বর্তমানে ফেসবুক ও অনলাইনে হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে পারসিক শিয়া গোষ্ঠীর চামচা দল নিরন্তর আক্রমণ করে চলেছে এ অভিযোগে যে, তিনি নিজের ছেলে ইয়াযীদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামে রাজতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। আর এতে তিনি জোরজবরদস্তি বিশিষ্ট সাহাবা (রা.)-বৃন্দের ও গণমান্যদের সম্মতি গ্রহণ করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক! চলুন, কথা না বাড়িয়ে মূল অলোচনায় প্রবৃত্ত হই।
রাজা-বাদশাহ নন, বরং খলীফা বলে সম্বোধন করেছিলেন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হযরত জাবের (রা:) বলেন:
سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: (( لا يزال أمر الناس ماضياً ما وليهم اثنا عشر رجلاً )) ثم تكلم بكلمة خفيت علي، فسألت أبي: ماذا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فقال: (( كلهم من قريش )) وهذا لفظ مسلم.
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শুনেছি এ কথা বলতে: “মানুষের বিষয়াদি (উন্নত হতে) থাকবে বারো জনের নেতৃত্বে...।” এরপর তিনি এমন কথা বলেন যা আমি (কানে) শুনতে পাইনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করি মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বলেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেন, “তাঁরা (শাসকবৃন্দ) সবাই ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত।” [আল-বুখারী, হাদীস নং ৭২২২, ৭২২৩ ও মুসলিম, হাদীস নং ১৮২১]
ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে (৮২১) হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রা:) হতে ইমাম হুসাইন (রা:)-এর সূত্রে আলাদা শব্দচয়নে বর্ণনা করেন:
(( إن هذا الأمر لا ينقضي حتى يمضي فيهم اثنا عشر خليفة ))
“বস্তুতঃ এই বিষয়টি রহিত হবে না, যতোক্ষণ না বারো জন খলীফা তাদের ওপরে শাসন করবে।”
হযরত জাবের (রা:) হতে সিমাকের সূত্রেও ভিন্ন শব্দচয়নে বর্ণিত হয়:
(( لا يزال الإسلام عزيزاً إلى اثني عشر خليفة )) ثم قال كلمة لم أفهمها، فقلت لأبي: ما قال؟ فقال: (( كلهم من قريش )).
“ইসলাম বারো জন খলীফার শাসনকাল পর্যন্ত শক্তিশালী হতে থাকবে।” এরপর মহানবী (দ:) কিছু একটা বলেন যা আমি বুঝতে পারিনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করি রাসূলুল্লাহ (দ:) কী বলেছিলেন। তিনি জবাবে বলেন, “তাঁরা (শাসকবৃন্দ) সবাই ক্বুরাইশ গোত্রীয় হবেন।”
হযরত জাবের (রা:) হতে আল-শাবী’র সূত্রে অন্যভাবে বর্ণিত:
(( لا يزال هذا الأمر عزيزاً منيعاً إلى اثني عشر خليفة )).
“বারো জন খলীফার মাধ্যমে (শাসনের) এই বিষয়টি শক্তিশালী থাকবে।”
ইমাম মুসলিম (রহ:) তাঁর পুস্তকে (১৮২২) আমির ইবনে সা’আদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রহ:)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ (রা:) তাঁর গোলাম নাফী’র মাধ্যমে লেখা পত্র দ্বারা তাঁকে জানিয়েছেন যে তিনি রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে বলতে শুনেছেন:
(( لا يزال الدين قائماً حتى تقوم الساعة، أو يكون عليكم اثنا عشرة خليفة كلهم من قريش )).
ইসলাম ধর্ম প্রাধান্য বজায় রাখবে প্রলয় দিবস অবধি; কিংবা বারো জন খলীফা তোমাদেরকে শাসন করা পর্যন্ত। তারা সবাই ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত হবে।
অতএব, এসব রওয়ায়াতের স্পষ্ট অর্থের ভিত্তিতে হযরতে আমীরে মু’আবিয়া (রা:) এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, কেননা তিনি ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত ছিলেন এবং তিনি শাসন করেছিলেন, আর তাঁর শাসনকালে ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ছিলো এবং আধিপত্য বিস্তার করেছিলো। এই বিবরণ স্পষ্টভাবে তাঁর প্রতি প্রযোজ্য হয়, বিশেষ করে আল-শাবী ও সিমাকের বর্ণনাগুলো, যা ইসলামকে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হিসেবে প্রতীয়মান করে; আর এই রওয়ায়াত স্পষ্ট ইঙ্গিত করে যে এই শক্তি ও ক্ষমতার সূচনা হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর বেসাল শরীফের পরে প্রথম খলীফা তথা হযরত আবূ বকর (রা:)-এর দ্বারা। অতঃপর ১২তম খলীফা পর্যন্ত এভাবে চলবে বলে ঘোষিত হয়েছিলো। আমীরে মু’আবিয়া (রা:) তাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, বিশেষ করে এই কারণে যে সকল মুসলমান তাঁর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন এবং ওই সালটিকে ঐক্যের বছর বলে অভিহিত করা হয়েছিলো।
ওপরে প্রদর্শিত প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে বোঝা যায়, হযরতে আমীরে মু’আবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান (রা:) বৈধ খলীফা ছিলেন এবং তাঁর শাসনামলে ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ও আধিপত্যশীল ছিলো, আর এটা হয়েছিলো তাঁর শরীয়ত অনুসারে শাসন ও সুন্নাহ’র বাস্তবায়নের দরুন। নতুবা ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ও প্রভাবপূর্ণ হতো না। আল্লাহ-ই সর্বজ্ঞ। [আমীরে মু’য়াবিয়া (রা.)-এর পক্ষে জবাব শীর্ষক গ্রন্থের চলমান অনুবাদ অনুসারে; লিঙ্ক:
https://docs.google.com/.../1WQXm0QlPirAjKgt.../edit...]
*সুন্নী দৃষ্টিতে শাসকের বিরুদ্ধাচরণ অবৈধ:
এখানে বলা জরুরি যে, হযরতে ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বরাবর রাষ্ট্রের শাসনভার অর্পণ করায় তিনি খলীফা পদে অধিষ্ঠিত হন [ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহের ইতিহাস, হযরতে মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফত অধ্যায়]। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মধ্যে এটা একটা স্বীকৃত সত্য-সঠিক নীতি যে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা সাধারণত জায়েজ/বৈধ নয়। ইমাম তাহাবী (রহমতুল্লাহি আলাইহ) তাঁর কৃত ‘আকীদায়ে তাহাবীয়্যা’ গ্রন্থে বলেন:
لا نرى الخروج على إمامنا ولا على ولاة أمرنا وإن كانوا ظالمين، ولا نتمنى لهم الشر، ولا نتراجع عن اتباعهم. ونرىأن طاعتهم من طاعة الله سبحانه، فهي واجبة ما لم يأمرونا بالمعصية، وندعو لهم بالهداية وتجاوز عن سيئاتهم. (العقيدة الطحاوية مع شرح الغنيمي، ص ١١٠ء١١١).
অর্থ: “আমরা আমাদের ইমাম বা আমাদের বিষয়ের দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে স্বীকৃতি দেই না, এমন কী তাঁরা যদি অন্যায়কারীও হন, তবুও আমরা তাঁদের অমঙ্গল কামনা করি না, অথবা তাঁদের অনুসরণ থেকেও সরে আসি না। আমরা বিশ্বাস করি যে তাঁদের আনুগত্য করা মহান আল্লাহর আনুগত্যের অংশ, এবং তাই যতোক্ষণ না তাঁরা আমাদের পাপ করতে আদেশ দেন ততোক্ষণ পর্যন্ত এটা বাধ্যতামূলক। আমরা তাঁদের হেদায়াত এবং তাঁদের অন্যায়কে ক্ষমার জন্যে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি।” (আল-আকীদাতুত-তাহাবীয়্যা এবং শরহুল-গুনায়মী পুস্তকের ব্যাখ্যাসহ, পৃষ্ঠা ১১০-১১১)।
সুন্নী উলামাবৃন্দ এর পক্ষে প্রমাণসমূহ পেশ করেছেন, যার মধ্যে নিম্নবর্ণিত দলিলগুলো উল্লেখযোগ্য:
