ব্লগ সংরক্ষাণাগার

সোমবার, ১৫ জুন, ২০১৫

ইন্টারনেট ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক আইন


আজ ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় শিরোনাম সংবাদ ছিল সরকার ইন্টারনেট ব্যবহারে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন। তবে সংবাদের কিসিম তথা ধরন দেখে বোঝা যায়, বেশির ভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এতে নিহিত। মৌলিক ইস্যূগুলোর সমাধান হবে কি না জানি না।

আমরা জানি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে থাকেন সর্বসাধারণ। তাঁরা অ-পেশাদারী সাংবাদিকতা চর্চা করে থাকেন এগুলোতে। মতপার্থক্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রচুর গালিগালাজও করেন তাঁরা। তবু এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো জনগণের মনের ভাব প্রকাশের এক ধরনের বাতায়ন। আমরা একে উম্মুক্ত থাকতে দেখতে চাই। সরকারি ও বিরোধী দলীয় পাল্টাপাল্টি রাজনীতির মারপ্যাঁচ যেন এই বাতায়নকে রুদ্ধ করতে না পারে।

তবে হ্যাঁ, মতামত প্রকাশের নামে, ‘মুক্তবুদ্ধি চর্চা‘,’বিজ্ঞানমনস্কতা’র ছদ্মাবরণে কেউ যেন ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হেনে বা উস্কানি দিয়ে দেশে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারি একান্ত আবশ্যক। একই ভাবে ধর্মের ছদ্মাবরণে উগ্রপন্থীরা যাতে ইন্টারনেটকে তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থে অপব্যবহার করতে না পারে, তাও নিশ্চিত করতে হবে।

কতিপয় ব্লগার ‘বিজ্ঞানমনস্কতা’ ও ’মুক্তবুদ্ধি চর্চা’র ধুয়া তুলে ইসলাম ও মহানবী (দ:)-এর চরম আবমাননামূলক বেশ কিছু লেখা ইন্টারনেটে ছেড়েছেন, যা দুঃখজনক হলেও সত্য যে জ্ঞানের লেশচিহ্ন-ও বহন করে না, বরং মনের বিদ্বেষভাব-ই প্রকাশ করে। এগুলো ইতিহাসবিদদের ইতিহাস বিশ্লেষণ নয়। ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চক্রের কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা মাত্র। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমা দেশগুলোতে মহানবী (দ:)-এর বিরুদ্ধে এ সব চক্র কার্টুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। তারা এগুলোকে মুক্তচিন্তা, চিন্তার ম্বাধীনতা বলে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এগুলো যে মুসলমানদেরকে খোঁচা মারার উদ্দেশ্যে করা হয় তা সহজেই বোধগম্য। তারই ধারাবাহিকতায় ওই সব চক্রের এ দেশীয় পদলেহী দালালরা মহানবী (দ:)-এর শানে গোস্তাখিমূলক অপপ্রচারে নিয়োজিত রয়েছে।

যেমন ধরুন, এক ব্লগার লিখেছেন যে মহানবী (দ:) লম্পট প্রকৃতির ছিলেন (নাউযুবিল্লাহ)। তিনি না-কি তাঁর চাচাতো বোন উম্মে হানীকে ইতিপূর্বে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিয়ে করতে না পেরে তাঁর বাড়িতে রাত কাটাতেন। যাঁকে মক্কার কাফের মুশরিকরা পর্যন্ত ’আল-আমিন’ (বিশ্বাসভাজন) জানতো, তাঁর প্রতি ঐতিহাসিক দলিল ছাড়া এভাবে মিথ্যে অপবাদ দেয়া হচ্ছে। মনে রাখা দরকার যে, ওই সময় সব ছিল যৌথ পরিবার। আমাদের কৈশোর জীবনেও অনুরূপ যৌথ পরিবার আমরা দেখেছি। আজকের দিনের ‘বিজ্ঞানমনস্ক’, ‘আধুনিকতাবাদী’ পরকীয়া প্রেমাসক্ত লোকদের মতো বউ ফেলে রেখে বাড়ির বাইরে নিজস্ব আলীশান কোনো ফ্ল্যাটে পরনারীর সান্নিধ্যে রাত কাটানোর প্রচলন তখন ছিল না। আরবীয়রা মন চাইলেই একাধিক বিয়ে করতো। কোনো রাখঢাক ছিল না। সব সত্য তারা অকপটে বলে ফেলতো। আত্মাতে তারা আজকের দিনের মানুষের মতো এতো জটিল ছিল না।

দ্বিতীয়তঃ মহানবী (দ:) যদি লম্পট হতেন (আল্লাহ আমাদের মাফ করুন এ কথা খণ্ডন করার উদ্দেশ্যে বলার জন্যে), তাহলে লক্ষ লক্ষ আরবীয়কে একটি আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন না। আপনারা জানেন, লম্পট কখনোই অন্যদের জন্যে আদর্শ স্থাপন করতে পারে না। অথচ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী পণ্ডিত এইচ, এ, আর, গিব বলেন, মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর সংস্কার সার্বিকভাবে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে যা সর্বজনস্বীকৃত [Mohammedanism, লন্ডন, ১৯৫৩, ৩৩ পৃষ্ঠা]। এ সমাজ সংস্কার নারীলোভী কারো দ্বারা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। রাসূল (দ:)-এর একাধিক বিয়ে করার কারণ সম্পর্কে সুন্দর ও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন মরহুম কবি গোলাম মোস্তফা তাঁর অনবদ্য ‘বিশ্বনবী (দ:)’ বইটিতে। তরুণ প্রজন্মের ওই বইটি ভালভাবে অধ্যয়ন করা উচিত।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বী অন্যান্য বিদ্বান ব্যক্তির প্রশংসাসূচক মন্তব্য আমরা পরবর্তী লেখাগুলোতে একে একে অনুবাদ করবো ইনশা’আল্লাহ। আজ শুধু এতোটুকু-ই বলবো, বাক্ স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা তা-ই লেখা যায় না। বিশেষ করে হিংসা-বিদ্বেষ প্রচার করা তো উচিত-ই নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সর্বসাধারণের মনের ভাব প্রকাশ অব্যাহত থাকুক, কিন্তু গালিগালাজ বন্ধ হোক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন