসংক্রান্ত বিষয় আছে যা ‘কাতেঈ’ তথা চূড়ান্ত ও নিঃশর্ত (যথা – আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস, পয়গম্বরবৃন্দ, ফেরেশতামণ্ডলী, আসমানী কেতাবসমূহ, শেষ বিচার দিবস, আল-কদর/তাকদীর, কুরআন মজীদের পূর্ণতা ইত্যাদিতে বিশ্বাস); এসবের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণের কোনো অবকাশই নেই। পক্ষান্তরে,
অপর কিছু বিষয় আছে যা ’যান্নী’ তথা নমনীয় (যথা – রূপক বর্ণনাসমৃদ্ধ কুরআনের আয়াতগুলো, ‘এসতাওয়া’, ’নাযুল’, ’এয়াদুল্লাহ’ ইত্যাদি শব্দের আক্ষরিক না রূপক অর্থ গ্রহণ করতে হবে, আল্লাহকে দেখা ইত্যাদি বিষয়)।
আহলুস্ সুন্নাহ’র সঠিক মত হলো, যদিও আল্লাহতা’লার ওই সব সিফাত বা গুণ/বৈশিষ্ট্যকে যেভাবে আছে সেভাবেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে গ্রহণ করতে হবে, তবুও কখনো কখনো রূপক ব্যাখ্যা জরুরি হয়ে পড়ে। তবে কোনো ব্যক্তি সেই রূপক ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করলে সে কাফের বা অবিশ্বাসী হবে না, যদি না সে একেবারেই আনাড়ি আক্ষরিক ব্যাখ্যা দেয়, যেমনটি দিয়ে থাকে ‘সালাফী’ সীমা লঙ্ঘনকারীরা, যখন-ই তারা উদ্ভট কথাবার্তা বলে যে আল্লাহতা’লা আরশকে স্পর্শ করেন, মধ্যরাতে আল্লাহ পাক সর্বনিম্ন আসমানে ‘স্বশরীরে’ নেমে আসেন, আল্লাহর ২টি পা আছে, ছায়া আছে, বা তিনি আক্ষরিক অর্থেই দৌড়ান ইত্যাদি। [বিশ্বাস করা কঠিন হলেও আমাদের পাঠকমণ্ডলী অবাক হবেন এ কথা জেনে যে, ‘সালাফী’ গোষ্ঠীর কর্তৃত্বশীল নেতারা এসব উদ্ভট ধারণাকেই সমর্থন করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সউদী রাজ্যের সরকার কর্তৃক নিযুক্ত আল-কুরআনের অনুবাদক মোহসিন খান এবং ওই রাজ্যের বড় মুফতী ইবনে উসায়মীন, বিন বা’য গং।]
মে’রাজ রাতে মহানবী (দ:) কি আল্লাহকে দেখেছিলেন? এ প্রশ্নটির জবাবে এই নিবন্ধে আল-কুরআন হতে প্রচুর প্রামাণিক দলিল উপস্থাপিত হবে। কিন্তু তা পর্যালোচনার আগে মুসলিম শরীফের একখানা হাদীসের ভুল (Wrong) অনুবাদ জনসমক্ষে তুলে ধরতে চাই। হাদীসটিতে প্রিয় নবী করীম (صلى الله عليه و آله و سلم)-এঁর উচ্চারিত মূল অারবী ‘ইন্নী’ শব্দটিও মোহাদ্দেসীনবৃন্দ কীভাবে পড়ে থাকেন, তা যাচাই না করে অনেকে এই ভুল অনুবাদকে সঠিক মনে করেন।
সুপ্রিয় পাঠক! দেখুন, সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসের ভুল অনুবাদ হযরত আবূ যর্র (রা:)-এর বর্ণিত; তিনি বলেন:
“আমি প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আল্লাহকে দেখেছেন? তিনি বল্লেন, ’তিনি (আল্লাহ) নূর (তথা জ্যোতি); আমি তাঁকে কীভাবে দেখবো’?”
[সহীহ মুসলিম, অনলাইন সংস্করণ, ১ম বই, হাদীস নং ০৩৪১]
প্রিয় পাঠক! এখন দেখুন, সহীহ মুসলিমের উক্ত হাদিসের পরবর্তী হাদীস; আবদুল্লাহ ইবনে শাকিক বর্ণনা করেন:
আমি আবূ যর্র (রা:)-কে জিজ্ঞেস করি, আমি যদি প্রিয় নবী করীম (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর দেখা পেতাম, তাহলে জানতে চাইতাম। তিনি (আবূ যর্র) বলেন, তুমি কী বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইতে? অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে শাকিক বলেন, আমি তাঁর (হুযূরের) কাছে জানতে আগ্রহী ছিলাম তিনি খোদাতা’লাকে দেখেছিলেন কি না? আবূ যর্র (রা:) আরও বলেন, আমি প্রকৃতপক্ষে তাঁকে জিজ্ঞেস-ও করেছিলাম; আর তিনি জবাবে বলেন, আমি (হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) নূর (তথা জ্যোতি) দেখেছিলাম।
[সহীহ মুসলিম শরীফ, অনলাইন সংস্করণ, ১ম বই, হাদীস নং ০৩৪২]
প্রথমোক্ত হাদীসের (#০৩৪১) অনুবাদ মারাত্মক ভুল। আমরা তা যেভাবে আছে সেভাবে গ্রহণ করলে পরবর্তী হাদীসটি (#০৩৪২) তার সাথে অর্থের দিক দিয়ে সাংঘর্ষিক/পরষ্পরবিরোধী হবে। মনে রাখবেন, ইমাম মুসলিম (রহ:) একজন হাদীসের বিশারদ, যিনি তাঁর অনবদ্য হাদীস সংকলন ‘মুসলিম শরীফে’ দুটি পরস্পরবিরোধী হাদীস পাশাপাশি বর্ণনা করতে পারেন বলে ধারণা করাটাই অবান্তর।
প্রথমোক্ত হাদীসের (#০৩৪১) ভুল (Wrong) অনুবাদ বিবৃত করে:
“তিনি নূর, আমি তাঁকে কীভাবে দেখবো?”
এখানে দাবি করা হয়েছে যে আল্লাহ হলেন নূর, তাঁকে কীভাবে দেখা যাবে?
অতঃপর দ্বিতীয় হাদীস (#০৩৪২) বিবৃত করে:
“আমি (আবূ যর্র) প্রকৃতপক্ষে তাঁকে জিজ্ঞেস-ও করেছিলাম; আর তিনি জবাবে বলেন,
আমি (হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) নূর (তথা জ্যোতি) দেখেছিলাম।”
এখন আমরা প্রথম হাদীসটির আরবী উদ্ধৃতির দিকে দৃষ্টি দেবো, তাহলেই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে যে প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আসলেই আল্লাহ পাককে দেখেছিলেন।
মূল আরবী পাঠ দেখুন,
حدّثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ : حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ يَزِيدَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ شَقِيقٍ عَنْ أَبِي ذَرٍّ ، قَالَ: سَأَلْتُ رَسُولَ اللّهِ: هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ؟ قَالَ: «نُورٌ انى أَرَاهُ»؟.
