[এই জওয়াবটি মুফতী জা’ফরউদ্দীন আল-বিহারী রেযভী সাহেব কৃত ‘‘না’ফি’ই আল-বাশার ফী ফাতাওয়ায়ে জা’ফর” শীর্ষক ফতোওয়াগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
সংকলক হলেন মুহাম্মদ আকদস
(যুক্তরাজ্য)। এটি রাওয়ালপিণ্ডির শায়খ রহীম বখশ সাহেবের এক প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে প্রদত্ত, যা মুফতী সাহেব ১৩২৪ হিজরী সালের ১৫ই রজব
তারিখে হাতে পান। মুফতী সাহেব ছিলেন ইমাম আহমদ রেযা খান সাহেবের প্রথম দিককার
ছাত্র]
প্রশ্ন:
لَوْ
لَكَ لَماَ خَلَقْتُ الَأَفْلَكْ
- হে রাসূল, আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করতাম না - এই হাদীসে কুদসী সম্পর্কে বিজ্ঞ উলামায়ে
দ্বীন ও শরীয়তের মুফতীবৃন্দের অভিমত কী? এটি কোন্ হাদীসগ্রন্থে বিদ্যমান? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কারণেই সৃষ্টিকুলের উৎপত্তি হয়েছে, এ কথা কি সত্য? এই রওয়ায়াতের সমর্থনে আরও আহাদীস আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কারণেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও সমগ্র জগতের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি না হলে আরশ ও ফরশ, লওহ ও কলম, বেহেশত ও দোযখ, গাছ ও পাথর এবং অন্যান্য সকল সৃষ্টি অস্তিত্ব
পেতো না। এর সমর্থনে অনেক হাদীস বিরাজমান।
হাদীস নং-১: হাকিম নিজ ‘মোসতাদরেক’, বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল আন্ নবুওয়া’, তাবরানী নিজস্ব ‘কবীর’, আবূ নুয়াইম তাঁর ‘হিলইয়া’, এবং ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দিমাশক’ পুস্তকে উদ্ধৃত করেন হযরত আমীরুল মো’মেনীন ফারুকে আ’যম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর বাণী:
عَنْ
عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَمَّا اقْتَرَفَ آدَمُ الْخَطِيئَةَ
قَالَ: يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لَمَا غَفَرْتَ لِي، فَقَالَ
اللَّهُ: يَا آدَمُ، وَكَيْفَ عَرَفْتَ مُحَمَّدًا وَلَمْ أَخْلُقْهُ؟ قَالَ: يَا
رَبِّ، لِأَنَّكَ لَمَّا خَلَقْتَنِي بِيَدِكَ وَنَفَخْتَ فِيَّ مِنْ رُوحِكَ
رَفَعْتُ رَأْسِي فَرَأَيْتُ عَلَىَ قَوَائِمِ الْعَرْشِ مَكْتُوبًا لَا إِلَهَ
إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ فَعَلِمْتُ أَنَّكَ لَمْ تُضِفْ إِلَى
اسْمِكَ إِلَّا أَحَبَّ الْخَلْقِ إِلَيْكَ، فَقَالَ اللَّهُ: صَدَقْتَ يَا آدَمُ،
إِنَّهُ لَأُحِبُّ الْخَلْقِ إِلَيَّ ادْعُنِي بِحَقِّهِ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكَ
وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ.
- হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন যে মহান আল্লাহ বলেছেন, আদম আলাইহিস সালাম যখন গন্দুম খেলেন, তখন তিনি আরয করেন, এয়া আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর ওয়াস্তে আমায়
মাফ করুন। এমতাবস্থায় আল্লাহ বলেন, ওহে আদম! তুমি কীভাবে তাঁর কথা জানলে যেহেতু
আমি তাঁকে এখনো সৃষ্টি করি নি? আদম আলাইহিস সালাম উত্তর দেন, এয়া আল্লাহ! আপনি আমাকে সৃষ্টি করে আমার
মাঝে রূহ ফোঁকার পরে আমি মাথা তুলে দেখতে পাই আরশে লেখা রয়েছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। তাই আমি বুঝতে পারি যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় কারো নাম-ই আপনার
নামের পাশে আপনি যুক্ত করেছেন। অতঃপর আল্লাহ বলেন, ওহে আদম! তুমি সত্য বলেছো। নিশ্চয় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার
সবচেয়ে প্রিয়ভাজন,
আর তাই তুমি যখনই
তাঁর অসীলায় আমার কাছে চেয়েছো, তৎক্ষণাৎ আমি তোমায় ক্ষমা করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
না হলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।
[১]
- হাদীস নং-২: হাকিম তাঁর ‘মোসতাদরেক’ গ্রন্থে এবং আবূ শায়খ নিজ ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী’ পুস্তকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
যিনি বলেন:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُمَا، قَالَ: «أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى
آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ
فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ
الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ.
- আল্লাহ
পাক হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-কে বলেছেন, ওহে ঈসা! প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
প্রতি ঈমান আনো এবং তোমার উম্মতকেও তা করতে বলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
না হলে আমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না, বেহেশত বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না। [২]
- হাদীস নং-৩: ইমাম দায়লামী নিজ ‘মুসনাদ আল-ফেরদউস’ কেতাবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
যিনি বলেন:
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّىَ
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَتَانِيْ جِبْرِيْلُ فَقَالَ : يَا مُحَمَّدُ لَوْلاَكَ
مَا خُلِقَتْ اَلجْنَة ، لَوْلاَكَ مَا خُلِقَتْ النَّار .
- রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন যে হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম তাঁর কাছে আসেন এবং উদ্ধৃত করেন আল্লাহর
বাণী,
‘আমি (খোদা স্বয়ং)
আপনাকে (রাসূল-এ-পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে) সৃষ্টি না করলে বেহেশত বা
দোযখ সৃষ্টি করতাম না’। [৩]
হাদীস নং-৪: ইবনে আসাকির উদ্ধৃত করেন হযরত সালমান ফারিসী
রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে,
যিনি বলেন: হযূর পূর
নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম এসে পৌঁছে দেন
আল্লাহর বাণী,
وَلَقَدْ خُلِقَتِ الدُّنْيَا
وَأَهْلهَا لِأَعْرِفَهُمْ كَرَامَتُكَ وَزَادَ يُوْسُفُ عَلَيْ وَقَالَ وَمَنْزِلَتُكَ
عِنْدِيْ وَلَوْلَاكَ يَا مُحَمَّدُ مَا خُلِقَتِ الدُّنْيَا.
- (হে রাসূল) আপনার চেয়ে
অধিক সম্মানিত আর কাউকেই আমি সৃষ্টি করি নি। আমি বিশ্বজগৎ ও এর মধ্যে যা কিছু আছে
তার সবই সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আপনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে। আমি এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করতাম না, যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম। [৪]
হাদীস নং-৫: ইমাম শেহাবউদ্দীন ইবনে হাজর আসকালানী বলেন, এই সকল বর্ণনা ব্যক্ত করে যে
وَلَوْلَا مُحَمَّد مَا خلقْتُ الْجنَّة وَالنَّار. لَوْلَاكَ
مَا خَلَقْتُ أَرْضِي وَلَا سَمَائِي.
- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহতা’লা আসমান-জমিন, বেহেশ্ত-দোযখ, চন্দ্র-সূর্য কিছুই সৃষ্টি করতেন না। [৫]
এই বিষয়ে আরও অনেক আহাদীস আছে যা ইমাম আহমদ রেযা খান সাহেব
তাঁর ‘তাজাল্লী আল-এয়াকীন বি আন্না নাবিই-ইয়ানা
সাইয়্যেদিল মুরসালীন’
শিরোনামের চমৎকার
গ্রন্থে সংকলন করেছেন;
আর নিঃসন্দেহে
সত্যপন্থী বুযূর্গানে দ্বীন ও উলামাবৃন্দ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
’হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও বিশ্বজগত সৃষ্টির
কারণ’
হিসেবে সম্বোধন
করেছেন। তাঁদের এ সব বাণী সংকলন করলে বিশালাকৃতির বই হবে। এর মধ্য থেকে কিছু বাণী
উদ্ধৃত করা হলো:
উদ্ধৃতি-১: ইমাম সাইফুদ্দীন আবূ জা’ফর বিন উমর আল-হুমাইরী আল-হানাফী নিজ ‘আদ-দুররূল তানযীম ফী মওলিদিন্ নাবিই-ইল করীম’ শীর্ষক কেতাবে বলেন,
- আল্লাহতা’লা যখন হযরত বাবা আদম আলাইহিস সালাম-কে সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাঁর মনে এই ভাবের উদয় করেন যার
দরুন তিনি মহান প্রভুকে প্রশ্ন করেন, ”এয়া আল্লাহ! আপনি আমার কুনিয়া (বংশ-পরম্পরার
নাম) কেন ’আবূ মুহাম্মদ’ (মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পিতা) করেছেন?” আল্লাহ উত্তরে বলেন, “ওহে আদম! তোমার মাথা তোলো।” তিনি শির উঠিয়ে আরশে মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নূর (জ্যোতি) দেখতে পান। হযরত আদম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করেন, “এয়া আল্লাহ! এই নূর কোন্ মহান সত্তার?” আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, “তোমার বংশেই এই মহান নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম। আসমানে তাঁর নাম আহমদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) এবং জমিনে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। আমি তাঁকে সৃষ্টি না করলে তোমাকে বা আসমান ও
জমিনকে সৃষ্টি করতাম না।
উদ্ধৃতি-২: সাইয়্যেদ আবূল হুসাইন হামদূনী শাযিলী তাঁর ‘কাসিদায়ে দা’লিয়া’তে লেখেন:
- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হলেন সারা বিশ্বজগতের মধ্যমণি এবং সকল সৃষ্টির কারণ (অসিলা)। তিনি না হলে কিছুই অস্তিত্ব পেতো না।
উদ্ধৃতি-৩: ইমাম শরফউদ্দীন আবূ মোহাম্মদ বুসিরী তাঁর
কৃত ‘কাসিদা-এ-বুরদা’ কাব্য-পুস্তকে লেখেন,
. لولاه لم تُخْرجِ
الدنيا من العـدمِ
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
না হলে দুনিয়া অস্তিত্বশীল হতো না।
উদ্ধৃতি-৪: ইমাম বুসিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাব্যের
ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে ইমাম শায়খ ইবরাহীম বাইজুরী লেখেন:
- হুযূর
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্তিত্বশীল না হলে বিশ্বজগত-ই অস্তিত্বশীল
হতো না। হযরত আদম আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহ বলেন, ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অস্তিত্বশীল না হলে আমি তোমোকে সৃষ্টি করতাম না। হযরত আদম আলাইহিস সালাম হলেন মনুষ্যজাতির আদি পিতা, আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্যে
