ওহাবী/সালাফী বাতেলপন্থীরা দাবি করে থাকে যে তারা বুখারী শরীফের সহীহ হাদীস মানে। তাদের জন্যে ‘সহীহ’ তথ্য এখানে পরিবেশন করা হলো। ওই হাদীসগ্রন্থের ‘মহানবী (দ:) ও তাঁর সাহাবাবৃন্দের (রা:) মাহাত্ম্য ও গুণাবলী’ শীর্ষক অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ মা হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ (রা:)-এর ভাষ্যানুযায়ী জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (দ:) তাঁর পবিত্র চেহারায় শঙ্কার ভাবসহ তাঁর কাছে এসে বলেন: “আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বূদ/উপাস্য নেই। দুঃখ আরবদের জন্যে, আসন্ন মন্দ (খারাবী) হতে। আজ এয়া’জূজ ও মা’জূজের দেয়ালে এতো বড় একখানা ছিদ্র সংঘটিত হয়েছে।” এই সময় তিনি দুটি আঙ্গুল দ্বারা গোলাকৃতি করে তা দেখাচ্ছিলেন। মা হযরত যাইনাব (রা:) বলেন, “এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমাদের (আরবদের) কি বিনাশ হবে, যদিও আমাদের মাঝে বিরাজ করেন পুণ্যাত্মাবৃন্দ?” তিনি উত্তর দেন, “হ্যাঁ, যখন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে খাবাস্ তথা মন্দ লোক” (আহলে খবীস!)। এ হাদীসে পরিস্ফুট হয়, আরব জাতির মাঝে মন্দ লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খোদায়ী গযব/আযাব তাদের ওপর নেমে আসবে। আমরা ইতিহাস থেকে জানি, ইসলামের শত্রুরা আরব রাজ্যের ওপর ১৭০০ খৃষ্টাব্দের আগে তাদের থাবা ব্যাপকভাবে বিস্তার করতে পারেনি। মধ্যযুগে তাদের পরিচালিত সব আক্রমণই যোগ্য মুসলমান শাসকবৃন্দ প্রতিহত করেছিলেন। কিন্তু ১৭৫০ সালে মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল ওয়াহহাব তার বাতেল ওহাবী মতবাদ বৃটিশ গুপ্তচর হামফেরের উস্কানিতে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে। অতঃপর ১৭৫৭ সালে পলাশীতে উপমহাদেশের স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাহ’র পতন ঘটে। টিপু সুলতানও ১৭০০ খৃষ্টাব্দের শেষে অস্তমিত হন। উসমানীয় তুর্কী শাসনও পতনশীল হয়। এই ১৭০০ খৃষ্টাব্দের আগে মোঙ্গল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণ হয়েছিলো ঠিক, কিন্তু মুসলমান শাসকবৃন্দ তাদেরকে রুখে দিয়েছিলেন। সালাফী-ওহাবীরা যাঁদেরকে ‘শেরেকী/বেদআতী দল’ বলে অপপ্রচার চালায়, সেই হক্বপন্থী সুন্নী বীর সুশাসকদের আমলে হাদীসে উক্ত ওই মন্দ ব্যাপকভাবে চেপে বসতে পারেনি। আজকে যখন ওহাবী/সালাফীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে, মূল আরব ও মুসলমান দেশগুলোতে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাসগত উল্টাপাল্টা ফতোয়াবাজি চলছে, আর মন্দ (আহলে খবীস) লোকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন সারা মুসলিম জাতির ওপর কলঙ্কের বোঝা এসে চেপেছে। মহানবী (দ:) হাদীসটিতে ‘আরবদের’ কথা বল্লেও অনারব মুসলমানদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন হবে। কেননা ধর্মমতে আমরা রাসূল (দ:) ও সাহাবাবৃন্দের (রা:) অনুসারী। আমরা অনারব মুসলমান সাধারণ তাঁদের থেকে (ধর্মমতে) কোনোক্রমেই আলাদা নই। অতএব, আরবদের ওপর যে বালা-মসীবত এসে পড়বে, তা আমাদেরও ছুঁয়ে যাবে! নিচে হাদীসের মূল লিপি দেয়া হলো -
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ حَدَّثَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ زَيْنَبَ ابْنَةَ أَبِي سَلَمَةَ، حَدَّثَتْهُ أَنَّ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ حَدَّثَتْهَا عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعًا يَقُولُ " لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ، فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذَا ". وَحَلَّقَ بِإِصْبَعِهِ وَبِالَّتِي تَلِيهَا، فَقَالَتْ زَيْنَبُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ قَالَ " نَعَمْ، إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ ".
(كتاب المناقب)
(كتاب المناقب)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন