মূল: এনায়াতুল্লাহ চিশতী চাকরালোভি [ সাইয়েদ আহমেদ ব্রেলভির সিলসিলাভুক্ত]
অনুবাদ: মুহাম্মাদ এ কে আজাদ আল কাদেরী
বিসমিল্লাহির্ রহমানির্ রহীম
ইতিহাস গবেষণার ক্ষেত্রে একটি অত্যাবশ্যক বিষয় সর্বদা মাথায় রাখা জরুরি। তা হলো, এতদসংক্রান্ত গবেষণার সময় আমাদের বুজূর্গবৃন্দ আলোচনায় উঠে আসতে পারেন; আর এমনও হতে পারে যে তাঁদের সম্পর্কে আমাদের লালিত ইতিপূর্বেকার কিছু সু-ধারণা ঐতিহাসিক দলীলাদির পরিপন্থী প্রমাণিত হতে পারে; এবং তা এমন সিদ্ধান্তে (আমাদেরকে) উপনীত করে যে, না, বিষয়টি সে রকম ছিলো না, এ রকম ছিলো। কখনো কখনো এমনও হতে পারে যে, কোনো একজন বুজর্গ সম্বন্ধে পূর্বলালিত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। শুদ্ধ গবেষণার প্রানশক্তি-ই হলো এই যে, যদি ঘটনাবলী এর (পূর্বলালিত সিদ্ধান্তের) পরিপন্থী হয়, তাহলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত বদলে দেবো। আমরা যদি এর জন্য প্রস্তুত না থাকি, তাহলে ইতিহাস-অনুসন্ধান ও গবেষণা থেকে কোনো উপকারই পাওয়া যাবে না।
আজ যেহেতু অতীতের প্রশংসা করা সকল ঐতিহাসিকেরই অভীষ্ট লক্ষ, সেখানে পরলোকগত বুজুর্গদের ত্রুটিসমূহের আলোচনা করা তাদের বর্তমান সময়ের অনুসারীদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মকে অতীতের ওই সকল ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন করা অত্যাবশ্যক, যে ভ্রান্তিসমুহের জন্যে মুসলিম উম্মাহকে গ্লানিকর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এটি এ জন্যেও অত্যাবশ্যক যেনো ভবিষ্যতকে নির্মাণের সময় ওই ত্রুটিসমূহ পরিহার করা যায়। কারন বর্তমান হলো অতীতের পরিণতি ও ভবিষ্যতের বীজকণা। আজ বুজূর্গদের কর্মাবলীর আবেক্ষণ তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্যে নয়, বরং অতীতের আয়নায় ভবিষ্যতের জন্যে সংশোধিত কার্যাদি সম্পাদনের দৃঢ়সংকল্প গ্রহণের খাতিরে জরুরি।
এই পুস্তকে আমি ইংরেজ-শাসনাধীন ভারতবর্ষের বিখ্যাত ওয়াহহাবী আন্দোলনের জনক সাইয়েদ আহমেদ ব্রেলভী সাহেবের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ ইতিহাসের আলোকে মূল্যায়ন করেছি। যদি আমার এই মুল্যায়ন কারো আবেগে আঘাত করে, তাহলে এতে আমার কোনো কসুর নেই। কারণ আমার তাহকীকের ভিত্তি হলো ইতিহাস। তাই আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া নিরর্থক।
ইংরেজ শাসনামলে জনাব সাইয়েদ আহমেদ ব্রেলভী সাহেবের আন্দোলন আপন ও পর সকলের কাছে “ওয়াহহাবী আন্দোলন” নামে প্রসিদ্ধ ছিল। এই আন্দোলন “ওয়াহহাবী আন্দোলন” নামে কেন প্রসিদ্ধ ছিল, তার কারণ সাইয়েদ আহমেদ ব্রেলভী সাহেবের একজন মস্ত সমর্থক সি, এস, পী, শাইখ মুহাম্মাদ আকরাম সাহেবের মুখ থেকে শুনুন:
“জনাব সাইয়েদ আহমেদ ব্রেলভী যখন হজ্ব করার উদ্দেশ্যে মক্কা মোয়াজ্জামা গমন করেন, তখন সেখানে ওয়াহহাবী আকায়েদ-এর সঙ্গে তিনি পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। এই ওয়াহহাবী আকায়েদ তার হজ্বে গমনের বেশ কয়েক বছর পূর্ব থেকেই সেখানে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সাইয়েদ সাহেব এবং ওয়াহহাবীদের উদ্দেশ্যাবলীর মধ্যে বহু মিল ছিল। এজন্য তার কিছু সঙ্গী ওয়াহহাবী আকায়েদ-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে এবং ওয়াহহাবী মতাদর্শের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাকলীদে শাখসি্’কে (তথা মুজতাহিদ ইমামের অনুসরণকে) বর্জন করে।
(নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে)
আগামীর অপেক্ষায় রইলাম ।।
উত্তরমুছুন