ব্লগ সংরক্ষাণাগার

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

*সুন্নী ছদ্মবেশী শিয়া মৌ-লোভীদের প্রতি প্রশ্ন*

 ic


-এডমিন

এ মুহর্রমে বেশ কিছু সু্ন্নী ছদ্মবেশী গলাবাজ শিয়া মতবাদী মৌ-লোভীর উগ্র ভাষণ শুনলাম, যা না শরীয়তের দলিলভিত্তিক, না ইতিহাসনির্ভর। তারা ইয়াযীদের জন্যে হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে দায়ী করেছে। অথচ হযরতে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাসনামলে কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটে নি। তাই আমরা ওই সব মৌ-লোভীকে কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করছি, যার সদুত্তর তারা দেবে আশা করি।

*প্রশ্ন*

(১) আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফত আমলে তিনি ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন নি কেন, যদি তাঁর অন্তরে ইয়াযীদের মতো বিদ্বেষ থাকতোই? মনে রাখবেন, তাঁর শাসনামল প্রায় ২০ বছর ছিলো - ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর ক্ষমতা তাঁর বরাবর হস্তান্তরের পরবর্তী সময়কালে। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি ওই লক্ষ্যে কোনো ব্যবস্থা নেন নি কেন?

(২) সুন্নী ইমাম-উলামা ও ইতিহাসবিদবৃন্দ পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন যে তিনি তাঁর শাসনামলে হিংস্র জল্লাদ উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে বসরা‘র গভর্নর নিয়োগ করলেও ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আবাসভূমি হারামাইন শরীফাইনে নিয়োগ করেন নি। যদি তাঁর অন্তরে দুরভিসন্ধি থাকতোই, তাহলে তিনি তাকে হারামাইন শরীফাইনে নিয়োগ করতেন। সুন্নী জ্ঞান বিশারদদের যুক্তির পাল্টা কোনো সদুত্তর মৌ-লোভীদের কাছে আছে কি?

(৩) আমরা জানি যে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) জীবন সায়াহ্নে হারামাইন শরীফাইন গমন করেন এবং সেখানকার গণ্যমান্যদের কাছে ইয়াযীদের মনোনয়নের ব্যাপারে সম্মতি চান। এঁদের মধ্যে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-ও উপস্থিত ছিলেন। আমাদের প্রশ্ন: এমন কোনো প্রামাণ্য দলিল কি মওজূদ আছে, যা’তে পরিদৃষ্ট হয় যে ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সামনে তৎক্ষণাৎ ভিন্নমত পোষণ করে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন? কেননা হযরতে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর অসীয়তনামায় হযরত ইমাম (রা.) ও আহলে বাইত (রা.)-কে ‘ঘনিষ্ঠ আত্মীয়’ বলেছিলেন। তাই জানতে চাই, পুরো ২০ বছরের শাসনামলের কোনো মুহূর্তে হযরত ইমাম (রা.) কর্তৃক তাঁর বিরোধিতা বা প্রতিবাদের নজির মৌ-লোভীরা দেখাতে পারবে কি?

(৪) এক মৌ-লোভী ইমাম ইবনু জারীর তাবারী (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর ইতিহাস পুস্তকের নামে দুর্বল/জাল রেফারেন্স টেনে দাবি করেছে, হযরতে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নাকি জোর-জবরদস্তি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সবার সম্মতি আদায় করেছিলেন! কাকে বুঝ দিচ্ছে এই লোক? ইমাম হুসাইন (রা.) ছিলেন ‘আসাদুল্লাহ’ (আল্লাহর সিংহ) হযরতে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)-এর পুত্র। সাহসিকতায় তিনি ছিলেন তাঁরই পিতার প্রতিচ্ছবি! কারো রক্তচক্ষু দেখে তিনি ঘাবড়ে যাবেন মর্মে যে লোক দাবি করে, সে ধর্মীয় জ্ঞানে সত্যি এক গণ্ডমূর্খ ও উজবক! যে ইমাম (রা.) কারবালায় ৪০০০ সেনাকে প্রায় একাই মুকাবিলা করার সৎসাহস রাখেন, তিনি ভড়কে যাবেন একজন পরলোক-পথযাত্রী বয়োবৃদ্ধকে? আর সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর মধ্যে যাঁরা তখনো জীবিত ছিলেন, তাঁরাও কি ভয়ে কাঁপবেন? এঁরা তাঁরাই, যাঁরা জীবনপণ করে রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডাকে জ্বিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁদেরকে নিজেদের মতো ভীতুর ডাল মনে করতে পারে একমাত্র গবেট শিয়াপন্থী মৌ-লোভীচক্রই!