সৃষ্ট। তাই হযরত আদম আলাইহিস সালাম-কে যেহেতু রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর অস্তিত্বের কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু সমগ্র জগতই মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কারণে সৃষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। অতএব, সকল অস্তিত্বশীল সত্তার সৃষ্টির কারণ হলেন
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
উদ্ধৃতি-৫: কাসিদা-এ-বুরদা কাব্য সম্পর্কে আল্লামা
খালেদ আযহারী মন্তব্য করেন:
- রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কারণেই দুনিয়া অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পেয়েছে।
উদ্ধৃতি-৬: মোল্লা আলী কারী লেখেন,
- রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর আশীর্বাদ ও মহত্ত্ব ছাড়া সমগ্র এই বিশ্বজগৎ অস্তিত্ব পেতো না এবং
আল্লাহ ছাড়া কিছুই অস্তিত্বশীল থাকতো না।
উদ্ধৃতি-৭: আল্লামা আবূল আয়াশ আবদুল আলী লাখনৌভী নিজ ‘ফাওয়াতিহ আর-রাহমূত শরহে মোসাল্লাম আস্
সুবূত’
পুস্তকে লেখেন:
- রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অস্তিত্বশীল না হলে সৃষ্টিকুল আল্লাহর রহমত-বরকত (আশীর্বাদ)-ধন্য হতো না।
মহানবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিকুলের অস্তিত্বের মূল, এই প্রতিপাদ্য বিষয়ের সত্যতা ও প্রামাণিকতা
সম্পর্কে বিতর্ক একমাত্র মূর্খ লোকেরাই করতে পারে। হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কারণেই আল্লাহ পাক সমগ্র বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেন।
তথ্যসূত্র:
[১] হাকিম :
আল মুস্তাদরাক, ও মিন কিতাবি আয়াতি রাসূলিল্লাহ, ২:৬৭২ হাদীস নং ৪২২৮।
(ক) বায়হাকী : দালায়িলুন নবুওয়াত, ৫:৪৮৯
(খ) ইবনে আসাকীর : তারিখে দামেশক, ৭:৪৩৭
(গ) ইমাম সুবকী : আশ্ শিফাউস্ সিকাম।
(ঘ) শেহাবউদ্দীন খাফাজী : নাসীম আর-রিয়াদ।
[২]
হাকিম : আল মুস্তাদরাক, ২:৬৭১ হাদীস নং ৪২২৭।
(ক) ইমাম
সুবকী : আশ্ শিফাউস্ সিকাম।
(খ)
আল-বুলকিনী : আল
ফাতওয়া।
(গ) ইবনে হাজর : আফদাল আল-কুরআন।
[৩]
দায়লামী : আল ফিরদাউস বি মা‘ছূরিল খিতাব, বাবুল ইয়া, ৫:২২৭ হাদীস নং ৮০২৯।
[৪] ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক, বাবু যিকরি উরুযিহি ইলাস সামায়ি, ৩:৫১৮।
[৫]
ইবনে হাজর
হায়ছামী : আল ফাতওয়া আল হাদীছা, ১:১৩৪।
--সমাপ্ত--
[Bengali
translation of Muhammad Aqdas' online article 'The reason why Allah created the
Universe']
লেখক: মুহাম্মদ আক্বদাস্ (যুক্তরাজ্য)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়েৎ বিন মূসা
দেওবন্দী ওলামাদের দৃষ্টিতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ‘নূরের নবী’।
উত্তরমুছুনদেওবন্দী মসলকের সর্বজন মান্য মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেন-
حق تعالی در شان حبیب خود صلی الله علیه وسلم فرمود که آمده نزد شما از طرف حق تعالی نور وکتاب مبین ومراد از نور ذات پاک حبیب خدا صلی الله علیه وسلم نیز فرمود که اے نبی ترا شاھد مبشر ونذير و داعی الی اللہ و سراج منير فرستادہ ایم ومنیر روشن کنندہ و نور دھندہ را گویند پس اگر کسے را روشن کردن از انساناں محال بودے آن ذات پاک صلی الله علیه وسلم را ہم ایں امر میسر نیامد کہ آ ذات پاک صلی الله علیه وسلم ہم از جملہ اولاد آدم علیہ السلام اند مگر آں حضرت صلی الله علیه وسلم ذات خود را چناں مظہر فرمود کہ نور خالص گشتند و حق تعالی ان جناب سلامہ علیہ را نور فرمود وبہ ثابت شد کہ آں حضرت علیہ السلام سایہ نہ داشتند ظاہر است کہ بجز نور ہمہ اجسام ظل می دارند-
আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিব صلی الله علیه وسلم এর শানে ফরমায়েছেন, তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নূর ও স্পণ্ট কিতাব এসেছে। এ আয়াতে নূর দ্বারা হাবিবে খোদা صلی الله علیه وسلم এর নূরকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, হে নবী صلی الله علیه وسلم আমি তো আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে পাঠিয়েছি। আর ‘মুনীর’ উজ্জ্বলকারী ও আলোকদাতাকে বলা হয়। সুতরাং মানুষের মধ্যে কাউকে উজ্জ্বল করা যদি অসম্ভব হতো তাহলে হযরত صلی الله علیه وسلم এর পবিত্র সত্তার অন্তর্গত কিন্তু তিনি তাঁর মোবারক সত্তাকে এমনভাবে পবিত্র করেছেন যে, তিনি নিখুঁতভাবে নূরে পরিণত হন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নূর ফরমায়েছেন। আর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল صلی الله علیه وسلم এর ছায়া ছিল না এবং এটাও প্রকাশ্যমান যে, নূর ব্যতীত সমুদয় জড় দেহের ছায়া থাকে।
[সূত্রঃ ইমদাদুস সুলূক-পৃ. ৮৫]।
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী বলেন,
یہ بات مشہورہ کہ ہمارے حضور صلی الله علیه وسلم کا سایہ نہے تہا اسلئہ کہ ہمارے
حضور صلی الله علیه وسلم سر چا نور ہے نور تہے
এ কথা প্রসিদ্ধ যে আমাদের হুযুর صلی الله علیه وسلم এর ছায়া ছিল না। (কারণ) আমাদের হুযুর صلی الله علیه وسلم আপাদমস্তক নূরাণী ছিলেন। হুযুর صلی الله علیه وسلم এর মধ্যে নামমাত্রও অন্ধকার ছিল না। কেননা ছায়ার জন্য অন্ধকার অপরিহার্য।
[সূত্রঃ শুকরুন নে’মাতি- পৃ. ৩৯]।
দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতভী বলেন-
کہاں وہ رتبہ کہاں وہ عقل نار سا اپنی
کہاں وہ نور خدا اور کہاں یہ دیدۃ زار
কোথায় ঐ উঁচু মর্যাদা? কোথায় ঐ নিজের অপূর্ব বিবেক? কোথায় ঐ খোদার নূর? (নবীজী صلی الله علیه وسلم) আর কোথায় সেই অশ্রুসজল চোখ?
[সূত্রঃ ক্বাসাইদে ক্বাসেমী- পৃ. ৭]।
শেখুল হিন্দ মাওলানা সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী বলেন-
غرضیکہ حقیقت محمد صلی الله علیه وسلم التحیۃ واسطہ جملہ کمالات عالم عالمیہ ہے یہ ھی معنی لولاک لما خلقت الافلاک اور اول ما خلق اللہ نوری اور انا نبی الانبیاء کے ہیں
মোট কথা হলো সমস্ত কায়েনাত বা আলম হাকীকতে মুহাম্মদী তথা নূরে মুহাম্মদী থেকে সৃষ্ট। যেমন হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, যদি আপনি না হতেন তবে আমি সকল আসমান-যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম না। রাসূল صلی الله علیه وسلم এর বানী, মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেন আমি নবীদেরও নবী।
[সূত্রঃ আশ শিহাবুস সাক্বিব- পৃ. ৫০]।
দেওবন্দের শাইখুল হাদিস আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী বলেন,
کاندر آنجا نور حق بود وہند دیگر حجاب
دید وبشنید آنچہ جزوی کس بنشنید وندید
ওই জায়গায় আল্লাহর নূর ছিলো, আর অন্যরা পর্দাবৃত। তাই দেখেছে ও শুনেছে। কিন্তু ওইন নূর এমনই অনন্য যে, তা সম্পর্কে না কেউ শুনেছে, না তেমনি সুন্দর কেউ দেখেছে।
[সূত্রঃ আকায়েদুল ইসলাম- পৃ. ২১৯]।