’মতন’-এর অনুবাদ:
হযরত আবূ যর্র (রা:) বর্ণনা করেন: আমি প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-কে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি আপনার প্রভুকে দেখেছেন? তিনি জবাব দেন, ‘তিনি (খোদা) নূর; আমি তাঁকে দেখেছি (ইন্নী আরায়াহু)’
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং # ৩৫১, আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী প্রণীত শরহে সহীহ মুসলিম গ্রন্থের হাদীসের ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী]।
এই অনুবাদ-ই নিখুঁত, যা স্পষ্ট প্রতীয়মান করে যে প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) মে’রাজ রাতে অবশ্যই আল্লাহকে দেখেছিলেন। বিষয়টি সর্বসাধারণের বোঝার সহজ করণার্থে নিম্নরূপে তুলে ধরা হলো।
আমরা প্রতিটি অক্ষর ধরে ধরে নিচে অনুবাদ করলাম:
‘নূর’ (نُور) – তিনি জ্যোতি (সদৃশ);
‘ইন্নী’ (انى) – নিশ্চয় আমি (মহানবী);
‘আরায়াহু’ (أِرَاهُ) – তাঁকে (খোদাকে) দেখেছি।
আমরা এভাবে অনুবাদ না করলে সহীহ মুসলিম পরস্পরবিরোধী হবে; কেননা পরবর্তী হাদীসটি-ই ব্যক্ত করে – ‘রায়াইতু নূরান’ (رَأَيْتُ نُورا), অর্থাৎ, আমি নূর (জ্যোতি) দেখেছি (মানে নিশ্চয় আল্লাহকে দেখেছি)।
আল-কুরআনের আলোকে
وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَىٰ ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّىٰ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَىٰ فَأَوْحَىٰ إِلَىٰ عَبْدِهِ مَا أَوْحَىٰ مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَىٰ أَفَتُمَارُونَهُ عَلَىٰ مَا يَرَىٰ
আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান: “আর তিনি উচ্চাকাশের সর্বোচ্চ দিগন্তে ছিলেন। অতঃপর ওই জ্যোতি/‘নূর’ (نُور) নিকটবর্তী হলো। অার খুব নেমে এলো। অতঃপর ওই জ্যোতি/‘নূর’ (نُور)-ও এ মাহবুব (صلى الله عليه و آله و سلم)-এঁর মধ্যে দু’হাতের ব্যবধান রইলো। বরং তার চেয়েও কম। তখন (আল্লাহ) ওহী করলেন আপন বান্দার প্রতি যা ওহী করার ছিল। (মহানবীর) অন্তর মিথ্যা বলেনি যা তিনি দেখেছেন। তবে কি তোমরা তাঁর সাথে তিনি যা দেখেছেন তা নিয়ে বিতর্ক করছো?”
[সূরা নজম, ৭-১২ নং আয়াত; মুফতী আহমদ এয়ার খান সাহেবের ‘তাফসীরে নূরুল এরফান’]
ওপরোক্ত সূরার ১২ নং আয়াতে আমাদের প্রভু খোদাতা’লা সারা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন যে, ‘তবে কি তোমরা তাঁর সাথে তিনি যা দেখেছেন তা নিয়ে বিতর্ক করছো’। এ দেখা যদি হতো শুধু হযরত জিবরীল আমীন (আ:), তাহলে এটি তেমন বড় কোনো চ্যালেঞ্জ হতো না। কেননা, পূর্ববর্তী আম্বিয়া (আ:)-ও বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ খোদায়ী অনুগ্রহ ও সুবিধা পেয়েছিলেন। যেমন হযরত মূসা (আ:) আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন; আর হযরত ইবরাহীম (আ:)-কে বেহেশত-রাজ্য দেখানো হয়েছিল, যা জিবরীল (আ:)-কে দেখার চেয়েও উচ্চ মর্যাদার বিষয় বলে বিবেচিত।
অতএব, কুরআনী ‘নস’ তথা দলিল থেকে সুপ্রতিষ্ঠিত হয় যে আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য একমাত্র মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর জন্যেই চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়েছিল, যেমনটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) ও অন্যান্যদের বর্ণিত আহাদীস থেকেও প্রমাণিত হয়।
এখন আমরা ইমাম ইবনুল জাওযীর কৃত ওপরোক্ত আয়াতগুলোর তাফসীর দেখবো। তিনি ৮ম ও ৯ম আয়াতগুলোকে সহীহ আহাদীস ও আকওয়ালের আলোকে ব্যাখ্যা করেন যে,
وفي المشار إليه بقوله: «ثُمَّ دنا» ثلاثة أقوال.
أحدها: أنه الله عز وجل. روى البخاري ومسلم في «الصحيحين» من حديث شريك بن أبي نَمِر عن أنس بن مالك قال: دنا الجبّار ربُّ العِزَّة فتدلَّى حتى كان منه قابَ قوسين أو أدنى. وروى أبو سلمة عن ابن عباس: «ثم دنا» قال: دنا ربُّه فتدلَّى، وهذا اختيار مقاتل. قال: دنا الرَّبُّ من محمد ليلةَ أُسْرِي به،، فكان منه قابَ قوسين أو أدنى. وقد كشفتُ هذا الوجه في كتاب «المُغْني» وبيَّنتُ أنه ليس كما يخطُر بالبال من قُرب الأجسام وقطع المسافة، لأن ذلك يختص بالأجسام، والله منزَّه عن ذلك.
والثاني: أنه محمد دنا من ربِّه، قاله ابن عباس، والقرظي.
والثالث: أنه جبريل. ثم في الكلام قولان.
অর্থাৎ : ‘তিনি নেমে এলেন এবং নিকটবর্তী হলেন’, আল্লাহতা’লার এ কালাম (বাণী) সম্পর্কে তিনটি প্রসিদ্ধ ভাষ্য আছে: প্রথমতঃ (তিনি) স্বয়ং আল্লাহ পাক, যা বোখারী ও মুসলিম সহিহাইন গ্রন্থগুলোতে হযরত আনাস বিন মালেক (রা:) হতে শারিক বিন আবি নুমাইরের বর্ণিত একখানা রেওয়ায়াতে জ্ঞাত হয়। হযরত আনাস (রা:) বলেন, অপ্রতিরোধ্য, সর্বোচ্চ সম্মান ও মহাপরাক্রমশালী প্রভু খোদাতা’লা নেমে আসেন এবং (মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের) সন্নিকটবর্তী হন; এতো কাছে আসেন যে ধনুকের দুই বাহু পরিমাণ দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে, বা তারও কম।
[সহীহ আল-বোখারী # ৭৫১৮; মুসলিম # ১৬২]
অধিকন্তু, হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে আবূ সালামা বর্ণিত রেওয়ায়াতে ‘তিনি নেমে আসেন’ বলতে বোঝানো হয়েছে, ‘আল্লাহ কাছে আসেন’; এই ভাষ্য মাকাতিল (রা:)-ও গ্রহণ করেছেন, যিনি বলেন: ইসরা তথা মে’রাজ রাতে আল্লাহ পাক তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সন্নিকটবর্তী হন, এতো কাছে হন যে ধনুকের দুই বাহুর দূরত্ব অবশিষ্ট ছিল, বা তারও কম। তবে ‘আল-মুগনী’ পুস্তকে লেখা আছে, এই কাছে আসা শারীরিক বা দূরত্বের অর্থে নয় যেমনটি হয়ে থাকে সৃষ্টিকুলের ক্ষেত্রে। কেননা মহান আল্লাহর প্রতি আরোপিত এ ধরনের সীমাবদ্ধতা হতে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। দ্বিতীয়তঃ মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) স্বয়ং আল্লাহর কাছে যান। এ ভাষ্য হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) ও কুরযী (রহ:)-এর।
তৃতীয়তঃ এটি জিবরীল (আ:) ছিলেন এবং এই কওল বা ভাষ্যে কালাম তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বিদ্যমান… [এরপর ইমাম ইবনে জাওযী সাইয়্যেদাহ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা‘র মতো সাহাবা-এ-কেরামের মতামত পেশ করেন, যাঁরা বলেন যে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহকে দেখেননি। কেন তিনি এই রকম বিশ্বাস করতেন এবং অন্যান্য সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) তাঁর সাথে কীভাবে ভিন্নমত পোষণ করতেন, সে সম্পর্কে পরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হবে, ইনশা’আল্লাহ]।
রেফারেন্স: ইমাম ইবনে জাওযী প্রণীত ‘যাদ আল-মাসীর ফী এলম আত্ তাফসীর, ৮ম খণ্ড, ৬৫-৬ পৃষ্ঠা।
অতএব, আল-কুরআন ও বোখারী-মুসলিম হাদীসের গ্রন্থগুলো হতে প্রাপ্ত উক্ত সূরা নজমের ৮ম ও ৯ম আয়াতের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহকে দেখেছেন।
[হযরত আনাস বিন মালেক (রা:), যাঁর সম্পর্কে দাবি করা হয় যে তিনি আল্লাহকে দেখার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তিনি নিজেই এসব আহাদীসে প্রমাণ করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) অবশ্যঅবশ্য আল্লাহকে দেখেছিলেন। হাদীসের উসূল বা মৌলনীতি হলো, যদি সাহাবা (রা:)-বৃন্দ দুটো পরস্পরবিরোধী কথা বলেন, তাহলে ‘মাসবাত’ (প্রমাণ) প্রাধান্য পাবে ‘নফী’ (না-সূচক বর্জন)-এর ওপর। তাই এই উসূল অনুযায়ী নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয় যে রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) অবশ্যই আল্লাহকে দেখেছিলেন, আর এই বিষয়ে নফী তথা না-সূচক বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করতে হবে।]
কুরআন মজীদের অন্যত্র এরশাদ হয়েছে:
وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِيۤ أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَانِي وَلَـٰكِنِ انْظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ
مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي فَلَمَّا
تَجَلَّىٰ رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكّاً وَخَرَّ موسَىٰ صَعِقاً فَلَمَّآ أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَاْ أَوَّلُ ٱلْمُؤْمِنِي
অর্থাৎ : “এবং যখন মূসা (আ:) আমার ওয়াদার ওপর হাজির হলেন এবং তাঁর সাথে তাঁর রব্ব কথা বল্লেন।
(তখন তিনি) আরয করলেন, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে আপন দর্শন দিন! আমি আপনাকে দেখবো।’
(তিনি) বল্লেন, ‘তুমি আমাকে কখনো দেখতে পারবে না। [কুরআনের এখানে ‘লান তারানী’ বলা হয়েছে, ‘লান উরা’ বলা হয়নি]; বরং এ পাহাড়ের দিকে তাকাও। এটি যদি স্বস্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি আমাকে (অবিলম্বে) দেখবে।’
অতঃপর যখন তাঁর রব্ব পাহাড়ের ওপর আপন নূর বিচ্ছুরণ করলেন, তখন তা সেটিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলো, আর মূসা (আ:) সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলেন। অতঃপর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে এলো, (তখন) তিনি বল্লেন, পবিত্রতা আপনারই; আমি আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি সবার মধ্যে প্রথম মুসলমান।” [সূরা আল-আ’রাফ, ১৪৩ নং আয়াত; মুফতী আহমদ এয়ার খান সাহেব রচিত ‘নূরুল এরফান’।]
বিশ্বখ্যাত ‘তাফসীরে জালালাইন’ (সর্ব-ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী ও আল-মুহাল্লী রচিত) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে:
أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَٰنِى } أي لا تقدر على رؤيتي، والتعبير به دون «لن أُرَى» يفيد إمكان رؤيته تعالى { وَلَٰكِنِ انْظُرْ إِلَى الْجَبَلِ } الذي هو أقوى منك { فَإِنِ اسْتَقَرَّ } ثبت { مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَٰنِى } أي تثبت لرؤيتي، وإلا فلا طاقة لك { فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُ } أي ظهر من نوره قدر نصف أنملة الخنصر كما في حديث صححه الحاكم
অর্থাৎ : “(তুমি আমাকে কখনো দেখতে পারবে না) আয়াতটির অর্থ হচ্ছে, ‘আমাকে দেখার সামর্থ্য তোমার নেই।’ ‘লান উরা’ (আমাকে কখনো দেখা যাবে না বা দেখা সম্ভব নয়) বাক্যটির পরিবর্তে ‘লান তারানী’ বাক্যের ব্যবহারে বোঝা যায় যে আল্লাহকে দেখা সম্ভব।
“বরং এ পাহাড়ের দিকে তাকাও। এটি যদি স্বস্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি আমাকে (অবিলম্বে) দেখবে; নতুবা আমাকে দেখার সামর্থ্য তোমার হবে না।” [‘অতঃপর যখন তাঁর রব্ব পাহাড়ের ওপর আপন নূর বিচ্ছুরণ করলেন, তখন তা সেটিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলো, আর মূসা (আ:) সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলেন।’ হাকীম বর্ণিত সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই নূর ছিল পরিমাণে হাতের ছোট আঙ্গুলের নখের অর্ধেক মাত্র।]
রেফারেন্স: তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ১৬৭ পৃষ্ঠা, দারু ইবনে কাসীর, দামেশক (সিরিয়া) হতে প্রকাশিত।
আয়াতে করীমার শেষাংশে মূসা (আ:) বলেন: “আর মূসা (আ:) সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলেন। অতঃপর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে এলো, (তখন) তিনি বল্লেন, পবিত্রতা আপনারই; আমি আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি সবার মধ্যে প্রথম মুসলমান।” (৭:১৪৩)
তাফসীর আল-কুরতুবী
ইমাম কুরতুবী (রহ:) একে এভাবে ব্যাখ্যা করেন,
وأجمعت الأمة على أن هذه التوبة ما كانت عن معصية؛ فإن الأنبياء معصومون. وأيضاً عند أهل السنة والجماعة الرؤيةُ جائزةٌ.
অর্থাৎ : “ইমামবৃন্দ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন যে মূসা (আ:)-এর তওবা করা কোনো পাপের কারণে নয়; কেননা, আম্বিয়া (আ:) সবাই মাসূম তথা নিষ্পাপ। অধিকন্তু, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর দর্শন লাভ সম্ভব। [রেফারেন্স: তাফসীরুল কুরতুবী, ৭:১৪৩]
অতএব, স্বয়ং কুরআন মজীদ থেকে এ কথা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে আম্বিয়া (আ:) অসম্ভব কোনো কিছু কখনো (আল্লাহর দরবারে) প্রার্থনা করেন না। আর আল্লাহকে দেখা যদি অসম্ভব (Impossible) হতো, তাহলে হযরত মূসা (আ:) তা চাইতেন না; আর আল্লাহতা’লা-ও তাঁর দর্শনের বিষয়টিকে পাহাড়ের স্থির থাকার শর্তের সাথে বেঁধে দিতেন না। তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে তাঁর দর্শন একমাত্র মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর জন্যেই সংরক্ষিত (Reserved) ছিল, মূসা (আ:)-এঁর জন্যে ছিল না।
হাদীস শরীফের আলোকে
আমাদের হাতে মওজুদ আছে উম্মুল মো’মেনীন (বিশ্বাসীদের মা) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) কওল তথা ভাষ্য এবং তাঁর সাথে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর মধ্যে তাফসীর-শাস্ত্র বিশারদ ও নেতৃস্থানীয় হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-এর সিদ্ধান্ত (রায়)।
এই মতপার্থক্যকে ‘সালাফী’ গোষ্ঠী ভুল বুঝেছে। অথচ হযরত আয়েশা (রা:)-এর ওই না-সূচক মত বা প্রত্যাখ্যান হচ্ছে ‘এদরাক’ (আল্লাহ-সম্পর্কিত পূর্ণ জ্ঞান)-বিষয়ক। এটি আমরা তথা আহলুস সুন্নাহ-ও নাকচ করে দেই। কিন্তু ‘এদরাক’-এর নাকচ হওয়া মানে এই নয় যে প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহকে একেবারেই দেখেননি।
[অনুবাদকের জরুরি নোট: সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর মধ্যেও হাকীকত উপলব্ধি নিয়ে তারতম্য ছিল। প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর একটি হাদীস এখানে প্রণিধানযোগ্য; তিনি বলেন: ‘যে ব্যক্তি যতোটুকু উপলব্ধি করতে সক্ষম, তাকে ততোটুকু জানাও।’ অতএব, তাসাউফপন্থী আলেমদের উপলব্ধি আর সাধারণ আলেমদের উপলব্ধি এক হবার নয়।]
দ্বিতীয়তঃ ‘এসরা’ বা মে’রাজ যখন সংঘটিত হয়, তখন হযরত আয়েশা (রা:) ছিলেন শিশু। মনে রাখবেন, এটি ঘটেছিল হুযূর পূর নূর (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর মক্কী জীবনে, অার হযরত আয়েশা (রা:)-এর সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল মদীনায় হিজরতের ১ বছরের মাথায়। তাই মে’রাজ সম্পর্কে সিনিয়র বা জ্যেষ্ঠ সাহাবী (রা:)-বৃন্দের মতামত-ই অগ্রগণ্য হবে। কেননা তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে অধিক অবহিত ও সমঝদার ছিলেন।
আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট বলতে চাই যে, বৈধ ভিন্নমতকে আমরা গ্রহণ বা স্বীকার করি। কিন্তু ওহাবীদের ‘এস্তেদলাল’ এক্ষেত্রে অন্তঃসারশূন্য। কেননা, তারা হলো ‘হাওয়া’ (নফসানী খায়েশ)-বিশিষ্ট লোক এবং তারা কোনো মযহাবের ফেকাহ মানে না। আর তারা আহলুস্ সুন্নাহ’র আকীদা-বিশ্বাসগত আশআরী/মাতুরিদী পথ ও মতকেও গ্রহণ করে না।
তাই তারা যদি কোনো সঠিক সিদ্ধান্তেও উপনীত হয়, তথাপিও আল্লাহতা’লা ও তাঁর প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর দৃষ্টিতে তা নিশ্চিতভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে।
হযরত আয়েশা (রা:)-এর বর্ণিত হাদীসের শরাহ (ব্যাখ্যা) করেছেন মহান ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:), যাঁকে তথাকথিত ‘সালাফী মোকাল্লিদ’-বর্গ অনুসরণ করার দাবি করে থাকে। হযরত ইমামের এই বাণী উদ্ধৃত করেছেন বোখারী শরীফের ভাষ্যকার ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) নিজ ‘ফাতহুল বারী শরহে সহীহ আল-বোখারী’ গ্রন্থে:
عن المروزي قلت لأحمد إنهم يقولون إن عائشة قالت من زعم أن محمدا رأى ربه فقد أعظم على الله الفرية فبأي شيء يدفع قولها قال بقول النبي صلى الله عليه وسلم رأيت ربي قول النبي صلى الله عليه وسلم أكبر من قولها
অর্থাৎ : ”মারুযী (রহ:) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-কে জিজ্ঞেস করেন, মানুষেরা বলাবলি করতো যে হযরত আয়েশা (রা:) বলেছিলেন, যে ব্যক্তি এই মত ব্যক্ত করে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহকে দেখেছিলেন, সে আল্লাহর প্রতি মিথ্যে আরোপ করে। এই ব্যাপারে জবাব কী হবে?
হযরত ইমাম (রহ:) উত্তর দেন, প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) যেখানে হাদীসে এরশাদ ফরমান, ’রায়াইতু রাব্বী’ (“رأيت ربي”), মানে ‘আমি আমার প্রভু খোদাতা’লাকে দেখেছি’, সেখানে এটি-ই হযরত আয়েশা (রা:)-এর কওল (ভাষ্য)-এর জবাব হবে। কেননা, মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর বাণী হযরত আয়েশা (রা:)-এর ভাষ্যের চেয়ে বহু ঊর্ধ্বে।”
[রেফারেন্স: বোখারী শরীফের সেরা ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী শরহে সহীহ আল-বোখারী, ৮ম খণ্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা]
ইমাম নববী (রহ:) যিনি সহীহ মুসলিম শরীফের ভাষ্যকার, তিনি এই বিষয়ে আরও আলোকপাত করেন নিচে:
وإذا صحت الروايات عن ابن عباس في إثبات الرؤية وجب المصير إلى إثباتها فإنها ليست مما يدرك بالعقل , ويؤخذ بالظن , وإنما يتلقى بالسماع ولا يستجيز أحد أن يظن بابن عباس أنه تكلم في هذه المسألة بالظن والاجتهاد . وقد قال معمر بن راشد حين ذكر اختلاف عائشة وابن عباس : ما عائشة عندنا بأعلم من ابن عباس , ثم إن ابن عباس أثبت شيئا نفاه والمثبت مقدم على النافي
অর্থাৎ : ”হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণিত বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে যখন (বিষয়টি) প্রমাণিত হয়েছে, তখন আমরা ধরে নিতে পারি না যে তিনি এসব ভাষ্য নিজ হতে (মনগড়াভাবে) দিয়েছেন; তিনি অবশ্যই এগুলো মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর কাছ থেকে শুনে বলেছেন।
মা’মার বিন রাশীদ (রহ:) সর্ব-হযরত আয়েশা (রা:) ও ইবনে আব্বাস (রা:)-এর মধ্যকার মতপার্থক্য সম্পর্কে বলেন যে হযরত আয়েশা (রা:) এই বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকেফহাল ছিলেন না, কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) তা ছিলেন। তাই
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) এটি সমর্থন করলে, আর অন্য কেউ তা নাকচ করলেও উসূল তথা (সিদ্ধান্ত গ্রহণের) মৌলনীতি অনুযায়ী ‘মাসবাত’ (হ্যাঁ-সূচক প্রমাণ) ’নফী’ (না-সূচক সিদ্ধান্ত)-এর ওপর প্রাধান্য পাবে।”
[রেফারেন্স: শরহে সহীহ মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ঈমান; ‘তিনি দ্বিতীয় অবতরণে তাঁকে দেখেন’ অধ্যায় দ্রষ্টব্য]
দলিল নং ১
ইবনে শেহাব (রহ:) বলেন: ইবনে হাযম আমাকে জানান যে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) ও আবদ হাব্বা আল-আনসারী (রা:) প্রায়ই বলতেন যে প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এরশাদ ফরমান, অতঃপর তিনি (জিবরীল) আমার সাথে ঊর্ধ্বগমন করেন যতোক্ষণ না আমাকে এতো উচ্চস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে (তাকদীর লেখার) কলমগুলোর খসখস শব্দ শুনতে পাই।
ইবনে হাযম ও হযরত আনাস্ (রা:) বর্ণনা করেন মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর বাণী, যিনি বলেন: আল্লাহ আমার উম্মতের জন্যে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয (বাধ্যতামূলক) করেছিলেন। অতঃপর আমি ফেরার পথে মূসা (আ:)-কে অতিক্রম করছিলাম। এমতাবস্থায় হযরত মূসা (আ:) আমাকে বলেন, ‘আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান (فراجع ربك), কেননা আপনার উম্মত এই বোঝা বহন করতে সক্ষম হবে না।’ আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে ফিরে যাই (فراجعت ربي) এবং তিনি ওর থেকে কিছু অংশ মওকুফ করেন। এরপর আমি আবার মূসা (আ:)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে এ সম্পর্কে জানাই। তিনি বলেন, ‘আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান (راجع ربك), কেননা আপনার উম্মত এই বোঝা বহন করতে সক্ষম হবে না।’ আমি আবার মহান প্রভুর দরবারে ফিরে গেলে (فراجعت ربي) তিনি বলেন,
‘এতে আছে পাঁচ (ওয়াক্ত) যা একই সময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান। যা আদিষ্ট হয়েছে, তা আর পরিবর্তন করা হবে না।’
আমি আবার মূসা (আ:)-এর কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান।’ এমতাবস্থায় আমি (তাঁকে) বলি, আমি আমার প্রভুর সামনে লজ্জিত (قد استحييت من ربي) (হায়া-শরমসম্পন্ন)। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৩ – ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত]
ওপরের হাদীসটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহ পাককে দেখেছেন। কেননা
মূসা (আ:) প্রতিবারই তাঁকে ‘তাঁর প্রভুর কাছে ফিরে যেতে’ বলেছেন এবং অবশেষে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন, ‘আমি আমার প্রভুর সামনে লজ্জিত।’
দলিল নং ২
عن ابن عباس قال
رأى محمد ربه قلت أليس الله يقول
لا تدركه الأبصار وهو يدرك الأبصار
قال ويحك ذاك إذا تجلى بنوره الذي هو نوره وقال أريه مرتين
قال أبو عيسى هذا حديث حسن
অর্থাৎ, হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন যে হুযূর পূর নূর (صلى الله عليه و آله و سلم) তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে দেখেছেন। (একরামা) জিজ্ঞেস করেন, ‘আল্লাহ কি বলেননি আঁখি তাঁকে উপলব্ধি করতে অক্ষম?’ এমতাবস্থায় তিনি (ইবনে আব্বাস) উত্তর দেন, ‘আজব ব্যাপার যে তুমি বুঝতে পারো নি। এটি সে সময়-ই ঘটে যখন আল্লাহতা’লা তাঁর নূরের এক ঝলক দেখান (যা উপলব্ধিরও অতীত)। অতএব, মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) অবশ্যঅবশ্য আল্লাহতা’লাকে দুবার দেখেছেন।’
রেফারেন্স: সুনান-এ-তিরমিযী, সূরা নজমের তাফসীর, হাদীস নং ৩২০১; ইমাম তিরমিযী (রহ:) এই রেওয়ায়াতকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেন।
দলিল নং ৩
শায়খ আবদুল হক্ক মোহাদ্দীসে দেহেলভী (রহ:) লেখেন: হযরত ইবনে উমর (রা:) এই বিষয়ে জানতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-এর শরণাপন্ন হন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেন প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহতা’লাকে দেখেছেন কি না। হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হাঁ-সূচক জবাব দিলে হযরত ইবনে উমর (রা:) তা গ্রহণ করেন এবং আর কখনোই তা প্রত্যাখ্যান করেননি। [আশআতুল লোমআত, ৪র্থ খণ্ড, ৪৩১ পৃষ্ঠা]
প্রিয় পাঠক! এখানে অপর এক মুজতাহিদ সাহাবী, অর্থাৎ, হযরত ইবনে উমর (রা:)-কে পাওয়া গেল যিনি বিশ্বাস করতেন যে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহকে (মে’রাজ রাতে) দেখেছিলেন!
দলিল নং ৪
বোখারী শরীফ গ্রন্থের ভাষ্যকার ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (রহ:) বলেন,
روى ابن خزيمة بإسناد قوي عن أنس قال رأى محمد ربه وبه قال سائر أصحاب ابن عباس وكعب الأحبار والزهري وصاحب معمر وآخرون وحكى عبد الرزاق عن معمر عن الحسن أنه حلف أن محمدا رأى ربه وأخرج ابن خزيمة عن عروة بن الزبير إثباتها
অর্থাৎ, ‘হযরত আনাস বিন মালেক (রা:) হতে শক্তিশালী সনদে ইবনে খুযায়মা (রহ:) বর্ণনা করেন; হযরত আনাস (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে দেখেছেন। একই কথা রেওয়ায়াত করা হয়েছে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে; এবং কাঅাব আল-আহবার (রহ:), যুহিরী (রহ:) ও মা’মার (রহ:)-এঁর মতো তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকেও।
ইমাম আবদুর রাযযাক (রহ:) মা’মার হতে বর্ণনা করেন, যিনি হযরত হাসান আল-বসরী (রহ:)-এঁর প্রায়ই উচ্চারিত কথা উদ্ধৃত করেন; হযরত হাসান বসরী (রহ:) বলতেন, আমি শপথ নিয়ে বলছি যে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে দেখেছেন। ইবনে খুযায়মা (রহ:) আল্লাহকে দেখার পক্ষে প্রদত্ত হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়র (রা:)-এঁর ভাষ্য-ও সাবেত করেছেন। [উমদাত আল-কারী শরহে সহীহ আল-বোখারী, ১৯তম খণ্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা]
ইমাম হাসান বসরী (রহ:)-এর শপথ নেয়াটা কোনো মামুলি ব্যাপার নয়। হাদীস বর্ণনায় তাঁর মর্যাদাপূর্ণ আসন সম্পর্কে যারা অনুধাবন করতে পারে না, তারা হাদীসের বুনিয়াদি বিষয় সম্পর্কেই অজ্ঞ।
দলিল নং ৫
ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (রহ:) আরও ব্যাখ্যা করেন:
وروى الطبراني في (الأوسط) بإسناد قوي عن ابن عباس قال رأى محمد ربه مرتين ومن وجه آخر قال نظر محمد إلى ربه جعل الكلام لموسى والخلة لإبراهيم والنظر لمحمد فظهر من ذلك أن مراد ابن عباس ههنا رؤيا العين
অর্থাৎ, ইমাম তাবারানী (রহ:) নিজ ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে শক্তিশালী সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে রেওয়ায়াত করেন, যিনি বলেন যে রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে দু বার দেখেছিলেন; এই ভাষ্যের কারণ হলো তিনি স্বচক্ষেই আল্লাহ পাককে দেখেছিলেন। কেননা, হযরত মূসা (আ:) সরাসরি অাল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন, হযরত ইবরাহীম (আ:)-কে খোদাতা’লার বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল, আর রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) -কে (তাঁর) দর্শনের জন্যে মনোনীত করা হয়েছিল (অর্থাৎ, অন্য কোনো নবীকে এই মর্যাদা দেয়া হয়নি)। স্পষ্টতঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) এখানে যা বলতে চান তা হলো, মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) নিজ মোবারক চোখে মহান আল্লাহকে দেখেছিলেন। [‘উমদাতুল কারী শরহে সহীহ আল-বোখারী’, ১৭তম খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা]
দলিল নং ৬
সর্ব-ইমাম নাসাঈ (রহ:) ও আল-হাকীম (রহ:) সহীহ এসনাদে বর্ণনা করেন:
أخبرنا إسحاق بن إبراهيم قال أخبرنا معاذ بن هشام قال حدثني أبي عن قتادة عن عكرمة عن بن عباس قال أتعجبون أن تكون الخلة لإبراهيم والكلام لموسى والرؤية لمحمد صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ, হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বিবৃত করেন, তোমরা কি হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর খলীলউল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু) হওয়া, হযরত মূসা (আ:)-এর সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলা, এবং প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর (আল্লাহকে) দর্শনের বিষয়গুলোর প্রতি আশ্চর্যান্বিত? [সুনানে নাসাঈ আল-কুবরা, আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লায়লাহ অধ্যায়, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদীস নং ১১৫৩৯; মোস্তাদরাক ’আলা সহিহাইন, ১ম খণ্ড, হাদীস নং ২১৬]
ইমাম আল-হাকীম (রহ:) ওপরের বর্ণনা শেষে বলেন:
هذا حديث صحيح على شرط البخاري
অর্থাৎ, এটি সহীহ রেওয়ায়াত, আল-বোখারীর সূত্রে। [প্রাগুক্ত মোস্তাদরাক, হাদীস নং ২১৬]
ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) বলেন:
ما أخرجه النسائي بإسناد صحيح وصححه الحاكم أيضا من طريق عكرمة عن بن عباس قال أتعجبون أن تكون الخلة لإبراهيم والكلام لموسى والرؤية لمحمد
অর্থাৎ, এই রেওয়ায়াত ইমাম নাসাঈ (রহ:) ‘সহীহ এসনাদ’ সহকারে বর্ণনা করেন এবং ইমাম আল-হাকীম (রহ:)-ও এটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন, যার এসনাদে অন্তর্ভুক্ত আছেন হযরত একরামা (রহ:), যিনি স্বয়ং হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন (এবং এই রেওয়ায়াত নিজেই উদ্ধৃত করেছেন)। [‘ফাতহুল বারী শরহে সহীহ আল-বোখারী’, ৮ম খণ্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠা]
অতএব, ওহে মুসলমান সম্প্রদায়, এই বাস্তবতা সম্পর্কে জানার পর বিস্মিত হবেন না। কেননা, মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) বাস্তবিক-ই তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে দেখেছিলেন; আর এই বিষয়টি-ই আমাদের তথা আহলুস্ সুন্নাহ’র সাথে পথভ্রষ্ট মো’তাযেলী গোষ্ঠীর মৌলিক পার্থক্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। তারা এই বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করতো (আজকে তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে শিয়া গোষ্ঠী)।
দলিল নং ৭
ইমাম নববী (রহ:) হযরত ইবনে মাসউদ (রা:)-এঁর বর্ণিত হাদীসের নিচে লেখেন যে ‘মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর অন্তর তিনি যা দেখেছিলেন সে সম্পর্কে মিথ্যে বলেনি’ আয়াতটির মানে তিনি জিবরীল (আ:)-কে দেখেছিলেন,
هذا الذي قاله عبد الله رضي الله عنه هو مذهبه في الآية , وذهب الجمهور من المفسرين إلى أن المراد أنه رأى ربه سبحانه وتعالى
অর্থাৎ, এই কথা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) ও তাঁর মযহাবের। কিন্তু (হযরত ইবনে আব্বাস সহ) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মোফাসসেরীন তথা কুরআন ব্যাখ্যাকারী উলামা-মণ্ডলীর মযহাব (পথ ও মত) হলো রাসূলুল্লাহ (দ:) মে’রাজ রাতে আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তা’লাকে দেখেছিলেন।
[রেফারেন্স: শরহে সহীহ মুসলিম, কিতাব আল-ঈমান অধ্যায়, সিদরাত আল-মোনতাহা সম্পর্কে আলোচনা; হাদীস নং ২৫৪]
ইমাম নববী (রহ:) আরও বলেন:
فالحاصل أن الراجح عند أكثر العلماء : أن رسول الله صلى الله عليه وسلم رأى ربه بعيني رأسه ليلة الإسراء لحديث ابن عباس وغيره مما تقدم . وإثبات هذا لا يأخذونه إلا بالسماع من رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا مما لا ينبغي أن يتشكك فيه
অর্থাৎ, (এ যাবত প্রদর্শিত যাবতীয় দলিলের) সামগ্রিক ফলাফল এই যে, বহু উলামা-এ-কেরামের কাছে প্রধানত প্রতিষ্ঠিত (সিদ্ধান্ত) রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) মে’রাজ রাতে স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছিলেন, যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-এঁর এবং অন্যান্যদের রেওয়ায়াতে; এই দালিলিক প্রমাণ স্বয়ং রাসূলে খোদা (صلى الله عليه و آله و سلم) থেকে এসেছে, আর তাই এতে কোনো সন্দেহেরই অবকাশ নেই। [শরহে সহীহ মুসলিম, কিতাব আল-ঈমান, ‘তিনি দ্বিতীয় অবতরণে তাঁকে দেখেন’ অধ্যায়ের ব্যাখ্যায়]
দলিল নং ৮
হযরত আয়েশা (রা:)-এর বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে ইমাম নববী (রহ:) আরও বলেন:
فأما احتجاج عائشة بقول الله تعالى : { لا تدركه الأبصار } فجوابه ظاهر , فإن الإدراك هو الإحاطة والله تعالى لا يحاط به , وإذا ورد النص بنفي الإحاطة لا يلزم منه نفي الرؤية بغير إحاطة
অর্থাৎ : হযরত আয়েশা (রা:)-এর (আল্লাহকে দেখার বিপক্ষে) গৃহীত দলিল (অর্থাৎ, চোখ তাঁকে উপলব্ধি করতে অক্ষম) সম্পর্কে স্পষ্ট জবাব হলো, আল্লাহতা’লার এদরাক হতে পারে না (মানে তাঁর সম্পর্কে সম্পূর্ণ উপলব্ধি অসম্ভব); অতএব, (কোরআনী) নস্ (তথা প্রামাণ্য দলিল) ‘নফী আল-এহা’ত’ (পূর্ণ উপলব্ধি নাকচ) করে, কিন্তু তা ‘এহা’তা-বিহীন দর্শনকে নাকচ করে না। [প্রাগুক্ত শরহে সহীহ মুসলিম]
দলিল নং ৯
ইমাম ইবনে জারির তাবারী (রহ:) ‘মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর অন্তর তিনি যা দেখেছেন সে সম্পর্কে মিথ্যে বলেনি’ (আল-কুরআন, ৫৩:১১) আয়াতের তাফসীরে লেখেন:
عيسى بن عبيد، قال: سمعت عكرِمة، وسُئل هل رأى محمد ربه، قال نعم، قد رأى ربه.
অর্থাৎ : ঈসা ইবনে উবায়দ (রহ:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে মে’রাজ রাতে দেখেছিলেন কি না, এ ব্যাপারে একরামা (রহ:)-কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, হ্যাঁ, তিনি তাঁর রব্ব আল্লাহকে দেখেছিলেন। [তাফসীরে তাবারী, ৫৩:১১]
দলিল নং ১০
ইমাম তাবারী (রহ:) খোদ রাসূলুল্লাহ প্রিয় নাবী কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) হতে প্রমাণ পেশ করেন:
عن عطاء، عن ابن عباس، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " رأَيْتُ رَبِي فِي أحْسَنَ صُورَةٍ
অর্থাৎ, হযরত আতা (রহ:) বর্ণনা করেন হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান, আমি আল্লাহতা’লাকে সেরা সুরত তথা আকৃতিতে দেখেছি (আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-ই ভালো জানেন)। [তাফসীরে তাবারী, ৫৩:১১]
আমরা এই নিবন্ধ শেষ করবো মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর সীরাহ-বিষয়ে লেখা সেরা গ্রন্থ ইমাম কাজী আয়ায (রহ:)-এর ‘শেফা শরীফ’ হতে দীর্ঘ উদ্ধৃতি পেশ করে।
হযরত ইমাম নিজ গ্রন্থে লেখেন:
فصل
رؤيته لربه عز و جل و اختلاف السلف فيها
و أما رؤيته ـ صلى الله عليه و سلم لربه جل و عز ـ فاختلف السلف فيها ، فأنكرته عائشة .
حدثنا أبو الحسن سراج بن عبد الملك الحافظ بقراءتي عليه ، قال حدثني أبي و أبو عبد الله بن عتاب الفقيه ، قالا : حدثنا القاضي يونس بن مغيث ، حدثنا أبو الفضل الصلقي ، حدثنا ثابت بن قاسم بن ثابت ، عن أبيه وجده ، قالا : حدثنا عبد الله بن علي ،
قال : حدثنا محمود بن آدم ، حدثنا وكيع ، عن ابن أبي خالد ، عن عامر عن مسروق ـ أنه قال لعائشة رضي الله عنها ـ يا أم المؤمنين ، هل رأى محمد ربه ؟ فقالت : لقد قف شعري مما قلت . ثلاث من حدثك بهن فقد كذب : من حدثك أن محمد اً رأى ربه فقد كذب ، ثم قرأت : لا تدركه الأبصار وهو يدرك الأبصار وهو اللطيف الخبير ، و ذكر الحديث .
و قال جماعة بقول عائشة رضي الله عنها ، و هو المشهور عن ابن مسعود .
و مثله عن أبي هريرة أنه [ ا ] : إنما رأى جبريل . و اختلف عنه . و قال بإنكار هذا و امتناع رؤيته في الدنيا جماعة من المحدثين ، و الفقهاء و المتكلمين .