(১) আল্লাহ পাক ফরমান - يَا أَيُّهَا ٱلَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلأَمْرِ مِنْكُمْ - অর্থ: হে ঈমানদারবৃন্দ, নির্দেশ মান্য করো আল্লাহর এবং নির্দেশ মান্য করো রাসূলের আর তাদেরই, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত [সূরাহ নিসা, ৫৯ আয়াত; নূরুল ইরফান]
(২) হযরতে আবূ হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من أطاعني فقد أطاع الله، ومن عصاني فقد عصى الله، ومن أطاع أميري فقد أطاعني، ومن عصى أميري فقد عصاني». (صحيح البخاري، رقم ٦٧١٨، وصحيح مسلم، رقم ١٨٣٥) - অর্থ: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করলো, সে আল্লাহরই অবাধ্যতা করলো। আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের আনুগত্য করলো, সে আমারই আনুগত্য করলো, আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের অবাধ্যতা করলো, সে আমারই অবাধ্যতা করলো [বুখারী, ৬৭১৮ ও মুসলিম, ১৮৩৫]।
(৩) হযরতে আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «اسمعوا وأطيعوا وإن كان عبداً حبشياً كأن رأسه زبيبة» (صحيح البخاري رقم 6723 وصحيح مسلم) - অর্থ: তোমাদের শাসকের কথা শুনো এবং তার আনুগত্য করো, যদিও সে একজন হাবশী দাস হয় যার মাথা কিশমিশের মতো দেখতে হয় [বুখারী, ৬৭২৩ ও সহীহ মুসলিম]।
(৪) হযরতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «من رأى من أميره ما يكره فليصبر، فإنه لا يفارق الجماعة شبراً فيموت إلا مات ميتة جاهلية» (صحيح البخاري رقم 6724، وصحيح مسلم رقم 1849) - অর্থ: যে ব্যক্তি তার শাসককে এমন কিছু করতে দেখে যা তার অপছন্দনীয়, তার উচিত ধৈর্য ধরা; কারণ কেউ (মুসলিম) জামা’আত থেকে এক মুহূর্তের তরেও আলাদা হয়ে মারা গেলে সে (প্রাক-ইসলামী যুগের) অজ্ঞতার মাঝে মৃত্যু বরণ করবে [সহীহ আল-বুখারী, নং ৬৭২৪ এবং সহীহ মুসলিম, নং ১৮৪৯]।
(৫) হযরতে আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত যে, হুজূরে পূর নূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «على المرء المسلم السمع والطاعة فيما أحب وكره ما لم يؤمر بمعصية، فإن أُمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة». (صحيح البخاري، رقم ٦٧٢٥، وصحيح مسلم، رقم ١٨٣٩) - অর্থ: একজন মুসলিমকে অবশ্যই (তার শাসকের আদেশ) শুনতে হবে এবং মেনে চলতে হবে, যা সে পছন্দ করে বা অপছন্দ করে, যতোক্ষণ না তাকে পাপ করার আদেশ দেয়া হয়। যদি তাকে আল্লাহর অবাধ্যতা করার আদেশ দেয়া হয়, তাহলে কোনো শ্রবণ এবং কোনো আনুগত্য নেই [সহীহ আল-বুখারী, নং ৬৭২৫ এবং সহীহ মুসলিম, নং ১৮৩৯]
আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক তাঁর পুত্র ইয়াযীদকে মনোনয়ন শরীয়তসম্মত ছিলো। এ প্রসঙ্গে শরঈ দিকটি তুলে ধরেছেন কাজী আবূ ইয়ালা আল-ফার্রা’য়া হাম্বলী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) নিজ ‘আহকামুস্ সুলতানীয়াহ’ পুস্তকে:
يجوز للخليفة أن يعيّن خليفةً دون موافقة أهل السلطة، كما عيّن أبو بكر عمر رضي الله عنهما خليفةً له دون موافقة وحضور وجهاء الأمة. والسبب المنطقي وراء ذلك أن تعيين خليفة لا يُعدّ تعيينًا للخليفة، وإلا لكان هناك خليفتان، فلا حاجة لوجود ذوي النفوذ. نعم، بعد وفاة الخليفة، لا بد من حضورهم وموافقتهم.
অর্থ: "একজন খলীফার পক্ষে ক্ষমতাসীনদের অনুমোদন ছাড়াই একজন উত্তরসূরী নিয়োগ করা বৈধ, যেমন হযরত আবূ বকর (রা.) হযরত উমর (রা.)-কে মুসলিম উম্মাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমর্থন এবং উপস্থিতি ছাড়াই তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ হলো এই যে, কাউকে "খিলাফতের উত্তরসূরী" নিয়োগ করা তাঁকে খলীফা হিসেবে নিযুক্ত করা বলে মনে করা হয় না; নতুবা দু জন খলীফা (বর্তমান) থাকবে। তাই প্রভাবশালী গণ্যমান্যদের উপস্থিত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, খলীফার ইন্তেকালের পরে তাঁদের উপস্থিতি এবং অনুমোদন প্রয়োজন।"
কাজী আবূ ইয়ালা (রহ.) আরো বলেন:
«إن الخلافة لا تقوم بمجرد تعيين الخليفة، بل تحتاج بعد وفاته إلى موافقة الأمة الإسلامية» (الأحكام السلطانية، ص٩).
অর্থ: “কেবল খলীফা নিয়োগের মাধ্যমেই খিলাফত (নেতৃত্ব) প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং (তাঁর ইন্তেকালের পর) এর জন্যে মুসলিম উম্মাহর অনুমোদন প্রয়োজন” [আল-আহকামুস্ সুলতানীয়া, পৃ. ৯]।
এ কারণেই হযরতে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে দোষারোপ করা যায় না। কেননা, সুন্নী সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামাবৃন্দের মতানুযায়ী তা কেবলই একটি সুপারিশ ছিলো; গণ্যমান্যদের অনুমোদন ছাড়া তা চূড়ান্ত নয়। তাই ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক ইয়াযীদের দুঃশাসনের বিরোধিতা করা একদম বৈধ যা উপরের দলিলে প্রতিভাত হয়।
সাইয়্যিদুনা মু'আবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর ইন্তেকালের পর সাইয়্যিদুনা ইমামে হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) দেখতে পান যে হিজাযের প্রধান ব্যক্তিত্ববৃন্দ, যার মধ্যে সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-)ও ছিলেন, তাঁরা এখনো ইয়াযীদের নেতৃত্বকে সমর্থন করেননি। তাছাড়া, তিনি ইরাক/কুফা থেকে প্রচুর চিঠি পেয়েছিলেন যা স্পষ্ট করে দিয়েছিলো যে ইরাকের/কুফার জনগণও ইয়াযীদকে তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করেনি। চিঠিগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিলো যে তারা কারো প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেনি। (দেখুন - তারিখ আত্ তাবারী, ৪/২৬২ এবং আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ৮/১৫১)। এই পরিস্থিতিতে ইয়াযীদের নেতৃত্বের ব্যাপারে সাইয়্যিদুনা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর অবস্থান ছিলো যে, শা’মের/সিরিয়া অঞ্চলের জনগণের আনুগত্যের অঙ্গীকার বাকি মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। অতএব, তার নেতৃত্ব তখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সাইয়্যিদুনা হুসাইনের দৃষ্টিতে ইয়াজিদ ছিলো একজন অত্যাচারী শাসক, যে মুসলমানদের পরাজিত করতে চেয়েছিলো, কিন্তু এখনো তা করতে সক্ষম হয় নি। এমন পরিস্থিতিতে তিনি মুসলিম উম্মাহর উপর একজন অত্যাচারী শাসককে আধিপত্য বিস্তার থেকে বিরত রাখাকে তাঁর ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন। এই কারণেই সাইয়্যিদুনা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইয়াযীদের শাসন সম্পর্কে সত্য অনুসন্ধানের জন্যে মুসলিম ইবনে আকীল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে কুফায় প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর যাত্রা বিদ্রোহী প্রকৃতির ছিলো না, বরং সত্য উদঘাটনের জন্যে ছিলো। যদি সাইয়্যিদুনা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) জানতে পারতেন যে ইয়াযীদ তার শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সমগ্র মুসলিম ভূখণ্ডে তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। তিনি অবশ্যই তার নেতৃত্বকে বিনা পছন্দে গ্রহণ করতেন এবং এর বিরোধিতা করতেন না। কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন যে এটা একজন অত্যাচারী শাসক যার এখনো কোনো কর্তৃত্ব নেই এবং তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার আগেই তাকে থামানো যেতে পারে।
এই কারণেই যখন তিনি কুফার কাছাকাছি এসে আবিষ্কার করলেন যে কুফার অধিবাসীরা তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং ইয়াযীদের শাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তখন তিনি তিনটি বিষয়ের পরামর্শ দিলেন, যার মধ্যে একটি শর্ত ছিল - "أو أعطي يدي في يد يزيد بيعة". (انظر: تاريخ الطبري 4/313) - অর্থ: "অথবা আমি বাইয়াত তথা আনুগত্যের শপথ হিসেবে ইয়াযীদের হাতে আমার হাত রাখছি (দেখুন: তারীখুত্ তাবারী, ৪/৩১৩)। কিন্তু তাঁর এ শর্ত কুফার গভর্নর জালিম উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ মেনে না নিয়ে হযরত ইমাম (রা.)-এর বিরুদ্ধে সৈন্যসহ কারবালার প্রান্তরে অগ্রসর হয়। পরবর্তী করুণ ইতিহাস আমাদের সবারই জানা।
অতএব, ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ ট্র্যাজেডির জন্যে হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে দায়ী করা শিয়া গোষ্ঠীগত স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া আর কিছু নয়।
রেফারেন্স: দক্ষিণ আফ্রিকী Islam Q&A ওয়েবসাইট।