ব্লগ সংরক্ষাণাগার
বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫
মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের পক্ষে ইসলামের সত্যপন্থী চার খলীফা (রা.)-এর বক্তব্য
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫
*সুন্নী ছদ্মবেশী শিয়া মৌ-লোভীদের প্রতি প্রশ্ন*
ic
পাকিস্তানী দেওবন্দী ঘরানার আলেম মওলানা মুহাম্মদ নাফেঈ তাঁর ‘রুহামা’ বাইনাহুম’ গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডে ‘আমীরে মুয়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর প্রতি অভিযোগ ও তার খণ্ডন’ অধ্যায়ে লেখেন:
ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বক্তব্য
শিয়াদের প্রাথমিক তাফদিলি ঐতিহাসিকদের অন্যতম আহমদ ইবনে আবী দাউদ আল-দিনাওয়ারী আশ্-শিয়া (মৃত্যু: ২৮২ হিজরী) তাঁর বিখ্যাত ‘আল-আখবার আত্-তিওয়াল’ গ্রন্থে সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’-এর কাছে সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাই’আতকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। পাঠকদের সুবিধার্থে আমরা সাইয়্যিদুনা হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাই’আত ছাড়াও এটা পেশ করবো, যাতে এই বিষয়ে দুই ভাইয়ের মতামত স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
আল-দীনাওয়ারি লিখেছেন যে হুজর্ ইবনে আদী নামে এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর একনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যে ছিলো। সাইয়্যিদুনা হাসান এবং সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মধ্যে সন্ধিচুক্তির পরে সে শেষোক্ত জনের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিলো। কিন্তু তাকে হতাশ হতে হয়, কেননা সাইয়্যিদুনা হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। এরপর সে সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যুদ্ধে প্ররোচিত করতে চায়।
فقال: الحسين إنا قد بايعنا وعاهدنا ولا سبيل إلى نقض بيعتنا.
অর্থ: অতঃপর হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) উত্তর দিলেন, "আমরা বাই’য়াত তথা আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি এবং সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি। আর তাই আমাদের আনুগত্য ভঙ্গ করার কোনো পথ/উপায় নেই।" [আল-আখবার আত্-তিওয়াল, পৃষ্ঠা-২২০, মুয়াবিয়া এবং জিয়াদ ইবনে আবিহের খিলাফতের প্রতি আনুগত্যবিষয়ক আলোচনা, কায়রো সংস্করণ, মিশর, ১৯৬০ ছাপা]
আরো সূক্ষ্ম বিষয়
সায়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে শিয়া ঐতিহাসিকদের দ্বারা লিপিবদ্ধ আরেকটি ঘটনা সন্ধিচুক্তিতে উপনীত হওয়ার পর সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে আরো আলোকপাত করে। শিয়া আদ্-দিনাওয়ারী বলেছেন যে সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে মদীনার গভর্নর তাঁকে জানিয়েছিলেন যে সাইয়্যিদুনা হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খিলাফতকে উৎখাত করার পরিকল্পনা করছেন। এরপর সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে একটি চিঠি লেখেন এ মর্মে যে, ষড়যন্ত্রকারীরা আপনাকে উস্কানি দেয়ায় অপতৎপর, তাই দয়া করে এ থেকে বিরত থাকুন। সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর শঙ্কাকে দূর করেন এ বলে:
فكتب إليه الحسين رضي الله عنه ما أريد حربك و لا الخلاف عليك قالوا و لم ير الحسن ولا الحسين طول حياة معاوية منه سوء في أنفسهما ولا مكروها ولا قطع عنهما شيئا مما كان شرط لهما و لا تغير لهما عن بر.
অর্থ: ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে লিখেছিলেন, “আমি আপনার সাথে যুদ্ধ বা বিদ্রোহ করার ইচ্ছা রাখি না।”
লেখক আরো যোগ করেন: সর্ব-ইমাম হাসান বা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) কারোরই দুনিয়ার জীবনের শেষ অবধি হযরতে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে কোনো দ্বন্দ্ব বা মন্দ কিছুর অভিজ্ঞতা হয়নি, না তাঁদের সাথে তাঁর কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়েছিল, না তিনি তাঁদের সাথে করা সন্ধিচুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ করেছিলেন, না তিনি তাঁদের প্রতি তাঁর উদারতার পরিবর্তন করেছিলেন। [শিয়া ইতিহাসবিদ আদ্-দিনাওয়ারী কৃত ’আল-আখবার আত্-তিওয়াল,’ পৃষ্ঠা- ২২৫, মুয়াবিয়া এবং আমর ইবনুল আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মধ্যকার আলোচনা অধ্যায়, কায়রো সংস্করণ, মিশর]
সংক্ষেপে, সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত এই অভিযোগ যে, তিনি সাইয়্যিদুনা হাসান এবং সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অধিকার হরণ করেছিলেন, সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন করেছিলেন এবং বনূ হাশিম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের সাথে খারাপ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, যার কারণে এই ব্যক্তিত্ববৃন্দ সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষভাব পোষণ করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ ভুল। উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলো শিয়া ঐতিহাসিক আল-দিনাওয়ারী থেকে নেয়া হয়েছে। তিনি শিয়া মতবাদের অনুসারী এবং ইমাম ইবনু জারীর আত্-তাবারী, আল-জাযারী এবং অন্যান্যদের (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-এর চেয়েও আগের। তিনি তাঁর উপরোক্ত দলিলপত্রের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো চমৎকারভাবে সমাধান করেছেন। আশা করি ন্যায়পরায়ণ মেজাজের অধিকারী ব্যক্তিবৃন্দ এগুলোকে স্বীকার করে নেবেন এবং পরবর্তী (শিয়াপন্থী) ঐতিহাসিকদের মতামতকে মূল্যহীন এবং তুচ্ছ জ্ঞান করবেন। [মওলানা নাফেঈ রচিত ‘রুহামা বাইনাহুম’, ৪র্থ খণ্ড, মাহাজ্জাহ-ডট-কম সাইট, হযরতে মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর প্রতি উত্থাপিত অভিযোগ ও তার খণ্ডন অধ্যায়]
অতএব, সুন্নী ছদ্মবেশী শিয়াপন্থী মৌ-লোভীবর্গের প্রতি মাঠে-ময়দানে গলা ফাটিয়ে হিংসা-বিদ্বেষপ্রকাশক চিৎকার-চেঁচামেচি না করে একাডেমিক আলোচনা করার আহ্বান জানাই আমরা, সৎসাহস থাকলে অবশ্য।
*সমাপ্ত*
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
*হযরত মু’য়াবিয়া (রা.) উত্তরাধিকারী নির্বাচনে জুলূম করেছিলেন কি?*
রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫
ডক্টর তাহিরুল কাদেরি কি ইয়াযীদের দোসর?
লেখক: মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন
[লেখাটি সম্পাদনা করা হয় নি; তবে প্রকাশের সময় হবে, ইনশা’আল্লাহ। মতামত লেখকের, এডমিন দায়বদ্ধ নই। - এডমিন]
*সমাপ্ত*