ব্লগ সংরক্ষাণাগার

বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

সুন্নী উলামাদের ফতোয়া সমন্বয়কারী পরামর্শক সভার রূপরেখা

- কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আমাদের ইসলামী আক্বীদা-বিশ্বাসের মাযহাব তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের (সুন্নী) পথ ও মতের প্রভূত প্রচার-প্রসার সাধিত হয়েছে। সুন্নী আলেম-উলামা ফেইসবুক-টুইটার ও ইউটিউব চ্যানেল-সহ অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট এখন ব্যবহার করছেন। কয়েকজন তরুণ এ্যাপস্-ও তৈরি করেছেন, যা আগামীতে সুফল বয়ে আনবে ইন-শা-আল্লাহ। সুন্নী দ্বীনী সংস্থাগুলো অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এই কার্যক্রম আরো বেগবান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে আমার এই লেখাটি সুন্নীদের একটি মৌলিক বিষয়কে কেন্দ্র করে, যা সত্য-সঠিক ও সহজ-সরল সুন্নী রাস্তা তথা মহাসড়কের আশপাশে অবস্থিত বদ্ধ ও অন্ধকার অলিগলি পথকে রোধ করার মহৎ উদ্দেশ্যেই রচিত।

সাম্প্রতিককালে কিছু সুন্নী আলেম-উলামার মাঝে মৌলিক নীতির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাঁদের পারস্পরিক আচার-আচরণ মোটেও সিদ্ধ নয়। একই মতাদর্শের বিভিন্ন মাদ্রাসা হতে পাশ করে এসে তাঁরা ফেইসবুক/ইউটিউব সাইটগুলোতে একে অপরের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে বক্তব্য রাখছেন, আর ফলস্বরূপ অনলাইনে অযথা বিতর্কের সূত্রপাত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে সুন্নী মতাদর্শের ঘোর বিরোধী খারেজী (ওহাবী/মওদূদী/সালাফী/তাবলীগী গোষ্ঠী) ও রাফেযী (শিয়া চক্র) বিভ্রান্তি ছড়ানোর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে বেশি। তারা কোনো সুন্নী আলেমের নিজস্ব সিদ্ধান্তসম্বলিত বইয়ের স্ক্রীনশট এনে তা ফেইসবুকে তুলে তুলকালাম কাণ্ড বাধাচ্ছে। ফেইসবুক ও অনুরূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কেউ মন্তব্য করতে পারে বলে অজ্ঞমূর্খ লোকেরাও ওই বিতর্কে শরীক হচ্ছে। অথচ তাদের ওই বিষয়গুলোতে ন্যূনতম জ্ঞানও নেই।

এমতাবস্থায় একটি সুষ্ঠু নীতিমালার ভিত্তিতে সুন্নী উলামাদের আচরণবিধি নির্ধারণ করা অতীব প্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি। এটা যেমন মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করা জরুরি, তেমনি সারা দেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতভুক্ত আলেম-উলামার মাঝেও প্রয়োগ করা দরকারি। আর এই কাজে সহায়তা করতে পারেন গণ্যমান্য সুন্নীদের একটি পরামর্শক সভা। অতীতে স্রেফ আলেম-উলামাদের দিয়ে অনেক সুন্নী কমিটি করা হয়েছে, কিন্তু দেখা গেছে ওর পাল্টাপাল্টি কমিটিও দাঁড় করানো হয়েছে। অতএব, স্রেফ সুন্নী আলেম-উলামার কমিটি দ্বারা এই কাজ সম্ভব নয়। আমি এখানে ছাঁচাছোলা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি, কেননা অতীত অভিজ্ঞতাই আমাকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য করেছে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, কী হবে ওই পরামর্শক সভার রূপরেখা? 

রূপরেখা:

আমার মতে, সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী সমাজ ও রাষ্ট্রের সৎ ও নীতিবান, প্রভাব ও প্রতিপত্তিশালী, বয়োজ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ এবং  বিত্তবান কিছু মানুষ, যাঁদেরকে সারা দেশের সুন্নী আলেম-উলামা কোনো না কোনো কারণে মানেন, তাঁদের সাথে বয়োজ্যেষ্ঠ ও মান্যবর সুন্নী বুযূর্গ আলেম-উলামার সমন্বয়ে একটি পরামর্শক সভা গঠন করা উচিৎ। মওলানা হাশেমী সাহেব হুজূর, সূফী মিজান সাহেব প্রমুখের মতো ব্যক্তিত্বই হবেন ওই কমিটির সদস্যবৃন্দ। অন্যূন ১৫ সদস্যের পরামর্শক সভা গঠিত হতে পারে। এটা হবে pressure group তথা চাপ প্রয়োগকারী দল। 

কর্মপরিধি:

পরামর্শক সভার কাজ হবে মূলতঃ সুন্নী উলামাদের অনলাইনে মতপার্থক্যজনিত বিরোধের নিষ্পত্তিকরণ। কোনো সুন্নী আলেম ফেইসবুক/টুইটার/ইউটিউব সাইটে বিতর্ক সৃষ্টিকর নিজস্ব কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করলে অন্যান্য সুন্নী আলেম তা নিয়ে পাল্টা বক্তব্য অনলাইনে দিতে পারবেন না। তাঁরা তা পরামর্শক সভার কাছে রেফার করতে পারবেন। কেউই নিজ নিজ অনুসারীদেরকে অনলাইনে তা নিয়ে উস্কানি দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট বক্তব্যদাতা আলেম নিজের সিদ্ধান্তের দায়-দায়িত্ব নিজেই বহন করবেন, কোনো জামেআ’ বা অন্য কোনো সুন্নী দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করতে পারবেন না, অথবা সেগুলোর আড়ালে লুকোতেও পারবেন না। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষেরও তাতে জড়িত হওয়া বা সাফাই গাওয়া চলবে না। এটা আচরণবিধির মধ্যে পড়বে। পরামর্শক সভা সংশ্লিষ্ট আলেম বা আলেমবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে নিজেদের এতদসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। অতঃপর সংশ্লিষ্ট আলেম বা আলেমবৃন্দ সূত্র বর্ণনা করে তা অনলাইনে প্রচার করবেন। তা সঠিক হলে সঠিক বলবেন, আর বিরুদ্ধে গেলেও তাই প্রচার করবেন এবং দুঃখ প্রকাশ করবেন। অন্য কেউ এই ব্যাপারে আর কটাক্ষ করতে পারবেন না; তা করলে পরামর্শক সভার প্রেস কর্মকর্তা অনলাইনে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁকে সতর্ক করবেন।

আমার মতে এই পন্থায় অনলাইনে সুন্নীদের নিজেদের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ রোধ করা সম্ভব হবে। আরেকটা কথা বলা আবশ্যক, তা হলো মন্তব্য ফোরামে যারা মন্তব্য করেন, তাঁদের বেশির ভাগই অজ্ঞ লোক। তাঁদের কথায় বা গালিগালাজে মাথা গরম করে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া মোটেও বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। আশা করি সবাই ফিতনা এড়িয়ে চলবেন। আমার এই পরামর্শ সুন্নী কর্তৃত্বশীলদের হৃদয়ঙ্গম হলে আমার এ প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে আমি মনে করি। আল্লাহ ক্ববূল করুন, আমীন।

*সমাপ্ত*
  






  

1 টি মন্তব্য: