ব্লগ সংরক্ষাণাগার

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

*হযরত মু’য়াবিয়া (রা.) উত্তরাধিকারী নির্বাচনে জুলূম করেছিলেন কি?*



-এডমিন
বর্তমানে ফেসবুক ও অনলাইনে হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে পারসিক শিয়া গোষ্ঠীর চামচা দল নিরন্তর আক্রমণ করে চলেছে এ অভিযোগে যে, তিনি নিজের ছেলে ইয়াযীদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামে রাজতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। আর এতে তিনি জোরজবরদস্তি বিশিষ্ট সাহাবা (রা.)-বৃন্দের ও গণমান্যদের সম্মতি গ্রহণ করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক! চলুন, কথা না বাড়িয়ে মূল অলোচনায় প্রবৃত্ত হই।
*হাদীসে ‘খলীফা’ সম্বোধন:
রাজা-বাদশাহ নন, বরং খলীফা বলে সম্বোধন করেছিলেন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হযরত জাবের (রা:) বলেন:
سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: (( لا يزال أمر الناس ماضياً ما وليهم اثنا عشر رجلاً )) ثم تكلم بكلمة خفيت علي، فسألت أبي: ماذا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فقال: (( كلهم من قريش )) وهذا لفظ مسلم.
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শুনেছি এ কথা বলতে: “মানুষের বিষয়াদি (উন্নত হতে) থাকবে বারো জনের নেতৃত্বে...।” এরপর তিনি এমন কথা বলেন যা আমি (কানে) শুনতে পাইনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করি মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বলেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেন, “তাঁরা (শাসকবৃন্দ) সবাই ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত।” [আল-বুখারী, হাদীস নং ৭২২২, ৭২২৩ ও মুসলিম, হাদীস নং ১৮২১]
ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে (৮২১) হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রা:) হতে ইমাম হুসাইন (রা:)-এর সূত্রে আলাদা শব্দচয়নে বর্ণনা করেন:
(( إن هذا الأمر لا ينقضي حتى يمضي فيهم اثنا عشر خليفة ))
“বস্তুতঃ এই বিষয়টি রহিত হবে না, যতোক্ষণ না বারো জন খলীফা তাদের ওপরে শাসন করবে।”
হযরত জাবের (রা:) হতে সিমাকের সূত্রেও ভিন্ন শব্দচয়নে বর্ণিত হয়:
(( لا يزال الإسلام عزيزاً إلى اثني عشر خليفة )) ثم قال كلمة لم أفهمها، فقلت لأبي: ما قال؟ فقال: (( كلهم من قريش )).
“ইসলাম বারো জন খলীফার শাসনকাল পর্যন্ত শক্তিশালী হতে থাকবে।” এরপর মহানবী (দ:) কিছু একটা বলেন যা আমি বুঝতে পারিনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করি রাসূলুল্লাহ (দ:) কী বলেছিলেন। তিনি জবাবে বলেন, “তাঁরা (শাসকবৃন্দ) সবাই ক্বুরাইশ গোত্রীয় হবেন।”
হযরত জাবের (রা:) হতে আল-শাবী’র সূত্রে অন্যভাবে বর্ণিত:
(( لا يزال هذا الأمر عزيزاً منيعاً إلى اثني عشر خليفة )).
“বারো জন খলীফার মাধ্যমে (শাসনের) এই বিষয়টি শক্তিশালী থাকবে।”
ইমাম মুসলিম (রহ:) তাঁর পুস্তকে (১৮২২) আমির ইবনে সা’আদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রহ:)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ (রা:) তাঁর গোলাম নাফী’র মাধ্যমে লেখা পত্র দ্বারা তাঁকে জানিয়েছেন যে তিনি রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে বলতে শুনেছেন:
(( لا يزال الدين قائماً حتى تقوم الساعة، أو يكون عليكم اثنا عشرة خليفة كلهم من قريش )).
ইসলাম ধর্ম প্রাধান্য বজায় রাখবে প্রলয় দিবস অবধি; কিংবা বারো জন খলীফা তোমাদেরকে শাসন করা পর্যন্ত। তারা সবাই ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত হবে।
অতএব, এসব রওয়ায়াতের স্পষ্ট অর্থের ভিত্তিতে হযরতে আমীরে মু’আবিয়া (রা:) এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, কেননা তিনি ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত ছিলেন এবং তিনি শাসন করেছিলেন, আর তাঁর শাসনকালে ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ছিলো এবং আধিপত্য বিস্তার করেছিলো। এই বিবরণ স্পষ্টভাবে তাঁর প্রতি প্রযোজ্য হয়, বিশেষ করে আল-শাবী ও সিমাকের বর্ণনাগুলো, যা ইসলামকে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হিসেবে প্রতীয়মান করে; আর এই রওয়ায়াত স্পষ্ট ইঙ্গিত করে যে এই শক্তি ও ক্ষমতার সূচনা হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর বেসাল শরীফের পরে প্রথম খলীফা তথা হযরত আবূ বকর (রা:)-এর দ্বারা। অতঃপর ১২তম খলীফা পর্যন্ত এভাবে চলবে বলে ঘোষিত হয়েছিলো। আমীরে মু’আবিয়া (রা:) তাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, বিশেষ করে এই কারণে যে সকল মুসলমান তাঁর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন এবং ওই সালটিকে ঐক্যের বছর বলে অভিহিত করা হয়েছিলো।
ওপরে প্রদর্শিত প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে বোঝা যায়, হযরতে আমীরে মু’আবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান (রা:) বৈধ খলীফা ছিলেন এবং তাঁর শাসনামলে ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ও আধিপত্যশীল ছিলো, আর এটা হয়েছিলো তাঁর শরীয়ত অনুসারে শাসন ও সুন্নাহ’র বাস্তবায়নের দরুন। নতুবা ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ও প্রভাবপূর্ণ হতো না। আল্লাহ-ই সর্বজ্ঞ। [আমীরে মু’য়াবিয়া (রা.)-এর পক্ষে জবাব শীর্ষক গ্রন্থের চলমান অনুবাদ অনুসারে; লিঙ্ক: https://docs.google.com/.../1WQXm0QlPirAjKgt.../edit...]
*সুন্নী দৃষ্টিতে শাসকের বিরুদ্ধাচরণ অবৈধ:
এখানে বলা জরুরি যে, হযরতে ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বরাবর রাষ্ট্রের শাসনভার অর্পণ করায় তিনি খলীফা পদে অধিষ্ঠিত হন [ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহের ইতিহাস, হযরতে মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফত অধ্যায়]। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মধ্যে এটা একটা স্বীকৃত সত্য-সঠিক নীতি যে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা সাধারণত জায়েজ/বৈধ নয়। ইমাম তাহাবী (রহমতুল্লাহি আলাইহ) তাঁর কৃত ‘আকীদায়ে তাহাবীয়্যা’ গ্রন্থে বলেন:
لا نرى الخروج على إمامنا ولا على ولاة أمرنا وإن كانوا ظالمين، ولا نتمنى لهم الشر، ولا نتراجع عن اتباعهم. ونرىأن طاعتهم من طاعة الله سبحانه، فهي واجبة ما لم يأمرونا بالمعصية، وندعو لهم بالهداية وتجاوز عن سيئاتهم. (العقيدة الطحاوية مع شرح الغنيمي، ص ١١٠ء١١١).
অর্থ: “আমরা আমাদের ইমাম বা আমাদের বিষয়ের দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে স্বীকৃতি দেই না, এমন কী তাঁরা যদি অন্যায়কারীও হন, তবুও আমরা তাঁদের অমঙ্গল কামনা করি না, অথবা তাঁদের অনুসরণ থেকেও সরে আসি না। আমরা বিশ্বাস করি যে তাঁদের আনুগত্য করা মহান আল্লাহর আনুগত্যের অংশ, এবং তাই যতোক্ষণ না তাঁরা আমাদের পাপ করতে আদেশ দেন ততোক্ষণ পর্যন্ত এটা বাধ্যতামূলক। আমরা তাঁদের হেদায়াত এবং তাঁদের অন্যায়কে ক্ষমার জন্যে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি।” (আল-আকীদাতুত-তাহাবীয়্যা এবং শরহুল-গুনায়মী পুস্তকের ব্যাখ্যাসহ, পৃষ্ঠা ১১০-১১১)।
সুন্নী উলামাবৃন্দ এর পক্ষে প্রমাণসমূহ পেশ করেছেন, যার মধ্যে নিম্নবর্ণিত দলিলগুলো উল্লেখযোগ্য:
(১) আল্লাহ পাক ফরমান - يَا أَيُّهَا ٱلَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلأَمْرِ مِنْكُمْ - অর্থ: হে ঈমানদারবৃন্দ, নির্দেশ মান্য করো আল্লাহর এবং নির্দেশ মান্য করো রাসূলের আর তাদেরই, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত [সূরাহ নিসা, ৫৯ আয়াত; নূরুল ইরফান]
(২) হযরতে আবূ হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من أطاعني فقد أطاع الله، ومن عصاني فقد عصى الله، ومن أطاع أميري فقد أطاعني، ومن عصى أميري فقد عصاني». (صحيح البخاري، رقم ٦٧١٨، وصحيح مسلم، رقم ١٨٣٥) - অর্থ: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করলো, সে আল্লাহরই অবাধ্যতা করলো। আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের আনুগত্য করলো, সে আমারই আনুগত্য করলো, আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের অবাধ্যতা করলো, সে আমারই অবাধ্যতা করলো [বুখারী, ৬৭১৮ ও মুসলিম, ১৮৩৫]।
(৩) হযরতে আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «اسمعوا وأطيعوا وإن كان عبداً حبشياً كأن رأسه زبيبة» (صحيح البخاري رقم 6723 وصحيح مسلم) - অর্থ: তোমাদের শাসকের কথা শুনো এবং তার আনুগত্য করো, যদিও সে একজন হাবশী দাস হয় যার মাথা কিশমিশের মতো দেখতে হয় [বুখারী, ৬৭২৩ ও সহীহ মুসলিম]।
(৪) হযরতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «من رأى من أميره ما يكره فليصبر، فإنه لا يفارق الجماعة شبراً فيموت إلا مات ميتة جاهلية» (صحيح البخاري رقم 6724، وصحيح مسلم رقم 1849) - অর্থ: যে ব্যক্তি তার শাসককে এমন কিছু করতে দেখে যা তার অপছন্দনীয়, তার উচিত ধৈর্য ধরা; কারণ কেউ (মুসলিম) জামা’আত থেকে এক মুহূর্তের তরেও আলাদা হয়ে মারা গেলে সে (প্রাক-ইসলামী যুগের) অজ্ঞতার মাঝে মৃত্যু বরণ করবে [সহীহ আল-বুখারী, নং ৬৭২৪ এবং সহীহ মুসলিম, নং ১৮৪৯]।
(৫) হযরতে আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত যে, হুজূরে পূর নূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «على المرء المسلم السمع والطاعة فيما أحب وكره ما لم يؤمر بمعصية، فإن أُمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة». (صحيح البخاري، رقم ٦٧٢٥، وصحيح مسلم، رقم ١٨٣٩) - অর্থ: একজন মুসলিমকে অবশ্যই (তার শাসকের আদেশ) শুনতে হবে এবং মেনে চলতে হবে, যা সে পছন্দ করে বা অপছন্দ করে, যতোক্ষণ না তাকে পাপ করার আদেশ দেয়া হয়। যদি তাকে আল্লাহর অবাধ্যতা করার আদেশ দেয়া হয়, তাহলে কোনো শ্রবণ এবং কোনো আনুগত্য নেই [সহীহ আল-বুখারী, নং ৬৭২৫ এবং সহীহ মুসলিম, নং ১৮৩৯]
আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক তাঁর পুত্র ইয়াযীদকে মনোনয়ন শরীয়তসম্মত ছিলো। এ প্রসঙ্গে শরঈ দিকটি তুলে ধরেছেন কাজী আবূ ইয়ালা আল-ফার্রা’য়া হাম্বলী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) নিজ ‘আহকামুস্ সুলতানীয়াহ’ পুস্তকে:
يجوز للخليفة أن يعيّن خليفةً دون موافقة أهل السلطة، كما عيّن أبو بكر عمر رضي الله عنهما خليفةً له دون موافقة وحضور وجهاء الأمة. والسبب المنطقي وراء ذلك أن تعيين خليفة لا يُعدّ تعيينًا للخليفة، وإلا لكان هناك خليفتان، فلا حاجة لوجود ذوي النفوذ. نعم، بعد وفاة الخليفة، لا بد من حضورهم وموافقتهم.
অর্থ: "একজন খলীফার পক্ষে ক্ষমতাসীনদের অনুমোদন ছাড়াই একজন উত্তরসূরী নিয়োগ করা বৈধ, যেমন হযরত আবূ বকর (রা.) হযরত উমর (রা.)-কে মুসলিম উম্মাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমর্থন এবং উপস্থিতি ছাড়াই তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ হলো এই যে, কাউকে "খিলাফতের উত্তরসূরী" নিয়োগ করা তাঁকে খলীফা হিসেবে নিযুক্ত করা বলে মনে করা হয় না; নতুবা দু জন খলীফা (বর্তমান) থাকবে। তাই প্রভাবশালী গণ্যমান্যদের উপস্থিত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, খলীফার ইন্তেকালের পরে তাঁদের উপস্থিতি এবং অনুমোদন প্রয়োজন।"
কাজী আবূ ইয়ালা (রহ.) আরো বলেন:
«إن الخلافة لا تقوم بمجرد تعيين الخليفة، بل تحتاج بعد وفاته إلى موافقة الأمة الإسلامية» (الأحكام السلطانية، ص٩).
অর্থ: “কেবল খলীফা নিয়োগের মাধ্যমেই খিলাফত (নেতৃত্ব) প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং (তাঁর ইন্তেকালের পর) এর জন্যে মুসলিম উম্মাহর অনুমোদন প্রয়োজন” [আল-আহকামুস্ সুলতানীয়া, পৃ. ৯]।
এ কারণেই হযরতে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে দোষারোপ করা যায় না। কেননা, সুন্নী সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামাবৃন্দের মতানুযায়ী তা কেবলই একটি সুপারিশ ছিলো; গণ্যমান্যদের অনুমোদন ছাড়া তা চূড়ান্ত নয়। তাই ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক ইয়াযীদের দুঃশাসনের বিরোধিতা করা একদম বৈধ যা উপরের দলিলে প্রতিভাত হয়।
সাইয়্যিদুনা মু'আবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর ইন্তেকালের পর সাইয়্যিদুনা ইমামে হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) দেখতে পান যে হিজাযের প্রধান ব্যক্তিত্ববৃন্দ, যার মধ্যে সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-)ও ছিলেন, তাঁরা এখনো ইয়াযীদের নেতৃত্বকে সমর্থন করেননি। তাছাড়া, তিনি ইরাক/কুফা থেকে প্রচুর চিঠি পেয়েছিলেন যা স্পষ্ট করে দিয়েছিলো যে ইরাকের/কুফার জনগণও ইয়াযীদকে তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করেনি। চিঠিগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিলো যে তারা কারো প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেনি। (দেখুন - তারিখ আত্ তাবারী, ৪/২৬২ এবং আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ৮/১৫১)। এই পরিস্থিতিতে ইয়াযীদের নেতৃত্বের ব্যাপারে সাইয়্যিদুনা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর অবস্থান ছিলো যে, শা’মের/সিরিয়া অঞ্চলের জনগণের আনুগত্যের অঙ্গীকার বাকি মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। অতএব, তার নেতৃত্ব তখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সাইয়্যিদুনা হুসাইনের দৃষ্টিতে ইয়াজিদ ছিলো একজন অত্যাচারী শাসক, যে মুসলমানদের পরাজিত করতে চেয়েছিলো, কিন্তু এখনো তা করতে সক্ষম হয় নি। এমন পরিস্থিতিতে তিনি মুসলিম উম্মাহর উপর একজন অত্যাচারী শাসককে আধিপত্য বিস্তার থেকে বিরত রাখাকে তাঁর ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন। এই কারণেই সাইয়্যিদুনা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইয়াযীদের শাসন সম্পর্কে সত্য অনুসন্ধানের জন্যে মুসলিম ইবনে আকীল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে কুফায় প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর যাত্রা বিদ্রোহী প্রকৃতির ছিলো না, বরং সত্য উদঘাটনের জন্যে ছিলো। যদি সাইয়্যিদুনা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) জানতে পারতেন যে ইয়াযীদ তার শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সমগ্র মুসলিম ভূখণ্ডে তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। তিনি অবশ্যই তার নেতৃত্বকে বিনা পছন্দে গ্রহণ করতেন এবং এর বিরোধিতা করতেন না। কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন যে এটা একজন অত্যাচারী শাসক যার এখনো কোনো কর্তৃত্ব নেই এবং তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার আগেই তাকে থামানো যেতে পারে।
এই কারণেই যখন তিনি কুফার কাছাকাছি এসে আবিষ্কার করলেন যে কুফার অধিবাসীরা তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং ইয়াযীদের শাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তখন তিনি তিনটি বিষয়ের পরামর্শ দিলেন, যার মধ্যে একটি শর্ত ছিল - "أو أعطي يدي في يد يزيد بيعة". (انظر: تاريخ الطبري 4/313) - অর্থ: "অথবা আমি বাইয়াত তথা আনুগত্যের শপথ হিসেবে ইয়াযীদের হাতে আমার হাত রাখছি (দেখুন: তারীখুত্ তাবারী, ৪/৩১৩)। কিন্তু তাঁর এ শর্ত কুফার গভর্নর জালিম উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ মেনে না নিয়ে হযরত ইমাম (রা.)-এর বিরুদ্ধে সৈন্যসহ কারবালার প্রান্তরে অগ্রসর হয়। পরবর্তী করুণ ইতিহাস আমাদের সবারই জানা।
অতএব, ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ ট্র্যাজেডির জন্যে হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে দায়ী করা শিয়া গোষ্ঠীগত স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া আর কিছু নয়।
*সমাপ্ত*
রেফারেন্স: দক্ষিণ আফ্রিকী Islam Q&A ওয়েবসাইট।

রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫

ডক্টর তাহিরুল কাদেরি কি ইয়াযীদের দোসর?

 লেখক: মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন

[লেখাটি সম্পাদনা করা হয় নি; তবে প্রকাশের সময় হবে, ইনশা’আল্লাহ। মতামত লেখকের, এডমিন দায়বদ্ধ নই।  - এডমিন]



#মিনহাজি বাতেন সম্প্রদায়সহ ইবনে সাবার নাপাক আউলাদরা এই মুহাররম মাসে আহলে বাইতের চর্চা না করে প্রতিনিয়ত সাহাবি বিদ্বেষ চর্চা করছে। পথভ্রষ্ট বাতেন ও মিনহাজি চেলাচামুন্ডাদের দাবি- কারবালার ঘটনার জন্য সাইয়্যিদুনা আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু দায়ী!
#অথচ মিনহাজের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর তাহিরুল কাদেরি সাহেবের স্পষ্ট কথা- সাইয়্যিদুনা আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইয়াযিদকে মনোনয়ন দানের ব্যাপারে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না, তিনি ইসলাম ও মুসলমানমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তার এই উদ্যোগের পিছনে কাজ করেছিল হিত ও মঙ্গল কামনা।
#কাদেরি সাহেবের এই কথাগুলো বলেছেন উনার লিখিত "শাহাদাতে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু দর্শন ও শিক্ষা" বইয়ের 90 ও 91 পৃষ্ঠায়।
#কাদেরি সাহেব লিখেন-----
#হযরত আমীরে #মুয়াবিয়া অবশ্যই ইসলাম ও মুসলমানের হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তিনি খেলাফত প্রশ্নে আগেকার ন্যায় মুসলমানদের মাঝে খুনাখুনি ও রক্তপাত চাননি। বিগত অবস্থাদির প্রেক্ষাপটে তিনি এও বুঝতেন যে, তিনি যদি খেলাফত ও ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বাদ দিয়ে দেন কিংবা কোন কমিশনকে খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে দেন তাহলে লোকেরা কখনো কোন ব্যক্তি বিশেষের উপর একমত হবে না। তখন বিভিন্ন এলাকা হতে খেলাফতের অনেক অনেক দাবিদার দাঁড়িয়ে যাবে এতে করে মস্ত এক অস্থিতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনি এও উপলব্ধি করতেন যে, খেলাফত যদি বনু হাশেমকে দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে বনু উমাইয়ার লোকেরা যারা জাতিগতভাবে অবিচ্ছিন্ন কখনো মেনে নেবে না। ফলে যুদ্ধবিগ্রহের নির্ঘাত এক ক্রমবর্ধমান ধারার অবতারণা হবে অতএব তিনি বনু উমাইয়ার উপর আপন পুত্রকে প্রাধান্য দিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে যে ছিল রাজনৈতিক বিষয়ে খুবই পারদর্শী ও সিদ্ধহস্ত।
তিনি ভুল করুক আর শুদ্ধ করুক, এ কথাটি অবশ্য সর্বজনবিদিত যে, এসব কিছু তিনি মুসলমানদের মাঝে খুনাখুনি ও রক্তারক্তি বন্ধ করার মানসেই করেছিলেন। এ কথাটির সাক্ষী তাঁর এই দোয়াটি, যা তিনি এজিদকে দায়িত্বভার অর্পণ করার পরে করেছিলেন।
اللهم ان كنت تعلم اني وليت لانه فيما اراه اهل لذالك فاتمم له ما وليته و ان كنت وليته لاني اخبه فلا تتمم له وليته.
"হে আল্লাহ তুমি যদি জানো যে, এজিদকে আমি তার যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্বভার অর্পণ করেছি তাহলে তুমি তাকে দিয়ে এই দায়িত্ব পূর্ণ করিয়ে নাও। পক্ষান্তরে তুমি যদি একথা জানো যে, স্বজনপ্রীতির বশবর্তী হয়ে আমি তাকে এই দায়িত্ব অর্পণ করেছি, তাহলে তুমি তাকে দিয়ে এই দায়িত্ব পূর্ণ করিও না।"
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮:৮০)
হযরত আমীরে মুয়াবিয়ার এই উদ্যোগকে শুদ্ধ বলুন আর ভুল বলুন, এ কথাটি কখনো অস্বীকার করা যায় না যে, তাঁর উদ্যোগের পিছনে কাজ করেছিল হিত ও মঙ্গল কামনা। ওলামায়ে আহলে সুন্নাতগণ এ উদ্যোগের কথা ভেবে এবং নবী দঃ এর সাথে সম্পৃক্ততার অর্থাৎ সাহাবা হওয়ার কথা বিবেচনা করে হযরত আমীরে মুয়াবিয়ার ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করা, তাঁর সমালোচনা করা, তাঁকে গালমন্দ করা এবং ভালমন্দ বলা হারাম ঘোষণা করে দিয়েছেন।
------
#এবার পথভ্রষ্ট মিনহাজি শিয়াদের বলতে হবে, মনোনয়নের ব্যাপারে সাইয়্যিদুনা আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর পদক্ষেপকে সমর্থন করে কাদেরি সাহেব আহলে বাইতের দুশমন হননি??????
বিশেষ দ্রষ্টব্য- আমার বিশ্বাস মতে, কারবালার ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দায়ি নাপাক, অভিশপ্ত, বদবখত ইয়াযিদ।

 *সমাপ্ত*

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হাদীস শরীফ: মসজিদে ফিতনা

 

[মূল: ইমাম বায়হাকী (রহ.) কৃত ‘শুয়াবুল ঈমান,’ ১৯০৮]
ইবারত/আরবী উদ্ধৃতি:
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَبْقَى مِنَ الْإِسْلَامِ إِلَّا اسْمُهُ وَلَا يَبْقَى مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا رَسْمُهُ مَسَاجِدُهُمْ عَامِرَةٌ وَهِيَ خَرَابٌ مِنَ الْهُدَى عُلَمَاؤُهُمْ شَرُّ مَنْ تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ مِنْ عِنْدِهِمْ تَخْرُجُ الْفِتْنَةُ وَفِيهِمْ تَعُودُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان
অর্থ: হযরতে ইমামে ’আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শীঘ্রই মানুষের ওপর এমন এক যুগ আসবে, যখন শুধু নাম ছাড়া ইসলাম ধর্মের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না; সেদিন কুরআনের অক্ষরই শুধু অবশিষ্ট থাকবে। তাদের মাসজিদগুলো তো বাহ্যিকভাবে আবাদ হতে থাকবে, কিন্তু হিদায়াতশূন্য থাকবে। তাদের আলেম-উলামা হবে আকাশের নিচে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক; তাদের কাছ থেকেই (দীনের মধ্যে) ফিতনাহ্-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। অতঃপর এ ফিতনাহ্ তাদের দিকেই ফিরে আসবে।
সারমর্ম: উক্ত ফিতনার যুগে বড় বড় জাঁকজমকপূর্ণ মসজিদ নির্মাণ হবে, আর তাতে মুসল্লিরও সমাগম হবে যার দরুন আবাদ হতে থাকবে। কিন্তু তা (মানে মসজিদ) হবে হেদায়াতশূন্য, মানে গোমরাহীপূর্ণ। হেদায়াতের আলো না থাকলে গোমরাহীর অন্ধকার বিরাজ করবে। ওই সময় ধর্মীয় পদে সমাসীন আলেম-উলামাই ফিতনার জন্ম দেবে। ইমাম বায়হাকী (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর বর্ণিত এ হাদীসটিকে সালাফী/ওহাবী গোষ্ঠী ‘যয়ীফ’ বা দুর্বল বলে দাবি করে থাকে। এটা তারা করবেই, কেননা হাদীসের বিষয়বস্তু যে তারা নিজেরাই!

শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪

Reply to Minhajul Qur'an Bangladesh Wing

 - Admin


This is an image of the book 'Mawlid: Celebrations and Permissibility's copyright-related page, which was posted on Facebook by one of the Bangladesh wing's members: 



 My reply in separate Facebook comments:


For whom the bell tolls (it tolls for thee): What legal action has been taken against my translation of the said book (Mawlid 1st part) that was published in 2019? Copies of the translation were sent to the author in Canada and he didn't object to those. My name as the translator is engraved on that book! Henceforth, you have no moral or legal ground left to stand on for enforcing restrictions now - after so long a time since then. Secondly, the PDF is a non-profit publication, which conforms with the Islamic spirit. Your coming here and posting a JPG photo only reveals the jealousy and meanness of the Bangladesh wing. So, go ahead, do what you want to do! I am not afraid of you, the worthless publishers! Your standard in the realm of publication stinks! The Dr. sahib in Canada is not aware of this debacle, I am absolutely sure! If only he knew the truth!


I am ready to take you on in court! Damning evidences!


If you publish your mediocre and stinking translation of the book, and if I find plagiarism in it (i.e. copying from my sublime translation), then I shall take you to court, this is my solemn word! Since my translation came out first, I shall have the legal ground to initiate litigation against your cotton-picking, BS translation! Copyright laws will favor me, the first translator, whose book has been published. I have gone through the Copyright Acts of 2023. Lodging of only one complaint with the Copyright office will be enough to cancel your entire publication in the twinkling of an eye! For whom the bell tolls, it tolls for thee!


The Copyright office would give a hearing, and I would provide the name of Mawlana Tayyib Chowdhury as witness. He would then be summoned to bear witness to the fact that I was the translator, and also that I didn't give him any royalty in exchange for money (meaning no such document is in his possession). Henceforth, I, the translator of the book, would be deemed as the rightful copyright owner. The mawlana would also have to testify to the fact that the Canadian Dr sahib gave him permission (i.e. producing the letter of permission at the hearing would be mandatory). The Bangladesh wing would be in dire staits considering the fact that our government hasn't granted them any registration as an affiliate to a foreign organisation!


Mawlana Tayyib Choudhury's publishing house - Sanjery Publication - didn't require an ISBN number since his company is registered with the government's concerned authority/department. But as regards the Bangladesh wing its registration is a suspect.







শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪

হযরত যায়দ (রা.)’কে ‘মওলা’ সম্বোধনবিষয়ক হাদীস

 

- এডমিন
উক্ত হাদীসটি সম্প্রতি আমার ফেইসবুকের টাইমলাইনে একটি পোষ্টে উদ্ধৃত হয়েছে। অতঃপর জনৈক সুন্নী-ছদ্মবেশী শিয়াপক্ষীয় ব্যক্তি আমার মন্তব্য ফোরামে এসে তওহীদ পাবলিকেশন ও আধুনিক প্রকাশনীর অনলাইন হাদীস সংকলনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, আল-বুখারী (রহ.)-এর বর্ণিত হাদীসটির বাংলা ভাষান্তর করা হয়েছে “আযাদকৃত গোলাম।” এমতাবস্থায় আমি একই ওয়েবসাইট (হাদীসবিডি.কম)-এর ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ গ্রন্থের মধ্যে একযোগে সর্ব-হযরত বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-এর বর্ণিত একই হাদীসের এবারত/উদ্ধৃতি যাচাই করলাম। কী আশ্চর্য! তাতে বাংলা ভাষান্তর পাওয়া গেলো “প্রিয়ভাজন (বন্ধু)” [দেখুন লিঙ্ক - https://www.hadithbd.net/hadith/link/?id=68704... ]
আমি জানি তওহীদ পাবলিকেশন ও আধুনিক প্রকাশনী ভ্রান্ত সালাফী/মওদূদীবাদী গোষ্ঠীর প্রকাশনা সংস্থা, যাদের সাথে শিয়া গোমরাহদের এ ব্যাপারে মতবাদগত মিল রয়েছে। তারা হাদীসটি অনুবাদে বিকৃতি সাধন করবেই। তাই আমি আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটগুলো চেক/যাচাই করা আরম্ভ করি। সুন্নী একটি সাইটে পাওয়া গেলো একখানা লেখা যার উদ্ধৃতি নিম্নরূপ: শিয়া অপযুক্তি নং ৩ - প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ছাড়াও অন্য কাউকে ‘মওলা’ শব্দটি দ্বারা সম্বোধন করেছেন? সুন্নীদের উত্তর: হ্যাঁ, অন্যদের ক্ষেত্রেও তা করেছেন। অতঃপর দুটি উদাহরণ এতে পেশ করা হয়েছে যার একটি - وقال لزيد: أنت أخونا ومولانا - অর্থ: “তুমি (যায়দ) আমাদের ভাই ও আমাদের মওলা।” [দেখুন সাইট লিঙ্ক: https://youpuncturedtheark.wordpress.com/.../the.../... ]।
অতঃপর ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ গ্রন্থের উক্ত ৩৩৭৭ নং হাদীসের উর্দূ অনুবাদ আরেকটি সাইটে পেলাম। তাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে - تم ہمارے بھائی اور ہمارے چہیتے ہو - বাংলা অর্থ (গুগল): তুমি আমাদের ভাই ও আমাদের প্রিয়ভাজন (বন্ধু)। [দেখুন সাইট লিঙ্ক: https://www.socioon.com/.../mishkat-al.../hadees-no-3377 ]
অতএব, আমরা সুন্নীরা আমাদের বক্তব্যে অটল, অবিচল। সবাইকে হাদীস বিকৃতির ব্যাপারে সতর্ক করছি। হাদীসবিডি-ডট-কম সাইট কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় একই হাদীসের তরজমা দু রকম কেন? সংশ্লিষ্টরা জবাব দেবেন কি?

ভুল অনুবাদ

আন্তর্জাতিক সালাফীদের হাদীসের ইংরেজি সাইট ‘সুন্নাহ-ডট-কম।’ তারা মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৩৭৭ নং হাদীসে ‘মওলা’ শব্দটির অনুবাদ করেছে - Client - যা আমেরিকান চেইমবার্স ডিকশানারীতে অর্থ করা হয়েছে - Dependent (পালক/পোষ্য) শব্দ দ্বারা। হাদীসবিডি-ডট-কম এই ইংরেজি সালাফী সাইটকেই অনুসরণ করে, কিন্তু এখানে তারা অনুবাদে মারাত্মক ভুল করেছে! দেখুন ইংরেজি সংস্করণ - https://sunnah.com/mishkat:3377

হাদীসের বিকৃতি

হযরত যায়দ (রা.)-এর প্রতি ‘মওলা’ শব্দের প্রায়োগিক অর্থ বুঝতে হলে হাদীসটির ভাব, অর্থাৎ, কী বোঝানো হয়েছে তা অনুধাবন করতে হবে। তাই হাদীসটি উদ্ধৃত করছি - “অতঃপর ঐ কন্যার লালন-পালনে ’আলী , যায়দ ও জা’ফার - এই তিনজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিল। ’আলী বললেন, আমিই তাকে প্রথম উঠিয়েছি এবং সে আমার চাচাত বোন। জা’ফার বললেন, সে তো আমারও চাচাত বোন এবং তার খালা আমার সহধর্মিণী। যায়দ বললেন, সে তো আমার ভাতিজি। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালার পক্ষে রায় দিয়ে বললেন, খালা মাতৃসম। অতঃপর ’আলীকে বললেন, তুমি আমার, আমি তোমার (আপনজন)। জা’ফারকে বললেন, তুমি আমার শারীরিক গঠন ও চারিত্রিক গুণের সাদৃশ্যের অধিকারী। আর যায়দকে বললেন, তুমি আমারই ভাই, আমাদের প্রিয়তম।” প্রিয়নবী (ﷺ) তিনজনকেই সান্ত্বনাসূচক প্রশংসাপূর্ণ কথা বলেছিলেন। অতএব, সালাফীদের অনূদিত ‘আযাদকৃত গোলাম’ কথাটি হাদীসের ভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেননা তা গ্লানিকর। দেখুন হাদীসের বিকৃতির লিঙ্ক: https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=26838&fbclid=IwZXh0bgNhZW0CMTAAAR1pTkBHMBz-kqPtmZgaLHF5V46XvDp7Iilz2n8DTS3gJlLshGY4vvLklaI_aem_jN2kyeWe6fJ80sUPsx_jGg 


*সমাপ্ত*