و عن ابن عباس رضي الله عنهما أنه رآه بعينه . وروى عطاء عنه ـ أنه رآه بقلبه .
و عن أبي العالية ، عنه : رآه بفؤاده مرتين .
و ذكر ابن إسحاق أن عمر أرسل إلى ابن عباس رضي الله عنهما يسأله : هل رأى محمد ربه ؟ فقال : نعم .
و الأشهر عنه انه رأى ربه بعينه ، روي ذلك عنه من طرق ، و قال : إن الله تعالى اختص موس بالكلام ، و إبراهيم بالخلة ،و محمداً بالرؤية و حجته قوله تعالى : ما كذب الفؤاد ما رأى * أفتمارونه على ما يرى * ولقد رآه نزلة أخرى [ سورة النجم /53 ، الآية : 11 ، 13 ] .
قال الماوردي : قيل : إن الله تعالى قسم كلامه و رؤيته بين موس ، و محمد صلى الله عليه و سلم ، فر آه محمد مرتين ، و كلمه موس مرتين .
و حكى أبو الفتح الرازي ، و أبو الليث السمرقدي الحكاية عن كعب .
و روى عبد الله بن الحارث ، قال : اجتمع ابن عباس و كعب ، فقال ابن عباس : أما نحن بنو هاشم فنقول : إن محمد اً قد رأى ربه مرتين ، فكبر كعب حتى جاوبته الجبال ،
و قال : إن الله قسم رؤيته و كلامه بين محمد و موس ، فكلمه موسى ، و رآه محمد بقلبه .
و روى شريك عن أبي ذر رضي الله عنه في تفسير الآية ، قال : رأى النبي صلى الله عليه و سلم ربه .
و ح كى السمرقندي ، عن محمد بن كعب القرظي ، و ربيع بن أنس ـ أن النبي صلى الله عليه و سلم سئل : هل رأيت ربك ؟ قال : رأيته بقؤادي ، و لم أره بعيني .
و روى مالك بن يخامر ، عن معاذ ، عن النبي صلى الله عليه و سلم ، قال : رأيت ربي ... و ذكر كلمة ، فقال : يا محمد ، فيم يختصم الملأ الأعلى الحديث .
و حكى عبد الرزاق أن الحسن كان يحلف با الله لقد رأى محمد ربه
অর্থাৎ, আল্লাহর দর্শন ও সালাফ আস্ সালেহীনের মধ্যকার এতদসংক্রান্ত মতপার্থক্যবিষয়ক অধ্যায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে দেখার ব্যাপারে প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ ছিল।
সাইয়্যেদাহ আয়েশা (রা:) একে প্রত্যাখ্যান করেন; আর যখন হযরত মাসরুখ (রা:) তাঁকে প্রশ্ন করেন: ‘হে উম্মুল মো’মেনীন (বিশ্বাসীদের মা)! মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) কি তাঁর প্রভু আল্লাহ পাককে (মে’রাজ রাতে) দেখেছিলেন?’ তখন তিনি উত্তর দেন: ‘তুমি যা জিজ্ঞেস করেছো, তাতে আমার মাথার চুল সব খাড়া হয়ে গিয়েছে।’
অতঃপর তিনি তিনবার বলেন, ‘তোমাকে এ কথা যে ব্যক্তি বলেছে, সে মিথ্যেবাদী।’ এরপর তিনি কুরআনে করীম থেকে তেলাওয়াত করেন নিম্নের আয়াত – “চক্ষুসমূহ তাঁকে (খোদাকে) আয়ত্ত (মানে উপলব্ধি) করতে পারে না এবং সমস্ত চক্ষু তাঁরই আয়ত্তে রয়েছে; আর তিনি-ই অতীব সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত” (৬:১০৩)।
হযরত আয়েশা (রা:) যা বলেছিলেন, তার সাথে কিছু মানুষ একমত হয়েছেন এবং এটি-ও সর্বজনবিদিত যে সর্ব-হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) ও আবূ হোরায়রা (রা:)-ও অনুরূপ কথাবার্তা বলেছিলেন; তাঁরা বলেছিলেন যে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) জিবরীল (আ:)-কেই দেখেছিলেন। তবে এই বিষয়ে এখতেলাফ তথা মতপার্থক্য বিদ্যমান।
হাদীসশাস্ত্র বিশারদ, ফুকাহা (ফকীহবৃন্দ) ও ধর্মতত্ত্ববিদদের জামা’আত (বড় দলটি) (ওপরের) ওই বক্তব্য এবং মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) কর্তৃক আল্লাহতা’লার দর্শন লাভকে নাকচকারী সিদ্ধান্তটি প্রত্যাখ্যান করেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন: মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছিলেন; অপরদিকে হযরত আতা (রা:) তাঁর কাছ থেকেই বর্ণনা করেন যে হুযূর পূর নূর (صلى الله عليه و آله و سلم) নিজ অন্তর (চক্ষু) দ্বারা আল্লাহকে দেখেছিলেন।
হযরত আবূল আলিয়্যা বলেন যে তিনি অন্তর (ও মস্তিষ্ক) দ্বারা দু বার তাঁর প্রভুকে দেখেছিলেন।
ইবনে এসহাক উল্লেখ করেন যে হযরত ইবনে উমর (রা:) তাঁকে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-এর কাছে প্রেরণ করেন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে – মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) নিজ প্রভু খোদাতা’লাকে দেখেছেন কি না। তিনি জবাব দেন, “হ্যাঁ।”
এ ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত অভিমত হলো নবী করীম (صلى الله عليه و آله و سلم) নিজ চোখে খোদাতা’লাকে দেখেছেন।
এটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বিভিন্ন সূত্রে রেওয়ায়াত করা হয়েছে। তিনি বলেন যে আল্লাহতা’লা হযরত মূসা (আ:)-কে (এককভাবে) বাছাই করেছিলেন তাঁর সাথে কালাম (আলাপ) করার জন্যে; হযরত ইবরাহীম (আ:)-কে ঘনিষ্ঠ বন্ধু (খলীল) হওয়ার জন্যে; আর মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -কে তাঁরই দর্শন (Vision) নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করার জন্যে।
কুরঅান মজীদেই বিধৃত হয়েছে এর সমর্থনে প্রামাণ্য দলিল: “তবে কি তোমরা তাঁর সাথে তিনি যা দেখেছেন তা নিয়ে বিতর্ক করছো? এবং তিনি তো ওই জ্যোতি দু’বার দেখেছেন।” [৫৩:১২-১৩; মুফতী আহমদ এয়ার খান সাহেব কৃত ‘নূরুল এরফান’]
আল-মাওয়ার্দী বলেন: এ কথা বলা হয় যে আল্লাহ পাক তাঁর দর্শন ও কালাম তথা কথপোকথনকে হযরত রাসূলে করীম (صلى الله عليه و آله و سلم) ও হযরত মূসা (আ:)-এর মধ্যে ভাগ করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম দু বার আল্লাহতা’লাকে দেখেন এবং দু বার মূসা (আ:)-এর সাথে কথা বলেন।
আবূল ফাতহ রাযী ও আবূল্ লায়েস্ সামারকন্দী বর্ণনা করেন, সর্ব-হযরত কাআব আল-আহবার (রহ:) ও আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রহ:) হতে; তাঁরা বলেন যে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) ও কাআব (রহ:) এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন: আমরা, বনূ হাশিম গোত্র, বলি যে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে দু বার দেখেছিলেন।
হযরত কাআব (রহ:) বলেন: আল্লাহু আকবর, যতোক্ষণ না পর্বতমালা তাঁর (কথার) প্রতিধ্বনি করেছিল। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ পাক তাঁর দর্শন ও কালাম তথা কথপোকথনকে হযরত রাসূলে করীম (صلى الله عليه و آله و سلم) ও হযরত মূসা (আ:)-এর মধ্যে ভাগ করে দেন।
শারিক বর্ণনা করেন যে হযরত আবূ যর্র (রা:) ওপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: “মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) তাঁর প্রভু খোদাতা’লাকে দেখেছিলেন।”
(এসলাফ-বৃন্দের অন্যতম) ইমাম সামারকন্দী (রহ:) সর্ব-হযরত মুহাম্মদ বিন কা’আব আল-কুরদী (রহ:) ও রাবিউ’ ইবনে আনাস (রহ:) হতে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আপনি কি আপনার প্রভুকে দেখেছেন? তিনি জবাবে বলেন: আমি আমার অন্তর (চক্ষু) দ্বারা তাঁকে দেখেছি, কিন্তু চোখ দ্বারা দেখিনি [পাদটীকা-১: এই এসনাদ নির্ভরযোগ্য নয়, যেটি প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) পর্যন্ত ফেরত পৌঁছেনি। অধিকন্তু, মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) যে স্বচক্ষে আল্লাহতা’লাকে দেখেছিলেন, তা দলিল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আহলুস্ সুন্নাহভুক্ত মুসলমানবৃন্দ ‘সালাফী’দের মতো মৌলিক লিপিকে জাল করি না, আর তাই আমাদের সততা সেগুলোকে পরিবর্তন না করেই উপস্থাপনের দাবি আমাদের কাছে পেশ করে থাকে]।
মালেক ইবনে ইউখামির (রহ:) বর্ণনা করেন হযরত মু’য়ায ইবনে জাবাল (রা:) হতে; তিনি মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) হতে বর্ণনা করেন, যিনি এরশাদ ফরমান: আমি আমার প্রভু খোদাতা’লাকে দেখেছি এবং তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ওহে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম), ফেরেশতাকুল কী বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে?’ [পাদটীকা-২: আল-বোখারীর সূত্রে একদম সহীহ হাদীস]
আবদুর রাযযাক ইবনে হামমাম (ইমাম বোখারীর শায়খ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে সেরা মোহাদ্দীস) বর্ণনা করেন যে ইমাম হাসান বসরী (রহ:) আল্লাহর নামে শপথ করে বলতেন, প্রিয়নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) (মে’রাজ রাতে) আল্লাহকে দেখেছিলেন। [ইমাম কাজী আয়ায প্রণীত ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থের উদ্ধৃতি এখানে শেষ হলো]
দারুল ইফতা জামেয়া নিযামিয়া’র ফতোওয়া
প্রশ্ন: মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) কি মে’রাজের রাতে আল্লাহ পাককে দেখেছিলেন? উলামা-মণ্ডলীর অনেককে বলতে শুনেছি তিনি খোদাতা’লাকে দেখেছেন।
জবাব: মে’রাজ রাতে মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) আল্লাহতা’লাকে দেখার আশীর্বাদধন্য হন এবং এটি-ই হলো আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা-বিশ্বাস।
[দারুল ইফতা জামেয়া নিযামিয়্যা, তারিখ: ১৪/০৫/২০০৮]
কৃতজ্ঞতা
মূল: আহলুস্ সুন্নাহ-ডট-কম।
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
[Bengali translation of http://www.ahlus-sunna.com’s article ‘Did the Prophet (peace be upon him) see Allah?’ Translator: Kazi Saifuddin Hossain]
Arabic and Online setup by brother-in-Islam and Facebook friend Mahmud Hasan
উত্তরমুছুনআপনি নিচের হাদিসটার কি ব্যাখ্যা দিবেন!!!... পরিচ্ছেদঃ ৭৬. আল্লাহর বাণীঃ 'তিনি তাকে দেখেছেন আরেকবার' এর ব্যাখ্যা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসরার রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছিলেন কিনা সে প্রসঙ্গে।
৩৩৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। তখন তিনি বললেন, হে আবূ আয়িশা! তিনটি কথা এমন, যে এর কোন একটি বলল, সে আল্লাহ সম্পর্কে ভীষণ অপবাদ দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেগুলো কি? তিনি বললেন, যে এ কথা বলে যে, মুহাম্মাদ তার প্রতিপালককে দেখেছেন, সে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। আমি তো হেলান অবস্থায় ছিলাম, এবার সোজা হয়ে বসলাম। বললাম, হে উমুল মু”মিনীন! থামুন। আমাকে সময় দিন, ব্যস্ত হবেন না। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কি ইরশাদ করেননিঃ “তিনি (রাসুল) তো তাঁকে (আল্লাহকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন, (সূরা আত-তাকভীর ৮১ঃ ২৩), অন্যত্র “নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন” ( সূরা আন নাজম ৫৩ঃ ১৩)
আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমিই এ উষ্মতের প্রথম ব্যাক্তি, যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো ছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কেবলমাত্র এ দু-বারই আমি তাঁকে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছি। আমি তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখেছি। তাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও যমীনের মধ্যবতী সবটুকু স্থান।
আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনই সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত” (সূরা আন'আম ৬ঃ ১০৩) এরুপ তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দুত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাময়” (সূরা আশ শূরা ৪২ঃ ৫১)।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, আর ঐ ব্যাক্তিও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়, যে এমন কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোন কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ হে রাসুল! আপনার প্রতিপালকের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার রুকন, যদি তা না করেন তবে আপনি তার বার্তা প্রচারই করলেন না। (শূরা মায়েদা ৫ঃ ৬৭)
তিনি (আয়িশা (রাঃ) আরো বলেন, যে ব্যাক্তি এ কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহী ব্যতীত কাল কি হবে তা অবহিত করতে পারেন, সেও আল্লাহর উপর ভীষন অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “বল, আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না।” ( সূরা নামল ২৭ঃ ৬৫)
باب مَعْنَى قَوْلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: {وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى} وَهَلْ رَأَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهُ لَيْلَةَ الإِسْرَاءِ
উত্তরমুছুনحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ دَاوُدَ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوقٍ، قَالَ كُنْتُ مُتَّكِئًا عِنْدَ عَائِشَةَ فَقَالَتْ يَا أَبَا عَائِشَةَ ثَلاَثٌ مَنْ تَكَلَّمَ بِوَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ . قُلْتُ مَا هُنَّ قَالَتْ مَنْ زَعَمَ أَنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ . قَالَ وَكُنْتُ مُتَّكِئًا فَجَلَسْتُ فَقُلْتُ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْظِرِينِي وَلاَ تَعْجَلِينِي أَلَمْ يَقُلِ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ( وَلَقَدْ رَآهُ بِالأُفُقِ الْمُبِينِ) ( وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى) . فَقَالَتْ أَنَا أَوَّلُ هَذِهِ الأُمَّةِ سَأَلَ عَنْ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " إِنَّمَا هُوَ جِبْرِيلُ لَمْ أَرَهُ عَلَى صُورَتِهِ الَّتِي خُلِقَ عَلَيْهَا غَيْرَ هَاتَيْنِ الْمَرَّتَيْنِ رَأَيْتُهُ مُنْهَبِطًا مِنَ السَّمَاءِ سَادًّا عِظَمُ خَلْقِهِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ " . فَقَالَتْ أَوَلَمْ تَسْمَعْ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ ( لاَ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ) أَوَلَمْ تَسْمَعْ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ ( وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلاَّ وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولاً فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ) قَالَتْ وَمَنْ زَعَمَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَتَمَ شَيْئًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ وَاللَّهُ يَقُولُ ( يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ) . قَالَتْ وَمَنْ زَعَمَ أَنَّهُ يُخْبِرُ بِمَا يَكُونُ فِي غَدٍ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ وَاللَّهُ يَقُولُ ( قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَيْبَ إِلاَّ اللَّهُ) .
সমস্ত ব্যা্খ্যা দেয়া হয়েছে ওপরের লেখায়। আপত্তিগুলোরও খণ্ডন বিধৃত। বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে লাভ নেই।
উত্তরমুছুন