পাকিস্তানী দেওবন্দী ঘরানার আলেম মওলানা মুহাম্মদ নাফেঈ তাঁর ‘রুহামা’ বাইনাহুম’ গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডে ‘আমীরে মুয়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর প্রতি অভিযোগ ও তার খণ্ডন’ অধ্যায়ে লেখেন:


ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বক্তব্য


শিয়াদের প্রাথমিক তাফদিলি ঐতিহাসিকদের অন্যতম আহমদ ইবনে আবী দাউদ আল-দিনাওয়ারী আশ্-শিয়া (মৃত্যু: ২৮২ হিজরী) তাঁর বিখ্যাত ‘আল-আখবার আত্-তিওয়াল’ গ্রন্থে সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’-এর কাছে সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাই’আতকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। পাঠকদের সুবিধার্থে আমরা সাইয়্যিদুনা হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাই’আত ছাড়াও এটা পেশ  করবো, যাতে এই বিষয়ে দুই ভাইয়ের মতামত স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।


আল-দীনাওয়ারি লিখেছেন যে হুজর্ ইবনে আদী নামে এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর একনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যে ছিলো। সাইয়্যিদুনা হাসান এবং সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মধ্যে সন্ধিচুক্তির পরে সে শেষোক্ত জনের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিলো। কিন্তু তাকে হতাশ হতে হয়, কেননা সাইয়্যিদুনা হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। এরপর সে সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যুদ্ধে প্ররোচিত করতে চায়।


فقال: الحسين إنا قد بايعنا وعاهدنا ولا سبيل إلى نقض بيعتنا.


অর্থ: অতঃপর হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) উত্তর দিলেন, "আমরা বাই’য়াত তথা আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি এবং সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি। আর তাই আমাদের আনুগত্য ভঙ্গ করার কোনো পথ/উপায় নেই।" [আল-আখবার আত্-তিওয়াল, পৃষ্ঠা-২২০, মুয়াবিয়া এবং জিয়াদ ইবনে আবিহের খিলাফতের প্রতি আনুগত্যবিষয়ক আলোচনা, কায়রো সংস্করণ, মিশর, ১৯৬০ ছাপা]


আরো সূক্ষ্ম বিষয়


সায়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে শিয়া ঐতিহাসিকদের দ্বারা লিপিবদ্ধ আরেকটি ঘটনা সন্ধিচুক্তিতে উপনীত হওয়ার পর সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে আরো আলোকপাত করে। শিয়া আদ্-দিনাওয়ারী বলেছেন যে সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে মদীনার গভর্নর তাঁকে জানিয়েছিলেন যে সাইয়্যিদুনা হুসাইন ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খিলাফতকে উৎখাত করার পরিকল্পনা করছেন। এরপর সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে একটি চিঠি লেখেন এ মর্মে যে, ষড়যন্ত্রকারীরা আপনাকে উস্কানি দেয়ায় অপতৎপর, তাই দয়া করে এ থেকে বিরত থাকুন। সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর শঙ্কাকে দূর করেন এ বলে:


فكتب إليه الحسين رضي الله عنه ما أريد حربك و لا الخلاف عليك قالوا و لم ير الحسن ولا الحسين طول حياة معاوية منه سوء في أنفسهما ولا مكروها  ولا قطع عنهما شيئا مما كان شرط لهما و لا تغير لهما عن بر.


অর্থ: ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে লিখেছিলেন, “আমি আপনার সাথে যুদ্ধ বা বিদ্রোহ করার ইচ্ছা রাখি না।”


লেখক আরো যোগ করেন: সর্ব-ইমাম হাসান বা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) কারোরই দুনিয়ার জীবনের শেষ অবধি হযরতে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে কোনো দ্বন্দ্ব বা মন্দ কিছুর অভিজ্ঞতা হয়নি, না তাঁদের সাথে তাঁর কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়েছিল, না তিনি তাঁদের সাথে করা সন্ধিচুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ করেছিলেন, না তিনি তাঁদের প্রতি তাঁর উদারতার পরিবর্তন করেছিলেন। [শিয়া ইতিহাসবিদ আদ্-দিনাওয়ারী কৃত ’আল-আখবার আত্-তিওয়াল,’ পৃষ্ঠা- ২২৫, মুয়াবিয়া এবং আমর ইবনুল আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মধ্যকার আলোচনা অধ্যায়, কায়রো সংস্করণ, মিশর]


সংক্ষেপে, সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত এই অভিযোগ যে, তিনি সাইয়্যিদুনা হাসান এবং সাইয়্যিদুনা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অধিকার হরণ করেছিলেন, সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন করেছিলেন এবং বনূ হাশিম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের সাথে খারাপ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, যার কারণে এই ব্যক্তিত্ববৃন্দ সাইয়্যিদুনা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষভাব পোষণ করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ ভুল। উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলো শিয়া ঐতিহাসিক আল-দিনাওয়ারী থেকে নেয়া হয়েছে। তিনি শিয়া মতবাদের অনুসারী এবং ইমাম ইবনু জারীর আত্-তাবারী, আল-জাযারী এবং অন্যান্যদের (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-এর চেয়েও আগের। তিনি তাঁর উপরোক্ত দলিলপত্রের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো চমৎকারভাবে সমাধান করেছেন। আশা করি ন্যায়পরায়ণ মেজাজের অধিকারী ব্যক্তিবৃন্দ এগুলোকে স্বীকার করে নেবেন এবং পরবর্তী (শিয়াপন্থী) ঐতিহাসিকদের মতামতকে মূল্যহীন এবং তুচ্ছ জ্ঞান করবেন। [মওলানা নাফেঈ রচিত ‘রুহামা বাইনাহুম’, ৪র্থ খণ্ড, মাহাজ্জাহ-ডট-কম সাইট, হযরতে মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর প্রতি উত্থাপিত অভিযোগ ও তার খণ্ডন অধ্যায়]


অতএব, সুন্নী ছদ্মবেশী শিয়াপন্থী মৌ-লোভীবর্গের প্রতি মাঠে-ময়দানে গলা ফাটিয়ে হিংসা-বিদ্বেষপ্রকাশক চিৎকার-চেঁচামেচি না করে একাডেমিক আলোচনা করার আহ্বান জানাই আমরা, সৎসাহস থাকলে অবশ্য।

   

*সমাপ্ত*



মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

*হযরত মু’য়াবিয়া (রা.) উত্তরাধিকারী নির্বাচনে জুলূম করেছিলেন কি?*



-এডমিন
বর্তমানে ফেসবুক ও অনলাইনে হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে পারসিক শিয়া গোষ্ঠীর চামচা দল নিরন্তর আক্রমণ করে চলেছে এ অভিযোগে যে, তিনি নিজের ছেলে ইয়াযীদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামে রাজতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। আর এতে তিনি জোরজবরদস্তি বিশিষ্ট সাহাবা (রা.)-বৃন্দের ও গণমান্যদের সম্মতি গ্রহণ করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক! চলুন, কথা না বাড়িয়ে মূল অলোচনায় প্রবৃত্ত হই।
*হাদীসে ‘খলীফা’ সম্বোধন:
রাজা-বাদশাহ নন, বরং খলীফা বলে সম্বোধন করেছিলেন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হযরত জাবের (রা:) বলেন:
سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: (( لا يزال أمر الناس ماضياً ما وليهم اثنا عشر رجلاً )) ثم تكلم بكلمة خفيت علي، فسألت أبي: ماذا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فقال: (( كلهم من قريش )) وهذا لفظ مسلم.
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শুনেছি এ কথা বলতে: “মানুষের বিষয়াদি (উন্নত হতে) থাকবে বারো জনের নেতৃত্বে...।” এরপর তিনি এমন কথা বলেন যা আমি (কানে) শুনতে পাইনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করি মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বলেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেন, “তাঁরা (শাসকবৃন্দ) সবাই ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত।” [আল-বুখারী, হাদীস নং ৭২২২, ৭২২৩ ও মুসলিম, হাদীস নং ১৮২১]
ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে (৮২১) হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রা:) হতে ইমাম হুসাইন (রা:)-এর সূত্রে আলাদা শব্দচয়নে বর্ণনা করেন:
(( إن هذا الأمر لا ينقضي حتى يمضي فيهم اثنا عشر خليفة ))
“বস্তুতঃ এই বিষয়টি রহিত হবে না, যতোক্ষণ না বারো জন খলীফা তাদের ওপরে শাসন করবে।”
হযরত জাবের (রা:) হতে সিমাকের সূত্রেও ভিন্ন শব্দচয়নে বর্ণিত হয়:
(( لا يزال الإسلام عزيزاً إلى اثني عشر خليفة )) ثم قال كلمة لم أفهمها، فقلت لأبي: ما قال؟ فقال: (( كلهم من قريش )).
“ইসলাম বারো জন খলীফার শাসনকাল পর্যন্ত শক্তিশালী হতে থাকবে।” এরপর মহানবী (দ:) কিছু একটা বলেন যা আমি বুঝতে পারিনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করি রাসূলুল্লাহ (দ:) কী বলেছিলেন। তিনি জবাবে বলেন, “তাঁরা (শাসকবৃন্দ) সবাই ক্বুরাইশ গোত্রীয় হবেন।”
হযরত জাবের (রা:) হতে আল-শাবী’র সূত্রে অন্যভাবে বর্ণিত:
(( لا يزال هذا الأمر عزيزاً منيعاً إلى اثني عشر خليفة )).
“বারো জন খলীফার মাধ্যমে (শাসনের) এই বিষয়টি শক্তিশালী থাকবে।”
ইমাম মুসলিম (রহ:) তাঁর পুস্তকে (১৮২২) আমির ইবনে সা’আদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রহ:)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ (রা:) তাঁর গোলাম নাফী’র মাধ্যমে লেখা পত্র দ্বারা তাঁকে জানিয়েছেন যে তিনি রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে বলতে শুনেছেন:
(( لا يزال الدين قائماً حتى تقوم الساعة، أو يكون عليكم اثنا عشرة خليفة كلهم من قريش )).
ইসলাম ধর্ম প্রাধান্য বজায় রাখবে প্রলয় দিবস অবধি; কিংবা বারো জন খলীফা তোমাদেরকে শাসন করা পর্যন্ত। তারা সবাই ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত হবে।
অতএব, এসব রওয়ায়াতের স্পষ্ট অর্থের ভিত্তিতে হযরতে আমীরে মু’আবিয়া (রা:) এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, কেননা তিনি ক্বুরাইশ গোত্রভুক্ত ছিলেন এবং তিনি শাসন করেছিলেন, আর তাঁর শাসনকালে ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ছিলো এবং আধিপত্য বিস্তার করেছিলো। এই বিবরণ স্পষ্টভাবে তাঁর প্রতি প্রযোজ্য হয়, বিশেষ করে আল-শাবী ও সিমাকের বর্ণনাগুলো, যা ইসলামকে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হিসেবে প্রতীয়মান করে; আর এই রওয়ায়াত স্পষ্ট ইঙ্গিত করে যে এই শক্তি ও ক্ষমতার সূচনা হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর বেসাল শরীফের পরে প্রথম খলীফা তথা হযরত আবূ বকর (রা:)-এর দ্বারা। অতঃপর ১২তম খলীফা পর্যন্ত এভাবে চলবে বলে ঘোষিত হয়েছিলো। আমীরে মু’আবিয়া (রা:) তাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, বিশেষ করে এই কারণে যে সকল মুসলমান তাঁর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন এবং ওই সালটিকে ঐক্যের বছর বলে অভিহিত করা হয়েছিলো।
ওপরে প্রদর্শিত প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে বোঝা যায়, হযরতে আমীরে মু’আবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান (রা:) বৈধ খলীফা ছিলেন এবং তাঁর শাসনামলে ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ও আধিপত্যশীল ছিলো, আর এটা হয়েছিলো তাঁর শরীয়ত অনুসারে শাসন ও সুন্নাহ’র বাস্তবায়নের দরুন। নতুবা ইসলাম ধর্ম শক্তিশালী ও প্রভাবপূর্ণ হতো না। আল্লাহ-ই সর্বজ্ঞ। [আমীরে মু’য়াবিয়া (রা.)-এর পক্ষে জবাব শীর্ষক গ্রন্থের চলমান অনুবাদ অনুসারে; লিঙ্ক: https://docs.google.com/.../1WQXm0QlPirAjKgt.../edit...]
*সুন্নী দৃষ্টিতে শাসকের বিরুদ্ধাচরণ অবৈধ:
এখানে বলা জরুরি যে, হযরতে ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বরাবর রাষ্ট্রের শাসনভার অর্পণ করায় তিনি খলীফা পদে অধিষ্ঠিত হন [ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহের ইতিহাস, হযরতে মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফত অধ্যায়]। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মধ্যে এটা একটা স্বীকৃত সত্য-সঠিক নীতি যে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা সাধারণত জায়েজ/বৈধ নয়। ইমাম তাহাবী (রহমতুল্লাহি আলাইহ) তাঁর কৃত ‘আকীদায়ে তাহাবীয়্যা’ গ্রন্থে বলেন:
لا نرى الخروج على إمامنا ولا على ولاة أمرنا وإن كانوا ظالمين، ولا نتمنى لهم الشر، ولا نتراجع عن اتباعهم. ونرىأن طاعتهم من طاعة الله سبحانه، فهي واجبة ما لم يأمرونا بالمعصية، وندعو لهم بالهداية وتجاوز عن سيئاتهم. (العقيدة الطحاوية مع شرح الغنيمي، ص ١١٠ء١١١).
অর্থ: “আমরা আমাদের ইমাম বা আমাদের বিষয়ের দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে স্বীকৃতি দেই না, এমন কী তাঁরা যদি অন্যায়কারীও হন, তবুও আমরা তাঁদের অমঙ্গল কামনা করি না, অথবা তাঁদের অনুসরণ থেকেও সরে আসি না। আমরা বিশ্বাস করি যে তাঁদের আনুগত্য করা মহান আল্লাহর আনুগত্যের অংশ, এবং তাই যতোক্ষণ না তাঁরা আমাদের পাপ করতে আদেশ দেন ততোক্ষণ পর্যন্ত এটা বাধ্যতামূলক। আমরা তাঁদের হেদায়াত এবং তাঁদের অন্যায়কে ক্ষমার জন্যে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি।” (আল-আকীদাতুত-তাহাবীয়্যা এবং শরহুল-গুনায়মী পুস্তকের ব্যাখ্যাসহ, পৃষ্ঠা ১১০-১১১)।
সুন্নী উলামাবৃন্দ এর পক্ষে প্রমাণসমূহ পেশ করেছেন, যার মধ্যে নিম্নবর্ণিত দলিলগুলো উল্লেখযোগ্য:
(১) আল্লাহ পাক ফরমান - يَا أَيُّهَا ٱلَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلأَمْرِ مِنْكُمْ - অর্থ: হে ঈমানদারবৃন্দ, নির্দেশ মান্য করো আল্লাহর এবং নির্দেশ মান্য করো রাসূলের আর তাদেরই, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত [সূরাহ নিসা, ৫৯ আয়াত; নূরুল ইরফান]
(২) হযরতে আবূ হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من أطاعني فقد أطاع الله، ومن عصاني فقد عصى الله، ومن أطاع أميري فقد أطاعني، ومن عصى أميري فقد عصاني». (صحيح البخاري، رقم ٦٧١٨، وصحيح مسلم، رقم ١٨٣٥) - অর্থ: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করলো, সে আল্লাহরই অবাধ্যতা করলো। আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের আনুগত্য করলো, সে আমারই আনুগত্য করলো, আর যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের অবাধ্যতা করলো, সে আমারই অবাধ্যতা করলো [বুখারী, ৬৭১৮ ও মুসলিম, ১৮৩৫]।
(৩) হযরতে আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «اسمعوا وأطيعوا وإن كان عبداً حبشياً كأن رأسه زبيبة» (صحيح البخاري رقم 6723 وصحيح مسلم) - অর্থ: তোমাদের শাসকের কথা শুনো এবং তার আনুগত্য করো, যদিও সে একজন হাবশী দাস হয় যার মাথা কিশমিশের মতো দেখতে হয় [বুখারী, ৬৭২৩ ও সহীহ মুসলিম]।
(৪) হযরতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «من رأى من أميره ما يكره فليصبر، فإنه لا يفارق الجماعة شبراً فيموت إلا مات ميتة جاهلية» (صحيح البخاري رقم 6724، وصحيح مسلم رقم 1849) - অর্থ: যে ব্যক্তি তার শাসককে এমন কিছু করতে দেখে যা তার অপছন্দনীয়, তার উচিত ধৈর্য ধরা; কারণ কেউ (মুসলিম) জামা’আত থেকে এক মুহূর্তের তরেও আলাদা হয়ে মারা গেলে সে (প্রাক-ইসলামী যুগের) অজ্ঞতার মাঝে মৃত্যু বরণ করবে [সহীহ আল-বুখারী, নং ৬৭২৪ এবং সহীহ মুসলিম, নং ১৮৪৯]।
(৫) হযরতে আবদুল্লাহ হতে বর্ণিত যে, হুজূরে পূর নূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - «على المرء المسلم السمع والطاعة فيما أحب وكره ما لم يؤمر بمعصية، فإن أُمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة». (صحيح البخاري، رقم ٦٧٢٥، وصحيح مسلم، رقم ١٨٣٩) - অর্থ: একজন মুসলিমকে অবশ্যই (তার শাসকের আদেশ) শুনতে হবে এবং মেনে চলতে হবে, যা সে পছন্দ করে বা অপছন্দ করে, যতোক্ষণ না তাকে পাপ করার আদেশ দেয়া হয়। যদি তাকে আল্লাহর অবাধ্যতা করার আদেশ দেয়া হয়, তাহলে কোনো শ্রবণ এবং কোনো আনুগত্য নেই [সহীহ আল-বুখারী, নং ৬৭২৫ এবং সহীহ মুসলিম, নং ১৮৩৯]
আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক তাঁর পুত্র ইয়াযীদকে মনোনয়ন শরীয়তসম্মত ছিলো। এ প্রসঙ্গে শরঈ দিকটি তুলে ধরেছেন কাজী আবূ ইয়ালা আল-ফার্রা’য়া হাম্বলী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) নিজ ‘আহকামুস্ সুলতানীয়াহ’ পুস্তকে:
يجوز للخليفة أن يعيّن خليفةً دون موافقة أهل السلطة، كما عيّن أبو بكر عمر رضي الله عنهما خليفةً له دون موافقة وحضور وجهاء الأمة. والسبب المنطقي وراء ذلك أن تعيين خليفة لا يُعدّ تعيينًا للخليفة، وإلا لكان هناك خليفتان، فلا حاجة لوجود ذوي النفوذ. نعم، بعد وفاة الخليفة، لا بد من حضورهم وموافقتهم.
অর্থ: "একজন খলীফার পক্ষে ক্ষমতাসীনদের অনুমোদন ছাড়াই একজন উত্তরসূরী নিয়োগ করা বৈধ, যেমন হযরত আবূ বকর (রা.) হযরত উমর (রা.)-কে মুসলিম উম্মাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমর্থন এবং উপস্থিতি ছাড়াই তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ হলো এই যে, কাউকে "খিলাফতের উত্তরসূরী" নিয়োগ করা তাঁকে খলীফা হিসেবে নিযুক্ত করা বলে মনে করা হয় না; নতুবা দু জন খলীফা (বর্তমান) থাকবে। তাই প্রভাবশালী গণ্যমান্যদের উপস্থিত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, খলীফার ইন্তেকালের পরে তাঁদের উপস্থিতি এবং অনুমোদন প্রয়োজন।"
কাজী আবূ ইয়ালা (রহ.) আরো বলেন:
«إن الخلافة لا تقوم بمجرد تعيين الخليفة، بل تحتاج بعد وفاته إلى موافقة الأمة الإسلامية» (الأحكام السلطانية، ص٩).
অর্থ: “কেবল খলীফা নিয়োগের মাধ্যমেই খিলাফত (নেতৃত্ব) প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং (তাঁর ইন্তেকালের পর) এর জন্যে মুসলিম উম্মাহর অনুমোদন প্রয়োজন” [আল-আহকামুস্ সুলতানীয়া, পৃ. ৯]।
এ কারণেই হযরতে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে দোষারোপ করা যায় না। কেননা, সুন্নী সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামাবৃন্দের মতানুযায়ী তা কেবলই একটি সুপারিশ ছিলো; গণ্যমান্যদের অনুমোদন ছাড়া তা চূড়ান্ত নয়। তাই ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক ইয়াযীদের দুঃশাসনের বিরোধিতা করা একদম বৈধ যা উপরের দলিলে প্রতিভাত হয়।
অতএব, ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ ট্র্যাজেডির জন্যে হযরতে আমীরে মু’য়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে দায়ী করা শিয়া গোষ্ঠীগত স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া আর কিছু নয়।
*সমাপ্ত*
রেফারেন্স: দক্ষিণ আফ্রিকী Islam Q&A ওয়েবসাইট।

রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫

ডক্টর তাহিরুল কাদেরি কি ইয়াযীদের দোসর?

 লেখক: মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন

[লেখাটি সম্পাদনা করা হয় নি; তবে প্রকাশের সময় হবে, ইনশা’আল্লাহ। মতামত লেখকের, এডমিন দায়বদ্ধ নই।  - এডমিন]



#মিনহাজি বাতেন সম্প্রদায়সহ ইবনে সাবার নাপাক আউলাদরা এই মুহাররম মাসে আহলে বাইতের চর্চা না করে প্রতিনিয়ত সাহাবি বিদ্বেষ চর্চা করছে। পথভ্রষ্ট বাতেন ও মিনহাজি চেলাচামুন্ডাদের দাবি- কারবালার ঘটনার জন্য সাইয়্যিদুনা আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু দায়ী!
#অথচ মিনহাজের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর তাহিরুল কাদেরি সাহেবের স্পষ্ট কথা- সাইয়্যিদুনা আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইয়াযিদকে মনোনয়ন দানের ব্যাপারে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না, তিনি ইসলাম ও মুসলমানমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তার এই উদ্যোগের পিছনে কাজ করেছিল হিত ও মঙ্গল কামনা।
#কাদেরি সাহেবের এই কথাগুলো বলেছেন উনার লিখিত "শাহাদাতে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু দর্শন ও শিক্ষা" বইয়ের 90 ও 91 পৃষ্ঠায়।
#কাদেরি সাহেব লিখেন-----
#হযরত আমীরে #মুয়াবিয়া অবশ্যই ইসলাম ও মুসলমানের হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তিনি খেলাফত প্রশ্নে আগেকার ন্যায় মুসলমানদের মাঝে খুনাখুনি ও রক্তপাত চাননি। বিগত অবস্থাদির প্রেক্ষাপটে তিনি এও বুঝতেন যে, তিনি যদি খেলাফত ও ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বাদ দিয়ে দেন কিংবা কোন কমিশনকে খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে দেন তাহলে লোকেরা কখনো কোন ব্যক্তি বিশেষের উপর একমত হবে না। তখন বিভিন্ন এলাকা হতে খেলাফতের অনেক অনেক দাবিদার দাঁড়িয়ে যাবে এতে করে মস্ত এক অস্থিতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনি এও উপলব্ধি করতেন যে, খেলাফত যদি বনু হাশেমকে দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে বনু উমাইয়ার লোকেরা যারা জাতিগতভাবে অবিচ্ছিন্ন কখনো মেনে নেবে না। ফলে যুদ্ধবিগ্রহের নির্ঘাত এক ক্রমবর্ধমান ধারার অবতারণা হবে অতএব তিনি বনু উমাইয়ার উপর আপন পুত্রকে প্রাধান্য দিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে যে ছিল রাজনৈতিক বিষয়ে খুবই পারদর্শী ও সিদ্ধহস্ত।
তিনি ভুল করুক আর শুদ্ধ করুক, এ কথাটি অবশ্য সর্বজনবিদিত যে, এসব কিছু তিনি মুসলমানদের মাঝে খুনাখুনি ও রক্তারক্তি বন্ধ করার মানসেই করেছিলেন। এ কথাটির সাক্ষী তাঁর এই দোয়াটি, যা তিনি এজিদকে দায়িত্বভার অর্পণ করার পরে করেছিলেন।
اللهم ان كنت تعلم اني وليت لانه فيما اراه اهل لذالك فاتمم له ما وليته و ان كنت وليته لاني اخبه فلا تتمم له وليته.
"হে আল্লাহ তুমি যদি জানো যে, এজিদকে আমি তার যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্বভার অর্পণ করেছি তাহলে তুমি তাকে দিয়ে এই দায়িত্ব পূর্ণ করিয়ে নাও। পক্ষান্তরে তুমি যদি একথা জানো যে, স্বজনপ্রীতির বশবর্তী হয়ে আমি তাকে এই দায়িত্ব অর্পণ করেছি, তাহলে তুমি তাকে দিয়ে এই দায়িত্ব পূর্ণ করিও না।"
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮:৮০)
হযরত আমীরে মুয়াবিয়ার এই উদ্যোগকে শুদ্ধ বলুন আর ভুল বলুন, এ কথাটি কখনো অস্বীকার করা যায় না যে, তাঁর উদ্যোগের পিছনে কাজ করেছিল হিত ও মঙ্গল কামনা। ওলামায়ে আহলে সুন্নাতগণ এ উদ্যোগের কথা ভেবে এবং নবী দঃ এর সাথে সম্পৃক্ততার অর্থাৎ সাহাবা হওয়ার কথা বিবেচনা করে হযরত আমীরে মুয়াবিয়ার ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করা, তাঁর সমালোচনা করা, তাঁকে গালমন্দ করা এবং ভালমন্দ বলা হারাম ঘোষণা করে দিয়েছেন।
------
#এবার পথভ্রষ্ট মিনহাজি শিয়াদের বলতে হবে, মনোনয়নের ব্যাপারে সাইয়্যিদুনা আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর পদক্ষেপকে সমর্থন করে কাদেরি সাহেব আহলে বাইতের দুশমন হননি??????
বিশেষ দ্রষ্টব্য- আমার বিশ্বাস মতে, কারবালার ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দায়ি নাপাক, অভিশপ্ত, বদবখত ইয়াযিদ।

 *সমাপ্ত*