- ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী
শব ফার্সি আর বারআত আরবি, এ দুটি শব্দযুগলে শবে বারাআত। শবে বারাআত অর্থ ক্ষমা ও মুক্তির রজনী। হাদীস শরীফে এটাকে ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান) অর্থাৎ অর্ধ শাবান তথা ১৫ শাবানের রাত বলা হয়েছে। আমাদের উপমহাদেশে সালাতকে যেমন নামায বলা হয়, সাওমকে যেমন রোযা বলা হয়, আল্লাহকে যেমন খোদা বলা হয়, তেমনি ليلة النصف من شعبان তথা শাবান রাতের ১৫ তারিখকে লা্ইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত বলা হয়। আল্লাহকে খোদা বলা যেমন বিদআত নয়, সালাতকে নামায বলা যেমন বিদআত নয় তেমনি শাবানের পনেরো তারিখের রাতকে শবে বারাআত নামকরণও বিদআত নয়। এমনটি হলে কুরআন-হাদিস অন্যভাষায় অনুবাদ করা এবং ইসলামি পরিভাষাসমূহের স্থানীয় ও আঞ্চলিক অনুবাদ বা নামকরণ বিদআত ও হারাম হয়ে যাবে এবং সকল মুসলমান বিদআতি ও হারামি বলে পরিগণিত হবে। যার পরিণতি হবে ভয়াবহ। এখন দেখি, বারাআত শব্দটি কুরআন ও হাদিসে আছে কি-না?
বারাআত অর্থ: কুরআন ও হাদিসে বারাআত শব্দের ব্যবহার
বারাআত শব্দটি আরবি। এটি بَرِءَ يَبْرَءُ ক্রিয়ার মাসদার বা উৎস। এর অর্থ ক্ষমা করা, মুক্তি পাওয়া। পবিত্র কুরআন করিমে এ শব্দটি দু’বার এসেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
براءة من الله ورسوله الي الذين عهدتم من المشركين
- অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে অসন্তুষ্টি ও সম্পর্কচ্ছেদ ঐ মুশরিকদের প্রতি যাদের সাথে তোমরা চুক্তি করেছিলে।[সূরা তাওবা:১]
এ আয়াতে বারাআত শব্দটি মুক্তি অর্থে এসেছে।
اكفاركم خير من اولئكم ام لكم براءة في الزبر-
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যকার কাফিরগণ কি তাদের অপেক্ষা উত্তম অথবা তোমাদের জন্য আসমানি কিতাবে ক্ষমা রয়েছে।সূরা কমর: 43] এ আয়াতে বারাআত শব্দটি ক্ষমা অর্থে এসেছে।
হাদিস শরিফেও বারাআত শব্দটি এসেছে। যেমন: রাসূলে আকরাম (দ.) বলেছেন:
كتب له براءتان براءة من النار و براءة من النفاق-
অর্থাৎ, তার জন্য দুটি মুক্তি রয়েছে। একটি দোযখ থেকে মুক্তি আর অপরটি মুনাফেকি থেকে মুক্তি। [তিরমিযি, সুনান, ১:৩৩।]
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
من اذن محتسبا سبع سنين كتب له براءة من النار-
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সাত বছর আযান দেয় তার জন্য দোযখের আগুন থেকে মুক্তি-ক্ষমা লেখা হয়। [ইবনে মাজা, সুনান, ৫৩]
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেলো যে, বারাআত শব্দটি কুরআন ও হাদিসে রয়েছে। আর এর অর্থ হলো, ক্ষমা ও মুক্তি। যেহেতু শাবান মাসের অর্ধ রাত তথা ১৫ তারিখের রাতে ইবাদতকারী সকল মুসলমানকে আল্লাহ তায়ালা শবে কদরে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও ক্ষমা করে দেন। [এ সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে] এ মর্মকে সামনে রেখে এ রাতকে লাইলাতুল বারাআত [ফার্সিতে শবে বারাআত] বলা হয়। এখন লাইলাতুন নিসফে মিন শাবানকে লাইলাতুল বারাআত বলা যাবে কিনা?
মোল্লা আলী কারী লিখেছেন:
ليلة النصف من شعبان و هي ليلة البراءة-
অর্থাৎশাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত। আর তা হলো লাইলাতুল বারাআত। [মিরকাতুল মাফাতিহ, ৩: ১৯০]
তিরমিযি শরিফের টীকায় লিখিত আছে:
هي ليلة الخامسة عشر من شعبان و سمي ليلة البراءة-
অর্থাৎশাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত। আর এর নাম রাখা হয়েছে লাইলাতুল বারাআত। [তিরমিযি, ১: ৯২, টীকা:৯]
ইমাম কুরতুবি বলেন:وانها تسمي ليلة البراءة
অর্থাৎ তা শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত। আর এ রাতকে লাইলাতুল বারাআত বলা হয়। [জামে লেআহকামিল কুরআন ১৬: ১২৭।]
এভাবে শরুহে হাদিস ও তাফসিরের অসংখ্য কিতাবে এ নামটি লাইলাতুল বারাআত নামে এসেছে। আর ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় এটাকে শবে বরাত বলা হয়; তাহলে অসংখ্য মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ওলামায়ে কেরাম ও কোটি কোটি মুসলমান লাইলাতুল বারাআত বলে সবাই বিদআতি হয়ে গেছেন কি? নাউজুবিল্লাহ। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের আঞ্চলিক ভাষায় এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। এ নামের ভিন্নতার কারণে কি শবে বরাত নামায়েজ হয়ে যাবে?
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, শবে বরাত নামটি বিদআত ও হারাম নয়। বরং কুরআন, হাদিস ও শরিয়তে এর ভিত্তি রয়েছে। তাই নাম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ও মিথ্যাচার করে শবে বরাত পালনে বাধা দেয়ার মানে কুরআন ও হাদিসকে অস্বীকার করারই নামান্তর!
এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরমুছুন