ব্লগ সংরক্ষাণাগার

বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮

খলীফা হযরত আলী (ক:) ও আমীরে মু’আবিয়া (রা:) প্রসঙ্গ


হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) ও হযরত মু’আবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’র ব্যাপারে কারো পক্ষ নিয়ে অপর জনকে গালমন্দ করার কোনো সুযোগ-ই আমাদের নেই। শরীয়তে এটা একদম নিষেধ। তাঁদের মধ্যকার মতবিরোধ ছিলো এজতেহাদী। আমরা জানি, উলামায়ে আহলে সুন্নাত হযরত আলী (ক:)’কে এক্ষেত্রে সঠিক বলেছেন, আর তাঁরা হযরত আমীরে মু’আবিয়া (রা:)’র এজতেহাদী ভুল হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন। কিন্তু সঠিক এজতেহাদের জন্যে ১০টি ও ভুলের জন্যে ১টি সওয়াব রয়েছে মর্মে হাদীস শরীফে বিবৃত হয়েছে। এমতাবস্থায় কোনো সাহাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’কে বাগী তথা বিদ্রোহী কীভাবে বলা যায়? সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’র সমালোচনা ইসলামে নিষেধ নয় কি? মোদ্দা কথা হলো, দুইটি মহাভ্রান্ত ফের্কাহ মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টিতে অপতৎপর। এরা উভয়েই পেট্রো-ডলারসমৃদ্ধ। একদল আহলে বায়ত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ও হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অপতৎপর (খারেজী); অপর দল হযরত আমীরে মু’আবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’র মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত করার অপচেষ্টারত (শিয়া)। দুটো দলই ওই দু জনের হক্ক তথা অধিকার পদদলিত করছে। মুসলমান সর্বসাধারণের এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। কেননা ভ্রান্ত এ দুটো দল-ই উটের দুধ, দুম্বার গোস্ত ও খোরমা-খেজুরের (মানে পেট্রো-ডলারের) লোভে এই গর্হিত কাজে লিপ্ত রয়েছে। তাদের অবস্থান দেখেই যায় চেনা। বিশ্বাস করুন, ধীরে ধীরে এসব চামচাদের প্রতি আস্থা উঠে যাচ্ছে আমার। লজ্জা করা উচিত তাদের! দুনিয়ার লোভে দ্বীনদারি বিকিয়ে দিচ্ছে তারা! এই বিষয়ে পয়সার লোভ না করে ইনসাফের ভিত্তিতে বিচার-বিবেচনা করা উচিত। কেননা হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’র ব্যাপারে হাদীসে এসেছে: ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে এবং এর পাশাপাশি আল-বাযযার, আবু এয়ালা ও আল-হাকিম (রহমতুল্লাহে আলাইহিম) হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلامُ أَبْغَضَتْهُ يَهُودُ حَتَّى بَهَتُوا أُمَّهُ ، وَأَحَبَّتْهُ النَّصَارَى حَتَّى أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَ بِهِ ” . ثُمَّ قَالَ : يَهْلِكُ فِيَّ رَجُلانِ , مُحِبٌّ مُفْرِطٌ يُقَرِّظُنِي بِمَا لَيْسَ فِيَّ ، وَمُبْغِضٌ يَحْمِلُهُ شَنَآنِي عَلَى أَنْ يَبْهَتَنِي.. ” .
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন, ‘তোমার সাথে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের এক সাদৃশ্য আছে; ইহুদীরা তাঁকে এতো ঘৃণা করেছিল যে তারা তাঁর মাকে অপবাদ দিয়েছিল; আর খৃষ্টানরা এতো ভালোবেসেছে যে তারা তাঁকে এমন মর্যাদার আসনে আসীন করেছে যা তাঁর নয়’ [রেফারেন্স: আবু মরইয়াম এবং আবু আল-বখতারী কিংবা আবদুল্লাহ ইবনে সালামা – এই দু’জনের কোনো একজন থেকে আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ নিজ ‘আল-সুন্নাহ’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ২৩৩-২৩৪ #১২৬৬-১২৬৮), আল-হারিস ইবনে আব্দিল্লাহ হতে ইবনে আব্দিল বারর তাঁর ‘আল-এস্তিয়াব’ কেতাবে (৩:৩৭), আল-নুওয়াইরী স্বরচিত ‘নিহায়াত আল-আরব’ পুস্তকে (২০:৫) এবং আবু আল-হাদিদ কৃত ‘শরহে নাজহ আল-বালাগা’ (১:৩৭২)]।” হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন: “আমার ব্যাপারে (আকীদাগত কারণে) দুই ধরনের লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে – আমার প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারী যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটায়; দ্বিতীয়ত যারা অতি ভক্তিসহ আমার মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করে।”[রেফারেন্স: এটা বর্ণনা করেছেন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে আবু এয়ালা তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৪০৬ #৫৩৪) এবং ইমাম আহমদও দুইটি দুর্বল সনদে নিজ ‘মুসনাদ’ কেতাবে – যাকে চিরাচরিত উদারতায় ‘হাসান’ বলেছেন শায়খ আহমদ শাকির (২:১৬৭-১৬৮ #১৩৭৭-১৩৭৮); আল-হাকিম (৩:১২৩)-ও এর সনদকে সহীহ বলেছেন, তবে আয্ যাহাবী এর দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন এতে আল-হাকাম ইবনে আব্দিল মালিক থাকার কারণে; একই মত পোষণ করেন ইবনুল জাওযী নিজ ‘আল-এলাল আল-মুতানাহিয়া’ পুস্তকে (১:২২৭ #৩৫৭)। আল-হায়তামী স্বরচিত ‘মজমাউল যাওয়াইদ’ গ্রন্থে’ (৯:১৩৩) একই কারণে ওপরের সকল এসনাদের দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন, তবে তিনি উল্লেখ করেন যে আল-বাযযার এটা বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে’। অনুরূপ দুর্বল সনদে এটা বর্ণনা করেন আল-বায়হাকী নিজ ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৫:১৩৭ #৮৪৮৮) এবং ইমাম আহমদ তাঁর ‘ফযাইলে সাহাবা’ কেতাবে (২:৬৩৯ #১০৮৭, ২:৭১৩ #১২২১, ২:৭১৩ #১২২২)]। এ-ই হলো খারেজী ও শিয়াদের সম্পর্কে স্বয়ং হযরত আলী (ক:)-এর ফায়সালা! মুসলমান সর্বসাধারণ, এখন আপনারাই নির্ধারণ করুন কোন্ পথ বেছে নেবেন!

পুনশ্চ: [ফেইসবুকের মন্তব্য ফোরামে আপত্তিকারীদের জবাবে]

মওলা আলী (ক:) যখনই আমীরে মু’আবিয়া (রা:)-এর সাথে সালিশ মেনেছেন, অমনি খারেজী গোষ্ঠী তাঁকে অমান্য করে দল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু আমীরে মু’আবিয়া (রা:)-এর সাথে সম্পর্কিত। আর এ কেমন যুক্তি যে যাঁর প্রতি এতো মহব্বতের দাবি করা হচ্ছে, সেই মওলা আলী (ক:)-এর সতর্কবাণী-ই কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে! আলোচ্য হাদীসটির বিশদ ব্যাখ্যা কেন এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে? This is a grave warning from Mawla Ali (Ra:)! তিনি (মওলা আলী কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) অবশ্যই আমাদের সুন্নীদের শিরোমণি। কিন্তু তাঁর কথার সূত্রে ধরেই আমীরে মু’আবিয়া (রা:) ফোকাল-পয়েন্টে এসেছেন। কেননা তাঁর (আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর) ওই ঘটনা ছাড়া আলোচ্য হাদীসের সাথে কোনো কিছুই খাপ খায় না। অতএব, এই হাদীসের প্রতিপাদ্য বিষয় এড়িয়ে যেতে পারে একমাত্র উদ্দিষ্ট ভ্রান্ত গোষ্ঠী দুটোই, যাদের একটি মওলা আলী (রা:)-কে গালমন্দ করে, অপরটি অতিভক্তি দেখিয়ে সত্যের মাপকাঠি সাহাবাবৃন্দকে (রা:) হেয় প্রতিপন্ন করে। হাদীসটির বিশদ বিশ্লেষণ করলে তারা চিহ্নিত হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে, আমরা সুন্নীরা নিরপেক্ষভাবে উক্ত হাদীসের এই সতর্কবাণীর বিচার-বিশ্লেষণ করতে আগ্রহী। আমরা কোনোভাবেই হাদীসে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী নই। [দুঃখিত, এ যাবৎ বিরূপ মন্তব্যকারীদের কাউকেই আমি হাদীসটির বিশদ ব্যাখ্যায় যেতে দেখিনি]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন