ব্লগ সংরক্ষাণাগার

মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১৮

স্পেনের মুসলিম সভ্যতা।


=============== ইমরান বিন বদরী
ইসলামের সৌন্দর্য ও কল্যাণে আকৃষ্ট হয়ে সাহারা মরুভূমি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের যে জোয়ার ওঠে সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিলো ইউরোপের মাটিতেও৷৮ম শতাব্দীতে স্পেনে কায়েম হয় মুসলিম শাসন৷মুসলমানদের নিরলস প্রচেষ্টায় স্পেন জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে৷ দীর্ঘ সাতশত আশি বছর মুসলিম শাসন অব্যাহত থাকে স্পেনে৷ মুসলিম ইতিহাসের দীপ্তিময় এক বিজয় পরবর্তী করুণ এক ইতিহাসের সাক্ষী আইবেরীয় অঞ্চলের রক্তমাখা এ স্পেনের মাটি। আজো যেন সেই ক্রন্দনরত মুসলমানদের করুণ অশ্রু আকাশ থেকে নিরবে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে এ মাটিতে। আরব ভূখণ্ডে আমার নূর নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসলামের সেই আলো যখন পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত হতে শুরু করছে, তখন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উত্তরে প্রসার করতেও দেরী করেননি। তৎকালীন সময়ে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব পাড়ের ন্যায় পশ্চিমাংশেও মুসলমানদের আওতাধীন হয়েছিল।
আজ বলছি ভূমধ্যসাগরের পশ্চিমাংশে ইউরোপে মুসলমানদের প্রবেশ এবং স্পেন বিজয়ের ঐতিহাসিক ঘটনা। সেই সময় হজরত মুসা বিন নূসাইর ( موسى بن نصير) ছিলেন উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের অধীনস্থ একজন গভর্নর ও সেনাপতি। তিনি উত্তর আফ্রিকার মুসলিম প্রদেশ শাসন করাবস্থায় মুসলিমরা হিস্পানিয়ার (যদিওবা স্প্যানিশরা H অক্ষরটি অনুচ্চারিত রেখে ইস্পানিয়া উচ্চারণ করে থাকেন) তথা ( স্পেন, পর্তুগাল, আন্ডোরা ও ফ্রান্সের অংশবিশেষ ) জয়ের সময় অভিযানে নির্দেশনা দেন। এছাড়া আরেক বীর হজরত তারিক বিন জিয়াদের (طارق بن زياد ) অক্লান্ত পরিশ্রমে বিজয় হয়েছিলো ইউরোপের ইবেরীয় অঞ্চলটি। হযরত তারিক বিন জিয়াদ ছিলেন ৭১১ থেকে ৭১৮ সাল পর্যন্ত ভিসিগোথ শাসিত হিস্পানিয়ায় মুসলিম বিজয় অভিযানের একজন সেনানায়ক। গোথ জাতীরা মূলত জার্মানি ছিলো। এই গোথরা ইহুদী প্রেমী ছিল বলে জনসম্মুখে শোনা যায়। সেই সময় ইস্পানিয়ার ভিসিগোথ রাজা ছিলেন রডারিক। তৎকালীন সময়ে ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেনা কমান্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই তারিক বিন জিয়াদকে। উমাইয়া খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের আদেশে তিনি একটি বিরাট বাহিনীকে মরক্কোর উত্তর উপকূল থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জিব্রাল্টারে তিনি তার সৈন্যসমাবেশ করেছিলেন। আজকের জিব্রাল্টার নামটি আরবি জাবাল তারিক থেকে উৎপন্ন হয়েছে যার অর্থ "তারিকের পাহাড়"। তারিক বিন জিয়াদের নামে এটির নামকরণ হয়েছিল। তখন থেকে ইবেরিয় উপদ্বীপে ‘ইসলাম’ নামে নতুন এক শান্তির ধর্মের সাথে পরিচিত হয়। উপদ্বীপ বললাম এ অঞ্চলটির তিনদিকে সাগর বেষ্টিত বলে।
বর্তমান ইউরোপের প্রবেশদ্বার জিব্রাল্টার (যেটা ইংল্যান্ড এর একটি অঞ্চল) থেকে কর্ডোবা, গ্রানাডা, মালাগা, আলমেরিয়া, সারাগোসা, টারাগোনা, বার্সেলোনা, তলেডো যা একসময়কার রাজধানী বর্তমান রাজধানী মাদ্রিদের নিকটবর্তী শহর এবং পিরেনিজ পর্বতমালা পর্যন্ত গোটা স্পেন ছিলো মুসলমানদের বিজিত। আর সে সময়ে আন্দালুসিয়ার কর্ডোবা ছিলো সবগুলির প্রাণকেন্দ্র।
৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানরা স্পেন আক্রমণের ২ থেকে ৩ শ বছরের মধ্যেই স্পেনের প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশী মানুষ ছিল মুসলিম হয়েছিলো যা সংখ্যায় ৫০ লক্ষেরও বেশী। যাদের বেশীরভাগই স্পেনের স্থানীয় অধিবাসী ছিলো।
উল্লেখ্য এ বিজয়ের পিছনে তারিক বিন জিয়াদের এক ঐতিহাসিক ভাষণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলো। কারণ জিব্রাল্টারে পৌঁছে সমস্ত নৌকা জাহাজ আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল তিনি। সে সময় একজন জিজ্ঞেস করে আপনি যে সব পুড়িয়ে দিলেন আমরা ফিরবো কিভাবে? উত্তরে তারিক বলেন, আমরা ফিরে যেতে আসিনি। হয় বিজয় অন্যথায় ধ্বংস নিশ্চিত। এরপর তাদের উদ্দেশ্যে তিনি ভাষণ দেন। আসুন তেজস্বীকর সেই ভাষণটি কেমন ছিলো একবার চোখ বুলিয়ে নিই।
স্পেনকে উমাইয়া শাসকের শেষ সেনাপতি হযরত বীর মুজাহিদ তারিক বিন জিয়াদ ভূমধ্যসাগরের উপকূলে আজকের জিব্রালটারে তার ঐতিহাসিক বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলমানদের উজ্জিবীত করে বিজয় করেছিলেন। তিনি বক্তব্যে বলেছিলেন,
❶ ''হে আমার সহ যোদ্ধারা ! আমরা ইউরোপের বুক থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি, হয় খ্রিস্টান রাজা রডারিক ও আধুনিক অস্ত্রে সস্ত্রে সুসজ্জিত তার এক লাখেরও অধিক সৈন্য বাহিনীর সাথে জিহাদ করে এই ভূখণ্ডে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করব আর না হয় জিহাদ করতে করতে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আমাদের পূর্বসূরিদের সাথে গিয়ে মিলিত হব বিকল্প কোন পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।
❷ ''হে বাহাদুর যুবক ভাইয়েরা! এখন পিছু হটবার ও পলায়ন করার আর কোন সুযোগ অবশিষ্ট নেই পিছনে অপেক্ষমান ক্ষুধার্ত ও উত্তাল সমুদ্র, সামনে দুর্ধর্ষ শত্রু সৈন্যদল সুতরাং এখন তোমাদেরকে ধৈর্য-হিম্মত ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করে আহকামুল হাকিমিনের রহমতের দিকে তাকিয়ে ইসলামের বিজয় নিশানা উড্ডীন করার লক্ষে বুজদিল পরিত্যাগ করে দুশমনের সাথে মুকাবিলা করতে হবে এবং ইসলামি তাহযীব-তামাদ্দুনকে ইউরোপের বুকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে হবে শাহাদাতের তামান্নায়।
❸ ''হে আল্লাহর রাহের সৈনিকরা! অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখ আমি তোমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি যে পথে সে পথের যাত্রী সর্বপ্রথম আমিই হব। লড়াইয়ের মাঝে দুশমনের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আমার তলোয়ারই কোষ মুক্ত হবে। আমি যদি জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়ে যাই তাহলে তোমরা ধীশক্তিসম্পন্ন বুদ্ধিমান অন্য কোন যোগ্য ব্যক্তিকে তোমাদের সিপাহসালার বানিয়ে নেবে কিন্তু আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গে বিমুখ হবে না তবেই বিজয় তোমাদের পদচুম্বন করবে… ।
তার দীর্ঘ এই ভাষন দিয়ে শুরু হল স্পেনের বুকে ইসলামী শাসনের সোনালি অধ্যায়।

ইতিপূর্বে আলোচনা করেছিলাম স্পেনে মুসলিমদের বিজয়ের গৌরবগাথাপূর্ণ ইতিহাস। আজ সেই সোনালী দিনের অন্ধকার কেন নেমে এসেছিল তাই আলোচনার বিষয়।
সেই গৌরবগাথা স্পেনের মুসলমানেরা পরবর্তীতে ইসলামের আদর্শ থেকে বিমূখ হয়ে পার্থিব লালসায় লিপ্ত হয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে ভুলে যায় কুরআন সুন্নাহর প্রকৃত শিক্ষা । এদিকে স্পেনের ভিতরেও উচ্চাভিলাষী মুসলমানদের মাঝে পচন ধরার প্রাথমিক সূত্রগুলো তৈরি হচ্ছিল ধীরগতিতে । ধার্মিকতার অবক্ষয়ে সমাজের নেতৃস্থানীয় পর্যায় থেকে সামাজিক ও রাজনৈতিক বোধ এবং সচেতনতাবোধও ধীরে ধীরে হারাতে বসেছিলো। বিভাজনের কালোথাবা তাদের চারিদিকে ঘিরে আসতে শুরু করেছিলো । অন্যদিকে তৎকালীন ইউরোপের আকাশে স্পেনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রোশ দিনদিন ফুঁসে উঠে ভয়াবহতায়। স্পেনের মুসলমানদের সামাজিক সংহতি ভঙ্গুরে খ্রিস্টান গোয়েন্দারা ইসলাম ধর্ম শিখে আলেমের লেবাস ধরে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতিও নাকি করেছে । মূলত তাদের কাজ ছিলো স্পেনের মুসলমান সমাজ জীবনকে অস্থিতিশীল করে তোলা।
১৪৬৯ সালে রাজা ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা স্পেনে মুসলিম সভ্যতার অস্তিত্বকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য পরস্পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৪৮৩ সালে রাজা ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী পাঠান মালাগা অঞ্চলে । যাদের প্রতি হুকুম ছিল শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেয়া, সমৃদ্ধিশালী গ্রামগুলি ধ্বংস করে দেয়া এবং গবাদিপশুগুলিকে তুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। মোটামুটি ঐ অঞ্চলের মানুষদেরকে অতিষ্ঠ করে তোলাই ছিলো উদ্দেশ্য । এভাবে স্পেনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুসলমানদেরকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে রাখেন।
যে স্পেন মুসলিম শাসনের আলোতে প্রায় ৭ শত বছরের অধিক সময় আলোকিত হয়েছিলো সেই স্পেনকে মুসলিম মুক্ত করার উদ্দশ্যে ১৪৯১ সালের দিকে গ্রানাডার মুসলমানদের সাথে আত্মসমর্পণের একটি শর্ত চুক্তিনামা নির্ধারিত হলো। শর্তে ধোঁকাবাজরা বলেছিলো:
১) ছোট-বড় সব মুসলমানের জীবনের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে।
২) তাদের মুক্তভাবে ধর্ম-কর্ম করতে দেয়া হবে।
৩) মুসলমানদের মসজিদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলা অক্ষত থাকবে।
৪) আচার-ব্যবহার, রাজনীতি, ভাষা ও পোশাক-পরিচ্ছদ সবি অব্যাহত থাকবে।
৫) তাদের নিজেদের আইনকানুন অনুযায়ী তাদের প্রশাসকরা তাদের শাসন করবেন ..ইত্যাদি।
কিন্তু তাদের সূক্ষ পরিকল্পনা বুঝতে পেরে আত্মসমর্পণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন তখনকার সাচ্চা মুসলিম মুসা বিন আকিল। তিনি অসহায় গ্রানাডীয়দের বললেন, হে গ্রানাডাবাসী! এটা কোন চুক্তি নয়, এটা একটা সূক্ষ প্রতারণা। মুসলমান জাতীকে ধ্বংস করার পায়তারা করা হচ্ছে। আমাদের ভুমি আমাদের সমাজ আমাদের রাষ্ট্র আমাদের কেন চুক্তিনামা করতে হবে ! এ চুক্তিনামা আমাদের অঙ্গারে পরিণত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রজ্জলিত আগুনের জ্বালানি কাঠ হতে তোমরা এ অঙ্গীকারনামা ভুলেও করতে যেয়েওনা। সুতরাং এসো প্রতিরোধ ! আর প্রতিরোধ গড়ে তুলি এই জালিমদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু না, কোণঠাসা হয়ে আসা মুসলমানদের গ্রানাডার দিন প্রায় শেষপর্যায়ে এসে উপস্থিত হয়েছিল। ১৪৯২ সালে অপারগতায় সমৃদ্ধিশীল এই মুসলিম গ্রানাডাবাসী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্যহলো।
পরবর্তীতে চক্রান্তের এই চুক্তি গ্রানাডীয় মুসলমানদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ডাইনি রানী ইসাবেলা ও ফার্ডিনান্ড তাদের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার নিমিত্তে একেরপর এক তাদের মধ্যে করা চুক্তি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা শুরু করেদিলো। চতুর্দিকে শুরু হলো মুসলিম নিপীড়ন যা পরবর্তীতে ভয়াবহ রূপধারণ করেছিলো। গনহারে মানবহত্যা আর সীমাহীন বর্বরতার নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে থাকলেন অসংখ্য মুসলমান। এমন পরিস্থিতি এসে দাঁড়ালো যে স্পেনের প্রতিটা গ্রাম যেন মুসলিম হত্যার মহড়া চলছে। প্রাণরক্ষার্থে যেসব মানুষ পর্বতগুহায় আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরও সেখানে শেষরক্ষা হয়নি।
তৎকালীন রাজা ফার্ডিনান্ড তার হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকল্পে ঘোষণা করলেন যে, যেসব মুসলমান গ্রানাডার মসজিদগুলোতে আশ্রয় নেবে, তারা সেখানে নিরাপদ থাকবে এবং তাদের প্রতি কোন নির্যাতন নিপীড়ন করা হবেনা। এই মিথ্যেবাদীর এমন ঘোষণা শুনে অগত্যা লক্ষ লক্ষ মুসলমান আশ্রয় নিলেন মসজিদগুলোতে। আফসোস! সেদিন বোকা মুসলিম জাতীকে হিংস্র ফার্ডিনান্ডের লোকেরা সবগুলো মসজিদে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মেরেছিলো। দিনটি ছিলো ১৪৯২ সালের ১লা এপ্রিল। মানবহত্যার এই মহা উৎসব নাকি তিনদিন তিনরাত চলেছিল।
এই নির্মম গণহত্যার পরও যেসব মুসলমান ভাগ্যক্রমে আন্দালুসিয়ায় রয়ে গিয়েছিলেন, বিশেষ করে নারী এবং অসহায় শিশুদের সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় সমুদ্রপথে নির্বাসিত করেন। সেদিন ভূমধ্যসাগরের পশ্চিমাংশে বাচার চেষ্টায় নিরপরাধ মানবজাতির কান্নাকাটিতে আকাশ ভারী হয়ে গিয়েছিল। আজো সেইসব মানুষের বেদনাঅশ্রু আন্দালুসিয়ার জমিনে বৃষ্টির পানি হয়ে জড়ে পড়ে। সাগরে নির্বাসিত মানুষের সংখ্যাও ছিলো নাকি অনেক। ইতিহাসের করুণ লিখনিতে যানা যায় , তাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক লোকই জীবিত ছিলেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ সমুদ্রের গহিন অতলে হারিয়ে যায়। এভাবেই মুসলমানরা ইউরোপের পশ্চিমাংশে স্পেনের আন্দালুসিয়াকে রাজধানী করে আধুনিক স্পেনের জন্ম দিয়েও আজ মুসলিম ইতিহাসের দুঃখ হয়ে বেঁচে আছে। আন্দালুসিয়ার নির্মম এ ট্র্যাজেডির কথা লিখতে খুবী কষ্টবোধ অনুভব করি। তবুও যে একজন মুসলিম হিসেবে মুসলমানদের এই করুণ পরিণতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া চাই। আজকের এই স্পেন আজো মুসলিম উম্মাহর কাছে শোকের স্মারক হয়ে রয়েছেন। সে সময়কার মুসলমানরা যদি ইসলামের প্রকৃত পাবন্দী হয়ে নিজেরা আন্ত‍ঃকোন্দলে না জড়িয়ে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতো আজকের এ ইউরোপ হয়তো এখনকার মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হতো।
আফসোস! সেসময় মর্মান্তিকভাবে মসজিদে জীবন্ত দগ্ধ আর ভূমধ্যসাগরে নিক্ষেপিত নির্মমতার স্বীকার হয়ে অগনিত নিরহ মুসলিম হত্যার মধ্যদিয়ে সমাপ্তি হয়েছিলো স্পেনে মুসলমানদের স্বর্ণালী যুগের ইতিহাস। 

                               *সমাপ্ত*


ছবি পরিচিতি: মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য স্পেনের আন্দালুসিয়া প্রদেশের কর্ডোবার সেই ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। যাকে স্প্যানিশ ভাষায় Mezquita Catedral de Cordoba বলা হয়। অর্থাৎ এটি এখন মসজিদ এবং গির্জা উভয়টি। যদিওবা বর্তমানে এখানে কোন উপাসনালয় নেই।
সেখানকার বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকরে যতটুকু জেনেছি যে স্পেনে মুসলিম সভ্যতার পূর্বেকার সময়ে বর্তমান এই মসজিদের পাশে ছোট একটা গির্জা ছিলো। মুসলিম শাসনামলে ঐ গির্জার পাশেই বিশালায়তনে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যেটি স্পেনে প্রায় ৭৫০ বছরের মুসলিম শাসনামলে মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। পরিতাপের বিষয় তৎকালীন মুসলমানদের দূরদর্শীতার ঘাটতি থাকায় মুসলমানদের স্পেনের মাটিতে করুণ পরাজয় হয়েছিলো।
সেই পরাজয়ের পর থেকে এই মসজিদে আর নামাজিরা সালাত আদায় করতে পারেনি। মসজিদকে তাদের উপাসনালয় "কাতেদ্রাল" এ রূপান্তরিত করা হয়। তবে বর্তমানে এখানে মুসলিম খ্রিষ্টান কেউ উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেননা। এটি এখন সম্পূর্ণ টুরিস্ট স্পট। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এখানে প্রবেশ করছেন।












কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন